মূক-বধিরদের গ্রাম দাধকাই, ভালোবাসা যেখানে ভাষাকে ছাড়িয়ে যায়

ফিচার

আল জাজিরা
26 April, 2024, 12:30 pm
Last modified: 27 April, 2024, 06:04 pm
মূক-বধিরদের গ্রাম দাধকাইয়ের বসবাসকারীরা তাদের নিজস্ব একটি সাংকেতিক ভাষা তৈরি করেছেন। এখানে বসবাসকারী সকলেই এই ভাষা বুঝতে পারে। অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে এটি করা হয় এবং প্রতিটি অঙ্গভঙ্গি একটি স্বতন্ত্র অর্থ বহন করে।

হিমালয় পর্বতমালার উঁচুতে অবস্থিত দাধকাই গ্রামের একটি ক্ষুদ্র সম্প্রদায়ের অধিবাসী মুহাম্মদ শরীফের বাড়িতে দুটো পরিবার মুখতার আহমেদ (২২) এবং রেশমা শরীফের (১৯) আসন্ন বিয়ের পরিকল্পনা করতে জড়ো হয়েছে।

পরিবার দুটো প্রথাগত বিয়ের অনুষ্ঠানের মতো সমস্ত নিয়ম অনুসরণ করলেও এটি অন্য সাধারণ বিয়ের অনুষ্ঠানের মতো নয় কারণ বর এবং কনে উভয়ই তাদের গ্রামের আরো অনেকের মত মূক-বধির।

প্রায় এক শতাব্দী আগে গ্রামটিতে প্রথম এমন পরিস্থিতি দেখা গেলেও সময়ের সাথে সাথে সেখানে মূক-বধির লোকের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এই অবস্থা দাধকাই গ্রামের কয়েক প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। যখনই একটি বিয়ে হয় এবং নতুন দম্পতির যখন কোন সন্তান হয় তখন গ্রামটির মানুষ চিন্তায় পরে যায় সন্তানটিও এমন হবে কি না। এমনকি বাবা মায়েরা মূক-বধির না হলেও ভয় থেকেই যায়, যেই শিশুটির জন্ম তারা দিবে সে এমন হবে কি না।

গ্রাম প্রধান মোহাম্মদ হানিফ বলেছেন "আমরা এই ভয়কে অবিচল বিশ্বাস এবং সাহসের সাথে মোকাবেলা করি।"

৬৩ বছর বয়সী আলম হুসেন গ্রামটির সব থেকে বৃদ্ধ মূক-বধির ব্যক্তিদের মধ্যে একজন। তিনিই তাঁর পরিবারের একমাত্র ব্যক্তি যিনি এই সমস্যায় আক্রান্ত।

আলম সাংকেতিক ভাষায় কথা বলেন এবং সেটিকে ভাষায় রূপান্তর করেন তার প্রতিবেশী শাহ মুহাম্মদ। আলমকে এই গ্রামের অন্যান্য বৃদ্ধদের মতই অনেক সম্মান দেখান হয়।

শাহ মুহাম্মদের মাধ্যমে আলম জানান, "আমার শৈশবে কি পরিমাণ মানুষ গ্রামটিতে মূক-বধির ছিল সেটি আমার মনে নেই।" আলম তাঁর তর্জনী কপালে ঠেকিয়ে অন্য হাতটি নাড়িয়ে বোঝাচ্ছিলেন, তাঁর স্মৃতিশক্তি আগের মতো ভালো নেই।

তিনি আরো জানান, অতীতে মূক-বধির গ্রামবাসীদের জন্য সঙ্গী খুঁজে পাওয়া কঠিন ছিল। বছরের পর বছর ধরে বধির অথবা বোবা মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় দাধকাইয়ের সামাজিক দৃশ্যপট বদলে গেছে।

৬৩ বছর বয়সী আলম হুসেন গ্রামটির সব থেকে বৃদ্ধ মূক-বধির ব্যক্তিদের মধ্যে একজন। ছবি: শরাফত আলী/আল জাজিরা

কীভাবে এটা শুরু হয়েছিল?

জম্মু ও কাশ্মীরের পার্বত্য ডোডা জেলায় অবস্থিত দাধকাই গ্রামটি ভারত-শাসিত কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগর থেকে প্রায় ২৮০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। এটি হিমালয় দিয়ে ঘেরা একটি প্রত্যন্ত গ্রাম।

গ্রামটিতে ঠান্ডা তাপমাত্রার পাশাপাশি বাতাস শুষ্ক এবং শীতকালে প্রচুর তুষারপাত হয়। এখানে ৩০০টি পরিবারের প্রায় আড়াই হাজার মানুষের বসবাস। বেশিরভাগ মানুষ মুসলিম গুজ্জর (ভারত, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আধা যাযাবর মানুষ) এবং তারা কৃষিকাজ অথবা পশুপালনের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে।

হানিফের মতে, দাধকাইতে মূক-বধির প্রথম ব্যক্তির ঘটনা ১৯০১ সালে রেকর্ড করা হয় যখন গ্রামবাসী ফয়েজি গুজ্জরের ছেলে এই ধরনের শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছিল। সময়ের সাথে সাথে এমন মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকে এবং ১৯৯০ সালে গ্রামটিতে মোট ৪৩ জন মূক-বধির লোকের হিসাব পাওয়া যায়। ২০০৭ সালে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৭৯ জনে। গত বছরের হিসাবে গ্রামটিতে এমন লোকের সংখ্যা ৮৩ জনে এসে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে গ্রামটির মোট জনসংখ্যা কীভাবে পরিবর্তিত হয়েছে তা নিয়ে কোন তথ্য নেই। সবচেয়ে বয়স্ক মূক-বধির গ্রামবাসীর বয়স প্রায় ৭০ এবং সবচেয়ে কনিষ্ঠ মানুষটির জন্ম ২০১৯ সালে। মূক-বধিরদের মধ্যে অধিকাংশই নারী।

হানিফ জানিয়েছেন, বিংশ শতকের শেষের দিকে বধির এবং বোবা দম্পতির সংখ্যা বাড়তে থাকে। এই অবস্থায় সম্ভাবনা আছে বাবা-মায়ের থেকে এই প্রতিবন্ধকতা সন্তানও পেতে পারে। এমনকি বাবা এবং মা দুজনের বাকশক্তি অথবা শ্রবণশক্তি স্বাভাবিক থাকলেও সন্তান মূক-বধির হতে পারে।

এই ক্রমবর্ধমান ঘটনাটি বোঝার উদ্দেশ্যে 'ইন্ডিয়ান জার্নাল অফ মেডিকেল রিসার্চ' থেকে ২০১৭ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণার অংশ হিসেবে দাধকাইয়ের গ্রামবাসীদের উপর জেনেটিক পরীক্ষা চালানো হয়। এতে দেখা যায়, জেনেটিক মিউটেশনের কারণে অটোফেরলিন নামক প্রোটিনের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এই প্রোটিনের ঘাটতি দেখা দিলে মানুষের শ্রবণশক্তি কমে যায়।।

'ইন্ডিয়ান জার্নাল অব হিউম্যান জেনেটিক্স' থেকে ২০১২ প্রকাশিত দুটো আলাদা গবেষণা থেকে দেখা যায়, সম্প্রদায়টির নিকট আত্মীয়দের মধ্যেই বংশবৃদ্ধির কারণেই পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে মুক-বধিরতা বেড়ে গেছে। দাধকাইয়ের মুসলিম গুজ্জররা স্থানীয় সম্প্রদায়ের মধ্যেই বিয়ের রীতি টকিয়ে রাখায় গ্রামটিতে এরকম মানুষের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

গ্রামবাসী বশির আহমেদের সাত সন্তানের মধ্যে তিন মেয়ে মূক-বধির। বশির তার সব সন্তানকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা দিতে চেয়েছিলেন কিন্তু মূক- বধিরদের জন্য সবচেয়ে কাছের স্কুলটি প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে জম্মু শহরে অবস্থিত।

তিনি বলেন, "গ্রামে যদি একটি সাংকেতিক ভাষার স্কুল থাকত তাহলে তাদের জন্য পরিস্থিতি অন্যরকম হত।"

সাংকেতিক ভাষার মাধ্যমে কথা বলে গ্রামটির মানুষ। ছবি: সাজাদ হামিদ

অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে যে ভাষার সূচনা

কয়েক দশক ধরে দাধকাইয়ের গ্রামবাসীরা তাদের নিজস্ব একটি সাংকেতিক ভাষা তৈরি করেছে। এখানে বসবাসকারী সকলেই এই ভাষা বুঝতে পারে। অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে এটি করা হয় এবং প্রতিটি অঙ্গভঙ্গি একটি স্বতন্ত্র অর্থ বহন করে।

'নারী' বোঝাতে গ্রামটিতে একজন নাকের পাশে নির্দেশ করা হয় কারণ গ্রামের নারীদের নাক প্রথাগত অলংকার পড়ার জন্য ছিদ্র করা। দাড়িতে হাত বুলিয়ে 'পুরুষ' অথবা 'বাব' শব্দটি বোঝানো হয়।

ছবি চাইতে গেলে তর্জনী দিয়ে বাতাসে একটা ফ্রেম আঁকার মাধ্যমে সেটি বোঝানো হয়। 'সৌন্দর্য' বোঝানোর জন্য হাতের তর্জনী ব্যবহার করে একটি অঙ্গভঙ্গি করা হয় যা সবাই বুঝতে পারে।

চার বছর বয়সী উসমান শফি গ্রামের মূক-বধির শিশুদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট এবং পরিবারের একমাত্র ব্যক্তি যার এই সমস্যা আছে। উসমানের বাবা মুহাম্মদ শফি (২৯) এবং মা শামীম কাওছার (২৬) মা কেউই মূক-বধির নন। উসমানের বড় বোনও মূক-বধির নয়।

উসমানের মা তাকে প্রতিটি শব্দ এবং চিত্রের জন্য সঠিক অঙ্গভঙ্গি শেখানোর উদ্দেশ্যে পরিবারের একটি ছবির বই ব্যবহার করেন। কিন্তু একটি সাংকেতিক ভাষার স্কুলের অনুপস্থিতিতে উসমানের মা সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন।

শামীম বলেন, "যেহেতু শিক্ষার কোনো সুযোগ নেই তাই সে (উসমান) হয়ত দর্জির কাজ শিখবে।"
মূক-বধির শিশুদের অতিরিক্ত যত্ন এবং সহায়তার প্রয়োজন হলেও দাধকাইয়ের দরিদ্র গ্রামবাসীদের পক্ষে সেটি সম্ভব হচ্ছে না। উসমানকে তার বড় বোন বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি শিখতে সাহায্য করে।

গ্রামবাসীরা শিখেছে কীভাবে মূক-বধির মানুষগুলোকে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা যায়। যখন একজন মূক-বধির গ্রামবাসী বাজারে যায় তখন নিয়ম হল, তার সাথে অন্য একজন গ্রামবাসী থাকে যে তার হাত শক্ত করে ধরে রাখে।

চার বছর বয়সী উসমান শফি (মাঝে) গ্রামের মূক-বধির শিশুদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট। ছবি: শরাফত আলী/আল জাজিরা

'তারা নিঃসঙ্গতাকেই ভাগ্য হিসেবে মেনে নেয়'

গ্রামের প্রধান হানিফ বলেন, বেশ কয়েক বছর আগে তাঁর নিজের মূক-বধির ছেলে আহমেদ ২০ বছর বয়সে মেডিকেল চেকআপের জন্য জম্মু শহরে যাওয়ার সময় বাসা থেকে পালিয়ে গিয়েছিল। ছেলেটি কয়েকদিন পরেই বাড়ি থেকে পালিয়ে যেত, জঙ্গলে ঘুরে বেড়াত এবং গাছের নিচে ঘুমিয়ে থাকতো।

হানিফ জম্মু শহরের সব জায়গায় ছেলের খোঁজ করলেও তাকে খুঁজে না পাওয়ায় পুলিশের কাছে রিপোর্ট করেছিলেন। তিনি স্থানীয় এক ধর্মীয় নেতাকে ঘটনার কথা জানান এবং নির্দেশনা চান।

ধর্মীয় নেতা তাকে তার ছেলের ফিরে আসার বিষয়ে আশ্বস্ত করেছিলেন এবং কয়েক দিনের মধ্যে হানিফ সংবাদপত্রের একজন সম্পাদকের কাছ থেকে একটি ফোন কল পেয়েছিলেন। সম্পাদক হানিফের ছেলের নিখোঁজ হওয়ার সংবাদটি প্রকাশ করেছিলেন। তিনি হানিফকে জানান তাঁর ছেলেকে খুঁজে পাওয়া গেছে এবং সে পুলিশের কাছে আছে। পরদিন খুব ভোরে  হানিফ তার ছেলের সাথে পুনরায় মিলিত হন এবং জড়িয়ে ধরেন।

হানিফ বলেন, "মূক-বধির ব্যক্তি অবিবাহিত হলে তার মধ্যে নির্ভরশীলতা এবং একাকিত্বের অনুভূতি হয় যা তার জীবনকে কঠিন করে তুলে। অনেকেই এই নিঃসঙ্গতাকে ভাগ্য হিসেবে মেনে নিচ্ছে এবং জীবন সঙ্গী ছাড়াই জীবন পার করে দিচ্ছে।"

তাঁর তিন ছেলের মধ্যে দুজন মূক-বধির এবং আহমেদ এখনো অবিবাহিত। হানিফের দুই মেয়েও মূক-বধির।

দাধকাইয়ের মূক-বধির মানুষদের জন্য অতীতের তুলনায় বর্তমানে বিয়ে করা সহজ। হানিফ বলেছেন, মূক-বধির গ্রামবাসীর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়তে থাকায় আক্রান্ত এবং আক্রান্ত নয় এমন মানুষদের মধ্যে বিয়ে দেওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাচ্ছে।

অনেক ক্ষেত্রে যেখানে একজন মূক-বধির এবং অন্যজন শুনতে ও কথা বলতে পারে এরকম দম্পতির সন্তান মূক-বধির হয় না। এটি গ্রামবাসীদের অনেক বছর ধরে চলে আসা 'কলঙ্ক' কাটিয়ে উঠার সাধারণ এক পদ্ধতি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পুরুষদের তুলনায় মূক-বধির নারীর সংখ্যা বেশি থাকায় প্রথমদিকে পুরুষদের এমন নারীকে বিয়ের জন্য রাজি করানো কঠিন ছিল। হানিফ জানিয়েছেন, এটি দূর করতে গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠরাই উদ্দোগ নিয়েছেন। হানিফের মূক-বধির ছেলে এবং মেয়ে এমন দুজনকে বিয়ে করেছে যাদের মূক-বধিরতা নেই। তাদের সন্তানদের কেউই মূক-বধির হয়ে জন্মায়নি।

মূক-বধির শিশুদের অতিরিক্ত যত্ন এবং সহায়তার প্রয়োজন হলেও দাধকাইয়ের দরিদ্র গ্রামবাসীদের পক্ষে সেটি সম্ভব হচ্ছে না। ছবি: সাজাদ হামিদ

'আমরা জন্মের তিনদিনের মধ্যেই বলে দিতে পারি'

দাধকাইতে বাবা-মা এমন একটি শিশুর জন্য প্রার্থনা করেন যে মূক-বধির হবে না। মূক-বধির শিশুদের পরিবারের উপর নির্ভরশীল থাকার সম্ভাবনা বেশি। তারা নিয়মিত স্কুলে যেতে পারে না এবং তাদের চাকরির সম্ভাবনা সীমিত। মূক-বধির হিসেবে জন্ম নেওয়া শিশুদের শারীরিক বিকাশ কম হতে পারে।

দাধকাই গ্রামে একটি ভালো হাসপাতালের অভাব রয়েছে। বাচ্চা প্রসবের জন্য গ্রামবাসীকে দাঁইয়ের উপর নির্ভর করতে হয়। ২০২০ সালে মূল রাস্তাটি গ্রামের সাথে সংযুক্ত হওয়ার আগে প্রসবকালীন মহিলাদের খাটে করে পাহাড় থেকে নামিয়ে কয়েক কিলোমিটার হেঁটে তারপর মূল রাস্তায় গিয়ে গাড়িতে করে হাসপাতালে নিতে হত।

নিকটবর্তী গান্দোহ গ্রামের একটি হাসপাতালের ডাক্তাররা বলেছেন, শিশুর বয়স প্রায় দুই বছর না হওয়া পর্যন্ত সে মূক-বধির হবে কি না তা বলা যায় না। এই সময়ের মধ্যে বেশিরভাগ শিশু কথা বলতে পারে।

শ্রীনগর-ভিত্তিক ডাক্তার মুদাসির উল ইসলাম বলেছেন, মূক-বধিরতা নির্ণয় করতে "অবশ্যই উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে স্ক্রিনিং করতে হবে।" 

দাধকাইয়ের মানুষ বিশ্বাস করে, তারা দ্রুত বলে দিতে পারে নবজাতকটি মূক-বধির হবে কিনা। তারা বলে, এটি জন্মের তিন দিনের মধ্যে শিশুর কানে একটি প্রার্থনা পাঠ করেই এটি বুঝে ফেলা যায়।

গ্রামের ফার্মাসিস্ট গোলাম নবী বলেন, "শিশুটি যদি অসুখী হয় তাহলে সে চোখ খুলবে, কান্নাকাটি করবে এবং দুধ পান করবে।" কিন্তু মূক-বধির শিশুরা এমন আচরণ করে না।

এই বিশ্বাসের কোন সুস্পষ্ট ভিত্তি না থাকলেও গ্রামবাসীরা বলেছেন, কোন শিশু মূক-বধির হবে তা নির্ধারণ করতে এটি একটি নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি।

নবী বলেন, "এমন ঘটনা ঘটেছে যেখানে হাসপাতালের কর্মীরা নবজাতককে মূক-বধির কি না সে সম্পর্কে কোন ধারণা ছিল না। আমরা আমাদের গ্রামে এটি নিশ্চিত করেছি।"

ছবি: সাজাদ হামিদ

দাধকাইয়ের বাহিরের জীবন

২০ বছর বয়সী পারো বানুর পরিবার সহ আরো কিছু পরিবার ২০০০ সালের মাঝামাঝি 

তিনি বলেছেন যে তার পরিবার কয়েক ডজনের মধ্যে ছিল যারা ২০০০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে সশস্ত্র গোষ্ঠীর সহিংসতা থেকে বাঁচতে দাধকাই থেকে পালিয়ে গিয়েছিল। পরবর্তীতে তারা ভারতের পাঞ্জাবে বসতি স্থাপন করেছিল।

পারো বানুর প্রাক্তন প্রতিবেশী ফারুক আহমেদও ২০০৫ সালে তার পরিবার নিয়ে পাঞ্জাবে চলে যান। কিন্তু তিনি প্রায়ই  গ্রামে ফিরে আসেন এবং প্রতিবেশীদের সাথে সাংকেতিক ভাষায় কথা বলেন ও গ্রামে ঘুরে বেড়ান।

ফারুক এবং তার দুই ভাই মূক-বধির। আহমেদ বলেছেন, গ্রামের বাইরে বসবাস করে তিনি এমন কিছু দক্ষতা অর্জন করেছেন যা তাকে দৈনন্দিন জীবনে সাহায্য করে। তিনি পাঞ্জাব থেকে মোটরসাইকেলে একা ভ্রমণ করেন, নেভিগেশনের জন্য গুগল ম্যাপ ব্যবহার করেন এবং ভিডিও কলের মাধ্যমে তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করেন।

মোটরসাইকেল চালানোর সময় তিনি ঘন ঘন 'সাইড মিরর' পরীক্ষা করেন কারণ তিনি হর্ন বা অন্যান্য শব্দ শুনতে পান না।

ফারুক আহমেদ বলেছেন, দাধকাইয় থেকে পাঞ্জাবে নেভিগেট করা সহজ কারণ "আমাদের কাজের জন্য পাহাড়ে উঠতে বা নামতে হয় না। দাধকাই গ্রামের তুলনায় এখানে অবকাঠামো ভালো এবং সুযোগ বেশী কারণ গ্রামে লোকেরা শুধু গবাদি পশুর ব্যবসা করে।"

 


অনুবাদ: তাসবিবুল গনি নিলয়


 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.