কইন্যা: ঐতিহ্য ও পটচিত্রের মাধ্যমে পোশাকে যারা এনেছে আভিজাত্য

ফিচার

30 September, 2022, 04:00 pm
Last modified: 19 August, 2023, 01:16 pm
পটচিত্রকে উপজীব্য করে পোশাকে নান্দনিকতা আনার কাজ করছে ‘কইন্যা’। বাহারি নকশার পোশাকগুলো কখনো ফুটিয়ে তোলে শক্তি, কখনোবা প্রতিবাদ। আটপৌড়ে সাধাসিধে জীবনচিত্র উঠে এসেছে কইন্যার শাড়ি কিংবা কুর্তির মাধ্যমে...
পটচিত্রে যামিনী রায়/ ছবি কৃতিত্ব- কইন্যা

পোশাকে ফুল, পাখির, পাতার নকশা তো হর-হামেশাই দেখা যায়। কেমন হয়, যদি পোশাকে দেখা যায় পটচিত্রের ছোঁয়া? পটে আঁকা ছবি যখন প্রিয় শাড়ি কিংবা কুর্তিতে প্রকাশ পায় তখন তা এনে দেয় ভিন্নরূপতা। আভিজাত্য ও নান্দনিকতার মিশেলে তৈরি এসব পোশাক তুলে ধরে দেশীয় ঐতিহ্য তথা কৃষ্টি।

পোশাকের সাথে দেশীয় ঐতিহ্যের মেলবন্ধনের সেতু তৈরি করেছে কইন্যা। দেশীয় পোশাক নিয়ে কাজ করা কইন্যা শুরু থেকেই পোশাকে রেখেছে নিজস্বতা। শাড়ি কিংবা কুর্তি কিংবা পালাজ্জো সবেতেই নিজেদের স্বকীয়তা বজায় রেখে গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন তারা। ঐতিহ্য ও আধুনিকতা দু'য়ের মিলনে পোশাকে উপস্থাপন করছেন অনন্যতা।  

পটচিত্রকে উপজীব্য করে পোশাকে নান্দনিকতা আনার কাজ করছে 'কইন্যা'। এক্ষেত্রে তারা বেছে নিয়েছে বিখ্যাত চিত্রশিল্পী যামিনী রায়কে। যামিনী রায়ের পটচিত্রের মোটিফ অনুসরণ করে পোশাকের মাধ্যমে জীবন্ত করে তুলেছে লোকজীবনের চিত্রপটকে। আটপৌড়ে সাধাসিধে জীবনচিত্র উঠে এসেছে কইন্যার এসব শাড়ি কিংবা কুর্তির মাধ্যমে।

পটচিত্রের আখ্যান

বাহারি নকশার পোশাকগুলো কখনো ফুটিয়ে তোলে শক্তি, কখনোবা প্রতিবাদ। যুগের আদলে শাড়িতে কখনো তারা তুলে এনেছে হীরক রাজার রাজত্বকে, আবার কখনো ঘরে ঘরে 'দূর্গা' গড়ে তোলার মতো প্রতিবাদও ফুটিয়ে তুলেছে কুর্তির মাধ্যমে।

'কইন্যা'র যাত্রা শুরুর পেছনের গল্প

'অনার্সের শেষের দিকে আমি এবং আমার পার্টনার বাঁধন ২০১৪ সালে কইন্যা শুরুর আগে 'দ্বৈত' নামে ব্যবসা শুরু করি। সেখানে আমরা পুঁতি, কয়েন দিয়ে হাতে তৈরি গয়না বানাতাম। কইন্যার যাত্রা শুরু মূলত ২০১৫ সালে 'দ্বৈত' থেকেই,' বলছিলেন কইন্যার স্বত্বাধিকারী তাসমিনা নিশাত।  

তাসমিনা নিশাত ও বাঁধন মাহমুদ এই দুজনের সমন্বিত উদ্যোগে গড়ে ওঠে কইন্যা। ২০১৫ সাল থেকে অনলাইনেই সর্বপ্রথম তাদের কাজ শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে ধীরে ধীরে ব্যবসায় সম্প্রসারিত হওয়ার পর তা রূপ নেয় বৃহৎ কাঠামোতে।

স্বত্বাধিকারী নিজেই যখন মডেল/ ছবি কৃতিত্ব- কইন্যা

শুরুতে আশেপাশের অনেক বন্ধুদের সাহায্য পেলেও, দ্বৈতের সব কাজ নিজেদের করতে হত। ফলাফলস্বরূপ সময় লাগতো অনেক বেশি। তার উপর অনার্স শেষ হয়ে যাওয়ায় দুই বন্ধুর চলার পথও ভিন্ন হয়ে যাচ্ছিলো। নিজেদের কাজের পথ এক রাখার লক্ষ্যে তারা চিন্তা করলেন এমন কিছু করা দরকার যাতে দুজন একসঙ্গে কাজ করতে পারেন। দুজনেরই পছন্দের জায়গা ব্যবসা হওয়ায় এবং পূর্ব অভিজ্ঞতাও থাকায় তারা ঠিক করলেন 'কইন্যা' শুরু করার কথা।

১২৫০ টাকা ছিলো ব্যবসা শুরু করার প্রাথমিক পুঁজি। কইন্যা শুরুর প্রথম দিকে তারা কেবল ট্রেডিং অর্থাৎ অন্য জায়গা থেকে পণ্য এনে কইন্যাতে বিক্রির কাজ করতেন। শুরু থেকেই ট্রেডিং এ ভালোভাবে সাড়া পাওয়ায় তাদের আত্মবিশ্বাসও বেড়ে যায়। গ্রাহকপ্রিয়তা থাকায় শুরুর দেড়-দুই বছর পর তারা নিজেদের ডিজাইনে কইন্যার নিজস্ব পণ্য বের করার সিদ্ধান্ত নেন।

নাম কেন কইন্যা?

ধানমন্ডির জেনেটিক প্লাজার দোতলায় কইন্যার আউটলেট

২০১৫ সালের দিকে তাসমিনা ও বাঁধন সিদ্ধান্ত নিলেন ব্যবসা পরিপূর্ণভাবে শুরু করবেন। কিন্তু নতুন কিছু শুরু করার জন্য তার আলাদা পরিচয়, আলাদা নাম লাগে। সেই ভাবনা থেকে নিশাত ও বাঁধন মিলে খুঁজতে লাগলেন এমন একটি নাম যে নামে শক্তি আছে। নতুন কিছু, যা অন্যদের থেকে আলাদা। এমন কিছু খোঁজার তাগিদেই খুঁজে বের করেন 'কইন্যা' নামটি।

এ প্রেক্ষিতে নিশাত জানান, 'প্রথম ব্যবসায় দ্বৈততে যেহেতু অনেক বন্ধু, পরিবারের সদস্যদের সমর্থন ছিলো; সেই জায়গা থেকে আমার বন্ধু রুমানা বললো "কইন্যা" নামটি দিলে কেমন হয়! সেখান থেকেই আসলে কইন্যার শুরু।' সেই থেকে শুরু হলো প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কইন্যার পথ চলা।

পোশাকে যখন যামিনী রায়!

ছবি কৃতিত্ব- কইন্যা

হারিয়ে যাওয়া সংস্কৃতি ও দেশীয় ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে কাজ করছে কইন্যা। যাপিত জীবনের ছবি, শিশু, গ্রামবাংলার মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সুখ দুঃখের বহিঃপ্রকাশ তারা যামিনী রায়ের আঁকা মোটিফের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করে।

নাটক ও নাট্যতত্ত্বের শিক্ষার্থী হওয়ায় কইন্যার স্বত্বাধিকারী দুজনের পটশিল্প নিয়ে আগ্রহ ছিলো অনেক। তারই পরিপ্রেক্ষিতে পোশাকে পটচিত্র আনার কথা চিন্তা মাথায় আসে তাদের। পটচিত্র কখনো পুরোনো হতে পারে না, এর মাধ্যমে প্রকাশ পায় হাজার বছরের দেশীয় ঐতিহ্য- এমন বিশ্বাস থেকেই পোশাকে পটচিত্রের ডিজাইন আনার পরিকল্পনা করে তারা।

যামিনী রায়ের পটে আঁকা ছবির বিশেষত্ব হলো লম্বা ও সরু চোখের ব্যবহার। এছাড়াও উৎসবের আমেজ বোঝাতে উজ্জ্বল রং ব্যবহারের আধিক্যও দেখা যায় যামিনী রায়ের ছবিতে। লোকশিল্পের আলোকে যামিনী রায়ের ছবিতে উঠে এসেছে নৃত্যরত তরুণী, ঘরের বধু, কীর্তন বধু, লাঙল হাতে কৃষক, সাঁওতাল জনজীবন প্রভৃতি। মূলত এই ছবিগুলোই শাড়ি কিংবা কুর্তির মাধ্যমে তুলে ধরেছে কইন্যা।

তাসমিনা নিশাত/ ছবি কৃতিত্ব- কইন্যা

হবু মায়েদের জন্য রয়েছে ভিন্ন আকর্ষণ

'আমি যখন কনসিভ করি, তখন থেকে ম্যাটারনিটির জন্য পোশাক খুঁজতাম। এ সময়টাতে খুব অস্থির অস্থির লাগে, কখনো গরম লাগে আবার কখনো ঠান্ডা লাগে। এজন্য ফেসবুকের বিভিন্ন পেজে আরামদায়ক পোশাক খুঁজতাম। যেটার মধ্যে বিভিন্ন সুবিধা থাকবে। তখন মনে হলো আমি যেহেতু নিজেই কনসিভ করেছি তাহলে আমি কেন এই জায়গাটাতে কাজ করবো না?', বলছিলেন নিশাত।

ব্যাস, নিজের মাতৃত্বের পাশাপাশি হবু মায়েরা যাতে ভালো থাকে তার জন্যও কাজ শুরু করে কইন্যা। মানের ক্ষেত্রে এক চুলও ছাড় না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন কইন্যার স্বত্বাধিকারী।

হবু মায়েদের পোশাক/ ছবি কৃতিত্ব- কইন্যা

হবু মায়েদের জন্য তৈরি পোশাকের ক্ষেত্রে পাতলা কাপড়কে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়। এছাড়াও পোশাকের অন্যান্য অনুষঙ্গ হিসেবে কুচি, পেটের দিকটা বড় থাকার কারণে পিঠের দিকে কুচি, ব্রেস্ট ফিডিং এর জন্য চেইন প্রভৃতি ব্যবস্থা রাখা হয়।

হবু মায়েদের পোশাক আরামের পাশাপাশি গতানুগতিকতার বাইরে ফ্যাশনেবল করার চিন্তাও তাদের থাকে। তাই দামটাও হাতের নাগালে রাখার চেষ্টা করে তারা। হবু মায়েদের জন্য প্রথম যে পোশাকটি তৈরি করা হয় তা প্রদর্শনের জন্য মডেলও নিশাত নিজেই হয়েছিলেন।

ছবি কৃতিত্ব- কইন্যা

মা হতে গিয়ে নিশাত বুঝতে পারলেন মাতৃত্বকালীন পোশাক নিয়ে কাজ করার মানুষ খুবই কম। নিশাতের ভাষ্যমতে, এখন হয়তো অনেকে মাতৃত্বকালীন পোশাক নিয়ে কাজ করছেন কিন্তু তিনি যখন শুরু করেছিলেন তখন এই অঙ্গনে কাজ করার মানুষের সংখ্যা খুবই কম ছিল।

'চিরকুট' ভরা ভালোবাসা!

'আমরা চিঠি পেতে খুব পছন্দ করি, কিন্তু টাইপিং এর যুগে কাউকে হাতে লিখে কিছু পাঠানোর প্রক্রিয়া প্রায় বন্ধই হতে বসেছে। সবকিছু ডিজিটাল হয়ে যাওয়ার কারণে চিঠি পাঠানো কমে গেছে। চিরকুট পাঠানোর বুদ্ধি বা চিন্তা বাঁধনের', বলছিলেন নিশাত। অনেক ব্যস্ততার মধ্যেও কার্ড লিখে গ্রাহকদের কাছাকাছি পৌঁছানোর কাজ করে কইন্যা।

ভালোবাসা ছড়িয়ে দেন চিরকুটে/ ছবি কৃতিত্ব- কইন্যা

ছোটবেলা থেকে ডায়েরি লেখা, কার্ড লেখার অভ্যাস ছিলো নিশাতের। এখন সময়ের অভাবে হয়তো চিঠি লেখা হয় না তার। কিন্তু গ্রাহকদের ভালোবেসে নিয়মিত চিরকুট পাঠানোর চর্চা অব্যাহত রেখেছেন। নিশাতের ধারণা গ্রাহকদের হাতে লিখে কার্ড পাঠালে সেটা তাদেরকে অন্যরকম অনুভূতি দেয়। গ্রাহকদের মধ্যে ভালো লাগা কাজ করানোর জন্যই পণ্যের সাথে হাতে লিখে চিরকুট পাঠানোর কাজ করে কইন্যা।  
 
কইন্যার 'লক্ষ্মী' গ্রাহকরাই

কথায় আছে, 'বাণিজ্যে বসতি লক্ষ্মী'। এক্ষেত্রে কইন্যার লক্ষ্মী হিসেবে কাজ করেছে গ্রাহকেরা। চার মাস বন্ধ থাকার কারণে তারাই কইন্যার ফেসবুক পেজে মাধ্যমে ও অন্যান্য উপায়ে পুনরায় ব্যবসায় শুরু করার জন্য জোর করা শুরু করে।

করোনার মধ্যেই প্রাক-পরীক্ষণ হিসেবে ৭ থেকে ১০ দিনের জন্য গ্রাহকের টানে অনলাইনে ফিরে আসে কইন্যা। আগে যা যা স্টকে ছিলো তার উপর ভিত্তি করেই ব্যবসা শুরুর কাজ করে।

উপস্থাপিত যত পোশাক/ ছবি কৃতিত্ব- কইন্যা

করোনার মধ্যে ব্যবসায় বন্ধ থাকলেও কইন্যার অধীনে যারা ছিলেন তারা নিয়মিত বেতন পেতেন।

হাতে তৈরি তাঁত এখনো কইন্যার ভরসা

বর্তমানে মানিকগঞ্জে ৮টি তাঁত চলে কইন্যার। সুইং, কারখানা, তাঁতী সবকিছু মিলিয়ে ১৫ থেকে ১৮ জন কর্মী কাজ করে এখানে। তাঁতে লিফ খাদি, মসলিন বোনানো হয়। পরিপূর্ণ মসলিন অবশ্য বোনানোর কাজ কইন্যা করে না কারণ মসলিন খুবই পাতলা। গ্রাহকের জন্য সেটা আরামদায়ক হবে না এমনকি খরচও অনেক বেড়ে যাবে। তাই মসলিনের ধারা বা ধরন রাখার চেষ্টা করেন তারা। মসলিনের পাশাপাশি জরির কাজ রাখারও চেষ্টা করেন পোশাকে।

এখনো হাতে তৈরি তাঁতেই কইন্যা শাড়ি বোনানোর কাজ করে। কইন্যা বিশ্বাস করে, হাতে তৈরি তাঁতে পোশাকে যে ভালোবাসা থাকে, মেশিনে গেলে হয়তো সেই বিশুদ্ধতা খুঁজে পাওয়া যাবে না। প্রতিদিন দুটি করে শাড়ি একেকটি তাঁতে বোনানো হয়।

কুর্তিতে ফ্রিদা/ ছবি কৃতিত্ব- কইন্যা

প্রথমদিকে কাজ করার সময় তাঁতিদের কাজ ও কাপড়ের রং বোঝাতে বেশ ঝামেলা পোহাতে হতো। কিন্তু ধীরে ধীরে সেই সমস্যাও লোপ পেয়েছে। এখন কোন পোশাকে কী ডিজাইন বসবে, কোন ধরনের কাজ হবে তা কারখানায় বসে তাঁতিদের বুঝিয়ে দেন নিশাত, বাঁধন উভয়েই। প্রথমে ব্লকের কাজ এরপর ধীরে ধীরে স্ক্রিন প্রিন্টের দিকে এগিয়ে যায় কইন্যা।

মোটিফে উপস্থাপনা!

মোটিফ নিয়ে কাজ করতে ভালোবাসে কইন্যা, জানালেন কইন্যার স্বত্বাধিকারী। যামিনী রায় মোটিফ, আফ্রিকান মোটিফ, জামদানি মোটিফ, টেরাকোটা মোটিফ, টেপা পুতুল মোটিফ এগুলোই মূলত প্রধান। দেশীয় পণ্য নিয়ে কাজ করে কইন্যা। সুতা, রং সবই দেশীয় উপায়েই সংগ্রহ ও সংরক্ষণের কাজ করে তারা। সুতি ও হাফসিল্কের উপর স্ক্রিন, ব্লক মোটিফ নিয়েই কাজ করে কইন্যা। ডিজাইনের কাজ নিশাত ও বাঁধন দুইজনে মিলেই করেন।

পোশাকে দেবী দূর্গা/ ছবি কৃতিত্ব- কইন্যা

বর্তমানে ৯০ শতাংশ পোশাক কইন্যা নিজেরাই ডিজাইন করে থাকে। এক্ষেত্রে তারা গ্রাহকদের কাছেও সততা বজায় রাখে। কোন পণ্যটি তাদের নিজের এবং কোন পণ্যটি বাইরে থেকে আনা তা আগেই জানিয়ে দেন। তাছাড়া গ্রাহকের কাছে কোনো পোশাক সরবরাহের আগে নিজেরা পরীক্ষা করে দেখেন তারা। ব্লকপ্রিন্ট যুক্ত কাপড় হাতে আসার পর সেটা ধুয়ে রং উঠে যায় কিনা সেটা যাচাই করে দেখেন। তাই কইন্যার শুভাকাঙ্ক্ষীরাও কইন্যার কাপড় কাপড় নিয়ে বেশ খুশি।

কেমন দাম পোশাকের?

প্রথম থেকেই কইন্যার লক্ষ্য ছিল পণ্যের মূল্য গ্রাহকদের হাতের নাগালে রাখার। প্রত্যেক মানুষ যাতে পণ্য কিনতে পারে তার জন্য শুরু থেকে মূল্য কম রাখার প্রাণান্তকর চেষ্টা তারা চালিয়ে যাচ্ছেন।

যদিও বর্তমান সময়ে তা বজায় রাখা বেশ দুষ্কর হয়ে যাচ্ছে কারণ দিনের পর দিন কাঁচামালের দাম বাড়ছে। নিশাত জানান, 'মহামারি পরবর্তী সময়ে পণ্যের দাম অনেক বেড়েই যাচ্ছে। এখন আমরা যে কাপড়টা দুই টাকা করে কিনি, এক সপ্তাহ পর দেখা যাবে ওই কাপড় আড়াই টাকা করে কিনতে হবে। ব্লক বা স্ক্রিনে যে রং ব্যবহার করছি সেটার মূল্য বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু মূল্য আমরা বৃদ্ধি করতে পারছি না। ৫৮৫ টাকার কাপড় আমরা আচমকাই ৬০০ করে ফেলতে পারবো না।'

ফুটে উঠেছে দূর্গার মুখ/ ছবি কৃতিত্ব- কইন্যা

বর্তমানে আনস্টিচ একেকটি কুর্তির দাম ৫৮৫ টাকা। স্টিচ কুর্তিগুলো ৮৫০ টাকার ভেতরেই পাওয়া যাবে।

নকশা অনুযায়ী দামের ভিন্নতা শাড়ির ক্ষেত্রে দেখা যায়। সুতির শাড়ি ১৩০০ থেকে ১৭০০ টাকার ভেতরেই পাওয়া যায়। আবার হাফসিল্ক শাড়ির দাম শুরু হয় ১১৫০ টাকা, মোটিফভেদে হাফসিল্ক শাড়ির দাম ১৬০০ টাকা পর্যন্ত দেখা যায়। মসলিন শাড়ির দাম ২৬০০ টাকা থেকে শুরু, ডিজাইনভেদে ৪০০০ টাকাও হয় একেকটি শাড়ির দাম।

ঈদ কিংবা পূজায় তারা গ্রাহকদের জন্য অনেক ছাড়ের ব্যবস্থাও করে থাকেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় ছাড়ের মেয়াদ দুই থেকে সাতদিনের মতো হয়ে থাকে। গ্রাহক যাতে কিছু টাকা কমে পোশাক কিনতে পারে, সেজন্যই তাদের এই প্রচেষ্টা।

বর্তমানে কোন পোশাক অধিক জনপ্রিয়?

ব্লাউজে যত আকর্ষণ/ ছবি কৃতিত্ব- কইন্যা

শাড়ি নাকি কামিজ কোনটি বেশি বিক্রি হয় এই প্রশ্নের উত্তরে নিশাত হেসে জানান, 'শাড়িই প্রচুর বিক্রি হয়। ইদানীং সুতি কাপড়ের উপর স্ক্রিন প্রিন্ট, হাফসিল্কের উপর মোটিফও প্রচুর পরিমাণে যাচ্ছে'। রোজার ঈদের সময় মসলিনের উপর এম্ব্রয়ডারি, ফ্লোরাল প্রিন্ট বেশি বিক্রি হয়।

আবার পূজার সময় দূর্গা, ওম মোটিফের চাহিদা বেড়ে যায়। শাড়ি বা কুর্তি সবকিছুর ক্ষেত্রেই মোটিফ গ্রাহক বেশি পছন্দ করে বলে জানান কইন্যার স্বত্বাধিকারী। কুর্তির ক্ষেত্রে কটন ছাড়া লিলেন, সিল্ক, জর্জেটের জনপ্রিয়তাও খুব একটা কম নয়।

গ্রাহকদের জন্যই কইন্যা টিকে আছে বলে মনে করেন নিশাত। গ্রাহকেরাই সবসময় কইন্যাকে বিভিন্নভাবে নতুন ডিজাইন আনা বা উৎসবকে কেন্দ্র করে নতুন পোশাক আনার জন্য তাড়া দিতে থাকে। তাই গ্রাহকদের সর্বোচ্চ সেবা প্রদানের জন্য কইন্যা সচেষ্ট থাকে। পোশাকের তন্তু নির্বাচনের ক্ষেত্রে গ্রাহকের আরামকেই প্রাধান্য দেয় কইন্যা। যে পোশাকে সামান্য খুঁত থাকে তা কোনোভাবেই গ্রাহককে সরবরাহ করেন না তারা।

এ প্রেক্ষিতে নিশাত বলেন, 'ক্রেতা বন্ধুদের সেটাই দেওয়ার চেষ্টা করি যেটা আরামদায়ক। কখনো যদি কাপড় মসৃণ না লাগে আমরা কিন্তু সেই কাপড়টা দেই না। স্টকে এমন অনেক কাপড় আছে, যা আমরা বুনাতে বলেছি একটা কিন্তু দিয়ে দিয়েছে আরেকটা। আমরা তাদেরকে পে করে দিয়েছি কিন্তু কাপড়টা গ্রাহকদের কাছে দেইনি, রেখে দিয়েছি। কারণ গ্রাহক পোশাকটা নিলেও সেটার স্থায়িত্ব বেশিদিন হবে না।'

শাড়িতে হীরক রাজার দেশে/ ছবি কৃতিত্ব- কইন্যা

মূলত শাড়ি ও কামিজ নিয়ে কাজ করলেও শীতকালে এর পাশাপাশি চাদর, ডেনিম নিয়ে কাজ করে কইন্যা। সময় অনুযায়ী কইন্যার বিক্রিবাট্টাও ভিন্ন ভিন্ন হয়। গরমে প্রচুর পরিমাণে সুতি কাপড়ের স্টিচ বা আনস্টিচ যায়, আবার বিভিন্ন উৎসব যেমন বৈশাখ, পূজায় শাড়ি বিক্রি হয় অনেক। বিভিন্ন ঋতু ও চাহিদা অনুযায়ী পোশাকের বিক্রি ভিন্ন ভিন্ন হয়।

শপের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও কইন্যা ভীষণ জনপ্রিয়। বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে কইন্যার ফলোয়ার প্রায় চার লক্ষ।

বর্তমান সময়ে তাঁতিদের নিয়ে কোনো সমস্যা না হলেও নতুন নতুন অনেক চ্যালেঞ্জ এসেছে। প্রতিযোগিতাও বেড়েছে আগের থেকে অনেক বেশি। তা সত্ত্বেও হাসিমুখে সবটা বুঝে নিচ্ছেন নিশাত ও বাঁধন। কইন্যাকে নিজেদের শক্তি বলে মনে করেন নিশাত। অদূর ভবিষ্যতে কইন্যায় এসে মানুষ যাতে সবরকমের সেবা পায় এমন স্বপ্নই দেখেন তিনি।
 
 

 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.