ভারতের প্রাচীন ফলগাছগুলো ফিরিয়ে আনার চেষ্টা...

ফিচার

টিবিএস ডেস্ক
02 October, 2022, 07:50 pm
Last modified: 02 October, 2022, 07:59 pm
কান্নাপুরামবাসী সম্মিলিতভাবে গড়ে তুলেছেন বিশাল আমবাগান যেখানে রয়েছে ২০০ জাতেরও অধিক আমগাছ। পার্শ্ববর্তী গ্রাম কিংবা শহরতলী থেকে বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির আমের নমুনা সংগ্রহ করে তারা তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন এ বাগান।

ভারতে বিলুপ্তির হুমকিতে পড়েছে কিছু ফলগাছ। তবে গাছগুলোকে বাঁচাতে বাগানবিদদের একটি সম্প্রদায় ব্যবহার করছে প্রাচীন এক কৌশল। এমনকি মৃত গাছকে জিইয়ে তুলতেও সক্ষম হয়েছেন তারা।

ভারতের দক্ষিণী রাজ্য কেরালার কান্নুর জেলার একটি অঞ্চল কান্নাপুরাম। ২০২০ সালে কেরালা স্টেট বায়োডাইভার্সিটি বোর্ড  এ অঞ্চলটিকে 'ইন্ডিজেনাস ম্যাঙ্গো হেরিটেজ এরিয়া' ঘোষণা করে। জেনে অবাক হবেন যে এ সম্মান অর্জনের পেছনে কেবল গুটিকয়েক মানুষের নয়, রয়েছে সকল গ্রামবাসীর অবদান।

কান্নাপুরামবাসী সম্মিলিতভাবে গড়ে তুলেছেন বিশাল আমবাগান যেখানে রয়েছে ২০০ জাতেরও অধিক আমগাছ। পার্শ্ববর্তী গ্রাম কিংবা শহরতলী থেকে বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির আমের নমুনা সংগ্রহ করে তারা তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন এ বাগান।

বাগানটি গড়ার প্রথম সারির একজন শাইজু মাচাথি। ৪২ বছর বয়সী কান্নাপুরামের এই অধিবাসী পেশায় একজন পুলিশ কর্মকর্তা। কান্নাপুরামের 'ইন্ডিজেনাস ম্যাঙ্গো হেরিটেজ এরিয়া' খেতাব পাওয়ার পর তিনি উপলব্ধি করেন এ সময়ের একটি বাগান করতে পুরো একটি গ্রামের প্রয়োজন!

মাচাথি জানান, যে কৌশলটির বলে বিচিত্র আমের এই সম্ভার গড়া সম্ভব হয়েছে সেটি হলো বছরের পর বছর যাবত চেষ্টালব্ধ কলমের বিদ্যা। চাষাবাদে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ না থাকা স্বত্ত্বেও ২০১৬ সালের জুলাই মাসে এই কৌশল প্রয়োগ শুরু করে দেন তিনি। তবে তার উদ্যোগের পেছনে রয়েছে দুর্ভাগ্যজনক এক ঘটনা যা পুরো গ্রামবাসীকে নাড়া দিয়েছিল।

কান্নাপুরামের এক গ্রামবাসীর উঠোনে ছিল ২০০ বছর পুরোনো সুবিশাল একটি আমগাছ। গাছটির নাম ছিল 'ভেল্লাথান'। মাচাথির ভাষায় গাছটির আমগুলো ছিল তার জীবনে খাওয়া সবচেয়ে সুমিষ্ট আম। একেবারে দেশী আমের এ জাতটি ছিল বিরল। কিন্তু অনেক পুরোনো বলে গাছটির ডালপালাগুলো মাঝেমধ্যে সশব্দে উঠোনে পড়ে এত জঞ্জাল করে ফেলত যে ওই ব্যক্তি মনের শান্তির জন্য একদিন গাছটিকে কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন। তারই ফলশ্রুতিতে একদিন কেটে ফেলেন প্রাচীন এবং বিরল আমগাছটিকে।

গাছটি গ্রামবাসীদের বেড়ে ওঠা এবং জীবনের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে গিয়েছিল। প্রজন্মের পর প্রজন্মের দেখে আসা গাছটিকে রাতারাতি হারানোয় তারা বড় একটি ধাক্কা খান। পরদিন সকালে কেটে ফেলা বিক্ষিপ্ত শাখাগুলো দেখে মাচাথি হারানোর এক গভীর বেদনা অনুভব করলেন। তাইতো সাথে সাথে তিনি গেলেন তার এক বন্ধুর কাছে যিনি কেরালা সরকারের কৃষি অফিসার হিসেবে কাজ করছেন।

গাছটিকে বাঁচানোর একটি উপায়ের সন্ধান দিলেন সেই বন্ধু। গাছটির কিছু অংশ কেটে নিয়ে অন্য গাছের সাথে সংযোগ করে কলম করতে হবে। এর জন্য দরকার একটি আমগাছ যেটির বলিষ্ঠ শেকড় থাকবে। সফল হলে সেই পুরোনো গাছটিকে পুনরুৎপাদিত করা যাবে, ফিরে পাওয়া যাবে সেই অমৃত স্বাদের আম।

কলম হলো উদ্ভিদের বংশ বৃদ্ধির এক ধরনের প্রক্রিয়া যেখানে দুটো গাছের অর্গানিক টিশ্যুর সংযোজন করা হয়। সাধারণতগাছ  দুটো একই প্রজাতির হয়। দুটো ভিন্ন ঘেপ্রজাতির গাছও কলম করা যায়, তবে কলম করা গাছটি কিছুটা দুর্বল হয় এবং বেশিদিন বাঁচতে পারে না। আবার অনেক সময় গাছের জন্মই হয় না।

কেটে ফেলা আমগাছটি থেকে বেশ সতর্কতার সাথে দেখে শুনে একটি অংশ কাটা হয় যেটিকে বলা হয় সায়ন (scion)। কলমের জন্য বাছাই করা হয় আমের সুগঠিত বীজ থেকে জন্মান একটি মূলাকার কাণ্ড (rootstock)। সায়ন এবং কাণ্ড উভয়কে ঢালুভাবে কেটে একসাথে বাঁধা হয়। মূল ও কাণ্ডের সংযোগস্থলকে বলা হয় 'কলম সংযোগ' (graft union)।

উচ্ছ্বসিত মাচাথি বলেন, 'আমরা আমগাছটির ৫০টি অংশ বলিষ্ঠ মূলে কলম করেছি এবং চেষ্টা করে সেগুলোর মরে যাওয়া থেকেও বাঁচিয়েছি। সেগুলোর সবকটি এখনও বর্ধমান। দেখে মনে হয়, আমরা বিরল এক সম্পদ বাঁচিয়েছি।'

কেরালা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নারায়ণ কুট্টি কৃষক এবং বাগান উদ্যোক্তাদের গাছের কলম করার বিষয়ে নানা প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তার মতে কলম করার অনেক প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তিনি বলেন, 'চারা থেকে জন্ম নেওয়া গাছে মাতৃগাছের বৈশিষ্ট্য হুবহু থাকে না। আর সেখানে কলম করলে কাঙ্ক্ষিত গাছটির হুবহু জেনেটিক কপি পাওয়া যায়। কলম করলে গাছে ফুল-ফল উৎপাদন বেড়ে যায়। যার ফলে গাছটির বাণিজ্যিক মূল্যও বৃদ্ধি পায়।'

গাছের কলম পদ্ধতি ভারতে নতুন নয়। স্পেয়ার পার্টস: আ সারপ্রাইজিং হিস্ট্রি অভ ট্রান্সপ্ল্যান্ট -এর লেখক সাংস্কৃতিক ইতিহাসবিদ পল চ্যাডক বলেন, মানব দেহে যে চর্ম কলম করার পদ্ধতিটি আছে, সেটি কৃষির কলম কৌশল থেকেই উদ্বুদ্ধ। গাছের কলম পদ্ধতি প্রাচীন ভারতেও প্রচলিত ছিল। সার্জিক্যাল কলম নিয়ে যখন বইয়ে প্রথম লেখা হয় তখন এটিকে বলা হয়েছিল 'এগ্রিকালচার অভ দ্য বডি' (দেহের কৃষিবিদ্যা) এবং 'দ্য ফার্মিং অভ মেন'।

গাছের কলম যে শুধু কৃত্রিমভাবে হয় এমনটি নয়, প্রাকৃতিকভাবেও হতে পারে। ভারতের উত্তরপূর্ব রাজ্য মেঘালয়ে গেলেই দেখা মিলবে প্রাকৃতিক কলমে তৈরি 'জীবন্ত শেকড়ের সেতু'র (লিভিং রুট ব্রিজ)। বেশ কয়েকটি গাছের পুরু শেকড় বিজড়িত হয়ে একটি সেতুর সৃষ্টি করে যার উপর দিয়ে অনায়াসে হাঁটাচলা করা যায়।

প্রাকৃতিক কলমের মাধ্যমে গাছের শেকড়গুলো একে আরেকটির সাথে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জুড়ে যায়। এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় 'ইনোস্কিউলেশন'। কয়েকটি গাছের শেকড় দশকের বেশি সময় একসাথে থাকতে থাকতে একসময় একোটি আরেকটির সাথে পাকিয়ে একটি একক কাঠামোতে পরিণত হয়। তবে মেঘালয়ের স্থানীয় আদিবাসীরাও শেকড়গুলোর কৃত্রিম কলম করে সেতুগুলো সংস্কার করে।

সমগ্র ভারত জুড়ে বাগান করার যে আন্দোলন চলছে তা কলমের মতো দেশী জ্ঞানকে পুনরুজ্জীবিত করছে। কুট্টি জানান, গাছ লাগানো কিংবা কৃষির ক্ষেত্রে বর্তমানে যে সমস্যাগুলো দেখা যায় যেমন, মাটির গুনাগুণ কমে যাওয়া, কীটপতঙ্গ ও মাটিতে জন্মানো প্যাথোজেনের আক্রমণ রোধ করা, কেমিক্যালের ব্যবহার কমানো, জলবায়ু ও তাপ প্রতিরোধী গাছ জন্মানো ইত্যাদি মোকাবিলা করতে সাহায্য করছে এই কলম প্রক্রিয়া। 

তিনি সংযজন করেন, 'বন্যাপ্রবণ এলাকার মাটি অথবা যে মাটিতে মাত্রাতিরিক্ত লবণাক্ততা আছে, সেখানে কলম করার সময় লবণাক্ততা সহনশীল রুটস্টক ব্যবহার করা হয়। যেমন, টমেটো গাছের কলমের কথা ধরা যাক। টমেটোর সোলানাম লাইসোপার্সিকাম (Solanum lycopersicum) নামে একটি জাত আছে যেটির বৃদ্ধি মাটিতে থাকা উচ্চ লবণাক্ত উপাদানের কারণে বাধাপ্রাপ্ত হয়।

টমেটোর আরেকটি জাত আছে যেটির নাম লাইসোপার্সিকন চিসম্যানি (Lycopersicon cheesmanii)। এটি লবণাক্ততা সহনশীল। আমরা বাণিজ্যিক টমেটো সোলানাম লাইসোপার্সিকাম-এর সাথে লাইসোপার্সিকন চিসম্যানির কলম করে টমেটোর এমন একটি জাত উৎপাদন করছি যেটি হবে আরও লবণাক্ততা সহনশীল এবং বলিষ্ঠ। লবণাক্ত জমিতে এটি ভালো ফসল দেবে।'

ভারতের উপকূলীয় এলাকায় টমেটো, বেগুন, মরিচের ব্যাপক চাষ হয়। অ্যাসিডযুক্ত মাটিতে এই ফসলগুলো চাষ করতে গেলে ব্যাক্টেরিয়াল উইল্টের (গাছের এক প্রকার রোগ যেটি মাটি ও পানি থেকে জন্মায়) সমস্যায় পড়তে হয়। গাছ যে পর্যায়ে থাকুক না কেন, ব্যাক্টেরিয়াল উইল্টে যেকোনো সময় আক্রমণ করে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ ফসল নষ্ট করে দিতে পারে।

বাণিজ্যিক শংকর (হাইব্রিড) জাতগুলোর মতো সম গুণাগুণসম্পন্ন কিন্তু একইসাথে ব্যাক্টেরিয়াল উইল্ট প্রতিরোধী- এরূপ গাছ জন্মাতে অনেক বছর ধরে চেষ্টা চলছিল। সম্প্রতি এক্ষেত্রে বিরাট এক সাফল্য অর্জন করেন কুট্টি। তিনি জানান, 'উইল্ট প্রতিরোধী বেগুন রুটস্টকে আমরা টমেটর কলম করছি। এতে করে উচ্চ ফলনশীল বাণিজ্যিক শংকর জাত জন্মানো যাবে যেগুলোতে ব্যাক্টেরিয়ান উইল্টের সমস্যা থাকবে না।'

বর্তমানে ভারতে আমের যত জাত আছে তার প্রায় সবকটিই কলম করে তৈরি। সাধারণত একটি গাছে সর্বোচ্চ মাত্র চার থেকে পাঁচ জাতের কলম করা যায় এবং অনেকেই এটি চেষ্টা করছেন। তবে এর ব্যতিক্রমও রয়েছে যা জানলে অবাক বনে যেতে হয়।

উত্তর প্রদেশের মালিহাবাদের একজন কৃষক কলিম উল্লাহ খান। মাত্র একটি গাছে ৩১৫টি জাতের আম কলম করায় সফল হয়েছেন তিনি। গাছটির প্রত্যেকটি শাখার রয়েছে ভিন্ন জমিন। তার এই সাফল্যের দরুন বিশ্বজুড়ে শিরোনামে পরিণত হন ৮০ বছর বয়সী কলিম। পুরো দেশ ঘুরে বিভিন্ন বিরল জাতের আম সংগ্রহ করে ওই গাছটিতে কলম করেন তিনি।

ভারতে কলম প্রক্রিয়ার দৌলতে একদিকে মাটি সৃষ্ট রোগের উপশম সম্ভব হয়েছে, তেমনি নানা ফল ও সবজির উৎপাদন এবং সংরক্ষণও ব্যাপক হারে বেড়েছে। দেশটির বিভিন্ন স্থান থেকে বাগান উদ্যোক্তারা কলম করার এই আন্দোলনে যুক্ত বলে এ সংক্রান্ত জ্ঞান বিস্তার লাভ করছে। তার পাশাপাশি বীজের নমুনা এবং দেশী জাতের সায়নের আদান প্রদান একটি সাধারণ ব্যাপারে পরিণত হচ্ছে।

কোনো কোনো সময় বিপদাপন্ন জাতের গাছ হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে আনা হয় একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে যেখানে গাছটি ভালোমত জন্মাতে ও বেড়ে উঠতে পারবে।

ওমানের রাজধানী মুস্কাতে একটি অটোমোবাইল কোম্পানিতে কাজ করতেন ৭৩বছর বয়সী টমে ইনাকিও সেকুয়েরা। একদিন সিদ্ধান্ত নিলেন চারাগাছ নিয়ে তার যে গভীর আগ্রহ- তাতে নিবিষ্ট হবেন। গত ছয় বছর ধরে তিনি কলমের বিভিন্ন কৌশল নিয়ে পরীক্ষা করার পাশাপাশি স্থানীয় সম্প্রদায়ের মাঝে বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে কাজ করছেন।

ভারতের দক্ষিণ পশ্চিমের উপকূলীয় রাজ্য গোয়াতে তার ২.৫ একরের (এক হেক্টর) একটি পৈতৃক সম্পত্তি আছে। সেখানে তিনি দ্য ফার্ম গোয়া নামে একটি ফার্ম গড়ে তুলে পরিচর্যার কাজে তার চার ছেলেকে নিয়োগ দেন।

তার ছেলে টসওয়েল সেকুয়েরা একজন আইটি প্রফেশনাল এবং সাপ্তাহিক ছুটিতে ফার্মটির দেখাশোনা করেন। তিনি জানান, 'আমরা আম, কাঁঠাল, অ্যাভাকাডো এবং সবেদার কলম করি। এর বীজগুলো আনা হয় মহারাষ্ট্র ও গোয়ার বিভিন্ন নার্সারি থেকে, আবার কোনো কোনো সময় গুজরাট থেকেও আনা হয়।'

এই উদ্যোগটি একটি কমিউনিটি প্রজেক্টে পরিণত হয়েছে। এ ব্যাপারে সবাই আগ্রহী। ফলে কলমের মাধ্যমে নানা জাতের পুনরুৎপাদন এবং চাষাবাদ সম্ভব হচ্ছে।

দ্য ফার্ম গোয়া থেকে স্থানীয়রা নামমাত্র মূল্যে ভালো মানের কলম চারা কিনতে পারেন। সেকুয়েরা বলেন, 'আমরা শংকর ফল উৎপাদন করা গাছের কলম করতে সবাইকে উস্বুদ্ধ করি এবং তাদের চারাগাছ রোপন, ব্যবস্থাপনা এবং সার প্রয়োগের প্রত্যেকটা ধাপ বোঝাই।'

'আমরা জৈব সার ব্যবহার করি এবং ভালো ফসলী ও ভালো মানের গাছগুলোর সায়ন নিয়ে কলম করি। আমরা গাছ দুটোর উপযোগিতা নিশ্চিত করতে প্রথমে সায়নের প্রস্থ এবং রুটস্টকের পরীক্ষা করি। কলম করা স্থানে যেন সরাসরি সূর্যের তাপ প্রবেশ না করে এবং গাছটিতে যেন মাত্রাতিরিক্ত পানি দেওয়া না হয় তার খেয়াল রাখি। গ্রাফট ইউনিয়নটিকে ৩০ থেকে ৪৫ দিন পর্যন্ত পর্যবেক্ষণে রাখতে হয়।'

দ্য ফার্ম গোয়া-র কলম নিরীক্ষার সাম্প্রতিক সাফল্যের মধ্যে একটি ছিল এরকম- একটি কাঁঠাল গাছ থেকে সায়ন কেটে গ্রাফটিং টেইপ দিয়ে বীজ থেকে উৎপন্ন পাঁচ মাস বয়সী আরেকটি কাঁঠাল চারায় সংযোজন করা হয়। এভাবে বীজ থেকে জন্মানো গাছে আরেকটি গাছের কলম করলে নতুন গাছটি আরও শক্তশালী হয়।

বর্তমানে সেকুয়েরাদের এই প্রজেক্টের ১৫টি জাতের আমের ১৫০টি কলম চারা আছে। এছাড়াও তারা অন্যান্য বিভিন্ন ফলমূল এবং গোয়ায় পাওয়া যায় না এমন সব গাছের কলম করেন।

কলমের পাশাপাশি তারা টিশ্যু কালচারেরও নিরীক্ষা করেছেন। টিশ্যু কালচার কলম থেকে সামান্য ভিন্ন একটি কৌশল। এ প্রক্রিয়ায় একটি দাতা চারার টিশ্যুর নমুনা থেকে ল্যবরেটরির মতো কন্ডিশনে সম্পূর্ণ নতুন গাছ জন্মানো হয়। ২০১৫ সালে গুজরাটের বালতারু নার্সারি থেকে তারা একটি লেবুর টিশ্যু নেয়। এর চার বছর পরে গাছটিতে একটি হলদে-সবুজাভ ফল হয় যেটিতে কোনো বীজ ছিল না।

তবে কলমের চেয়ে টিশ্যু কালচারে আরও বেশি অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয় এবং স্থানীয়দের মাঝে এখনো এটির প্রচলন  খুব একটা ঘটেনি। 

কান্নাপুরামের সেই ২০০বছর পুরোনো গাছটিতে ফিরে যাওয়া যাক। মাচাথির প্রাচীন গাছটি বাঁচিয়ে তোলার সাফল্য দেখে গ্রামবাসীরা মৃতপ্রায় গাছের নমুনা সংগ্রহে তাকে সাহায্যের হাত বাড়ায়। বাড়ি বাড়ি গিয়ে তারা বিভিন্ন জাতের আমের নমুনা সংগ্রহ করা শুরু করল। একসময় দেখা যায় তারা দেশী আমের ২০০ টি জাতের নমুনা সংগ্রহ করে ফেলেছে। 

মাচাথি ২০১৬ সালে নাট্টু মাঞ্চোট্টিল এজুকেশনাল অ্যান্ড ইন্ডিজেনাস ফ্রুট প্ল্যান্ট কনজার্ভেশন এবং রিসার্চ ট্রাস্ট গঠন করেন। নাট্টু মাঞ্চোট্টিল এর বাংলা তর্জমা দাঁড়ায় 'একটি স্থানীয় আমগাছের নিচে'।

চার বছর পরে কান্নাপুরামবাসীর কষ্ট সাফল্যের মুখ দেখে। মাচাথির এই ট্রাস্টকে সরকার প্ল্যান্ট জিনোম সেভিওর কমিউনিটি অ্যাওয়ার্ড প্রদান করে। এ পুরস্কারটি সাধারণত বাণিজ্যিক কৃষকদের দেওয়া হয় যারা হরেক রকম জাতের আম সংরক্ষণ করেন।

মাচাথি বর্তমানে ন্যাশনাল সোশ্যাল স্কিম-এর আওতায় স্কুলগামী স্বেচ্ছাসেবকদের সাথে কলমের কাজ করছেন। উদ্দ্যেশ্য কেরালা রাজ্যে আমের নানা জাতের একটি অনন্য বন গড়ে তোলা। তিনি মনে করেন, স্থানীয় জাত পুনরুদ্ধার করার কাজটি সবচেয়ে ভালো হয় স্থানীয় সম্প্রদায়কে এ প্রচেষ্টায় যোগ করতে এবং তাদের এ সংক্রান্ত জ্ঞান সমৃদ্ধ করতে পারলে।

কে জানে হয়তো একদিন মাচাথির কলম করা গাছও সেই ২০০বছর পুরোনো ভেল্লাথান-এর মতো প্রাচীন গাছে পরিণত হবে।


বিবিসি থেকে অনূদিত 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.