ইটের মতো বড় মোবাইল থেকে আইফোন — যে ফোনগুলো আমাদের জীবনকে বদলে দিয়েছে

ফিচার

টিবিএস ডেস্ক
30 May, 2023, 09:40 pm
Last modified: 30 May, 2023, 09:43 pm
বিশালাকৃতির ভারী ফোন থেকে শুরু করে হাল আমলের আপাদমস্তক পর্দা লাগানো স্মার্টফোন — গত কয়েক দশকে মোবাইল প্রযুক্তির অবিশ্বাস্য পরিবর্তন ঘটেছে। এ সময়ে আমরা পেয়েছি মোবাইল প্রযুক্তিতে নতুন নতুন যুগের সূচনা করা বেশ কয়েকটি ফোন। এরকম কয়েকটি ফোনের কথা জানিয়েছে স্প্যানিশ গণমাধ্যম এল পাইস।

প্রায় অর্ধশত বছর আগে, ১৯৭৩ সালের ৩ এপ্রিল প্রথম মোবাইল ফোনকলটি করা হয়। মটোরোলার ভাইস প্রেসিডেন্ট ও তখনকার সময় কোম্পানিটির প্রধান উদ্ভাবক মার্টিন কুপার ডায়নাট্যাক ৮০০০এক্স মোবাইল ব্যবহার করো বেল ল্যাবস-এর এক গবেষক জোয়েল এঞ্জেলকে ওই ফোনটি করেছিলেন।

ডায়নাট্যাককে প্রথম আদর্শ মোবাইল ফোন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তার আগ পর্যন্ত মোবাইল ফোনগুলো একটি আলাদা কেসে বহন করতে হতো। কেবল রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়িক নির্বাহী কর্মকর্তারাই এ ফোনগুলো ব্যবহার করতেন। ওগুলো দিয়ে কেবল ফোন করা যেত, ফোন রিসিভ করার কোনো উপায় ছিল না।

কিন্তু মটোরোলার ২.৫ পাউন্ডের ডায়নাট্যাক একহাতে ধরেই ব্যবহার করা যেত। প্রায় ১০ ঘণ্টা চার্জ দেওয়ার পর এটি এক ঘণ্টা পর্যন্ত ব্যবহার করা যেত।

৫০ বছর পর আজকের দিনে মোবাইল ফোনের দুনিয়ায় অভূতপূর্ব বিবর্তন এসেছে। ফোনগুলো হয়েছে পাতলা, ঝকঝকে আর জটিল (যদিও ব্যবহার সহজ)। স্মার্টফোন নামক মোবাইল ফোন আজকাল কথা বলার চেয়ে অন্য কাজেই বেশি ব্যবহার করা হয়।

মোবাইল এখন আমাদের জীবনযাপনের সঙ্গে এমনভাবে জড়িয়ে আছে যে, মোবাইলের সঙ্গে সম্পর্কিত আলাদ একটি ফোবিয়াই তৈরি হয়েছে। নোমোফোবিয়া নামক এ ফোবিয়ায় আক্রান্তরা নিজেদের সঙ্গে মোবাইল না থাকার আতঙ্কে থাকেন।

গত পাঁচ দশকে কিছু মোবাইল এ প্রযুক্তির ধারণাকে নতুন নতুন স্তরে উন্নীত করেছে। সেলফোনের এ বিবর্তন প্রযুক্তির ইতিহাসের যেমন অংশ, তেমনি এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে অনেক ব্যবহারকারীর আবেগও।

নকিয়া মবিরা সিটিম্যান (১৯৮৭) — দ্য ব্রিক

নকিয়ার হেডকোয়ার্টার ফিনল্যান্ডে এ ফোনটি 'গর্বা' নামে পরিচিত ছিল। কারণ, ১৯৮৯ সালে হেলসিংকি থেকে মস্কোতে ফোন করার জন্য এ মোবাইল ব্যবহার করেছিলেন সোভিয়েত ইউনিয়নের সাবেক প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্বাচেভ।

নকিয়া মবিরা সিটিম্যান (১৯৮৭)। ছবি: মিরতা রোহো

নকিয়ার এ ফোনটিই প্রথম ফোন, যেটির কোনো বহনকারী কেস ছিল না। ১.৭ পাউন্ডের এ ফোনটিতে ছোট একটি পর্দা, রিংগারের শব্দ কমানো-বাড়ানোর প্রযুক্তি ছিল। দাম বেশি হওয়ায় এ ফোন কেবল বড় বড় লোকেরাই ব্যবহার করতেন।

নকিয়া ৩৩১০ (২০০০) — নয় ভঙ্গুর

এক সময় প্রচলিত ছিল নকিয়া ৩৩১০ কোনোভাবেই নষ্ট করা সম্ভব নয় — না আছাড় দিয়ে, পানিতে ভিজিয়ে, বা বারবার আঘাত করে। নকিয়ার যেসব ফোন সাধারণ জনগণের মধ্যে সহজলভ্য হয়েছিল, তার মধ্যে প্রথমদিককার ফোন ছিল ৩৩১০।

যে বছর নকিয়া ৩৩১০ বাজারে আসে, তখন মোবাইলের বাজার কেবল মটোরোলা ও নকিয়ার আধিপত্য ছিল। ৩৩১০ এত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল যে সারাবিশ্বে এ ফোনটির ১২৬ মিলিয়ন ইউনিট বিক্রি হয়। অবশ্য পরে নকিয়া ১১০০ এসে এ রেকর্ড ভেঙে দেয়, এটি মোট বিক্রি হয় ২৫০ মিলিয়ন ইউনিট।

নকিয়া ৩৩১০ (২০০০)। ছবি: মিরতা রোহো

৩৩১০-এ কল করার সুবিধা ছাড়াও ছিল ক্যালকুলেটর, স্টপওয়াচ ও চার চারখানা গেম। এর মধ্যে একটি গেম ছিল বিখ্যাত স্নেক টু গেম। ২০১৭ সালে নতুন করে এ ফোনটির একটি আধুনিক সংস্করণ বাজারে ছাড়া হয়েছিল।

মটোরোলা ভি৩ (২০০৪) — দ্য রেজর

মটোরোরাল এ ফোনটি রেজর নামেই বাজারে বিক্রি হয়। ২০০৪ সালে অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি এ মটোরোলা ফোনটি বাজারের সবচেয়ে পাতলা ফোন ছিল। ফোনটি এতই জনপ্রিয় ছিল যে বিয়ন্সের ভিডিও, হাউ আই মেট ইওর মাদার সিরিজ ও দ্য ডেভিল উইয়্যার্স প্রাডা সিনেমাতে এটির দেখা মিলেছিল।

মটোরোলা ভি৩ (২০০৪)। ছবি: মিরতা রোহো

ব্ল্যাকবেরি কার্ভ ৮৫২০ (২০০৯) — লেখালেখির হাতিয়ার

বড় ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন কোম্পানিদের কথা মাথায় রেখে ব্ল্যাকবেরি কার্ভ ৮৫২০ তৈরি করা হয়েছিল। এ মোবাইলের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় ছিল এর ৩৫টি বোতামসমৃদ্ধ কোয়ার্টি কিবোর্ড। ফোনটি দিয়ে লেখার কাজটা বেশ আরামে সারা যেত।

এ ফোনের অন্যতম সেলিব্রিটি ব্যবহারকারীদের মধ্যে ছিলেন বারাক ওবামা, কিম কার্দাশিয়ান, ও অ্যাঙ্গেলা মার্কেল। এত জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও ব্ল্যাকবেরি পরিবর্তিত সময়ের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারেনি। অবশেষে ২০২২ সালের ৪ জানুয়ারি স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যায় কোম্পানিটি।

ব্ল্যাকবেরি কার্ভ ৮৫২০ (২০০৯)। ছবি: মিরতা রোহো

আইফোন (২০০৭) — সব বদলে দেওয়া ফোন

২০০৭ সালের ৯ জানুয়ারি স্টিভ জবস মোবাইল দুনিয়ায় এক অভূতপূর্ব চমক আনেন। সম্পূর্ণ স্পর্শ দ্বারা পরিচালিত মোবাইল আইফোন উন্মোচন করেন তিনি। আইফোনের হাত ধরেই মোবাইল ফোন ধীরে ধীরে জিপিএস ডিভাইস, ক্যামেরা, এমপিথ্রি প্লেয়ার ইত্যাদিতে পরিণত হয়।

আইফোন ৪ (২০১০)। ছবি: মিরতা রোহো

স্যামসাং গ্যালাক্সি এসথ্রি (২০১২) — প্রতিযোগিতায় নতুন মুখ

১৯৯০-এর দশকে মোবাইল বাজার যেমন নকিয়া ও মটোরোলার দখলে ছিল, ২০১২ সালে এ লড়াইটা চলেছিল অ্যাপল ও স্যামসাংয়ের মধ্যে। মানুষ তখন হয় অ্যান্ড্রয়েড ফোন অথবা আইফোন ব্যবহার করত। আইফোনের জবাব এসেছিল দক্ষিণ কোরিয়া থেকে — স্যামসাংয়ের মাধ্যমে।

গ্যালাক্সি এসথ্রি অবশ্য প্রথম গ্যালাক্সি ফোন ছিল না, কিন্তু এ ফোনটি 'আইফোন কিলার'-এর তকমা পায়। ওই সময়ের সবচেয়ে সফল অ্যান্ড্রয়েড ছিল এ ফোনটি। কেবল নয় মাসেই সারাবিশ্বে ফোনটির ৫০ মিলিয়ন ইউনিট বিক্রি হয়েছিল।

স্যামসাং গ্যালাক্সি এসথ্রি (২০১২) (২০১০)। ছবি: মিরতা রোহো

স্যামসাং জেড ফ্লিডথ্রি (২০২১) — দ্য ফোল্ডিং ফোন

মোবাইল ফোন সংগ্রাহক ও বিশেষজ্ঞ কুয়েভেদো বুয়েনো মনে করেন, ১৯৮০ ও '৯০-এর দশকে আমরা যে প্রযুক্তিগত বৈপ্লবিক অভিজ্ঞতা পেয়েছি, তা থেমে যায় আইফোন ও অন্যান্য স্মার্টফোন তৈরির পর থেকেই।

'অন্য সব জাতের ফোন থেকে ফোল্ডিং ফোন ভিন্ন, কারণ এগুলোর নমনীয় পর্দা রয়েছে, যেটা আমরা আগে কখনো দেখিনি,' বলেন বুয়েনো। আজকাল ফোনের ক্যামেরা ও ব্যাটারি আরও উন্নত হচ্ছে, কিন্তু উদ্ভাবনের দিক থেকে মোবাইল প্রযুক্তি মুখ থুবড়ে আছে।

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.