চাবি—সত্য খোঁজার বাড়ি

ফিচার

21 December, 2023, 06:20 pm
Last modified: 28 December, 2023, 12:27 am

কংক্রিট, কাচ আর কাঠের তৈরি একটি দোতলা বাড়ি। পাশ দিয়ে বয়ে গেছে শীতলক্ষ্যা নদী। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার বিরাবো বাজারের কাছেই এর অবস্থান। বাড়িটির নাম 'চাবি'। বাংলায় যার অর্থ, কিছু চাওয়া। 

যান্ত্রিক শহুরে জীবনে থাকতে গিয়ে প্রায়ই আমরা হাঁপিয়ে উঠি। আর তখন এমন একটি জায়গা খুঁজে বেড়াই, যেখানে গেলে নিজেকে জানা যাবে, বোঝা যাবে। বাড়িটির স্থপতির মতে, চাবি কোনো রিসোর্ট বা বিশ্রামঘর নয়। বরং বাড়ির বিকল্প কিছু। যেখানে যেতে ইচ্ছে হয়, থাকতে ইচ্ছে হয়। হয়তো ঘরে ফিরতে ইচ্ছে হচ্ছে না, মন চাইলেই চলে যাওয়া যায়—এমন একটি জায়গা 'চাবি' বাড়ি।

পারিবারিক বিকল্প বাড়ি

একটি বসতবাড়ির আদলেই বানানো হয়েছে 'চাবি'। প্রায় চার বিঘা জমির ওপর বিস্তৃত এ জায়গাটি ছিল মূলত সমতল কৃষিজমি। গোটা জায়গাটি আশপাশের ভূমির তুলনায় একটু উঁচু করে স্থাপনাটি করা হয়েছে। এতে যেমন জমি কেটে কৃত্রিম সুইমিংপুল বানানো হয়েছে, তেমনি কৃত্রিম পাহাড়, পুকুরও বানানো হয়েছে। বাড়িটির একটি অংশ দাঁড়ানো পাহাড়ের ওপর। ভিতর থেকে মাটি উঁচু করে এই কৃত্রিম পাহাড়টি বানানো হয়েছে। সে পাহাড়ের ওপরে রাখা হয়েছে একটি শয়নকক্ষ বা বেডরুম। যেখানে বাড়ির মালিকের একমাত্র কন্যা বেড়াতে এলে থাকেন।

এছাড়া বাড়িতে মোট পাঁচটি বেডরুম। অতিথিদের জন্য দুটি, একটি মাস্টারবেড, ছেলের জন্য একটি ও মেয়ের জন্য একটি। নিচতলায় ছেলের বেডরুম, একটি হোম থিয়েটার, একটি খাবারঘর, একটি সুইমিং পুল, একটি ব্যায়ামাগার বা জিমনেশিয়াম, একটি অতিথি রুম, রান্নাঘর ও কর্মচারীদের জন্য একটি আলাদা ঘর রয়েছে। পুরো জায়গাটির সবকিছুই প্রকৃতিকে ভেঙে মানুষের হাতে গড়া। তবু স্থপতি এখানে প্রকৃতি, মানব আবেগ এবং অনুভূতি নিয়ে কাজ করতে পেরেছেন। 

একদমই শহরের বাইরে একটি গ্রামে অবস্থিত এই চাবি হাউজ। ছবি: মারুফ রায়হান

আকাশ আর সূর্যকে তিনি যতটা সম্ভব যুক্ত করতে চেয়েছেন

বসার ঘরের পাশেই রয়েছে ছোট্ট একটি জলধারা। উপরে তার উন্মুক্ত আকাশ, যাতে শুকনো আবহাওয়ায় জলের ওপর রোদের আলো পড়ে। আবার বর্ষার দিনে আকাশ থেকে বৃষ্টিরা নেমে যোগ দেয় সেই জলধারায়। কৃত্রিম আর প্রাকৃতিকের এক অনন্য মেলবন্ধনে সূর্য বা বৃষ্টি কোনোটাকেই দূরের বলে মনে হবে না।   

দিনের আলো ঢোকার জন্য পুরো বাড়িতেই সূর্যের আলো প্রবেশের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বাড়িতে পাঁচটি স্নানঘর রয়েছে এবং স্নানঘরেও যেন আলো না জ্বালাতে হয়, সেজন্য একটি পাশ রাখা হয়েছে খোলা ছাদের নিচে। কেউ চাইলে স্নানঘরে দাঁড়িয়েই বৃষ্টিতে গোসল করতে পারবে। আবার চাইলে সে অংশের দরজা বন্ধ করেও রাখতে পারবে, বিশেষ করে রাতের বেলা পোকামাকড়ের ভয় যখন থাকে। বৃষ্টিতে ছাদে খোলা আকাশের নিচে যেন ভিজতে অসুবিধা না হয় তাই মেয়েদের জন্য আলাদা ভেজার জায়গা করা আছে। আকাশ আর সূর্যকে তিনি যতটা সম্ভব যুক্ত করতে চেয়েছেন। সে কারণে প্রকৃতির রূপ পাল্টানোর সাথে সাথে বাড়িটিরও রূপ পালটায়।

আভিজাত্যের বদলে প্রাধান্য দিয়েছেন আবেগ, অনুভূতিকে আর অভিজ্ঞতাকে

বাড়ির পেছনে আছে একটি পুকুর। পুকুরটির পাশ দিয়ে একটি সরু অপ্রশস্ত হাঁটার পথ। ছোট এই জায়গাটি ধরে হাঁটতে থাকলে একসময় একটি বড় খোলা জায়গা চলে আসে, যা একটি সংকীর্ণ, আটকে থাকার পরিবেশ থেকে একটি খোলামেলা উন্মুক্ত পরিবেশে ঢোকার অনুভূতি দেয়। এই অভিজ্ঞতা বা অনুভূতিগুলোই স্থপতি দিতে চেয়েছেন তার ক্লায়েন্টকে। তিনি বলেন, 'এই যে প্রথমে একটু চিপা জায়গা, এরপর একটা বড় জায়গা, তখনই একজনের মনে হবে, যাক, হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। এই অনুভূতিগুলো নিয়েই আমাদের তৈরি করে দিতে হয়।'

পারিবারিক বসার ঘর। ছবি: মারুফ রায়হান

স্থপতি এনামুল করিম নির্ঝর এর আগে বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট, বাড়িঘর ও ব্যবসায়িক ভবন নিয়ে কাজ করেছেন। আভিজাত্য এবং ব্যয়বহুল উপাদান নিয়েও কাজ করেছেন। তবে 'চাবি' নিয়ে তার কাজটি আগের সব থেকেই স্বতন্ত্র ও ভিন্নধর্মী। যেখানে আভিজাত্য বা ধনাঢ্য উপকরণের বদলে তিনি প্রাধান্য দিয়েছেন আবেগ, অনুভূতি আর অভিজ্ঞতাকে। 

এনামুল করিম নির্ঝর বিশ্বাস করেন, ফর্ম ফলোজ ফিকশন, অর্থাৎ সাহিত্য বা সংস্কৃতির সাথে স্থাপত্যকে সংযুক্ত করা। স্থাপত্য মানে স্রেফ কংক্রিট, বালু, কাঠের সমন্বয়ে তৈরি একটি জড় অবয়বই না, স্থাপত্য নিজেই একটি শিল্প। কিন্তু সব স্থাপত্য শিল্পের পর্যায়ে পৌঁছতে পারে না। সব ভবন কবিতার মতো হয় না। একটি বাড়ির স্থাপত্যের ওপর নির্ভর করে সে বাড়ির মানুষদের স্বাস্থ্য, মন, রুচি সংস্কৃতি। কেননা একটা বাড়িতে যারা থাকবে, তাদের অনুভূতি আর সংস্কৃতির সঙ্গে মিলিয়েই তৈরি হয় বাড়িটির গঠন কাঠামো। তাই স্থপতির দর্শন এবং হাতের কাজ দুটোতেই থাকতে হয় নিখুঁত বিশ্লেষণ। 

চিরাচরিত মাস্টারবেড নিয়ে ভিন্ন কিছু করতে চেয়েছিলেন 

মানুষকে সমৃদ্ধ করা একজন স্থপতির কাজ। সেজন্য মানুষকে অভিজ্ঞতা দিতে হবে। অন্যান্য বাড়ি থেকে 'চাবি' বাড়িটির অন্যতম স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যই হলো এটি মানুষের অনুভূতি, অভিজ্ঞতা নিয়ে কাজ করে। 'এক্ষেত্রে বাড়িটির মালিক এ টি এম মাহবুবুল আলম চৌধুরী এবং তার সহধর্মিনী নাসিমা আফরোজ চৌধুরী আমাকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। তাই তাদের বাড়ি যেন তথাকথিত বাড়ি থেকে ভিন্ন রকম কিছু হয়, সেই চেষ্টা করেছি'-বলছিলেন স্থপতি এনামুল করিম নির্ঝর।

গন্তব্য এক কিন্তু পথ ভিন্ন। ছবি: মারুফ রায়হান

যেমন ঘরের সবচেয়ে বেশি ব্যক্তিগত এবং নিরাপত্তাবেষ্টিত জায়গা হলো বেডরুম। সবসময় কি বেডরুম একরকম হবে? বেডরুমে এখন আভিজাত্য ঢুকে গিয়ে নান্দনিকতা এসেছে ঠিকই। কিন্তু চলে গেছে এর ভেতরের অর্থ। আবার বেডরুম হলো ঘরের এমন একটি জায়গা যেখানে চাইলেই কেউ যেমন ঢুকতে পারবেনা, আবার বাইরে বেরোতে হলেও অন্যান্য ঘর পার হয়ে যেতে হবে। 

এই চিরাচরিত মাস্টারবেড নিয়ে ভিন্ন কিছু করতে চেয়েছিলেন স্থপতি নির্ঝর। মাস্টারবেডের বারান্দা এমনভাবে এঁকেছেন, যেন নিরাপত্তা বা গোপনীয়তার নাম দিয়ে প্রকৃতি থেকে দূরে সরে না যায় ঘরটি। কেউ যদি চায় নিজের মতো থাকতে, সেই কাঙ্ক্ষিত নির্জনতার ব্যবস্থাকরা হয়েছে। আবার চাইলে পুরো বাড়ির এপিঠ-ওপিঠ ঘুরে বেড়াতে পারে, কাউকে বিরক্ত না করেই। এনামুল বলেন, 'হয়তো বাইরে পূর্ণিমা, ইচ্ছে হলেই যেন বারান্দা দিয়ে সোজা নেমে পরা যায় খোলা আকাশের নিচে। আবার কেউ যদি আসতে চায়, তো আসুক। কোনো বাঁধা বা গোপনীয়তার জোরাজুরি নেই এখানে।' 

দিনের আলো যেন ঢুকতে পারে, সেজন্য পুরো বাড়িজুড়েই রয়েছে কাচের ব্যবহার। সেই সাথে বাড়তি ছাদ রাখা হয়েছে, যেন তাপ না এসে আলোটুকুই আসে।

সুখ-দুঃখের মাঝখানে ফাঁদ, বাস্তবতার নিয়মিত স্বাদ

একমাত্র কন্যার ঘরের প্রবেশদ্বার এমনভাবে রাখা হয়েছে, যেন পাহাড় বেয়েই ঘরের ভিতর প্রবেশ করা যাবে। আবার চাইলেই ঘর থেকেই বেরিয়ে পাহাড়ে নেমে যাওয়া যাবে। পাহাড়ের ওপরেই বেডরুমের সাথে লাগোয়া সিঁড়ি যুক্ত আছে, যেখানে চাইলে কেউ বসে থেকে পাহাড়ের স্বাদও নিতে পারবে। সুতরাং গন্তব্য এক হলেও, পথচলা ভিন্ন। এনামুল মনে করেন, এখানেই যুক্ত আছে অনেকগুলো সম্ভাবনার। আছে কথোপকথন বা ডায়ালগ, সে হোক মুহূর্তের সঙ্গে, সমমনা মানুষের সঙ্গে কিংবা নিজের সঙ্গে। স্থাপত্যে আভিজাত্য বা টাকার প্রাচুর্য্য ঢুকে গিয়ে সবকিছুর অর্থ খোঁজা যেমন বন্ধ হয়ে গেছে। তেমনি সম্পর্কগুলোও নিস্তেজ হয়ে গেছে। তিনি চেয়েছিলেন এ বাড়িতে ভাবনাগুলো নিয়ে আসতে।

চাইলে বাথরুমে থেকেই বৃষ্টিতে ভেজা যাবে। ছবি: মারুফ রায়হান

বাড়ির চারদিকে কংক্রিটের উঁচু দেয়াল। কিন্তু সেই দেয়াল যেন চিন্তার সূত্রে বাঁধা না হয়ে দাঁড়ায় তাই পুরো বাড়িতেই দেয়ালে দেয়ালে আছে পঙক্তি। একে দেয়াল লিখনও বলা যেতে পারে। যেমন, সুখ-দুঃখের মাঝখানে ফাঁদ, বাস্তবতার নিয়মিত স্বাদ। ধনাঢ্য ও আভিজাত্যকে না ছুঁয়ে জড়বস্তুগুলোর মধ্যে কীভাবে প্রাণ নিয়ে আসা যায়, সে চেষ্টাই করে গেছেন স্থপতি এনামুল।     

পারিবারিক যোগাযোগ বা সম্পর্কের চর্চা

আবার বাড়িটিতে রাখা হয়েছে দুধরনের সিঁড়ি। টানা সিঁড়ি ও জানা সিঁড়ি। যে সিঁড়ি একবারে গন্তব্যে নিয়ে গেল সেটি টানা সিঁড়ি। আর যেটি থেমে থেমে বা নিয়মিত সিঁড়িগুলোর মতো, সেগুলো জানা সিঁড়ি। সিড়িগুলো কংক্রিট আর কাঠের তৈরি। পাশে কাচের দেয়াল, যেখানে দিনে আলো আছড়ে পড়ছে। এভাবে কংক্রিট আর কাচের এক দাম্পত্য তৈরি করেছেন, যেখানে অদৃশ্য বন্ধন হিসেবে কাজ করছে কাচের দেয়াল।  

আবার বাড়ির দোতলায় বেডরুমগুলো সাজানো হয়েছে মাঝে সরু লম্বা করিডোর দিয়ে। দু পাশে বেডরুম আর মাঝ দিয়ে চলে গেছে লম্বা সরু করিডোর। এ নকশাটিও তিনি করেছেন মানুষে মানুষে যোগাযোগ বা সম্পর্কের চর্চা হিসেবে। তিনি বলেন, 'আমি যখন লম্বা করিডরের এপাশে, আমি তো দেখতে পাচ্ছি না ওপাশে কী হচ্ছে। তখন আমি ছুটে গিয়ে দেখব কে যায় ওপাশে। এই যে মুখোমুখি হওয়া, দেখা হওয়া- এটা তো সব খোলামেলা রাখলে সম্ভব হতোনা। তখন একরুম থেকে বসেই দেখা যেত। উঠে গিয়ে এই যে যোগাযোগটা, এটাই তো চাই।'   

প্রায় চার বিঘা জমির ওপর অবস্থিত এই বাড়ি। ছবি: মারুফ রায়হান

মেমরি টেমপ্লেট 

বাড়ির আরেকটি দর্শনীয় জায়গা হলো মেমরি টেমপ্লেট বা স্মৃতি প্রত্নতত্ত্ব। মাটির নিচে রাখা আছে রেডিও, ক্যাসেট প্লেয়ারের মতো বিভিন্ন পুরোনো সামগ্রী। আর উপরে প্রতিটির ওপর স্পট আলোর ব্যবস্থা আছে, সেই সাথে এক এক জায়গায় পা দিলেই বেজে উঠবে মিউজিক। অনেকটা জাদুঘরের মতো। মূলত পুরো ঘরের মেঝেতে ব্যবহার করা হয়েছে ম্যাট টাইলস। আর প্রাচীন এসব সামগ্রী দেখার সুবিধার্থে সে অংশের মেঝেতে ব্যবহৃত হয়েছে গ্লাস। নির্ঝর এর নাম দিয়েছেন স্মৃতি প্রত্নতত্ত্ব বা মেমরি টেমপ্লেট। এর আগে এমন স্মৃতি প্রত্নতত্ত্ব নিয়ে কাজ করেছেন ইংল্যান্ডে। তবে সে অনেকদিন আগেই।

ইচ্ছে হলে শ্রোতাহীন খালি মঞ্চেই বক্তৃতা

বাড়ির নিচতলায় একটি বসার ঘর, রান্নাঘর, খাবারঘর আছে। একান্ত পারিবারিক আড্ডার জন্য দোতালয় রয়েছে আরেকটি বসার ঘর। প্রথম তলায়, যেখানে বৃষ্টি উপভোগ করা যায় এবং কেউ চাইলেই বাইরে বসে বৃষ্টি দেখতে পাবে, এমন প্রবেশ ব্যবস্থাও আছে। এছাড়াও নিচে গেস্ট রুম এবং রান্নাঘরের সাথে খোলা লম্বা জায়গাটি চারদিকে ছড়িয়ে গেছে। যেখানে পারিবারিক বসার ঘর।

পেছনে পুকুর, দেয়ালে লেখা আছে পঙক্তি। ছবি: মারুফ রায়হান

বাড়ি যেমন নিজের কথা বলার জায়গা, তেমনি লুকিয়ে থাকারও জায়গা। সেখানে ঠিকানা-ডেস্ক নামে একটি পারিবারিক কাঠের তৈরি মঞ্চ আছে। পারিবারিক আসরে কেউ কিছু জানাতে চাইল, মঞ্চে উঠে বলবে। পারিবারিক বসার ঘরে একটি জায়গা নির্দিষ্ট করা আছে, সাথে আছে মাইক্রোফোন সেটাপ। যাতে কারও কিছু বলার থাকলে সেখানে গিয়ে বলতে পারে। ছাদে একটি আলাদা জায়গা আছে বক্তৃতা দেবার জন্য। হয়তো আলমগীর কবিরের সূর্য্যকন্যা সিনেমার নায়ক লেনিনের মতো ইচ্ছে হলো শ্রোতাহীন খালি ময়দানেই বক্তৃতা দেবে, তা-ও পারবে। অর্থাৎ নিজের সঙ্গে নিজের সময় কাটানোর বা ব্যক্তিগত ইচ্ছেগুলোকে গুরুত্ব দিতে চেয়েছেন স্থপতি এনামুল করিম নির্ঝর।  

বাইরে থেকে প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকে সামনে আরও দুটো প্রবেশদ্বার পড়ে। একটি দিয়ে নিচতলায় বসার ঘরে ঢোকা যাবে, অপরটি দিয়ে ঢুকে পড়া যাবে সোজা পারিবারিক পরিসরে। ঢোকার আগেই দরজার পাশে রাখা আছে একটি বসার স্থান। যেন দরজা আছে বলেই ঢুকে যেতে হবে, এই চিরাচরিত বাঁধা চিন্তাগুলো থেকে বেরিয়ে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ইচ্ছে হলো তো ঢুকে গেলাম, হলো না তো বাইরে কিছুক্ষণ বসে এরপর ঢুকলাম!

চিরাচরিত প্রথা ভেঙে বেডরুম। ছবি: মারুফ রায়হান

সক্রেটিস বলেছিলেন 'নো দাইসেলফ'। কিন্তু নিজেকে কী করে জানা যাবে? জানার জন্যও তো পরিবেশ দরকার, মুহূর্ত দরকার। আর সেজন্যই এনামুল চেয়েছিলেন মুহূর্ত, পরিবেশ তৈরি করে দিতে। তাই কাজ করেছেন মানসিক মাত্রাগুলোকে নিয়ে। তার মতে, চাবি কেবলই প্রশান্তির বা আনন্দের জায়গা নয়। বরং মূলত এটি উদযাপনের বাড়ি। তা সুখ হোক, দুঃখ হোক, একাকীত্ব হোক বা দলবেঁধে হোক। এখানে এসে অনেক কিছু ভাবতে পারবে, অভিজ্ঞতা হবে, নতুন মূহুর্ত তৈরি করবে। এনামুল বলেন, 'কেউ এই বাড়িটায় গিয়ে যখন বলেন, "কেমন যেন লাগে" "মন খারাপ লাগে" 'হারায় যাই", তখন ভালো লাগে, আমি আনন্দ পাই। কারণ কিছু দিয়ে সংজ্ঞায়িত করা যাবে না, এমন একটি বাড়িই তো করতে চেয়েছিলাম।' 

'বাড়ি আসলে কী? শুধু রাত্রি যাপন, বিশ্রাম কিংবা সংসার করার জায়গা? নাকি শো-অফ? সেখানে কি সত্য-শান্তি-তৃপ্তির অস্তিত্ব থাকবে না?' কথাগুলো বলছিলেন বাড়ির প্রধান স্থপতি এনামুল করিম নির্ঝর। 'বাড়ির মালিক এ টি এম মাহবুবুল আলম চৌধুরী এবং তার সহধর্মিনী নাসিমা আফরোজ চৌধুরী আমাকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। তাই তাদরে বাড়ি যেন তথাকথিত বাড়ি থেকে ভিন্ন রকম কিছু হয়, সেই চেষ্টা করেছি।'

দোতলায় দুপাশে বেডরুমগুলো। ছবি: মারুফ রায়হান

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.