যেভাবে বজ্রপাতের ঝুঁকি এড়াবেন
বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনসহ ভৌগোলিক অবস্থান, গাছ কমে যাওয়া ও সচেতনতার অভাবে প্রায় প্রতিবছরই বাড়ছে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে ২০২১ সালে বজ্রপাতে ৩৬৩ জনের মৃত্যু হয়। ২০২২ সালের মে মাস পর্যন্ত বজ্রপাতে মারা গেছেন ১১৭ জন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষকে সচেতন করা গেলে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা অনেকাংশে কমে যেত।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে বাংলাদেশে মূলত ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবর এই নয় মাস জুড়েই হয় বজ্রপাত। তবে এপ্রিল ও জুনে সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত হয়ে থাকে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের হিসেবে গত ২০১১ সাল থেকে চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত সাড়ে এগার বছরে বজ্রপাতে মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৯৫১ জন মানুষের।
তবে বেশকিছু সাবধানতা অবলম্বনের মাধ্যমে সহজেই এই দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব। বজ্রপাত থেকে বাঁচতে যা করতে পারেন-
বিদ্যুৎ চমকাতে শুরু করলে ঘরের ভেতর আশ্রয় নিন
মেঘ ডাকতে শুরু করলে বা বিদ্যুৎ চমকানোর আওয়াজ শুনলেই যত দ্রুত সম্ভব ঘরের ভেতর আশ্রয় নিন।
এক্ষেত্রে কোনো বড় ভবন বা পাকা দালানের ভেতর অবস্থান গ্রহণ করুন।
তাঁবু, শেড বা পিকনিক শেল্টারের মতো জায়গাগুলো তেমন একটা সুরক্ষিত নয়।
যেসব ভবনের ওয়্যারিং বা প্লাম্বিং ব্যবস্থা ভালো এমন বাড়িতেই আশ্রয় নেওয়া উচিত, কেননা বাড়িতে বজ্রপাত হলে বিদ্যুৎ প্লাম্বিং বা ওয়্যারিংয়ের মাধ্যমে পরিবাহিত হয়ে তা ভূঅভ্যন্তরে প্রবেশ করে। ছোট তাঁবু বা ঘরে সেরকম ব্যবস্থা নেই বলেই সেগুলো ঝুঁকিপূর্ণ।
শেষবার বিদ্যুৎ চমকানোর শব্দ শোনার অন্তত ৩০ মিনিট পর বাইরে বের হওয়া উচিত।
তবে ঘরের ভেতর থাকলেই হবে না, সেইসঙ্গে জানালাগুলোও বন্ধ করে দেওয়া উচিত। এমনকি এসময় কোনো তারবাহী ইলেকট্রিক যন্ত্রও ব্যবহার করা উচিত নয়।
বিশেষ করে ওয়্যারিং বা প্লাম্বিং বা এর আশেপাশে থাকা উচিত নয়। তারবাহী টেলিফোন বা অন্যান্য যন্ত্র থেকেও বিদ্যুৎ চমকানোর সময় দূরে থাকা উচিত। এমনকি এসময় সিঙ্ক কিংবা বাথটাবে কোল থেকে পড়তে থাকা পানি হাত দিয়ে স্পর্শ করাও ঝুঁকিপূর্ণ।
ঘরের সময় বাইরে থাকাটা মানুষের জন্য যেমন নিরাপদ নয়, তেমনি তা পোষা পশুপাখির জন্যও নিরাপদ নয়। তাই তাদেরও ভেতরে নিয়ে আসুন।
নৌভ্রমণের জন্য অন্য কোনোদিন বেছে নিন
কেবিনসহ অধিকাংশ বড় নৌকা বা জলযান ঝড়ের মধ্যে সাধারণত খুব বেশি ঝুঁকিপূর্ণ না হলেও কেবিন ছাড়া ছোট নৌকাগুলো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়া বিভাগের মতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে কেবিন ছাড়া ছোট নৌকাগুলোতেই বজ্রপাতে হতাহত ও মৃত্যুবরণের সম্ভাবনা থাকে। আর তাই নৌভ্রমণে বেরোনোর আগে আবহাওয়া সংবাদ শোনা জরুরি।
ঘরের বাইরে যেভাবে নিরাপদ অবস্থান নিবেন
বজ্রপাত এড়ানোর সবচেয়ে বড় কৌশল হলো পরিকল্পনা ও সচেতনতা বৃদ্ধি।
নিয়মিত আবহাওয়া সংবাদ পড়ার মাধ্যমে বজ্রপাতের পূর্বাভাস পাওয়া সম্ভব। সেই অনুযায়ী নিজেদের কাজগুলো সাজিয়ে নেওয়া উচিত।
তবে ঘরের বাইরে বজ্রপাতের মুখে পড়লে পারতপক্ষেই যদি কোনো ভবন বা আশ্রয় না পাওয়া যায় সেক্ষেত্রেও কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে।
১। ঝড়ের সময় কোনো খোলা মাঠে থাকবেন না।
২। কোনো পাহাড়ের চূড়া বা উঁচুভূমিতেও যাবেন না।
৩। উঁচু গাছ বা অন্য যেকোনো লম্বা স্থাপনা থেকে দূরে থাকবেন।
৪। পানিতে থাকলে দ্রুত সেখান থেকে সরে আসুন।
৫। কোনো ভেজা জিনিস বা ধাতব বস্তু থেকে দূরে থাকুন বা স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকুন।
৬। দলবেঁধে অনেকে থাকলে সবাই পরস্পরের থেকে দূরে থাকুন।
৭। ভূমিতে শুয়ে পড়বেন না।
৮ গাড়ির ভেতরে থাকলে জানালার কাঁচ বা গাড়ির ধাতব কোনো অংশও স্পর্শ করবেন না।
তবে ব্জ্রপাত থেকে বাঁচার এই কৌশলগুলো কতটুকু কার্যকর তা এখনও অস্পষ্ট বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। আর তাই বজ্রপাতের সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো প্রথমেই কোনো ঘরের ভেতরে আশ্রয় খোঁজা।
কেউ বজ্রপাতে তড়িতাহত হলে তার শরীরের ইলেকট্রিক চার্জ থাকে না বলে জানায় সিডিসি। আর তাই তড়িতাহত ব্যক্তিকে দ্রুত ভেতরে নিয়ে আসুন। আহত ব্যক্তির হৃদসঞ্চালন বা শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এরকম হলে তাকে দ্রুত সিপিআর দেওয়া জরুরি। আহত ব্যক্তিকে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে স্থানান্তরিত করুন।
- সূত্র: সিএনএন