খুদে দ্বীপের দেখাশোনাই ‘বিশ্বের সেরা চাকরি’ 

ফিচার

টিবিএস ডেস্ক
24 April, 2023, 02:30 pm
Last modified: 25 April, 2023, 04:49 pm
তাকে সঙ্গ দেওয়ার জন্য মানুষ না থাকলেও, আছে সামুদ্রিক সিলেরা; সাগরের বাস্কিং শার্ক নামক হাঙ্গরের একটি প্রজাতি, আর পাফিন ও রেজরবিলের মতো সামুদ্রিক পাখির ঝাঁক।

১৩ বছর দায়িত্বপালনের পর স্কটল্যান্ডের জনশূন্য ছোট্ট তিনটি দ্বীপ দেখভালের চাকরি থেকে অবসর নিতে চলেছেন জনাথন গ্রান্ট। খবর বিবিসির

দ্বীপগুলোর তত্ত্বাবধানের ভার স্কটল্যান্ডের জাতীয় ট্রাস্টের। এই সংস্থাই জনাথনের নিয়োগদাতা।

৬৫ বছরের জনাথন স্কটল্যান্ডের বাসিন্দা, জন্মসূত্রে গ্লাসগো শহরের রিড্রি এলাকার। তার মতে, 'এটাই আমার কাছে দুনিয়ার সেরা চাকরি'।

দ্বীপ তিনটির নাম মিংগুলে, পাব্বি এবং বার্নেরে। স্কটল্যান্ডের ওয়েস্টার্ন আইলের দক্ষিণে অবস্থিত দ্বীপগুলো।

দায়িত্বসূত্রে প্রায়ই তাকে কয়েক সপ্তাহ ধরে তাঁবু খাটিয়ে থাকতে হয়, নজর রাখেন দ্বীপবাসী প্রাণীদের ওপর।

তাকে সঙ্গ দেওয়ার জন্য মানুষ না থাকলেও, আছে সামুদ্রিক সিলেরা; সাগরের বাস্কিং শার্ক নামক হাঙ্গরের একটি প্রজাতি, আর পাফিন ও রেজরবিলের মতোন সামুদ্রিক পাখির ঝাঁক। ১৯১২ সনে মিংগুলে এবং ১৯৮০ সনে বার্নেরে দ্বীপের শেষ মানব অধিবাসীরা চলে যায়। তখন থেকেই বন্যপ্রাণের অবাধ মুক্তাঞ্চল এই দ্বীপগুলো।

চলতি বছরে অবসরে যাবেন জনাথন গ্রান্ট। তার আগে চাকরিসূত্রে নিজের অসাধারণ অভিজ্ঞতা তিনি জানান বিবিসি স্কটল্যান্ডকে।

তার ভাষ্যে, 'এ যেন প্রতিনিয়ত বিস্ময় জাগানিয়া এক অভিজ্ঞতা লাভ। জীবনের অধিকাংশ সময় আমি স্কটল্যান্ডের উত্তরপশ্চিমের দ্বীপপুঞ্জে (স্থানীয়ভাবে যা হেব্রাইডস নামে পরিচিত) কাটিয়েছি। তাই দ্বীপবাসের কর্মজীবনে মানিয়ে নিতে আমার কোনো কষ্ট হয়নি।'

তবে জনাথন তার দায়িত্বে থাকা দ্বীপগুলোয় বারো মাসই থাকেন না। সাধারণত তিনি প্রতিবছর এপ্রিলের শুরুতে দ্বীপ তিনটি পরিদর্শনের কাজ শুরু করেন।

এর কারণ সেখানকার তীব্র শীত। জনাথনের মতে, 'শীতকালে সেখানে যাতায়াত প্রায় অসাধ্য, তখন কোনো মাঝিই নিয়ে যেতে রাজি হয় না। এমনকি গ্রীষ্মকালেও দ্বীপগুলোয় নৌকা ভেড়ানো খুবই কঠিন।'

ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, 'সেখানে নৌকো ভেড়ানোর নেই কোনো ঘাট। ছোট্ট একটি ভাসমান পাটাতনে পা দিয়ে লাফিয়ে নামতে হয় পাথুরে উপকূলে। তার ওপর ঢেউ যদি সামান্যও হয়, আর তীরের মাটি ভেজা থাকে তাহলেই বিপদ। লাফ দিয়ে নামা তখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে।'

একবার দ্বীপে পৌঁছানোর পর সেখানকার উদ্ভিদ ও বন্যপ্রাণীদের অবস্থা জানার চেষ্টা করেন জনাথন। প্রাকৃতিক নিবাসের ক্ষতি হলো কিনা, কিংবা কোনো প্রজাতির সংখ্যা কতোটা– ইত্যাদি তথ্য সংগ্রহ করেন।

পুরাতাত্ত্বিকের কাজটাও তার কাঁধেই ন্যস্ত। পরিত্যক্ত বাড়িগুলোর কী অবস্থা সেটাও টুকে রাখেন রেকর্ডের খাতায়।

আসলে এই দ্বীপ তিনটির যেসব বাসিন্দা ছিলেন, তারা প্রধানত মেষপালন, মাছ ধরা ও সামুদ্রিক পাখি শিকার করে জীবিকা-নির্বাহ করতেন। একসময় এভাবে জীবনধারণ প্রায় অসাধ্য হয়ে উঠলে– পর্যায়ক্রমে তারা দ্বীপগুলো ছেড়ে চলে যান।

মিংগুলে দ্বীপের স্কুলে ছিল একটি রেকর্ড রাখার লগবুক। পুরোনো এই নথি দ্বীপবাসীদের শেষ সময়ের অবস্থার দিকে অনেকটাই আলোকপাত করে।

লগবুকের শেষ পাতায় আছে প্রবল সব সামুদ্রিক ঝড়ের কথাও, এমন দুর্যোগকালে শিশুরা বিদ্যালয়ে আসতেই পারতো না। আরও আছে স্কুল ঘর উষ্ণ রাখার জন্য কয়লার মজুত ফুরিয়ে যাওয়ার বৃত্তান্তও। এককথায়, প্রবল সংগ্রামী জীবনই ছিল দ্বীপবাসীর। বিরূপ প্রকৃতির সঙ্গেই ছিল বসবাসের চেষ্টা।

আজকাল অবশ্য দ্বীপ তিনটিতে বেড়াতে আসেন কেউ কেউ। তখন তাদের দ্বীপের বিগত জীবনযাপন সম্পর্কে ধারণা দেন জনাথন।

স্কটল্যান্ডের জাতীয় ট্রাস্টের চাকরি নেওয়ার আগে ৩০ বছর ধরে স্কটল্যান্ডের পশ্চিম দ্বীপপুঞ্জের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধির চেষ্টা করেছেন জনাথন। বিরূপ প্রকৃতির মধ্যে সফর তাই নতুন কিছু নয় তার কাছে।

'হয়তো এক বা দুই সপ্তাহ কোনো দ্বীপে অবস্থান করার সময় একজন মানুষের সাথেও দেখা হয় না। তবু ঘরের বাহিরকে আমি যে ভীষণ ভালোবাসি। এসব দ্বীপে থাকার সময় তাই নিজের সঙ্গ পেয়েই আমি সন্তুষ্ট'।

'তবে আমি আশা করি, এবার তরুণ কাউকে এই দায়িত্ব নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া দরকার, বহু বছর ধরে আমি যে অসামান্য অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি তা অন্য কারোরও হোক'- যোগ করেন তিনি।

বিবিসি জানায়, চলতি বছরের স্কটল্যান্ডের জাতীয় ট্রাস্ট জনাথনের পদে নতুন কর্মী নিয়োগের বিজ্ঞাপন দেবে।

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.