দ্রুত সময়ে দেউলিয়া হয়েছেন যেসব বিলিয়নিয়ার!
![](https://www.tbsnews.net/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2023/01/02/bankrupt_riches.jpg)
শতকোটিপতি হলেই নিশ্চিন্ত হওয়ার জো নেই, তখন আবার অর্থ ব্যবস্থাপনা ও রক্ষা করা নিয়ে ভাবতে হয়। অনেকে এ কাজে বেশ দক্ষ। আবার কারও কারও কিছু ভুল, ক্ষেত্রবিশেষে অবৈধ পদক্ষেপের কারণে অল্প সময়ের ব্যবধানে ক্রোড়পতি থেকে কপর্দকহীন বনে যাওয়ারও অনেক নজির রয়েছে। এরকম কয়েকজন বিলিয়নিয়ারের হুহু করে দেউলিয়া বনে যাওয়ার কথা জানিয়েছে লাভমানি।
অ্যালেন স্ট্যানফোর্ড
তিনি ছিলেন একজন মার্কিন অর্থলগ্নিকারী ও পেশাদার ক্রীড়ার পৃষ্ঠপোষক। ব্যক্তিগত বিমান, ইয়টের মালিক স্ট্যানফোর্ডের সম্পদের পরিমাণ ছিল ২.২ বিলিয়ন ডলার।
কিন্তু ২০০৯ সালে জানা যায়, ইতিহাসের দ্বিতীয় বৃহত্তম পঞ্জি স্কিমের মাধ্যমে এ বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছিলেন স্ট্যানফোর্ড। ২০১২ সালে ১০০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ পাওয়ার পর এখন নিঃস্ব হয়ে কারাগারে আছেন সাবেক এ ধনকুবের।
অব্রে ম্যাকক্লেন্ডন
২০১১ সালে ১.২ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ ছিল চেসাপিক এনার্জির এ সহপ্রতিষ্ঠাতার। কোম্পানিটি তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস সম্পদে নতুন প্রযুক্তির অন্যতম পথিকৃৎ ছিল।
কিন্তু বছর পাঁচেক পরে দৃশ্যপট বদলে যায়। ফোর্বস তাকে 'আমেরিকার সবচেয়ে অপরিণামদর্শী বিলিয়নিয়ার'র তকমা দেয়। ২০১৬ সালের মার্চে তেল ও গ্যাস লিজ বিষয়ক নিলাম নিয়ে ষড়যন্ত্র করার অভিযোগে নিজের সম্পদ হারান ম্যাকক্লেন্ডন। পরে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি।
![](https://www.tbsnews.net/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2023/01/02/aubrey_mcclendon.jpg)
বিজয় মালিয়া
নব্বইয়ের দশকে বিলিয়নিরা ছিলেন ভারতীয় ব্যবসায়ী বিজয় মালিয়া। কিংফিশার এয়ালাইনস-এর মালিক বিজয়ের সম্পদের পরিমাণ ছিল ১.৫ বিলিয়ন ডলার।
২০১২ সালে তার বিমান পরিবহন সংস্থা এক বিলিয়ন ডলারের বেশি দেনার মুখে পড়ে। বিলাসবহুল জীবনযাপন করতেন বিজয়। ভারতের বিভিন্ন ব্যাংকে আর্থিক প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এসব কেলেঙ্কারির পর ভারত ত্যাগ করেন বিজয়। বর্তমানে লন্ডনে অবস্থান করে 'একস্ট্রাডিশন' মামলা লড়ছেন সাবেক এ ধনী।
বার্নার্ড ম্যাডফ
বার্নার্ড এল. ম্যাডফ ইনভেস্টমেন্ট সিকিউরিটিজ-এর অংশ হিসেবে একজন আর্থিক পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করার মাধ্যমে বিপুল ধনসম্পদের মালিক হন প্রয়াত বিলিয়নিয়ার ম্যাডফ।
২০০৯ সালে তার বিরুদ্ধে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে জালিয়াতি করার অভিযোগ প্রমাণিত হয়। প্রায় দুই দশক ধরে একটি পঞ্জি স্কিম পরিচালনা করেছিলেন ম্যাডফ। আদালত তাকে ১৫০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন। এপ্রিল মাসে কারাভোগ করা অবস্থায় মারা যান তিনি।
![](https://www.tbsnews.net/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2023/01/02/vijay_mallya.jpg)
এইক বাতিস্তা
এইক বাতিস্তা এককালে ব্রাজিলের সর্বোচ্চ ও বিশ্বের সপ্তম ধনী ছিলেন। তার সম্পদের উৎস ছিল প্রাকৃতিক সম্পদ বিষয়ক একটি কোম্পানি। ২০১২ সালে তার মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ৩০ বিলিয়ন ডলারের বেশি।
কিন্তু পরের দুই বছরে নিজের বেশিরভাগ সম্পদ হারান তিনি। স্রেফ ২০১৩ সালেই ১৯ বিলিয়ন ডলার খুইয়েছিলেন তিনি। গ্যাস সংক্রান্ত ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য ভেঙে পড়ায় ব্যাংককে বড় অংকের দেনাও শোধ করতে হয় তাকে। শেষপর্যন্ত দেউলিয়া হন বাতিস্তা।
বিয়রগলফার গডম্যান্ডসন
বিয়রগলফার গডম্যান্ডসন ছিলেন একজন সকার খেলোয়াড়। সেখান থেকে উপার্জিত অর্থ তিনি বিনিয়োগ করেন বেভারেজ ব্যবসায়। এরপর তার মাধ্যমে ৩.৫ বিলিয়ন ডলার সম্পদ গড়ে তোলেন তিনি।
বিলিয়নিয়ার হওয়ার পর ইংলিশ সকার ক্লাব ওয়েস্ট হ্যাম ইউনাইটেড ও আইসল্যান্ডের ব্যাংক ল্যান্ডসব্যাংকি ক্রয় করেন গডম্যান্ডসন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, ২০০৮ সালে আইসল্যান্ডের ব্যাংকিং সংকটের অন্যতম ভুক্তভোগী হতে হয় তাকে।
![](https://www.tbsnews.net/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2023/01/02/bjorgolfur_gudmundsson.jpg)
ব্যবসায়িক হিসাবনিকাশে কিছু অপরাধের কারণে তাকে আদালতে লড়তে হয়। সেখানেও প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে বাধ্য হন তিনি। ২০০৯ সালে দেনা পরিশোধ না করতে পারায় তাকে দেউলিয় ঘোষণা করা হয়।
জসলিন ওয়াইল্ডেনস্টেন
প্রয়াত বিলিয়নিয়ার আর্ট ডিলার অ্যালেক ওয়াইল্ডেনস্টেনের সঙ্গে ১৯৯৯ সালে বিচ্ছেদের সুবাদে ২.৫ বিলিয়ন ডলার সম্পদের মালিক হয়ে যান জসলিন ওয়াইল্ডেনস্টেন।
তবে এ সম্পদ বেশিদিন আগলে রাখতে পারেননি জসলিন। প্রতি মাসে এক মিলিয়ন ডলার খরচ করার জন্য বিখ্যাত ছিলেন তিনি। ২০১৮ সালে ফক্স নিউজ জানায়, মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার দেনার দায়ে দেউলিয়াত্বের আবেদন করেছিলেন তিনি। নিজের দেউলিয়ার ঘটনায় নিজেই অবাক হয়ে গিয়েছিলেন বলে স্বীকার করেন জসলিন।
![](https://www.tbsnews.net/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2023/01/02/jocelyn_wildenstein.jpg)
শন কুইন
আইরিশ ব্যবসায়ী শন কুইনের প্রায় সবকিছু নিয়ে ব্যবসায় করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। হাসপাতাল থেকে শুরু করে প্লাস্টিক হয়ে পাঁচ তারকা হোটেল; কোথায় বিনিয়োগ করেননি তিনি! একটা পর্যায়ে আয়ারল্যান্ডের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হতো তাকে।
শন তার সব অর্থ গচ্ছিত রেখেছিলেন অ্যাংলো আইরিশ ব্যাংক-এ। ২০০৮ সালে শেয়ার কেনার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ব্যক্তিকে অনৈতিকভাবে অর্থনৈতিক সহায়তা দেওয়ার কারণে ব্যাংকটির অর্থ স্থানান্তর বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে ২.৮ বিলিয়ন ডলার হারান কুইন। এছাড়া আদালত অবমাননার দায়ে ২০১২ সালে নয় সপ্তাহের জন্য কারাভোগের আদেশও জোটে তার।
![](https://www.tbsnews.net/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2023/01/02/adolf_merckle.jpg)
অ্যাডলফ মার্কল
নয় বিলিয়ন ডলার নিয়ে একসময় বিশ্বের সেরা ধনীদের তালিকায় নিয়মিত পাওয়া যেত জার্মান ব্যবসায়ী অ্যাডলফ মার্কলকে। একটি ঔষধ ও প্রকৌশল শিল্পপ্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে এত অর্থের মালিক হয়েছিলেন তিনি।
২০০৮ সালে অর্থনৈতিক সংকটের সময় তার কোম্পানি ছয় বিলিয়ন ডলার দেনার মুখে পড়ে। ২০০৯ সালে মার্কল একেবারে কপর্দকশূন্য হয়ে যান। তারপর এক করুণ বিদায়; জার্মানিতে একটি ট্রেনের সামনে শুয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি। মৃত্যুর আগে একটি চিরকুটে মার্কল লিখে গিয়েছিলেন: 'আমি দুঃখিত।'
![](https://www.tbsnews.net/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2023/01/02/sean_quinn.jpg)
প্যাট্রিসিয়া ক্লাজ
১৯৮১ সালে বিলিয়নিয়ার ও টিভি মোগল জন ক্লাজের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ করেন প্যাট্রিসিয়া। সেসময় পাঁচ বিলিয়ন ডলার নিয়ে আমেরিকার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি ছিলেন জন ক্লাজ। ১৯৯০ সালে এ দম্পতির মধ্যে বিচ্ছেদ হয়। ফোর্বস-এর তথ্য অনুযায়ী, এর ফলে আমেরিকার সবচেয়ে ধনী ডিভোর্সিদের একজনে পরিণত হন প্যাট্রিসিয়া।
একটি ওয়াইনারি ও ভাইনইয়ার্ডে (আঙুরখেত) বিনিয়োগ করে সুবিধা করতে পারেননি প্যাট্রিসিয়া। ২০০৮ সালে এটি বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। অনেকগুলো ঋণ ও আর্থিক দুরবস্থায় পড়ে নিলামের মাধ্যমে আসবাবপত্র ও গহনা বিক্রি করতে শুরু করেন তিনি। কিন্তু তাতেও শেষ পর্যন্ত দেউলিয়া হওয়া থেকে রেহাই পাননি প্যাট্রিসিয়া।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ছিলেন প্যাট্রিসিয়ার পুরোনো বন্ধু। ২০১১ সালে ট্রাম্প ভাইনইয়ার্ডটি কিনে নেন এবং প্যাট্রিসিয়াকে একটি চাকরির প্রস্তাব করেন। তবে সে চাকরিতেও থিতু হতে পারেননি তিনি।