ইতিহাসের সবচেয়ে ধনী ১০ ব্যক্তি: স্ট্যালিন, চেঙ্গিস, আকবরদের কাছে পাত্তাই পাবেন না মাস্ক, বেজোসরা

ফিচার

টিবিএস ডেস্ক
30 October, 2022, 09:30 pm
Last modified: 30 October, 2022, 09:34 pm
নানা তথ্য বিশ্লেষণ করে ও বেশ কজন প্রখ্যাত ইতিহাসবিদের কাজ ঘেঁটে—মূল্যস্ফীতি ও বর্তমানের পণ্যমূল্য বিবেচনায় নিয়ে—এ যাবত ইতিহাসের সবচেয়ে ধনী দশ ব্যক্তির তালিকা তৈরি করেছে সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট।

এই মুহূর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি ইলন মাস্ক।

ফোর্বস অনুমান করেছে, এই প্রযুক্তি উদ্যোক্তার মোট সম্পদের অর্থমূল্য প্রায় ২২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। 

কিন্তু বিপুল বিত্তের মালিক হওয়ার পরও ৫১ বছর বয়সি মাস্কের মোট সম্পদের পরিমাণ ইতিহাসের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের সম্পদের ধারেকাছেও আসে না। 

তবে একটা ব্যাপার খেয়াল রাখা গুরুত্বপূর্ণ—ইতিহাসের পাতা উল্টে যত পিছিয়ে যাব, একজন ব্যক্তি ঠিক কতটা ধনী ছিল তা নিখুঁতভাবে বের করা কঠিন। কারণ ওই সময়ে সম্পদ গণনা করা হতো সোনা, জমি, লবণ ও ক্ষমতার উপর ভিত্তি করে।

তবে নানা তথ্য বিশ্লেষণ করে ও বেশ কজন প্রখ্যাত ইতিহাসবিদের কাজ ঘেঁটে—মূল্যস্ফীতি ও বর্তমানের পণ্যমূল্য বিবেচনায় নিয়ে—এ যাবত ইতিহাসের সবচেয়ে ধনী দশ ব্যক্তির তালিকা তৈরি করেছে সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট।

১০. জন ডি. রকফেলার (১৮৩৯-১৯৩৭)

বর্তমান হিসাবে আনুমানিক সম্পদ: ৩৪০ বিলিয়ন ডলার

সেলিব্রিটি নেট ওয়র্থসহ অসংখ্য সূত্রের তথ্যমতে, জন ডি. রকফেলার একটি বর্তমানের হিসাবে প্রায় ৩৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের সম্পদ করেছিলেন।

এই আমেরিকান ব্যবসায়িক ম্যাগনেট এবং জনহিতৈষী ১৮৭০ সালে স্ট্যান্ডার্ড অয়েল কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। যা ১৮৮০-র দশকের গোড়ার দিকে মার্কিন পরিশোধনাগার ও পাইপলাইনের ৯০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করত বলে জানাচ্ছে হিস্ট্রি ওয়েবসাইট। 

৯. অ্যান্ড্রু কার্নেগি (১৮৩৫-১৯১৯)

বর্তমান হিসাবে আনুমানিক সম্পদ: ৩৭২ বিলিয়ন ডলার

মানি ডটকম বলছে, স্কটিশ বংশোদ্ভূত এই শিল্পপতি ১৯ ও ২০ শতকের প্রথমদিকে আমেরিকান ইস্পাত শিল্পের সম্প্রসারণে নেতৃত্ব দিয়ে প্রায় ৩৭২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমান সম্পদের মালিক হন।

১৯০১ সালে তিনি তার কার্নেগি স্টিল কোম্পানি জেপি মরগানের কাছে ৪৮০ মিলিয়ন ডলারে (ওই সময়ের মুদ্রায়) বিক্রি করেন। ১৯১৯ সালে মৃত্যুর সময় কার্নেগি তার উপার্জনের ৯০ শতাংশ জনহিতকর কাজে দান করে যান।

৮. ক্যাথরিন দ্য গ্রেট (১৭২৯-১৭৯৬)

বর্তমান হিসাবে আনুমানিক সম্পদ: ১.৫ ট্রিলিয়ন ডলার

১৭৬২ সালে সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর রাশিয়ার সম্রাজ্ঞী উত্তরাধিকারসূত্রে ভূমি, সম্পদ ও রাজনৈতিক ক্ষমতার একটি বিশাল নেটওয়ার্কের অধিকার ও নিয়ন্ত্রণ লাভ করেন। লুক্সুও-র তথ্য অনুসারে, তার মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল বর্তমানের রাশিয়ার জিডিপির ৫ শতাংশ বা ১.৫ ট্রিলিয়ন ডলার।

৭. অগাস্টাস সিজার (খ্রিষ্টপূর্ব৬৩-১৪ খ্রিষ্টাব্দ)

বর্তমান হিসাবে আনুমানিক সম্পদ: ৪.৬ ট্রিলিয়ন ডলার

রোমান সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা এবং ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ও বিখ্যাত এই শাসকের আলাদা করে পরিচয় দেওয়ার প্রয়োজন নেই।

লুক্সুওর তথ্যমতে, অগাস্টাস সিজারের সাম্রাজ্যে বিশ্বের মোট উৎপাদনের ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ হতো। বর্তমান হিসাবে, সিজার প্রায় ৪.৬ ট্রিলিয়ন ডলার মূল্যের সম্পদের মালিক ছিলেন।

৬. জোসেফ স্ট্যালিন (১৮৭৮-১৯৫৩)

বর্তমান হিসাবে আনুমানিক সম্পদ: ৭.৫ ট্রিলিয়ন ডলার

মানি ডটকম বলছে, সোভিয়েত ইউনিয়নের সম্পদ থেকে স্ট্যালিনের সম্পদকে আলাদাভাবে দেখানো কার্যত অসম্ভব। অর্থনীতিবিদরা দাবি করেছেন, সোভিয়েত ইউনিয়নের ওপর স্ট্যালিনের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ তাকে সর্বকালের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের একজনে পরিণত করেছে।

দিঅর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি) থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, ১৯৫০ সালে বিশ্বের মোট অর্থনৈতিক উৎপাদনের সাড়ে ৯ শতাংশ হতো সোভিয়েত ইউনিয়নে। বর্তমান অর্থমূল্যে এ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল প্রায় ৭.৫ ট্রিলিয়ন ডলার।

কাগজে-কলমে স্টালিন এ অর্থের 'মালিক' ছিলেন না, তবে 'দেশের সমস্ত সম্পদ নিয়ন্ত্রণ করার' ক্ষমতা তার ছিল।

৫. সম্রাজ্ঞী উ (১৬২৪-৭০৫)

বর্তমান হিসাবে আনুমানিক সম্পদ: ১৬ ট্রিলিয়ন ডলার

চীনের প্রথম এবং একমাত্র নারী সম্রাট ছিলেন বুদ্ধিমতী, গভীর রাজনৈতিক প্রজ্ঞার অধিকারী উ। প্রতিপক্ষের ওপর নির্মমতার জন্য বিখ্যাত হয়ে আছেন। 

সম্রাজ্ঞী উ-র শাসনকালে বিশ্বের জিডিপিতে চীনের অর্থনীতির অবদান ছিল প্রায় ২৩ শতাংশ, আজকের হিসাবে যা প্রায় ১৬ ট্রিলিয়ন ডলার হবে।

তিনি সিল্ক রোডে চা ও সিল্কের ব্যবসা করে দেশের সম্পদ গড়ে তোলেন। কেউ কেউ তাকে সর্বকালের সবচেয়ে ধনী নারী হিসেবে অভিহিত করেছেন।

৪. সম্রাট আকবর (১৫৪২-১৬০৫)

বর্তমান হিসাবে আনুমানিক সম্পদ: ২১ ট্রিলিয়ন ডলার 

আকবর দ্য গ্রেট নামে পরিচিত জালাল-উদ-দিন মুহাম্মদ আকবর ছিলেন মোগল সাম্রাজ্যের তৃতীয় সম্রাট।

মানি ডটকমের তথ্য বলছে, মোট বৈশ্বিক জিডিপিতে তার সাম্রাজ্যের অবদান ছিল ২৫ শতাংশ, যার অর্থমূল্য ২১ ট্রিলিয়ন ডলার। অর্থনৈতিক ইতিহাসবিদ অ্যাঙ্গাস ম্যাডিসনের মতে, তৎকালীন এলিজাবেথান ইংল্যান্ডের সম্পদের সঙ্গে তুলনা করলেও আকবরের জীবনমাত্রার মান অনায়াসেই ইউরোপীয় সমাজকে ছাড়িয়ে যায়।

৩. সম্রাট শেনজং (১০৪৮-১০৮৫)

বর্তমান হিসাবে আনুমানিক সম্পদ: ৩০ ট্রিলিয়ন ডলার

মানি ডটকমের তথ্যমতে, চীনের সং রাজবংশের ষষ্ঠ সম্রাট শেনজংয়ের সাম্রাজ্যের অর্থনীতির আকার ছিল সেই সময়ে বিশ্বের মোট জিডিপির ২৫ থেকে ৩০ শতাংশের সমান। 

২. চেঙ্গিস খান (১১৬২-১২২৭)

বর্তমান হিসাবে আনুমানিক সম্পদ: ১২০ ট্রিলিয়ন ডলার

ধারণা করা হয়, চেঙ্গিস খান এতই ক্ষমতাধর ছিলেন এবং তার মঙ্গোল সাম্রাজ্য এতটাই বিস্তৃত ছিল যে ২০০৩ সালের এক বৈজ্ঞানিক রিপোর্ট অনুসারে, তার ডিএনএ আজ প্রায় ১৬ মিলিয়ন পুরুষের মধ্যে পাওয়া যেতে পারে।

সর্বকালের সর্ববৃহৎ সাম্রাজ্য গড়েন তিনি। দ্য রিচেস্ট-এর অনুমান, বর্তমান অর্থমূল্যে চেঙ্গিস খানের মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় ১২০ ট্রিলিয়ন ডলার।

১. মানসা মুসা (১২৮০-১৩৩৭)

বর্তমান হিসাবে আনুমানিক সম্পদ:  ...'অপরিমেয়'

সবচেয়ে ধনীদের তালিকায় ১ নম্বরে থাকা নামটি আপনার পরিচিত না-ও হতে পারে। মানসা মুসা ছিলেন মালি সাম্রাজ্যের শাসক। যে সাম্রাজ্য বিস্তর ভূমি, লবণ ও সোনায় সমৃদ্ধ ছিল। 

ইতিহাসবিদদেরা ধারণা, মালি সাম্রাজ্য একসময় বিশ্বের বৃহত্তম স্বর্ণ উৎপাদনকারী ছিল। যার অর্থ, রাজ্যটির শাসক 'অপরিমেয়' সম্পদের মালিক ছিলেন। 

সেলিব্রিটি নেট ওয়র্থ-এর হিসাবে মানসা মুসার সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৪০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তবে ঐতিহাসিকদের বিশ্বাস, তার সম্পদের পরিমাণ আসলে কত ছিল তা সঠিকভাবে জানতে পারা কার্যত অসম্ভব।

এই আফ্রিকান শাসক মক্কায় সর্বকালের সবচেয়ে ব্যয়বহুল হজযাত্রা করার জন্য বিখ্যাত হয়ে আছেন। বিবিসির প্রতিবেদন অনুসারে, রাজকীয় কর্মকর্তা থেকে শুরু করে উট চালক, ক্রীতদাসসহ প্রায় ৬০ হাজার লোক নিয়ে মালি ত্যাগ করেছিলেন মানসা মুসা। যাত্রাপথে তিনি তিন মাস কায়রোতে ছিলেন। ওই তিন মাস তিনি এত সোনা খরচ করেছিলেন যে স্থানীয় অর্থনীতিই তাতে অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। মানসা মুসার অকাতর সোনা খরচের কারণে পরবর্তী ১০ বছরের জন্য কায়রোতে সোনার দামকে পড়ে যায়!


  • সূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.