সুস্থ হওয়ার ২ থেকে ৩ মাসের মধ্যেই করোনা ভাইরাসের অ্যান্টিবডি বিলীন হয়ে যেতে পারে

ফিচার

টিবিএস ডেস্ক
20 June, 2020, 01:00 am
Last modified: 20 June, 2020, 01:39 am
প্রায় ৪০ শতাংশ উপসর্গহীন প্রাক্তন করোনা রোগীদের ক্ষেত্রে রক্তে উপস্থিত অ্যান্টিবডির পরিমাণ খুবই নিচু স্তরে নেমে আসে। এর পরিমাণ এতটাই কম যে পরীক্ষায় তা শনাক্ত করাও সহজসাধ্য হয়নি।  অন্যদিকে উপসর্গযুক্ত করোনা আক্রান্তদের মাত্র ১৩ শতাংশের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবডি বিলীন হওয়ার এই প্রক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। 

ভাইরাস জনিত রোগ থেকে সেরে ওঠার পর অধিকাংশ মানুষের দেহে ক্ষতিকর জীবাণুর বিরুদ্ধে একটি প্রাকৃতিক রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। আমাদের রক্তের প্রোটিনই হচ্ছে এই লড়াইয়ের মূল নায়ক বা অ্যান্টিবডি। 

চলমান করোনাভাইরাসের মহামারিতেও সেরে ওঠাদের অনেকের দেহে 'অ্যান্টিবডি' তৈরি হয়েছে। কিন্তু উপসর্গযুক্ত এবং উপসর্গহীন করোনায় আক্তান্তের শরীরে ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা এই অ্যান্টিবডি ২ থেকে ৩ মাসের মধ্যে নাই হয়ে যেতে পারে। এতে পুনরায় আক্তান্ত হওয়া এবং করোনার বিরুদ্ধে কার্যকর টিকা আবিষ্কারের যে সব বৈশ্বিক গবেষণা চলছে, তা এতে বাধাগ্রস্ত হতে পারে। প্রশ্ন তৈরি হতে পারে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নিয়ে। 

আর একবার আক্রান্ত হওয়ার পর পুনরায় আক্রান্ত না হওয়ার যে ছাড়পত্রের কথা ধরে নেওয়া হচ্ছিল, এই গবেষণা তা ভুল প্রমাণ করে দিচ্ছে।  

করোনাভাইরাস থেকে মানুষকে সুরক্ষিত রাখতে রক্তে ভাইরাসটি প্রতিরোধী ক্ষমতা কতদিন থাকে তা জানা খুবই প্রয়োজন টিকা গবেষকদের। পাশাপাশি অধিকাংশ রোগীর ক্ষেত্রে সেরে ওঠার পর তা শরীরে তৈরি হয় কিনা, তাও জানতে চেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তাই এ প্রশ্নের উত্তর পেতে সম্প্রতি চীনের ওয়াংজু অঞ্চলে বিজ্ঞানীরা করোনা থেকে সেরে ওঠা উপসর্গযুক্ত এবং কোনো প্রকার উপসর্গ ছাড়াই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সেরে উঠেছেন এমন ব্যক্তিদের ওপর গবেষণা করেছেন।

গত বৃহস্পতিবার গবেষণার ফলাফলটি প্রকাশিত হয় চিকিৎসা বিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাগাজিন 'জার্নাল ন্যাচার মেডিসিনে।'

গবেষণার আওতায় বিজ্ঞানীরা উপসর্গহীন ৩৭ জন করোনা থেকে সুস্থ ব্যক্তির শরীরের অ্যান্টিবডির মাত্রা পরিমাপ করেছেন। এসব প্রাক্তন রোগীর অধিকাংশের দেহে করোনার প্রতিরোধ ব্যবস্থা মাত্র কয়েক মাস স্থায়ী হয়েছে। প্রায় ৪০ শতাংশ উপসর্গহীন প্রাক্তন করোনা রোগীদের ক্ষেত্রে রক্তে উপস্থিত অ্যান্টিবডির পরিমাণ খুবই নিচু স্তরে নেমে আসে। এর পরিমাণ এতটাই কম যে পরীক্ষায় তা শনাক্ত করাও সহজসাধ্য হয়নি।  

অন্যদিকে উপসর্গযুক্ত করোনা আক্রান্তদের মাত্র ১৩ শতাংশের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবডি বিলীন হওয়ার এই প্রক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। 

গবেষণার ভিত্তিতে চীনা বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন যে, উপসর্গহীন ব্যক্তিদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা অনেক দুর্বল। সেই তুলনায় উপসর্গ নিয়ে যারা করোনা থেকে সুস্থ হচ্ছেন তাদের ক্ষেত্রে এটা অনেকদিন ধরে কাজ করে। 

ইতোপূর্বের এক গবেষণায় জানা গিয়েছিল যে উপসর্গযুক্ত রোগীরা সুস্থ হলে তাদের দেহে কোভিড-১৯ প্রতিরোধী প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। তবে উপসর্গহীন করোনামুক্তদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে সাম্প্রতিক গবেষণাটি উল্লেখযোগ্য এক পদক্ষেপ। এর ফলে দেখা যাচ্ছে, প্রতিরোধ ব্যবস্থা তাদের দেহে জন্মালেও তার স্থায়িত্ব খুবই কম। 

এত কম মাত্রার প্রতিরোধ ব্যবস্থা করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে আদৌ সমর্থ হবে কিনা তা নিয়েও সন্দেহ পোষণ করেছেন বিজ্ঞানীরা। অবশ্য রোগ প্রতিরোধ নিয়ে এখনও অনেক অনুসন্ধানের প্রয়োজন আছে, বলে তারা জানিয়েছেন। বিশেষ করে কিছু কিছু গবেষণা বলছে, অতি কম মাত্রার অ্যান্টিবডিও দ্বিতীয়বার ভাইরাস সংক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে। 

ওয়াংজুতে করা গবেষণার প্রধান দুটি সীমাবদ্ধতা হচ্ছে; গবেষণার আওতায় খুব বেশি সংখ্যক রোগীকে আনা সম্ভব হয়নি। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে, ব্যক্তিভেদে অ্যান্টিবডির পরিমাণে তারতম্য দেখা দিতে পারে। 

বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা: 

ওয়াংজুর গবেষকরা দুই ধরনের অ্যান্টিবডি শনাক্তের চেষ্টা করেছেন। এগুলো হলো; ইমোগ্লোবিন জি (আইজিজি) এবং ইমোগ্লোবিন এম। 

সাধারণত, কোনো জীবাণুতে আক্রান্ত হওয়া মাত্রই আমাদের শরীর প্রথমে ইমোগ্লোবিন এম তৈরির চেষ্টা করে। অন্যদিকে ইমোগ্লোবিন জি তৈরি হয় দীর্ঘ সময় ধরে। অর্থাৎ, দীর্ঘমেয়াদী রোগ প্রতিরোধের জন্য আইজিজি'ই সবচেয়ে শক্তিশালী সহায়ক শক্তি। 

নিউ ইয়র্কের মাউন্ট সিনাই হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল অ্যান্টিবডি টেস্টিং বিভাগের পরিচালক আনিয়া ওয়াজেনবার্গ বলেন, এই রোগের অনেক রূপরহস্য আমরা এখনও জানিনা। তবে এটা প্রমাণিত যে আইজিজি মানেই স্থায়ী প্রতিরোধ ব্যবস্থা। রক্তে এর উপস্থিতি থাকলে তা খুব সহজেই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে পারে। অর্থাৎ, আক্রান্ত ব্যক্তির সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভবনাই থাকে বেশি।

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.