সি ডাক: ১৭০০ সালে ভারতমুখী কোম্পানির জাহাজের মহাসমুদ্রে অদ্ভুত পাখি দর্শন

ফিচার

টিবিএস ডেস্ক
16 May, 2023, 07:30 pm
Last modified: 16 May, 2023, 07:39 pm
ব্রিটিশ লাইব্রেরির ‘আনটোল্ড লাইভস ব্লগ’-এর এক লেখায় জানা গিয়েছে, মার্থা নামক কোম্পানির এক জাহাজের মেট স্যামুয়েল গুডম্যান ১৭০০ সালে উত্তমাশা অন্তরীপের কাছে অপরিচিত ও কিম্ভূতদর্শন কিছু পাখিকে সমুদ্রে সাঁতার কাটতে দেখেছিলেন। পাখিগুলোর নাম তিনি দিয়েছিলেন ‘সি ডাক’, কিন্তু হাল আমলে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করতে পেরেছেন বাস্তবে সেগুলো কী ছিল।

১৭০০ সালের এপ্রিল মাস। ক্যাপ্টেন টমাস রেইনসের নেতৃত্বে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির জাহাজ মার্থা ইংল্যান্ড থেকে বোম্বের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করল। সমুদ্রবায়ুর ওপর ভর করে পৃথিবীর বিভিন্ন বন্দরে বন্দরে নোঙর করতে লাগল জাহাজটি।

প্রথমে ক্যানারি আইল্যান্ড, কেপ ভার্দ, ও ব্রাজিলের উপকূলে বাহিয়া দে টডোস অস সান্তোস (অল সেইন্টস বে); তারপর দক্ষিণ আফ্রিকা, সুমাত্রা হয়ে ভারতবর্ষের দিকে এগোতে লাগল মার্থা। ১৭০১ সালের জানুয়ারি মাসে মালাবার উপকূলে পৌঁছাল জাহাজটি।

মালাবার থেকে কোচিন, কারওয়ার ও গোয়া হয়ে বোম্বের জেটিতে ভিড়ল এটি। সেখান থেকে গমব্রুন (বন্দর আব্বাস) গিয়ে পুনরায় বোম্বে, তারপর সুরাট — ওই যাত্রায় অনেকগুলো বন্দর স্পর্শ করেছিলেন ক্যাপ্টেন টমাস।

মার্থার সমুদ্রযাত্রার শেষদিকের দিনগুলোর কথা জানা যায় জাহাজের মেট স্যামুয়েল গুডম্যানের লেখায়। ভদ্রলোক জাহাজের নিত্যদিনের কাজকারবার লিখে রাখতেন। নেভিগেশনের বিভিন্ন তথ্য, বাতাসের অবস্থা, আবহাওয়া, সমুদ্রের পরিস্থিতি — তার লেখার বেশিরভাগ অংশজুড়ে রয়েছে এসব তথ্য।

ছবি: ব্রিটিশ লাইব্রেরি

তবে ১৭০০ সালের ২৭ অক্টোবর রোববার সকালে সমুদ্রে এক অদ্ভুত প্রাণীর দেখা পাওয়ার কথা লিখেছিলেন গুডম্যান। ঘটনার সময় উত্তমাশা অন্তরীপ থেকে ভারতের দিকে রওনা দিয়েছিল তাদের জাহাজ।

গুডম্যান সেদিন সমুদ্রে অপরিচিত ও কিম্ভূতদর্শন কিছু পাখিকে সমুদ্রে সাঁতার কাটতে দেখেছিলেন। পাখিগুলোর গায়ের রংয়ে সাদা-কালোর ছোপ, পা দেখা যাচ্ছিল না তবে ডানা ছিল, আর মাথার ওপর হলুদ একটা রেখা।

লেখার সঙ্গে সঙ্গে ডায়েরিতে একটা পাখির ছবিও এঁকেছিলেন গুডম্যান। তিনি পাখিটির নাম দিয়েছিলেন 'সি ডাক' তথা 'সামুদ্রিক হাঁস'।

গুডম্যান লেখেন: '১৫ হইতে ১৬ খানা মৎস্য বা পাখিসদৃশ প্রাণী প্রত্যক্ষ করিলাম। তাহারা জাহাজের পার্শ্বে আসিয়া অবস্থান করিল। তাহাদের মস্তক, নাসিকা আর একখানা পীত চঞ্চুসদৃশ বস্তুর কারণে তাহাদিগকে হংস বা স্থলচর কুক্কুটের ন্যায় বোধ হইতেছিল।

'দেহখানাও হংসের মতোই বৃহৎ, পাখা দুইটি কচ্ছপের ন্যায়, তবে পুচ্ছ দেখিলে আবার মৎসের কথা স্মরণ হয়।… সারা উদর শ্বেতাঙ্গ, কিন্তু কোনোপ্রকার পদ গোচরে আসিল না। বিস্ময়ের সহিত লক্ষ্য করিলাম, পাখিগুলো সরাসরি আমাদের দিকে চাহিয়া রহিছে। যাহাই হোক, উহাদের পুচ্ছ, মস্তক আর পাখনা দেখিয়া আমরা ঠিক ঠাহর করিয়া উঠিতে পারিলাম না আদতে উহারা কী জাত।'

স্যামুয়েল গুডম্যান সেদিন উত্তমাশা অন্তরীপের কাছে সমুদ্রে কোন প্রাণী দেখেছিলেন? তার লেখা পাখিগুলোর শারীরিক ও আচরণগত বর্ণনা থেকে বিশেষজ্ঞরা এখন ধারণা করেন, গুডম্যানের তথাকথিত 'সি ডাক'গুলো আদতে পেঙ্গুইন ছিল।

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.