চাঁন্দুর নেহারি কেন এত জনপ্রিয়?

ফিচার

19 July, 2022, 01:30 pm
Last modified: 19 July, 2022, 09:30 pm
চাঁন্দু শেখ বললেন, সবটা আসলে বিবেকের ব্যাপার। আমি দুই ডেগ নেহারিতে ১০ কেজি পেঁয়াজ দেই। আদা, রসুন, জিরা, হলুদ সব দেই পরিমাণমতো। কোথাও কম বেশি করি না। আগে সব বাটা মশলা ব্যবহার করতাম। এখন ব্লেন্ডারে করি, ঠিকমতো মিহি হয় না মশলা। দশ হালি নলিতে পাঁচ হালির মশলা দিয়ে আমি চালাই না। আমি চাই কাস্টমার আমার রান্না খেয়ে খুশি হউক। কাস্টমার খুশি হইলেই আমি খুশি, ইনকাম দুই টাকা কম হইলেও খুশি।
কুর্মিটোলা ক্যাম্পের ভেতরেই তিনবার জায়গা বদলে করে এখন স্থায়ী জায়গাতে এসেছেন চাঁন্দু শেখ

নিজের মায়ের ঘরে চাঁন্দুর আর কোনো ভাইবোন নেই। বাবা ছিলেন কাঠমিস্ত্রী। মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর থেকে ঢাকা এসে বসতি নিয়েছিলেন আজিমপুরের শেখ সাহেব বাজারে। চাঁন্দুর  বাবা বিয়ে করেছিলেন চারটি। চাঁন্দু ছাড়াও আরও সাতটি পুত্র কন্যার জনক তিনি। চাঁন্দুর মা তাঁর শেষ পত্নী। তিনি পৃথিবী ছেড়ে যখন চলে গেলেন তখন চাঁন্দুর  বয়স মোটে দশ। বড় ছেলের হাতে সঁপে দিয়ে বলেছিলেন, দেখে রাখিস। কিন্তু বড় ছেলে দেখতে পারলেন না বেশিদিন। মাস না গড়াতেই বললেন, নিজেদেরকে নিজেরাই দেখে রাখো।

চাঁন্দু মাকে নিয়ে আলাদা হয়ে গেল, কাজ নিলো রুস্তম বেকারিতে। মাসে ১৫০ টাকা বেতন। থাকা-খাওয়া মহাজনের। সকালে উঠেই কাজে লেগে যেতে হতো। বিকাল গড়ালে পরে পাউরুটি বা কাপ কেকের ডাইস (ছাঁচ) মোছা ও ডালডা-সয়াবিন লাগানোর কাজ করতে হতো। প্রায় দুই হাজার ডাইস ছিল। আরেক পিচ্চিকে সঙ্গে নিয়ে সবগুলো সাফ-সুফ করতে রাত দশটা বেজে যেত। এভাবে বছরখানেক চলার পর বেতন কিছু বেশি পেয়ে চাঁন্দু চলে গেল মালেক বেকারিতে। সেটা ১৯৭৬ বা ৭৭ সাল হবে। মাকে নিয়ে ৩০ টাকায় ঘর ভাড়া নিলো।

বাপ-দাদার সম্পত্তি থেকে বেশি কিছু পায়নি চাঁন্দু। ভাইয়েরা আর বোনের জামাইরা বেচাবিক্রি করে প্রায় শেষ দিকে নিয়ে এসেছিল রেখে যাওয়া জমি-জিরাত। ভিটার জমি দুই শতাংশ পেয়েছিল অনেক দেন দরবার করে, কিন্তু সেও অনেক পরের কথা। মালেক বেকারির পর বাবুর্চির হেলপার হয়ে চাঁন্দু গেল চকবাজারের খাওয়াদাওয়া হোটেলে। মাসে বেতন ছয়শ টাকা। কিছু উপরি কামাই ছিল গিলা-কলিজা থেকে। প্রতিদিনই ১০০ মুরগি জবাই হতো। সেগুলোর গিলা-কলিজা-ঠ্যাং চাঁন্দু ও সঙ্গী হেলপারকে দিয়ে দিতেন বাবুর্চি। ৬০ বা ৭০ টাকায় তা বিক্রি করে দুজনে ভাগ করে নিত।

সেখানে আধা যুগ পার হলো। এরপর চাঁন্দু বাদাম বিক্রির কাজ ধরল মিরপুরের পূরবী সিনেমা হলের সামনে। সেখানে আরও দিন কাটিয়ে পরে কুর্মিটোলা বিহারি ক্যাম্পে (মিরপুর ১২, কালশীর কাছে) একটা মুদি দোকানে সেলসম্যানের কাজ নিলো। বেতন ১,৫০০ টাকা কিন্তু চলতে কষ্ট হয়। ততদিনে বিয়েও করে ফেলেছে চাঁন্দু। কাবিন খাতায় শেখ মো. চান মিয়ার নাম উঠে গেছে। আমাদের চাঁন্দুরই আসল নাম চান মিয়া। শেখ বংশের লোক সে। গায়ে গতরে উঁচালম্বা। খাটনি দিতে পারে ভালো, দেয়ও অনেক। সেলসম্যানগিরি করে যখন ভালো চলছিল না তখন চাঁন্দু বুদ্ধি করে হালিম আর নেহারির মোবাইল (ভ্রাম্যমাণ) দোকান দেয়।

ততদিনে আটাশি সাল চলে এসেছে।  গরুর গোশতের কেজি ৫০ টাকা। খাসির পায়া হালি ৩-৫ টাকা। ১ টাকা হালিমের প্লেট। হালিমের একটা কষ্ট হলো, ৩-৪ ঘণ্টা যতক্ষণ চুলায় থাকে, সারাক্ষণ নাড়তে হয়। পোলাওয়ের চাউল, মুগের ডাল, নানারকম মশলা দিয়ে ভালো করে হালিম রাঁধতেন চাঁন্দু। গোশতও দিতেন ইচ্ছেমতো, মানে কার্পণ্য করতেন না। নেহারিও করতেন ভালো। নাম হয়ে গেল অল্প দিনের মধ্যেই। তারপর ঠিক করলেন শুধু নেহারি বিক্রি করবেন ।

একটা ঘর ভাড়া নিলেন ক্যাম্পের ভিতরেই। দুটি টেবিল বসাতে পেরেছিলেন ঠেসেঠুসে, মানে ৮টা চেয়ার। এটা ৯২ সাল। নেহারির নলির প্লেট ধরলেন ৮ টাকা আর ক্ষুর ও গিট্টা ধরলেন ৩ টাকা প্লেট। দিনে ৬০-৭০  প্লেট বিক্রি হতো। মিরপুর ৭ নম্বর আর পূরবী হলের ধারে গরুর পা পাওয়া যেত। মহিষের পা মিলত মিরপুর ১ নম্বর আর ১১ নম্বর (নান্নু মার্কেট)। নাম ছড়িয়েছে মুখে মুখে। যেমন মিরপুর ১০ নম্বর থেকে কেউ কালশীর দিকে কোনো কাজে এসেছে, বিকালে লুচি আর নলি দিয়ে নাস্তা সারল, তারপর সে গিয়ে তার বংশালের বন্ধুর কাছে বলল যে, কালশীর দিকে একটা নেহারির দোকান আছে, নাম চাঁন্দুর নেহারি, ভালো বানায়। সেই বন্ধু আবার বলল যাত্রাবাড়ীর খালাতো ভাইয়ের কাছে, খালাতো ভাইয়ের এক বন্ধু আবার বাড্ডায় থাকে, একদিন বাড্ডায় গিয়ে বন্ধুকে খালাতো ভাই বলল, চলো চাঁন্দুর নেহারি খেয়ে আসি। এভাবেই নাম ছড়িয়েছে দিনে দিনে।

চাঁন্দু শেখের দোকানে নেহারির ওপর ধনেপাতার কুচি ছড়ানো হয় আর লেবুর বাটি রাখা থাকে টেবিলের ওপর

চাঁন্দুর নেহারি কেন নাম করল? জানতে চাইলে শুকুর আলী (চাঁন্দুর  কর্মচারী) বললেন, 'মহাজন (চাঁন্দু) তো কষ্ট কম করে নাই, তার সুফল পাইতাছে এখন। ফাঁকিঝুঁকির কোনো কারবারে সে নাই।' শুকুর আলী লেবু কাটা, গরু-মহিষের পা সাফ করা, সাফ নলি ফ্রিজে তুলে রাখা, নেহারির ডেক চুলায় তোলা ইত্যাদি কাজ করেন। ৭০-৮০টি লম্বা কাগজী লেবুর প্রতিটিকে চার টুকরা করেন শুকুর আলী প্রতিদিন। চাঁন্দু শেখের দোকানে নেহারির ওপর ধনেপাতার কুচি ছড়ানো হয় আর লেবুর বাটি রাখা থাকে টেবিলের ওপর।        

শুকুর আলীর পাশে ছিলেন আরেকজন, নাম লাল বাবু, দুইজন বাবু আছে বলে একজনের নাম সাদা বাবু আর ইনি লাল বাবু। খামির (ময়দার ময়ান) দেওয়ার ওস্তাদ এই বাবু। ৩০ বছর ধরে আছেন শেখ চান মিয়া ওরফে চাঁন্দুর সঙ্গে। প্রতিদিন তিনি ৩০ কেজি ময়দার খামির তৈয়ার করেন। এক কেজিতে ১৭-১৮টা লুচি হয়। নেহারির সঙ্গে লুচি (প্রতিটি পাঁচ টাকা) পাওয়া যায় চাঁন্দু শেখের দোকানে। লাল বাবুকেও জিজ্ঞেস করলাম, কেন চাঁন্দুর  নেহারি এতো জনপ্রিয়?

লাল বাবু উল্টো প্রশ্ন করলেন, ওই মিয়ার (চাঁন্দু) হাতের গোছ আর কারুর হইব?

প্রশ্ন: গোছ মানে?

লাল বাবু: গোছ বোঝেন না? মানে হইল ক্যাপাসিটি। এই যে আমি খামির দেই, আমার মতন আপনে পারবেন? এইটাই হইল আসল, আপনেও আদা, রসুন, পিঁয়াজ মরিচ সব দিলেন কিন্তু আপনেরটা চাঁন্দু মহাজনের মতন হইব না। আবার আমারটা আপনের মতন হইব না।

প্রশ্ন: এই ক্যাপাসিটি (হাতের গোছ) কীভাবে তৈরি হয়?

লাল বাবু: করতে করতে, পারতে পারতে।

প্রতিদিন ৩০ কেজির খামির তৈরি হয়। এক কেজিতে ১৭-১৮টা লুচি হয়। নেহারির সঙ্গে লুচি (প্রতিটি পাঁচ টাকা) পাওয়া যায় চাঁন্দু শেখের দোকানে

বুঝলাম লাল বাবু অভিজ্ঞতার কথা বলছেন, সম্ভবত আন্তরিকতার কথাও বলছেন। চাঁন্দু শেখ যেভাবে নেহারির পেছনে লেগে ছিলেন তা বেশি লোক থাকে না। তিনি নেহারির জন্য অন্য সব কাজ ছেড়েছেন। হালিম তার দোকানে এখনো হয় তবে কেবল রমজান মাসেই। তিনি কুর্মিটোলা ক্যাম্পের ভেতরেই তিনবার জায়গা বদলে করে এখন স্থায়ী জায়গাতে এসেছেন।

চাঁন্দুর দোকানের কিছু পশ্চিমে এক গরুর গোশত বিক্রেতার দোকান আছে যেখানে বড় এক স্পিকারে বাংলা কাওয়ালি বাজছিল। সঙ্গে সঙ্গত হিসাবে হারমোনিয়ামের সুর খুব চড়ায় ধরা। গানের কথা এমন,

তোমার দরশন কেমনে পাই বাবা শাহ আলী

তোমারে ছাড়া বাবা সব লাগে খালি খালি।

সেই গোশত বিক্রেতা চাঁন্দু শেখের ছোটবেলার খেলার সাথী। তিনি বললেন, বড় আজব দেশ ভাই এটা। এমন করে বদলায় কোনো দেশ? এত ঘন ঘন? ওই যে চাঁন্দু আট টাকায় নলি বেচছে সেই নলি এখন পার্সেলে ২১০ টাকাও বেচে। চাঁন্দুর দোষ কি? আপনে গেল দুই-তিন বছরে পিঁয়াজের দাম, গরুর গোশতের দাম, তেলের দাম হিসাব করে দেখেন! আর সব কিছু তো বাদই দিলাম। আরে ভাই যে গ্যাসের সিলিন্ডার ২,৪০০ টাকা আছিল সেটা এখন ৪,৮০০ টাকা। মোট কথা দ্বিগুণ বাড়ছে জিনিসের দাম। চাঁন্দু তার নলির দাম ৫০ টাকায় উঠায়ছে তো ২০০০ সালের পর। ১০০ টাকা আছিল ভাইরাস (করোনা) আসনের আগে। আর এখন তো ১৬০, ১৭০, ২০০ টাকা। তারেও তো টিকতে হইব, নাকি?

প্রশ্ন: আপনি আর চাঁন্দু শেখের খেলার সাথী?

খেলার সাথী: জি। আমরা ফুটবল আর কাবাডি খেলতাম বেশি। ওই বাউনিয়া বাধের লাল মাঠে।

প্রশ্ন: আপনি চাঁন্দুর নেহারি খাইছেন? কেমন লাগে?

খেলার সাথী: আমি খাইছি। আমার ভালো লাগে। পরিমাণে ঠিক দেয়, যেমন টাকা নেয় তেমন জিনিস দেয়। এই জন্যই তার নাম হইছে। 

চাঁন্দু মহিষের পায়ের নেহারি এখন বেশি পরিবেশন করেন। কারণ এর নলি হয় পুরু আর ভেতরের মজ্জা গলে যায় না। একটা পা থেকে তিন প্লেট নেহারি হয় (একটা নলির প্লেট, দুইটা গিট্টা আর ক্ষুরার প্লেট)। মহিষের পায়ের হালি এখন ১,৮০০ টাকা, গরুর পায়ের হালি ১,২০০-১,৪০০ টাকা। মহিষের পা আসে চট্টগ্রাম থেকে। ঢাকায় আগে মিরপুর ১ নং, ১১ নং, ইকুরিয়া ইত্যাদি জায়গায় মহিষ জবাই হতো। এখন ঢাকায় মহিষ পাওয়া যায় না। আসলে মহিষ রাখা, পালার জায়গা নেই ঢাকায়। চাঁন্দু শেখ তাই আফসোস করেন, 'তাজা খাবার কাস্টমারদের দিতে পারি না। চট্টগ্রাম থেকে বরফ দিয়াই তো পা আনতে হয়, দুই চার দিন সময় লাইগাই যায়। কিন্তু গরুর পায়ের মজ্জা গলে বের হয়ে ঝোলে লেগে যায় আর সাইজও সেগুলোর বেশি বড় না। দেড়শ-দুইশ টাকা প্লেট নেই, ছোটমোট জিনিস কাস্টমাররে দিতে শরম লাগে, তাই মহিষেরটাই দেই।'

প্রতিদিন ৩০ কেজির খামির তৈরি হয়। এক কেজিতে ১৭-১৮টা লুচি হয়। নেহারির সঙ্গে লুচি (প্রতিটি পাঁচ টাকা) পাওয়া যায় চাঁন্দু শেখের দোকানে

চাঁন্দু শেখ ২২ রকমের মশলা দেন নেহারিতে যার মধ্যে আছে জিরা, ধনিয়া, শাহী জিরা, সাদা গোল মরিচ, জয়ত্রী, জয়ফল, আদা ইত্যাদি। তিনি বলছিলেন, 'আগে যখন জিনিসপত্রের দাম কম ছিল তখন এক দুই হালি পা গলাইয়া ফেলাইতাম। তাতে ঝোলটা ঘন হইত। কাঠ বাদাম আর কাজু বাদামও বাইটা দিছি। এখন কাঠ বাদামের কেজি ৬০০ টাকা আর কাজু বাদামের হাজার টাকা। এখন তো কিছুই আর দিতে পারি না। তখনই নাম ফুটে গেছে। সেই নাম দিয়ে এখনো ব্যবসা চালায়া যাইতেছি। কাস্টমার ঠকাইতে আমার একেবারেই ভালো লাগে না। আমি ব্যবসা করতে চাই মানুষরে খুশি কইরা। কাস্টমারের খুশি হইল আমার আসল ব্যবসা। এখন জিনিসপত্রের দাম এতো বেশি আর প্রতিদিনই বাড়ে, কেমনে ব্যবসা করুম বুঝতেছি না।'

সেভেন আপ নামের সফট ড্রিংকের পক্ষ থেকে চাঁন্দু শেখের দোকানের সাইনবোর্ড বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাতে দোকানের নাম লেখা 'গ্রান্ড চাঁন্দু শাহী নেহারি'। দোকানে বড় একটা ফ্রিজও দেখলাম যার গায়ে মাউন্টেন ডিউ-এর নাম লেখা। নীচের দুই তাকে অ্যাকুয়াফিনার অনেকগুলো পানির বোতল। দোকানের চেয়ারগুলো স্টিলের, টেবিল ক্লথের ওপর নলি আর লুচির ছবি ছাপানো, টেবিল চামচগুলোও স্টিলের। ছোট্ট দোকানটি দুই তলা। ওপর তলায় পাঁচটি টেবিল মানে ২০ জনের বসার ব্যবস্থা, নীচে আছে আরও দুইটি টেবিল। প্রতি দিন দুই ডেক নেহারি তৈরি করেন চাঁন্দু শেখ। সবমিলিয়ে ২৫০-৩০০ প্লেট নেহারি। নলি শেষ হয়ে গেলে পরে গিট্টা আর ক্ষুরা পরিবেশন করা হয়। সন্ধ্যা ৭টায় পরিবেশন শুরু হয় চলে রাত ১০ টা অবধি। প্রথম এক ঘণ্টাতেই অর্ধেকের বেশি বিক্রি হয়ে যায়। ৭ জন স্থায়ী কর্মচারী আছেন চাঁন্দু শেখের। এছাড়া পরিবেশনের জন্য সন্ধ্যা থেকে আরও ৩-৪ জন যোগ দেয়। নেহারি পরিবেশিত হয় বড় মেলামাইনের বাটিতে করে, পানি খাওয়ার গ্লাসগুলো আবার স্টিলের।

দোকানে বসে টাকা গুনছেন চাঁন্দু শেখ

চাঁন্দু শেখের বয়স ষাটের ধারে কাছে এখন। ধুতি কাপড়ের ফিনফিনে ফতুয়া আর চেক লুঙ্গি পরতে ভালোবাসেন। হাকিমপুরী জর্দা দিয়ে পান খেতে ভালোবাসেন আর মশলা দেওয়া চা খান ঘণ্টায় ঘণ্টায়।

এবার তাকে সোজাসুজিই জিজ্ঞেস করলাম, চাঁন্দুর নেহারি কেন এতো জনপ্রিয়?

চাঁন্দু শেখ বললেন, সবটা আসলে বিবেকের ব্যাপার। আমি দুই ডেগ নেহারিতে ১০ কেজি পেঁয়াজ দেই। আদা, রসুন, জিরা, হলুদ সব দেই পরিমাণমতো। কোথাও কম বেশি করি না। আগে সব বাটা মশলা ব্যবহার করতাম। এখন ব্লেন্ডারে করি, ঠিকমতো মিহি হয় না মশলা। দশ হালি নলিতে পাঁচ হালির মশলা দিয়ে আমি চালাই না। আমি চাই কাস্টমার আমার রান্না খেয়ে খুশি হউক। কাস্টমার খুশি হইলেই আমি খুশি, ইনকাম দুই টাকা কম হইলেও খুশি। নেহারিতে আমি পোস্ত দানাও বেটে  দিতাম। এখন তো পাওয়াই যায় না। আমি নিজে পুরা রান্না তদারকি করি, সকাল থেকে বিশ্রাম নেওয়ার সময় পাই না, অন্যের ওপর কাজের ভার দিয়ে চুপচাপ বসে থাকতে পারি না, নিজে মশলা ছড়াই, পানি দেই, চুলার ধারে বসে থাকি ঘণ্টা ঘণ্টা। আমার থিওরি হইল, ওই যে বললাম, কাস্টমার খুশি হইলে দুই টাকা কম ইনকাম হইলেও আমি খুশি।   

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.