ইনস্টাগ্রামে খ্যাতি পাওয়া ফটোগ্রাফার স্বীকার করলেন, তার ছবিগুলো এআই তৈরি করেছে

ফিচার

টিবিএস ডেস্ক
23 February, 2023, 05:00 pm
Last modified: 23 February, 2023, 08:00 pm
এভ্রি জোর দিয়েই বলেছেন, দুটি ছাড়া বাকি সব ছবি আসল ফটোগ্রাফ নাহলেও- এগুলোর নিখুঁত সম্পাদনায় ব্যাপক শিল্পজ্ঞান ও দক্ষতা থাকতে হয়। এভাবেই তিনি ছবিকে করে তোলেন ফটোরিয়েলিস্টিক, বা বাস্তবে তোলা ছবির মতন।

ইনস্টাগ্রামে গত কয়েক মাস ধরে দৃষ্টিনন্দন সব ছবি পোস্ট করছেন জস এভ্রি। তার শিল্পকাজে মুগ্ধ হয়ে হাজারো মানুষ হতে থাকে ফলোয়ার, যা বর্তমানে ২৬ হাজার। তার পোস্ট করা ছবির মধ্যে আছে মানুষের পোট্রেট, যা দেখে মনে হবে তারই ফটোগ্রাফি। আর ফ্যান-ফলোয়াররা ভেবেছেনও তাই। এভ্রির ছবি তোলার দক্ষতায় কমেন্টে প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন তারা। কিন্তু, বাস্তবে এসব ছবি তৈরি করেছে এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা; এভ্রি শুধু তাতে শৈল্পিক সম্পাদনার কিছু কাজ করেছেন। আর্টস টেকনিকা অবলম্বনে

ছবি: এভ্রি সিজন আর্ট/ ইনস্টাগ্রাম ভায়া আর্টস টেকনিকা

এদিকে ফলোয়ার সংখ্যা যখন বাড়ছে, তখন অপরাধবোধও হচ্ছিল এভ্রির। কিন্তু, সবাই কীভাবে সত্যকে গ্রহণ করবে- তা ভেবেই দ্বিধা করছিলেন; অবশেষে সাহস করে তিনি স্বীকার করেই ফেললেন– ছবি তৈরিতে এআই- এর অবদান।

আর্টস টেকনিকা নামক একটি শিল্প বিষয়ক গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, 'গত অক্টোবর থেকে ইনস্টাগ্রাম একাউন্টে প্রায় ১২ হাজার নতুন ফলোয়ার যুক্ত হয়েছেন, যা আমার প্রত্যাশারও বাইরে। এআই- এর সাহায্য তৈরি আর তারপর আমার সম্পাদিত মানব পোট্রেট আমি এই একাউন্টে পোস্ট করি। ৯৫ শতাংশ ফলোয়ারই হয়তো এটা ধরতে পারেন না। তাই আমি বিষয়টা একটু খোলাসা করতে চাইছি'।

ছবি: এভ্রি সিজন আর্ট/ ইনস্টাগ্রাম ভায়া আর্টস টেকনিকা

এভ্রি জোর দিয়েই বলেছেন, দুটি ছাড়া বাকি সব ছবি আসল ফোটোগ্রাফ নাহলেও- এগুলোর নিখুঁত সম্পাদনায় ব্যাপক শিল্পজ্ঞান ও দক্ষতা থাকতে হয়। এভাবেই তিনি ছবিকে করে তোলেন ফটোরিয়েলিস্টিক, বা আসল ফটোগ্রাফির মতোই। ছবি তৈরিতে এআই-চালিত ইমেজ সিন্থেসিস টুল- মিডজার্নি ব্যবহার করেন এভ্রি। এরপর সেগুলোকে ফটোশপের সাহায্যে সম্পাদনা করেন।  

সাবস্ক্রিপশন ফি দিয়ে যে কেউ ব্যবহার করতে পারেন মিডজার্নি। গ্রাহকের লিখিত কম্যান্ড অনুসরণ করে তারপর সে অনুযায়ী ছবি বানিয়ে দেয় এটি। ইন্টারনেটে বিদ্যমান বিভিন্ন ছবির সমন্বয় করে নিজস্ব ছবি তৈরি করে। এজন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাটিকে অন্যান্য শিল্পীর তৈরি লাখ লাখ ছবি ইনপুট দিয়েছেন এর ডেভেলপাররা। ফলে এটি অনবদ্য ফটোরিয়েলিস্টিক ছবি উৎপাদনে সক্ষম, যা দেখে অনেকেই আসল ছবি ভেবে বিভ্রান্ত হতে পারেন। বিশেষ করে, যদি পরবর্তীতে সেসব ছবিকে কেউ সম্পাদনা করে আরো নিখুঁত করে তোলেন।   

ছবি: এভ্রি সিজন আর্ট/ ইনস্টাগ্রাম ভায়া আর্টস টেকনিকা

এভ্রি শুরুতে এআই- এর দক্ষতা নিয়ে সন্দিহান ছিলেন, কিন্তু অচিরেই শিল্প-তৈরির নতুন এই মাধ্যমের ভক্ত হয়ে ওঠেন। তাছাড়া, শিল্প-দুনিয়ায় এ ধরনের ছবি তুমুল বিতর্কেরও জন্ম দেয়। কেননা অন্য শিল্পীর ছবি তার অনুমতি ছাড়াই যেহেতু ব্যবহার করে এআই। তবে মিডজার্নির মডেলে এমন কিছু সুবিধা আছে, যা কাজে লাগিয়ে একজন ফোটগ্রাফারের চেয়েও ভালোভাবে ছবি তৈরি করতে পারেন শিল্পজ্ঞান থাকা দক্ষ ব্যবহারকারী।  

ছবি: এভ্রি সিজন আর্ট/ ইনস্টাগ্রাম ভায়া আর্টস টেকনিকা

এভ্রি স্বীকার করেন, 'আমি কিছুটা স্ববিরোধিতায় ভুগছি। আমার আসল লক্ষ্য ছিল মানুষের সামনে এআই এর দক্ষতাকে তুলে ধরা, আর তারপর এনিয়ে একটি নিবন্ধ লেখা। কিন্তু, তারপর আমার একাউন্টটি শিল্প প্রকাশের মাধ্যমে পরিণত হয়। তখন আমারও মনোভাব বদলে যায়'।

ছবি: এভ্রি সিজন আর্ট/ ইনস্টাগ্রাম ভায়া আর্টস টেকনিকা

অক্টোবরে যখন ইনস্টাগ্রাম একাউন্টটি চালু করেন তখন থেকেই ফলোয়ারদের ইতিবাচক কমেন্টের জোয়ারে ভাসতে থাকেন এভ্রি। কেউ বলছিলেন, 'আপনার শিল্পকাজ অনন্য- এতটুকুই বলব'; কেউবা বলছিলেন, 'এগুলো অমূল্য'। মানুষের এত উৎসাহে এভ্রিও কিছুটা মিথ্যাচার করেছেন। যেমন কিছুদিন আগেও ছবি কীভাবে তুলেছেন জানতে চাইলে তিনি ফলোয়ারদের কোন ক্যামেরা ও লেন্স ব্যবহার করেছেন তার বর্ণনা দিতেন। তবে তার এই 'কথিত ফটোগ্রাফির' সমাদর যতই বাড়ছিল, তার ভেতরেও সেভাবে অপরাধবোধ তৈরি হচ্ছিল।

ছবি: এভ্রি সিজন আর্ট/ ইনস্টাগ্রাম ভায়া আর্টস টেকনিকা

এজন্যই আর রাখঢাক না করে সাহস করে সত্যিটাকেই প্রকাশ করলেন। সঙ্গে জানিয়েছেন, ছবি তৈরির কাজে বিভিন্ন ফোটোশপ টুলস ব্যবহারের কথাও।

 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.