যেদিন আলোকচিত্রী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন ফাবিহা

ফিচার

04 February, 2023, 01:20 pm
Last modified: 05 February, 2023, 02:26 pm
২০১৩ সাল। ঘটল রানা প্লাজা ট্রাজেডি। অনেক বিদেশি সাংবাদিক এলেন প্রতিবেদন তৈরি করতে। কেউ কেউ ফাবিহার সঙ্গে যোগাযোগ করলেন, ফাবিহা তাদেরকে ইন্টারভিউ নিতে সাহায্য করতেন, ঘটনা ব্যখ্যা করতেন। রানা প্লাজা ট্রাজেডি ছিল ফাবিহার জীবনে একটা টার্নিং পয়েন্ট। গত পাঁচ বছর ধরে নতুন পথে চলতে শুরু করেছেন তিনি। কাজ করেছেন ব্রিটিশ রেড ক্রস, ইউনিসেফের কনসালট্যান্ট ফটোগ্রাফার হিসেবে। এখন ফাবিহা ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন এবং দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের ফটোগ্রাফার।
ফাবিহার তোলা টিয়ার্স অব রিভার সিরিজের একটি ছবি/ সৌজন্যে প্রাপ্ত

দশ বছর ধরে অনেকরকম কাজ করেছেন ফাবিহা মুনির। লেখালেখি ধরে রেখেছিলেন আর করছিলেনও নিয়মিত। তবে এর আগে কিছুটা গল্প রয়েছে, সেটুকুও সেরে নেওয়া দরকার। ফাবিহার বাবা পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন, দেশবাসী যখন স্বাধীন হওয়ার দৃপ্ত শপথে উদ্দীপ্ত তখন বাবাও চাকরিতে দিলেন ইস্তফা, দেশের হয়ে যুদ্ধেও অংশ নিয়েছিলেন।

বাবা ছিলেন বাউল গানের ভক্ত। বিশেষ করে লালনের গানে মজে ছিলেন আজীবন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একটা বড় আখড়া বানিয়েছিলেন। সেখানে বিশেষ বিশেষ পর্বে গানের আসর বসতো। বাড়িটায় একটা বড় বটগাছ ছিল, ফাবিহার মনে পড়ে। বাবা ফাবিহাকে কাছছাড়া করতে চাইতেন না, মিশতে দিতেন না বেশি লোকের সঙ্গে। নিজে সঙ্গে করে স্কুলে নিয়ে যেতেন। নিয়েও আসতেন।

ঢাকায় তারা থাকতেন রামপুরায়। ভিকারুন্নিসা স্কুল ও কলেজে ফাবিহা সায়েন্স নিয়ে পড়েছেন। কলেজের গণ্ডি পেরুনোর পরেই বাবার সঙ্গে মনোমালিন্য হলো। ফাবিহা সিদ্ধান্ত নিলেন এবার থেকে নিজের পথে নিজেই চলবেন। বাবার কাছ থেকে কোনোরকম অর্থসাহায্যও নেবেন না।

কলেজে পড়ার সময় থেকেই ফাবিহা টিউশনি করতেন শখের বশে। কিন্তু ২০০৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে ওঠার পর যখন বাবার থেকে আর টাকা নেবেন না বলে স্থির করলেন তখন ব্যাপারটা শখের রইল না। সেমিস্টার ফি, বইপত্র কেনা, পরীক্ষার ফি, যাতায়াতে ভালো পরিমাণের টাকা দরকার হচ্ছিল আর ফাবিহা অর্থ উপার্জনের নতুন নতুন পথ খুঁজছিলেন। একইসঙ্গে জীবনযাত্রায় আনলেন আমূল সব পরিবর্তন যেমন রিকশা বা সিএনজিতে না চড়ে বাসে করে যাতায়াত শুরু করলেন। এমন এমন খাবার নিলেন খাদ্যতালিকায় যাতে ক্ষিধাও মেটে আর পুষ্টিতেও ঘাটতি না পড়ে।

জলবায়ু পরিবর্তন ও তার প্রভাব নিয়ে ফাবিহার আলোকচিত্র/ সৌজন্যে প্রাপ্ত

এমন নতুন জীবনযাত্রায় তিনি নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচিত হতে শুরু করলেন, যারা প্রায় সকলেই নিম্নবিত্ত বা মানবেতর জীবনযাপন করে। তিনি তাদের গল্প শুনতে থাকলেন। নতুন বা ভিন্ন বা অচেনা সব জগৎ উন্মোচিত হতে থাকল তার কাছে। তিনি 'গরীব' মানুষের গল্প আরো বেশি বেশি করে শুনতে চাইতেন। কারণ সেগুলোর প্রতিটিই নতুন আর বৈচিত্র্যময়।

টর বলেছিলেন কিছু নমুনা দেখাতে

ফাবিহা বিবিএ (মার্কেটিং) পড়ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে। ক্লাসে তিনি নিয়মিত ছিলেন। ফলাফলও হচ্ছিল ভালো। একদিন ক্লাস টিচার পড়াতে পড়াতে বললেন, 'তখনই আপনি একজন ভালো সেলসম্যান যখন এক বোতল পানিকে এক বোতল কোকাকোলা বলে চালাতে পারবেন'। কথাটি শুনে ফাবিহা চমকে উঠলেন। ভাবলেন, আমি কি এটা পারব? আমি পানিকে কেন কোক বলে চালাতে যাব?

তার খটকা লেগেছিল। তিনি ভাবলেন, মার্কেটিং তাহলে আমি পারব না। ফাবিহা অবশ্য পড়াশোনায় ছেদ ঘটালেন না। প্রচুর কেস স্টাডি করতে থাকলেন পড়াশোনার বাইরেও। তার একটা ডায়রি ছিল, তাতে তিনি কেস স্টাডিগুলো লিখেও রাখতেন, নিজের ভাবনাও জুড়ে দিতেন এই সঙ্গে। তখন ফাবিহা মনে করতেন, লেখালেখিই সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম যাতে জীবনযাপনকারী ও তার শ্রোতা মানে লেখক দুয়েরই উপস্থিতি থাকে।

জার্মানির হামবুর্গে ফাবিহার ছবির প্রদর্শনী/ সৌজন্যে প্রাপ্ত

এর মধ্যে ২০০৯ সালে নরওয়ে থেকে টর আকসেল নামের এক সাংবাদিক এসেছিলেন বাংলাদেশে। তিনি এখানকার জীবনযাত্রা ও সংস্কৃতি বিষয়ে লেখা তৈরি করতে চাইছিলেন।

'আমি তাকে অ্যাসিস্ট করার সুযোগ পেলাম। আমি তার দোভাষি ছিলাম, কাদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হবে তাও নির্বাচন করতাম, কোন বিষয়ের ওপর বেশি আলোকপাত করলে আসল ব্যাপারটি উঠে আসবে তাও পরামর্শ দিতাম। একরকম বলতে গেলে লেখাগুলো দুজনের সমান অবদানেই তৈরি হচ্ছিল। তিনি চলে যাওয়ার কিছু আগে বললেন, তোমার নিজের লেখার কিছু নমুনা আমাকে দেখাতে পারো? তাকে আমার ডায়রিটি দেখালাম যেটায় অনেকগুলো কেস স্টাডি ছিল। তিনি লেখাগুলো পড়ে আমাকে তাদের পত্রিকায় নিয়মিত লেখার আমন্ত্রণ জানালেন,

'সেটি ছিল একটি উন্নয়ন বিষয়ক সাময়িকী যার নাম বাইস্ট্যান্ডসাকতুয়েল্ট। আমি সেখানে বাংলাদেশের জীবনযাত্রা নিয়ে লিখতে শুরু করলাম। এর ফলে আমার কিছু অর্থের সংস্থান হতো, সেসঙ্গে পরিচিতিও বাড়ল। আসলে বাবার কাছ থেকে টাকা নিচ্ছিলাম না বলে জীবন যে কতটা কঠিন তা বুঝতে পারছিলাম। পড়তে পড়তে ওয়াটার এইডের মতো বেসরকারী সংস্থার হয়ে কিছু কেস স্টাডিও করেছি। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় পেরিয়ে এসে অ্যাড এজেন্সিতে কাজ করলাম কিছুদিন। মডেলিংও করেছি, ক্রিয়েটিভ ডিজাইনার ছিলাম, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কাজ করেছি মানে নানা দিকে এক্সপ্লোর করে দেখতে চেয়েছি আমি কোন জোনে ভালো করব,' বলছিলেন ফাবিহা।

ফাবিহার ক্যামেরায় একজন গার্মেন্টস কর্মী/ সৌজন্যে প্রাপ্ত

গল্প শুনতেই ভালো লাগত

ফাবিহা আরো বলছিলেন, 'কেস স্টাডি করাও অব্যাহত রেখেছিলাম। আসলে মানুষকে জানতে মানুষের গল্প শুনতে আমার বেশি ভালো লাগত।'

'দৌলতদিয়ার বেশ্যালয়ে আমি গিয়েছি দিনের পর দিন। সেখানে জীবন খুব অন্যরকম। ওই জীবনের অনেক অলিগলি, মেয়েদের নামও চার-পাঁচটি হয়। বেশিরভাগই নিরাপত্তার স্বার্থে বা জীবিকার তাগিদে। মেয়েরা এখানে আসে বাধ্য হয়ে, ফাঁদে পড়ে। সাধারণত মেয়েদেরকে ভুলিয়ে ভালিয়ে বিক্রি করে রেখে যায় দালাল বা প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিক্রি করে দিয়ে চলে যায় প্রেমিক। এছাড়া স্বেচ্ছায়ও এসেছেন কেউ কেউ, কারণ তাদের যাওয়ার আর কোনো জায়গা ছিল না,

'গল্পগুলোতে আমি খুব এনগেজড (একাত্ম) হয়ে যেতাম। কোনো কোনো মেয়েকে দেখেছি মায়ের এক টুকরো হাতের লেখা যত্ন করে রেখে দিতে, কেউবা আবার প্রেমিকের ছবি আগলে রেখে চলেছে বছরের পর বছর। প্রশ্ন করলে ওরা হাসত, আমি কোনো উত্তর মেলাতে পারতাম না। ওরা বলত, এখানে সত্য বললে ভাতে মরতে হয়, মিথ্যা বললেই পয়সা বেশি পাওয়া যায়। আমি শুনতাম আর ভাবতাম, বেঁচে থাকতে মানুষকে কত কিছুই না করতে হয়! স্ট্রেস, অ্যাংজাইটি এদের জীবনে প্রতি বেলার ঘটনা, তাই প্রতি বেলাতেই এদের আলাদা আলাদা পরিচয়ে বাঁচতে হয়।'

ফাবিহার নোটবুক/ সৌজন্যে প্রাপ্ত

 
মিরপুরের ব্যাপ্টিস্ট মিশন চার্চের অন্ধ স্কুলে গিয়েও ফাবিহার নতুন অভিজ্ঞতা হয়েছে। সেখানে সব ছাত্রই অন্ধ। এমন একটা ছাত্রের কথা তার মনে পড়ে যে চোখে কিছুই দেখে না কিন্তু সে অদ্ভুত গান করে। ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় তার দারুণ সক্রিয়। ফাবিহা খুব আলগোছে তার ঘরে পা রেখেও দেখেছেন, সে ঠিকই বলে ফেলত, আপু এসেছে।

শিশু শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করতে অ্যালুমিনিয়াম ফ্যাক্টরিতে গিয়েছেন। সেখানে তারা ৮-১০ ঘণ্টা কাজ করে। শব্দে এক ঘণ্টা টেকাও দায়, অথচ ওদের যেন কিছু যায় আসে না। দিনশেষে এক-দেড়শ টাকা পায়। শেষবেলায় মা আসে, ছোঁ মেরে প্রথমে টাকাটা হাতে নেয়, ছেলেটা যায় পিছু পিছু। এই মায়েরা অন্য মায়েদের মতো মমতাময়ী মনে হয় না। জীবন তাদেরকে এমন শক্ত করেছে যে মমতার চেয়ে টাকাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

বিদেশি পত্রিকায় ফাবিহাকে নিয়ে নিবন্ধ

এভাবে চলতে চলতে এলো ২০১৩ সাল। ঘটল রানা প্লাজা ট্রাজেডি। অনেক বিদেশি সাংবাদিক এলেন প্রতিবেদন তৈরি করতে। কেউ কেউ ফাবিহার সঙ্গে যোগাযোগ করলেন, ফাবিহা তাদেরকে ইন্টারভিউ নিতে সাহায্য করতেন, ঘটনা ব্যখ্যা করতেন। মিউনিখের জুডয়েচ সাইটুং ম্যাগাজিন থেকে যেমন এসেছিলেন কারিন স্টেইনবারজার।

রানা প্লাজা ট্রাজেডি ছিল ফাবিহার জীবনে একটা টার্নিং পয়েন্ট। আন্তর্জাতিক মহলে তখন তার পরিচিতি বাড়ে। তখনো কিন্তু তিনি ভাবতেন, লেখালেখিই সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম। আলোকচিত্রের গুরুত্ব কেবল লেখাকে জাস্টিফাই করা।

মনিকার সঙ্গে ১০ দিন

আদার পাসপোর্টধারী মনিকা (বাঁয়ে)

রানা প্লাজার পর সম্ভবত ২০১৪ সালে বিদেশি এক বেসরকারী সংস্থা ফাবিহাকে একটা অ্যাসাইনমেন্ট দেয়। নেপালে মনিকা নামের এক ট্রান্সজেন্ডার নারীকে নিয়ে লেখা তৈরি করতে হবে। ফাবিহা তাকে ফলো করতে করতে তার বাড়ি অবধি গিয়েছেন। কিন্তু কাজটা খুব সহজ ছিল না।

মনিকার খুব মুড সুইং হতো, এই ভালো তো এই খারাপ। খুব সমঝে চলতে হতো তার সঙ্গে। মনিকার বিশেষত্ব হলো তিনিই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রথম ট্রান্সজেন্ডার যিনি পাসপোর্টে জেন্ডার (লিঙ্গ) লেখার  জায়গায় মেল (পুরুষ) বা ফিমেল (নারী) এর পরিবর্তে 'ও বা আদার' লেখার সুযোগ পেয়েছিলেন। এর জন্য মনিকাকে যেতে হয়েছিল একটি দীর্ঘ লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে।

ফাবিহা টানা ১০ দিন মনিকার পিছনে লেগে থেকে শেষে লেখাটি সম্পূর্ণ করতে পেরেছিলেন।

আলোকচিত্রীই হবো

রোহিঙ্গা ক্যাম্প/ সৌজন্যে প্রাপ্ত

প্রচুর লোক তখন সিরিয়া, পাকিস্তান, আফগানিস্তান থেকে উদ্বাস্তু হয়ে ইউরোপে পাড়ি জমাচ্ছিল। তারা একরকম ডিঙ্গি নৌকায় করে পাড়ি দিচ্ছিল সাগর। যুদ্ধ বা অনাহার থেকে পালাতে তারা নিচ্ছিল জীবনের ঝুঁকি। দালালদের জনপ্রতি দিতে হচ্ছিল ১০০০ থেকে ১৫০০ ইউরো। সাড়ে তিন বা চার ঘণ্টার নৌ পথ পেরিয়ে তারা পৌছাচ্ছিল গ্রিসের লেসবস দ্বীপে।

সেসব দিনে দ্বীপটিতে ছিল উদ্বাস্তুদের মিছিল। সাংবাদিকরাও ছিলেন অনেক। এপিসিডি ফাউন্ডেশন ডেকেছিল ফাবিহাকেও। তিনি গিয়েছিলেন গ্রিসে। অবাক করা এক দ্বীপ হয়ে উঠেছিল লেসবস তখন। দিন-রাতের সারাক্ষণই জেগে থাকছিলেন সাংবাদিকরা। অপেক্ষা- কখন শরণার্থীরা এসে পৌঁছায়! একটি নৌকা এসে পৌঁছালেই শত শত ক্যামেরা জ্বলে উঠত, নোট নিতে হুড়োহুড়ি পড়ে যেত সাংবাদিকদের মধ্যে।

নৌকা থেকে নামার পরই উদ্বাস্তুরা হাঁটতে শুরু করত। তারা তো গ্রিসে থাকতে আসেনি। তারা পৌঁছাতে চায় জার্মানিসহ ইউরোপের আরো সব দেশে যেখানে জীবন হবে নিরাপদ। তারা লেসবস থেকে হেঁটে যেত মিতিলিনি নামে এক জায়গায়। তারপর আরো চার-পাঁচ ঘণ্টা হেঁটে যাবে সার্বিয়া সীমান্তে। কিন্তু পথ বিপদ সংকুল। সীমান্তরক্ষীরা সদা সতর্ক, তারা উদ্বাস্তুদের যেনতেন উপায়ে ফেরত পাঠাতে চায়।

যে উদ্বাস্তু পরিবারটি ফাবিহাকে ফটোগ্রাফার হওয়ার প্রেরণা দিয়েছে/ সৌজন্যে প্রাপ্ত

'আমি এক নারীকে অনুসরণ করতে থাকলাম। তার তিনটি সন্তান, এরমধ্যে একটি সন্তান তার কোলে। হাতে জিনিসপত্রও আছে কিছু। পথে পথে এটা সেটা ফেলে যাচ্ছেন যেন হালকা হওয়া যায়। এক পর্যায়ে বাচ্চাগুলো আর কিছুতেই পারছিল না। আমি একটি বাচ্চাকে কোলে তুলে নিলাম। ততক্ষণে আমারও পা ফুলতে শুরু করেছে। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ হচ্ছে না কারণ তারা ইংরেজী জানে না। তবে আফগান হওয়ায় হিন্দি অল্পকিছু জানে। তা দিয়েই টুকটাক কথা হচ্ছিল,

'জানলাম, এই বাচ্চাদের বাবা যা টাকা জোগাড় করতে পেরেছিলেন তার সবটা দালালদের হাতে তুলে দিয়েছেন, নিজের জন্য আর কিছুই তার কাছে অবশিষ্ট ছিল না। তার ভাগ্যে শেষ কী ঘটেছে জানেন না এই নারী। এখন যখন সীমান্তরক্ষীরা কাঁটাতারের বেড়ায় তাদের পথ আটকে দিল তখন তারা কান্নায় ভেঙে পড়ল। আমার মনে হচ্ছিল তাদের জীবনের সবটাই নিঃশেষ হতে চলেছে। আমি নোট নিচ্ছিলাম, আমার কাছে ছোট একটা ক্যামেরা ছিল জাস্ট রেফারেন্স রাখার জন্য। আমি নারী ও শিশুদের ছবি তুলতে চাইলাম। নারীটি বললেন, এটাই সত্য, এটাই ইতিহাস,

'আমি বুঝলাম তাদের আজকের এই কষ্ট ক্যামেরায় ধরে রাখার মধ্য দিয়ে আমি আসলে ইতিহাসকেই ধরে রাখছি আর তিনি সেটাই বোঝাতে চাইছেন। তখনই আমার মনে হলো, ছবিও শক্তিশালী আর তা লেখার চেয়ে কোনো অংশেই কম নয়,

'আরেকটি ব্যাপার আমি খেয়াল করছিলাম এই সফরে, লেসবসে উপস্থিত আলোকচিত্রীদের ৭০ জনই পুরুষ, নারী আলোকচিত্রী মোটে ৪-৫ জন। আমাদের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নারীরা পুরুষ আলোকচিত্রীদের ব্যাপারে স্বচ্ছন্দ্য নয়, অথচ তাদেরও অনেক বলবার আছে। আমি সেই দিন সিদ্ধান্ত নিলাম, আলোকচিত্রী হবো,

ফাবিহা মুনির/ সৌজন্যে প্রাপ্ত

'তারপর গত পাঁচ বছর ধরে আবার নতুন পথে চলতে শুরু করেছি। ব্রিটিশ রেড ক্রস, ইউনিসেফের কনসালট্যান্ট ফটোগ্রাফার হিসাবে কাজ করছি। আমি এখন ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন এবং দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের ফটোগ্রাফার। আলোকচিত্রী হিসাবেও জমা হয়েছে প্রচুর অভিজ্ঞতা তবে তা আরেক দফায় বলব,' এটুকু বলেই শেষ করলেন ফাবিহা।

 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.