জলদস্যুদের রাজা থেকে বাস্তবের সম্রাট: স্কটিশ যে স্কুল গড়ে দিয়েছিল আজকের রাজা চার্লসকে

ফিচার

টিবিএস ডেস্ক
12 September, 2022, 05:30 pm
Last modified: 12 September, 2022, 05:36 pm
কড়া নিয়মকানুনের এ স্কুলে চার্লসকে বুলিয়িংয়ের শিকার হতে হয়েছিল অন্য সহপাঠীদের দ্বারা। কখনো কখনো স্কুল ছেড়ে প্রাসাদে ফিরে আসতে চেয়েছিলেন বিতৃষ্ণ হয়ে। তবে স্কুল থেকে যা শিখেছেন তার প্রশংসাও করেছেন ব্রিটেনের রাজা।

শিক্ষাজীবনের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বছর স্কটল্যান্ডের একটি বোর্ডিং স্কুলে কাটিয়েছিলেন ব্রিটেনের নতুন রাজা প্রিন্স চার্লস। গর্ডনস্টন নামক ওই স্কুলে থাকতেই শিল্প ও পরিবেশের প্রতি তার প্রগাঢ় অনুরাগ তৈরি হয়।

তবে কড়া নিয়মকানুনের এ স্কুলে তাকেও বুলিয়িংয়ের শিকার হতে হয়েছিল অন্য সহপাঠীদের দ্বারা। কখনো কখনো স্কুল ছেড়ে বাড়িতে চলে আসতে চেয়েছিলেন বিতৃষ্ণ হয়ে।

১৯৬২ সালের মে মাসে ১৩ বছর বয়স থেকে গর্ডনস্টন স্কুলে পড়ালেখা শুরু করেন রাজা তৃতীয় চার্লস। স্কটল্যান্ডের উত্তর উপকূলে অবস্থিত এ বিদ্যালয়টি ছিল একটি প্রাইভেট স্কুল। এ স্কুলেই তারা বাবা প্রিন্স ফিলিপও পড়ালেখা করেছিলেন। ছেলেকে এখানে পাঠানোও তার ইচ্ছেতেই হয়েছিল।

'ব্রিটিশ সিংহাসনের কোনো উত্তরাধিকারীকে পাঠদানের প্রথম স্কুল হতে পারাটা গর্ডনস্টনের সঙ্গে সম্পর্কিত সবার জন্য একটি গর্বের অনুভূতি,' রয়টার্সকে বলেন স্কুলটির বর্তমান অধ্যক্ষ লিসা কার।

'আমাদের জন্য আরও শক্তিশালী ব্যাপারটি হলো, প্রিন্স চার্লস এ স্কুলে যা শিখেছেন সেগুলোই রাজা হিসেবে তিনি পরবর্তী জীবনে ধারণ করছেন,' বলেন লিসা।

চার্লসের আগের প্রজন্মের রাজপরিবারে সদস্যদের প্রাসাদে গৃহশিক্ষক রেখে পড়ালেখার ব্যবস্থা করা হতো। প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথও গৃহশিক্ষকের কাছেই পড়েছিলেন।

গর্ডনস্টন স্কুলে জীবনযাপনকে কঠিন হিসেবেই দেখেন চার্লস। এ স্কুলে কঠোর নিয়মকানুন মানা হতো, শিক্ষার্থীদেরকে যথেষ্ট শারীরিক পরিশ্রম করতে হতো। যেমন, প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে সবাইকে কয়েক পাক দৌড়ে এরপর ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করতে হতো।

ঔপন্যাসিক উইলিয়াম বয়েডও গর্ডনস্টনে পড়েছিলেন। সেখানে তার সমসাময়িক ছিলেন প্রিন্স চার্লস। তিনিও জানিয়েছেন, গর্ডনস্টনের জীবনযাপন খুব একটা পছন্দ করেননি চার্লস। চার্লসের জীবনী লিখেছেন জোনাথন ডিমলেবি। সেখান থেকে জানা যায়, চার্লস ওই স্কুলের জীবনকে কারাগারের সঙ্গে তুলেছিলেন।

'ছোটবেলায় গর্ডনস্টনে যাওয়াকে কারাদণ্ডাদেশ হিসেবে মনে করলেও, বড় হয়ে প্রিন্স অভ ওয়েলস (চার্লস) অবশ্য স্বীকার করেছেন এ স্কুলে পড়াটা তার জন্য উপকারী একটি সিদ্ধান্ত হয়েছিল। 'এখানে পড়ার কারণেই তার মধ্যে দায়িত্বের আত্মনিয়ন্ত্রণবোধ তৈরি হয়, যেটা হয়তো এ স্কুল না থাকলে হতো না,' 'দ্য প্রিন্স অভ ওয়ালেস:  আ বায়োগ্রাফি' গ্রন্থে লিখেন ডিমলেবি।

ডিমলেবি'র তথ্যমতে, প্রাসাদে লেখা চিঠিতে চার্লস লিখেছিলেন: 'আমার ডর্মিটরিতে (স্কুল হোস্টেল) থাকা ছেলেরা খারাপ। তারা সারারাত জুতা ছোঁড়াছুঁড়ি করে অথবা আমাকে বালিশ দিয়ে মারে… ইশ, যদি বাড়ি চলে আসতে পারতাম!'

চার্লসের সন্তান হ্যারিও জানিয়েছেন, তার বাবার ওপর গর্ডনস্টন স্কুল নেতিকবাচক প্রভাব ফেলেছিল।

তবে চার্লস নিজে আবার জানিয়েছেন, স্কূলটিকে যত কঠোর বা খারাপ হিসেবে দেখানো হোক না কেন, বাস্তবে এটি ততটা খারাপ নয়। স্কুল থেকে অর্জিত শিক্ষার প্রশংসাও করেছেন তিনি।

'একজন ব্যক্তি হিসেবে আপনার কাছ থেকে শারীরিক বা মানসিকভাবে অন্য স্কুলগুলোর চেয়ে বেশি দাবি করে গর্ডনস্টন, আর এটিই এ স্কুলের একমাত্র কঠোর বিষয়। আমি ভাগ্যবান কারণ আমি বিশ্বাস করি স্কুলটি আমার নিজের বিষয়ে, আমার সক্ষমতা-অক্ষমতা সম্পর্কে অনেক কিছু শিখিয়েছে। এটি আমাকে আরও প্রস্তুত করেছে যেকোনো চ্যালেঞ্জ ও উদ্যোগ গ্রহণের জন্য,' ১৯৭৫ সালে হাউজ অভ দ্য লর্ডসকে বলেন চার্লস।

'পড়ুয়া তরুণ' ছিলেন চার্লস

গর্ডনস্টনে চার্লস সুখী ছিলেন কিনা জিজ্ঞেস করলে কার বলেন, 'আমার মনে হয় সবার স্কুল জীবনেই কিছুটা ভালো-খারাপ অভিজ্ঞতা থাকে। আর গণমাধ্যমের কাছে খারাপ দিকগুলো বেশি গুরুত্ব পাবে, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।'

অনেকবারই গর্ডনস্টন প্রসঙ্গে চার্লস জানিয়েছিলেন কীভাবে স্কুলটি তার জীবনে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। চার্লসকে 'পড়ুয়া তরুণ' হিসেবে উল্লেখ করে কার জানান, সংগীত ও নাটক উপভোগ করতেন চার্লস। স্কুলের অনেক অনুষ্ঠানে চার্লসের অংশগ্রহণ ছিল। গর্ডনস্টনে 'দ্য পাইরেটস অভ পেনজেন্স'-এ এক জলদস্যুর রাজা চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন চার্লস।

১৯৩৪ সালে জার্মান শিক্ষক কার্ট হান গর্ডনস্টন স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে এ স্কুলের শিক্ষার্থীরা স্থানীয় সম্প্রদায়ের সঙ্গে বিভিন্ন সামাজিক কাজে অংশগ্রহণ করে আসছে। এরকম দায়িত্বের অংশ হিসেবে চার্লস স্কুলে থাকাকালীন কোস্টগার্ডের সদস্য হয়ে মোরে উপকূলে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।


সূত্র: রয়টার্স

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.