২০ বছরের মধ্যে বৈদ্যুতিক গাড়িই যানবাহনের বৈশ্বিক বাজারে রাজত্ব করবে 

ফিচার

টিবিএস ডেস্ক 
13 October, 2021, 09:30 pm
Last modified: 13 October, 2021, 09:40 pm
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের তথ্যমতে, বিশ্বে বর্তমানে যত মোটরকার বিক্রি হচ্ছে, তার মাত্র ৪ শতাংশ বৈদ্যুতিক ও হাইব্রিড বাহন। তবে সরকারি পর্যায় থেকে উৎসাহ প্রদান, ব্যাটারির খরচ কমিয়ে আনার প্রচেষ্টা, প্রযুক্তির বিকাশ এবং সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে চার্জিং স্টেশন সংখ্যা বাড়তে থাকার কারণে এই পরিস্থিতিতে আমূল পরিবর্তন দেখা যাবে। 

দূষণ কমিয়ে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ক্ষতি কমাতে দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে বিদ্যুৎচালিত গাড়ির (ইভি) ব্যবহার। তবে এখনও প্রচলিত জীবাশ্ম জ্বালানির বাহনের চাইতে এর বিক্রিবাট্টা বেশ কম। মূলত ক্রেতারাও উন্নত ও উদীয়মান অর্থনীতির দেশের বাসিন্দা। 

তবে ধীরে ধীরে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশসহ বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোও ইভি নীতিমালায় পরিবর্তন আনছে। উৎসাহিত করছে স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদন বা সংযোজনে।

সরকারিভাবে নীতি-সহায়তা ও সাধারণ মানুষের মধ্যে পরিবেশ সচেতনতা বাড়তে থাকার কারণে ইভির বাজার আরো বড় হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। 

দ্য ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের তথ্যমতে, বিশ্বে বর্তমানে যত মোটরকার বিক্রি হচ্ছে, তার মাত্র ৪ শতাংশ বৈদ্যুতিক ও হাইব্রিড বাহন। তবে সরকারি পর্যায় থেকে উৎসাহ প্রদান, ব্যাটারির খরচ কমিয়ে আনার প্রচেষ্টা, প্রযুক্তির বিকাশ এবং সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে চার্জিং স্টেশন সংখ্যা বাড়তে থাকার কারণে এই পরিস্থিতিতে আমূল পরিবর্তন দেখা যাবে। 

জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ও মডেলের কার বা পিকআপ ট্রাকের বৈদ্যুতিক সংস্করণও ক্রেতাদের মনোযোগ কাড়ছে। সবচেয়ে বড় কথা, ইভি যানের সম্ভাবনাগুলো যেমন ভবিষ্যৎ বিকাশের জন্য অনুকূল, তেমনি আছে এ পণ্যের ইতিবাচক ভাবমূর্তি। ফলে ২০৪০ সাল নাগাদ বিশ্বজুড়ে ৯ কোটি ৭০ লাখ ইভি বিক্রি হওয়ার আভাস দেওয়া হয়েছে।

বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০৪০ সাল নাগাদ ইভি বিক্রি মোট যানবাহন বিক্রির দুই-তৃতীয়াংশ হবে। তার বিপরীতে, প্রচলিত জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো গাড়ি বিক্রি ৯৯ শতাংশের বেশি কমে মাত্র এক-তৃতীয়াংশে নামবে। ভবিষ্যৎ বাজার সম্ভাবনা মাথায় রেখে বৈদ্যুতিক যান উৎপাদনের প্রতিযোগিতায় নামে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন, এবং এ দৌড়েও আপাতত বহুদূর এগিয়ে রয়েছে চীন। 

চীন সরকারের উচ্চাকাঙ্ক্ষী নীতি-সহায়তা, যেমন বিপুল প্রণোদনা, চার্জিং খরচে ভর্তুকি এবং ট্র্যাফিক বিধিমালায় ছাড় দেওয়ার ফলে দেশটিতে দিন দিন ইভি বাজার বড় হচ্ছে। বর্তমানে প্রতি পাঁচটি ইভি গাড়ির জন্য গড়ে একটি চার্জিং পোর্ট আছে চীনে। অবশ্য এদিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র এগিয়ে, সেখানে পাঁচটি গাড়ির বিপরীতে চার্জিং পোর্ট আছে ২০টি। 

ইউরোপের অপেক্ষাকৃত ধনী দেশগুলোর অটোমোবাইল বাজারেও বৈদ্যুতিক যানের অংশীদারিত্ব আকাশছোঁয়া গতিতে বাড়ছে। মহাদেশটির অর্থনৈতিক পরাশক্তি জার্মানিতে ২০৪০ সাল নাগাদ ৯০ শতাংশ বাজার দখল করবে ইভি। 

বাসাবাড়িতে গ্যারেজ সংখ্যায় এগিয়ে থাকা মার্কিনীরাও সহজে বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করার সুযোগ পান। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে যেসব বাড়িতে অন্তত দুটি গাড়ি থাকবে, তার অন্তত একটি বিদ্যুৎচালিত হবে।

জনসংখ্যার হিসাবে, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ ভোক্তাবাজার ভারতেও বৈদ্যুতিক মোটরকার, স্কুটার ও রিক্সার মালিকানায় সড়ক শুল্কে ছাড় ও বিনামূল্যে নিবন্ধন সুবিধা দিয়ে উৎসাহিত করা হচ্ছে। তবে পর্যাপ্ত চার্জিং স্টেশনের অভাব এখনো মূল প্রতিবন্ধকতা হিসেবে রয়ে গেছে। 

এদিকে প্রণোদনার মতো নীতি-সমর্থন বিশ্বের অন্যান্য দেশে এখনও ততটা জোরালো হয়নি। অধিকাংশ দেশেই জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো যানই সস্তা। তবে দামের দিক থেকে সাশ্রয়ী হয়ে ওঠার সাথে সাথে ইভির বিক্রিই প্রাধান্য বিস্তার করবে বলে আশা করা হচ্ছে। 

ইভি বিক্রি ঘিরে উচ্চ প্রত্যাশা কেন রয়েছে, জানতে নিচের বর্ণিত কিছু ঘটনার দিকে নজর দেওয়া দরকার;

১. ব্যাটারির মূল্য পতন: 

১৯৯১ সাল থেকে ৯৭ শতাংশ কমেছে ইভির ব্যাটারির মূল্য। উৎপাদন বৃদ্ধির সাথে সাথে দাম আরো কমবে। 

২. বৈদ্যুতিক যানের পাল্লা বৃদ্ধি:

২০২০ সালে টেসলার মডেল এস লং রেঞ্জ প্লাস প্রথম সম্পূর্ণ বিদ্যুৎচালিত গাড়ি হিসেবে ৪০০ মাইলের বেশি দূরত্ব একবার চার্জে পাড়ি দেওয়ার রেকর্ড করে। তারপর থেকে দূরত্ব পাড়ি দেওয়ার ক্ষেত্রে আরো উন্নতি আসছে। 

৩. নিত্যনতুন চার্জিং অবকাঠামো:

যুক্তরাষ্ট্রের মতো কিছু দেশে নতুন নতুন চার্জিং স্টেশন তৈরি হচ্ছে। বিদ্যমান স্টেশনগুলোও বাড়াচ্ছে চার্জিং পোর্টের সংখ্যা। তবে যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল অঞ্চলজুড়ে সর্বসাধারণের ব্যবহারের জন্য চার্জিং স্টেশনের ঘাটতি রয়েছে। উন্নয়নশীল ও স্বল্প আয়ের দেশে যার অস্তিত্বই নেই। 

কিন্তু, জলবায়ু পরিবর্তনে স্বল্প আয়ের দেশই বেশি ঝুঁকির মুখে। তাই বৈশ্বিক উদ্যোক্তারা স্থানীয় সম্পদ ও জনশক্তিকে কাজে লাগিয়ে এসব দেশের বাজারে ইভি সংযোজন ও বিপণনে এগিয়ে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পরিবেশ সহযোগী ব্যবসায় উৎসাহদান একটি গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি হয়ে উঠতে পারে।


  • সূত্র: দ্য ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.