যেভাবে মহাকাশে নতুন নতুন খাদ্য তৈরি করছে চীন!    

ফিচার

টিবিএস ডেস্ক 
29 September, 2022, 06:50 pm
Last modified: 29 September, 2022, 06:53 pm
মহাকাশে ফসলের বীজগুলিকে সংক্ষিপ্ত সময় রেখে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে ফসলের নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন করতে পারেন বিজ্ঞানীরা। এসব ফসল পরিবর্তিত জলবায়ু ও বিশ্বের বর্ধিত জনসংখ্যার জন্য খাদ্য উৎপাদনে অবদান রাখে

প্রথম দেখায় মনে হতে পারে এগুলো বিশ্বের সব প্রান্তে আবাদ হওয়া সাধারণ গমের দানার মতো। কিন্তু না, চীনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সুবিশাল ফসলের মাঠজুড়ে যে গম চাষ হচ্ছে, সেগুলো মোটেও কোনো সাধারণ গাছ নয়, বরং এগুলো সৃষ্টি করা হয়েছে মহাশূন্যে!   

লোকমুখে লুইউয়ান-৫০২ নামে বহুল পরিচিত গমের এই প্রজাতিটি চীনের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উৎপাদিত গম। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হলো- ভূপৃষ্ঠ থেকে ২০০ মাইল উপরে পৃথিবীর কক্ষপথে বীজ নিয়ে গিয়ে সেখান থেকে এটির চারা বের করা হয়েছে!    

এখানে কম মাধ্যাকর্ষণ পরিবেশে এবং আমাদের গ্রহের প্রতিরক্ষামূলক চৌম্বকীয় আবরণের বাইরে, এই চারাগুলোর ডিএনএ'র মধ্যে সূক্ষ্ম পরিবর্তন আসে। ফলে এসব গাছের মধ্যে এমন কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য তৈরি হয় যা এগুলোকে আরও বেশি খরা-সহনশীল এবং নির্দিষ্ট কিছু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন করে তোলে।   

পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করার সময় মহাকাশযান ও মহাকাশ স্টেশনে জন্মানো এসব খাবারকে 'স্পেস ফুড' বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। লুইউয়ান-৫০২ গম তেমনই একটি স্পেস ফুড। এখানে মাইক্রোগ্র্যাভিটি শিকার হয়ে এবং কসমিক রশ্মির সংস্পর্শে এসে চারাগুলোর মিউটেশন (কোনো জীবের ডিএনএন অনুক্রম পরিবর্তন) হয়। এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় মিউটাজেনেসিস।  

তবে এদের মধ্যে কিছু কিছু মিউটেশন গাছের বৃদ্ধিতে সহায়ক না হলেও, কিছু মিউটেশন আবার গাছের জন্য বেশ উপকারী। কিছু গাছ এই মিউটেশন সহ্য করতে পারে এবং বেশি পরিমাণে জন্মায়। অন্যদিকে, কিছু মিউটেশনের ফলে একটি গাছ থেকেই অনেক বেশি ফসল পাওয়া যায় কিংবা এগুলোর পানি কম প্রয়োজন হয়। পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনার পর এসব গাছের বীজ আলাদা করা হয় এবং সতর্কতার সাথে পরিষ্কার করে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জনপ্রিয় ফসলের একটি বিশেষ প্রজাতি তৈরি করা হয়।

বিবর্তিত লুইউয়ান-৫০২ নামক গমের এই জাতটি স্পেস মিউটাজেনেসিস এর সাহায্য উদ্ভাবন করেছে চীন। ছবি: চাইনিজ একাডেমি অভ এগ্রিকালচারাল সায়েন্সেস

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এবং সরবরাহ চেইনের ঝুঁকির কারণে দিন দিন কৃষির উপর চাপ বাড়ছে। কিছু গবেষকের মতে, স্পেস মিউটাজেনেসিস ফসলকে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সাহায্য করতে পারে।

চাইনিজ একাডেমি অব এগ্রিকালচারাল সায়েন্সেস এর ক্রপ সায়েন্স ইনস্টিটিউটের ন্যাশনাল সেন্টার অব স্পেস মিউটাজেনেসিস ফর ক্রপ ইমপ্রুভমেন্ট বিভাগের প্রধান মিউটাজেনেসিস বিশেষজ্ঞ লিউ লুজিয়াং বলেন, 'স্পেস মিউটাজেনেসিস মিউটেশনকে চমৎকার করে তোলে।'    

উদাহরণস্বরূপ, চীনের সাধারণ মানসম্মত প্রজাতির গমের চাইতে লুইউয়ান-৫০২ এর ফলন ১১ শতাংশ বেশি। এছাড়াও, এটি অন্যান্য জাতের ফসলের চেয়ে বেশি খরা-সহিষ্ণু এবং গম গাছে সাধারণত যেসব পোকা্র আক্রমণ হয়, লুইউয়ান-৫০২ প্রজাতিতে ততটা হয় না। লিউ বলেন, 'লুইউয়ান-৫০২ আমাদের সত্যিকার সফলতার গল্প। এই প্রজাতির ফসলের মধ্যে অনেক সম্ভাবনা এবং অভিযোজন ক্ষমতা দেখতে পাচ্ছি আমরা। বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন পরিস্থিতির মধ্যে এই ফসল চাষ করা সম্ভব।" 

আর এসব বিশেষ গুণাবলীর কারণেই লুইউয়ান-৫০২ প্রজাতি চীনের কৃষকদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয়। গত ৩০ বছরে চীন মোট ২০০টিরও বেশি স্পেস মিউটেটেড ফসলের প্রজাতি উদ্ভাবন করেছে বলে জানান লিউ। গমের পাশাপাছি ধান, ভুট্টা, সয়া বিন, আলফালফা, তিল, তুলা, তরমুজ, টমেটো ও মিষ্টি আলুর মতোর মতো সবজিও রয়েছে এই তালিকায়।

১৯৮৭ সাল থেকে স্পেস মিউটাজেনেসিস প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা করছে চীন। চীনই বিশ্বের একমাত্র দেশ যারা নিয়মিত এই প্রযুক্তি নিজেদের কাজে লাগাচ্ছে। সেই থেকে এটি পৃথিবীর কক্ষপথে বীজ বহন করে নিতে ডজনখানেক মিশন পাঠিয়েছে। ১৯৯০ সালে প্রথম মহাকাশে উৎপাদিত ফসল হিসেবে 'উজিয়াও-১' নামে ক্যাপসিকামের একটি প্রজাতি উৎপাদন করে চীন। চীনে জন্মানো গতানুগতিক ক্যাপসিকামের চাইতে 'উজিয়াও ১' ক্যাপসিকাম অনেক বড় বড় এবং আরও বেশি রোগ প্রতিরোধী।   

মহাকাশের উচ্চ বিকিরণ শস্যবীজে বিবর্তন আনে- ফলে ধানের মতো কিছু প্রধান শস্যে কাঙ্ক্ষিত কিছু বৈশিষ্ট্য সৃষ্টি হয়। ছবি: লি শিহুয়া/ভিসিজি/ গেটি ইমেজেস

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন বিশ্বের অন্যতম ক্ষমতাধর রাষ্ট্র হয়ে ওঠার সাথে সাথে পৃথিবীর কক্ষপথেও হাজার হাজার ফসলের বীজ পাঠানো অব্যহত রেখেছে তারা। ২০০৬ সালে দেশটি সবচেয়ে বেশি পরিমাণে (২৫০ কেজি) বীজ ও ১৫২ প্রজাতির মাইক্রোঅর্গানিজম পাঠায়। শিজিয়ান-৮ নামের স্যাটেলাইটের মাধ্যমে তারা এগুলো পাঠায়। এদিকে চলতি বছরের মে মাসে চীন বিভিন্ন ধরনের ঘাস, ওটস, আলফালফা ও ফাঙ্গির বিভিন্ন প্রজাতির ১২,০০০ বীজ পাঠায়। শেনঝু-১৩ মিশনের অংশ হিসেবে চীনের তিয়ানহে মহাকাশ স্টেশনে ছয় মাস থাকার পর বীজগুলো পৃথিবীতে ফেরত আসে।  

শুধু তাই নয়, গত বছর চ্যাং-৫ মিশনের সাথে চন্দ্রকে প্রদক্ষিণ করে ঘুরে আসার জন্য এক ব্যাচ ধানের বীজও দিয়ে দিয়েছিল চীন। চীনা গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, সেই ধানের বীজগুলোর সফল মিউটেশন হয়েছে এবং ফিরে এসে ল্যাবরেটরিতে ফসল উৎপাদনও করা হয়েছে।

লিউ বলেন, 'আমরা চীনের এই শক্তিশালী মহাকাশ প্রোগ্রাম থেকে উপকৃত হচ্ছি। ফসল উন্নত করার জন্য আমরা মহাকাশের উপযোগিতাকে কাজে লাগাচ্ছি।' 

কীভাবে পাঠানো হয় বীজ?

চারদিন থেকে কয়েক মাসের সফরের জন্য মহাকাশে বীজ পাঠানো হয়। এখানকার অস্বাভাবিক পরিবেশে বীজ ও গাছের মধ্যে একাধিক পরিবর্তন ঘটে। প্রথমত, উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন সৌরশক্তি এবং মহাজাগতিক বিকিরণের ফলে বীজের মধ্যে থাকা জেনেটিক উপাদান ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তখন সেই বীজে মিউটেশন বা ক্রোমোজমাল বিকৃতি ঘটে যা বীজের পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে স্থানান্তরিত হয়। এছাড়া, কম মাধ্যাকর্ষণ পরিবেশের কারণেও অন্যান্য পরিবর্তন হতে পারে। যে উদ্ভিদগুলো অঙ্কুরিত হয় এবং মাইক্রোগ্র্যাভিটিতে বড় হয়, সেগুলোর কোষের অভ্যন্তরেই কোষের আকার ও গঠনে পরিবর্তন দেখা যায়।    

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চীনা বিজ্ঞানীরা বীজগুলো মহাকাশে নিয়ে যান এবং  পৃথিবীতে ফিরে আসার পরে সেগুলো আবার মাটিতে অঙ্কু্রোদগম ঘটান। 

তারপর চারাগুলোর মধ্যে প্রয়োজনীয় বৈশিষ্ট্য ঢুকানোর জন্য স্ক্রিন করা হয়- যা এগুলোকে গতানুগতিক ফসলের তুলনায় বেশি উপযোগী করে তোলে। বিজ্ঞানীরা ফসলের মধ্যে এমন পরিবর্তন খুঁজছেন যাতে করে ফলের আকার বড় হয়, পানি কম লাগে, পুষ্টিগুণ বেড়ে যায় এবং উচ্চ এবং নিম্ন তাপমাত্রা প্রতিরোধী বা রোগ-সহিষ্ণু হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিরল মিউটেশনের কারণে ফসলের ফলন ব্যাপক হারে বেড়ে যায়। যেসব ফসলের ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যায়, সেগুলো আবারও ফলানো হয় দেশে।

পারমাণবিক মিউটাজেনেসিস 

স্পেস মিউটাজেনেসিসের জন্য এই মুহূর্তে চীনই সবার শীর্ষে থাকলেও, মহাকাশে ফসল জন্মানোর ক্ষেত্রে তারাই প্রথম নয়। স্পেস ফুড নিয়ে একেবারে প্রথম দিকে গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত বিজ্ঞানীরা। সোভিয়েত স্যাটেলাইট কসমস ৭৮২-তে করে গাজরের কোষ কক্ষপথে নিয়ে গিয়েছিলেন তারা। 

বিশের দশকের শেষদিকে নিউক্লিয়ার বা পারমাণবিক মিউটাজেনেসিস ব্যবহার করা শুরু হয়। বিজ্ঞানীদের দাবি, স্পেস-ফুডের মিউটাজেনেসিসও সেই একই নীতি মেনে চলে। নিউক্লিয়ার মিউটেজেনেসিস জীবন্ত প্রাণীর ডিএনএতে প্রাকৃতিকভাবে ঘটতে থাকা মিউটেশন প্রক্রিয়াকে বিকিরণের সংস্পর্শে এনে দ্রুততর করে।

কিন্তু পারমাণবিক মিউটাজেনেসিস যখন গামা রশ্মি, এক্স-রে এবং পার্থিব উৎস থেকে আয়ন রশ্মি ব্যবহার করে, স্পেস মিউটাজেনেসিস তখন মহাজাগতিক রশ্মির উপর নির্ভর করে। এদিকে পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র এবং এর ঘন বায়ুমণ্ডল আমাদেরকে সেসব উচ্চ-শক্তিসম্পন্ন রশ্মি থেকে সুরক্ষিত রাখে। কিন্তু কক্ষপথে মহাকাশযান এবং স্যাটেলাইটগুলো প্রতিনিয়তই এই বিকিরণের (যার বেশিরভাগই আসে সূর্য থেকে) সংস্পর্শে আসে।    
  
তবে ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি (আইএইএ) ও এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন অব দ্য ইউনাইটেড ন্যাশনসের (এফএও) যৌথ উদ্যোগ, প্লান্ট ব্রিডিং অ্যান্ড জেনেটিকস-এর শোবা শিবশঙ্করের মতে, মহাকাশ ও পারমাণবিক মিটাজেনেসিস, দুটিই বিভিন্ন জাতের ফসলের বিকাশের সময়কে অর্ধেকে নামিয়ে আনতে পারে।

মহাকাশে বীজ পাঠানোর মাধ্যমে আরও শক্তিশালী ফসলের জাত উদ্ভাবনের চেষ্টা চালাচ্ছেন চীনের বিজ্ঞানীরা। এসব ফসল পৃথিবীতে উচ্চ ফলন দেয়। ছবি: লি শিহুয়া/ ভিসিজি/ গেটি ইমেজেস

শিবশঙ্কর বলেন, "বীজ বিকিরিত করতে মাত্র কয়েক মিনিট সময় লাগে, কিন্তু এর জন্য যথেষ্ট জ্ঞান ও দক্ষতার প্রয়োজন হয়। প্রতিটি জাতেরই আলাদা সহনশীলতার মাত্রা রয়েছে। বীজগুলিকে যদি উচ্চ ডোজ দেওয়া হয়, ইরেডিয়েটরের ভিতরে দীর্ঘ সময় রাখা হয়, তাহলে এগুলো নষ্ট হয়ে যাবে এবং অঙ্কুরোদগম হবে না। আবার যদি পর্যাপ্ত বিকিরণ না দেওয়া হয় তাহলে যথেষ্ট মিউটেশন হবে না এবং এমন একটি প্রজাতি তৈরি হবে যা পুরনোগুলোর মতো বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন।" 

এফএও এবং আইএইএ'র এই যৌথ উদ্যোগটি ফসলের মিউটাজেনেসিস নিয়ে কাজ করে। বিশের দশকের শেষদিকে গম, ভুট্টা, ধান, ওটস, বার্লির মতো ফসলে এক্স-রে ব্যবহার করে কিভাবে মিউটেশন ত্বরান্বিত করা যায় তা নিয়ে গবেষণা চালায় তারা। কিন্তু পঞ্চাশের দশকের মধ্যেই উন্নত দেশগুলোর নিজস্ব নিউক্লিয়ার ব্রিডিং প্রোগ্রাম তৈরি হয়। ফলে তারা শুধু এক্স-রে ই নয়, ইউভি ও গামা রশ্মি নিয়েও গবেষণা চালাচ্ছে।

তবে পারমাণবিক মিউটাজেনেসিস এখনো বিলুপ্ত হয়ে যায়নি। এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলো এখনো এই চর্চা চালিয়ে যাচ্ছে এবং এর নেতৃত্ব দিচ্ছে মূলত চীন। এযাবত আইএইএ'র মিউটেন্ট ফসলের প্রজাতির ডেটাবেজে নতুন ৩৩০০টি জাতের ফসলের নাম অন্তর্ভুক্ত করতে সক্ষম হয়েছে দেশগুলো।

শিবশঙ্কর বলেন, "এশিয়ার অপেক্ষাকৃত দরিদ্র দেশগুলো এখনো পারমাণবিক মিউটাজেনেসিসের মাধ্যমেই কাজ চালাচ্ছে, এর কারণ হতে পারে যে ট্রান্সজেনিক প্রযুক্তি অত্যন্ত ব্যয়বহুল।"

এশিয়ার উৎপাদনকারীরা অনেক ক্ষুদ্র খামারির জন্য বীজ উৎপাদন করে, যাদেরকে বেশ বৈচিত্র্যপূর্ণ আবহাওয়ায় চাষাবাদ করতে হয়। তাই ফসলের কোনো প্রজাতির দুয়েকটি বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করাই যথেষ্ট নয়।     
এসব কৃষকদের দিকে ইঙ্গিত করে শিবশঙ্কর বলেন, "তাদের আরও জটিল বৈশিষ্ট্যের বীজ প্রয়োজন, যেগুলোর মধ্যে চ্যালেঞ্জিং পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতা থাকবে। যেমন- তাপ ও খরা সহনশীলতা বা লবণাক্ত-পুষ্টিহীন মাটিতে ফসল জন্মানোর ক্ষমতা।"

আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পরীক্ষামূলকভাবে লেটুস ফলাচ্ছে নাসা। মার্কিন মহাকাশ সংস্থাটি আশা করছে, এর মাধ্যমে মহাকাশচারীদের জন্য টাটকা খাদ্য সরবরাহের পদ্ধতি তৈরি করা যাবে। ছবি: নাসা/ অ্যালামি

স্পেস মিউটাজেনেসিস কি আবশ্যক?   

চীন তাদের ফসলের জেনেটিক বৈশিষ্ট্য উন্নত করাকে আবশ্যক হিসেবেই দেখছে। লিউ এবং তার দলের মতে, ২০৫০ সালের মধ্যে পৃথিবীতে যে দুই বিলিয়ন জনসংখ্যা বাড়বে, তাদের খাদ্যের চাহিদা পূরণ করতে হলে বিশ্বকে অত্যাবশ্যক খাদ্যশস্যের উৎপাদন আরও ৭০ শতাংশ বাড়াতে হবে। এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য সংকটে ভোগার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি বলে তারা মনে করেন।  
    
আইএইএ জানিয়েছে, পারমাণবিক ও মহাকাশ মিউটেশনের মাধ্যমে চীন একাই ৮০০টিরও বেশি প্রজাতি উদ্ভাবন করেছে, যেগুলোর বৈশিষ্ট্য ফসলের আদি প্রজাতির চেয়ে উন্নত।

কিন্তু দিনশেষে একটি প্রশ্ন থেকেই যায়, ফসলের বীজ মহাকাশে পাঠিয়ে লাভ কী যখন একই কাজ পৃথিবীতে বসে ল্যাবেই করা সম্ভব?

লিউ স্বীকার করেন যে ফসলের বীজ মহাকাশে পাঠানোর প্রক্রিয়া অবশ্যই ব্যয়বহুল। কিন্তু বীজগুলো মহাকাশে ঘুরে আসার ফলে এগুলোর মধ্যে পরিবর্তন স্পষ্ট যা বিজ্ঞানীদের আরও কার্যকরী ফলাফল দিচ্ছে। 

"আমরা আসলে গামা রশ্মির তুলনায় স্পেস মিউটাজেনেসিস থেকেই প্রয়োজনীয় মিউটেশনের উচ্চতর ফ্রিকোয়েন্সি দেখতে পেয়েছি। মহাকাশে বিকিরণের তীব্রতা যথেষ্ট কম, তবে বীজগুলো অনেক বেশি সময় ধরে এর সংস্পর্শে আসে৷ এটাকে আমরা বলি কণার লিনিয়ার এনার্জি ট্রান্সমিশন।  এছাড়াও, সামগ্রিক জৈবিক প্রভাব মহাকাশে বেশি এবং ল্যাবে বিকিরণ করা বীজের তুলনায় মহাকাশে বীজের ক্ষতির হওয়ার হার অনেক কম।"

তবে মহাকাশে পাঠানো সব বীজই নতুন 'সুপার উদ্ভিদ'  হিসেবে পৃথিবীতে ফিরে আসে না। ২০২০ সালে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে ইউরোপীয় বিজ্ঞানীদের পাঠানো এক ব্যাচ লেটুস বীজ পৃথিবীতে ফিরে আসার পরে দেখা যায়, মাটিতে জন্মানো উদ্ভিদের তুলনায় এগুলো আরও ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে।     

বর্তমানে মহাকাশে থাকাকালীন খাদ্য বৃদ্ধির উপর পরিচালিত বেশিরভাগ গবেষণার লক্ষ্য হলো, মিশনে থাকা নভোচারীরা যেন নিজেরাই নিজেদের খাবারের ব্যবস্থা করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, আইএসএস এর নভোচারীরা ২০১৫ সাল থেকে রোমাইন লেটুস জন্মাচ্ছেন এবং এটি খাচ্ছেন। আর ২০২০ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে এই লেটুস খাওয়া নিরাপদ এবং দীর্ঘ মিশনে পুষ্টির একটি মূল্যবান উৎস হতে পারে এটি।  

কিন্তু যেহেতু বিশ্বজুড়ে মহাকাশ সংস্থাগুলোর নজর থাকে চাঁদ, মঙ্গলগ্রহ বা মহাকাশ থেকে ফিরে আসা নভোচারীদের উপর এবং তাদের নিজস্ব নিয়মকানুনও থাকে, তাই নভোচারীদের বদলে পৃথিবীর মানুষের চাহিদা পূরণের উদ্দেশ্যে স্পেস ফুড জন্মানোই বরং বেশি দরকারি হিসেবে প্রতীয়মান হতে পারে!  


 

  • সূত্র: বিবিসি     
     

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.