শিয়ালটি যেন কৃষক পরিবারের আপনজন, রাতে ঘুমায়ও একসঙ্গে

ফিচার

লক্ষ্মীপুর সংবাদদাতা
08 September, 2020, 09:55 pm
Last modified: 09 September, 2020, 12:09 pm
বন্দী নয়, সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে সারাদিন চলাফেরা করে বাড়ির এখানে সেখানে। নির্দিষ্ট সময়ে খেতে আসে, রাতে ঘুমাও নির্দিষ্ট সময়ে। বাড়ির কর্তার সঙ্গে যায় হাটবাজার আর দোকানপাটে।

প্রায় আট-নয় মাস বয়সী লাল শিয়ালটি এক কৃষক পরিবারের সঙ্গে রাতে ঘুমায়। আবার  ঘুম থেকে জেগে ওঠেও একসঙ্গে।

বন্দী নয়, সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে সারাদিন চলাফেরা করে বাড়ির এখানে সেখানে। নির্দিষ্ট সময়ে খেতে আসে, রাতে ঘুমাও নির্দিষ্ট সময়ে। বাড়ির কর্তার সঙ্গে যায় হাটবাজার আর দোকানপাটে। যেন মানুষ আর শিয়ালের গভীর বন্ধুত্ব। তাই গৃহকর্তা কৃষক ইসমাইল শিয়ালটির নামও রেখেছেন 'বন্ধু'।

ছবি: টিবিএস

এমন একটি অদ্ভুত স্বভাবের শিয়াল পালিত হচ্ছে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার চর কাদিরা ইউনিয়নের চর পাগলা গ্রামের কৃষক মো: ইসমাইলের বাড়িতে। 

মঙ্গলবার ওই বাড়ি গেলে বাসিন্দারা জানান, শিয়ালটি খায় রান্না করা ভাত, শাকসবজি, রুটি, ফলমূলসহ মানুষের খাওয়া সব খাবার। প্রতিদিন শ্যাম্পু দিয়ে গোসলও করে! পুকুরে সাঁতার দিয়ে ব্যায়াম করে নিয়মিত। মাঝে মধ্যে মান অভিমানও করে।

বন্ধু নামের এ শিয়ালকে নিয়ে বাড়ির ছোট শিশুরা একসঙ্গে ফুটবলসহ বিভিন্ন খেলায় মেতে থাকে সারাক্ষণ। এমন বেশ কিছু ঘটনা এ প্রতিবেদকের সামনেও ঘটেছে।

প্রতিবেশী ও স্থানীয় সাংবাদিক সাইফুল্লাহ হেলাল বলেন, 'শিয়াল পোষ মেনে গৃহে পালিত হতে কখনো শুনিনি বা দেখিনি। এটা সত্যিই অবিশ্বাস্য।'

ছবি: টিবিএস

তিনি আরও বলেন, 'যে হাঁস মুরগী শিয়াল দেখলে ভয় পেয়ে লুকিয়ে যায়, সে হাঁস মুরগী এ শিয়ালের খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু। বাড়ির গৃহপালিত সব হাঁস মুরগীর পাহাদার সে। কুকুরের ভয়ে সাধারণত শিয়াল সব সময় তটস্থ থাকে। কিন্তু এ শিয়ালের ভয়ে বাড়িতে কুকুর আসে না!'

শিয়ালের কথা শুনলেই অনেকের চোখের সামনে ভেসে ওঠে হাঁস মুরগী নিয়ে ছুটে পালানো এক নিশাচর প্রাণীর কথা। বাংলা সাহিত্য, নাটক, সিনেমায় শিয়ালকে প্রতিনিয়ত হাজারও চরিত্রে উপস্থাপন করা হচ্ছে। কিন্তু সে রকম কোনো চরিত্রের সঙ্গেই কমলনগর উপজেলার কৃষকের বাড়িতে পালিত হওয়া শিয়ালটির মিল খুঁজে পাওয়া যায় না। এটি সত্যিই এক অবিশ্বাস্য চরিত্রের শিয়াল।

এই শিয়াল এখন মানুষের আচার আচরণ অনুকরণ করে তার শিয়াল স্বভাব প্রায় ভুলে গেছে!

ছবি: টিবিএস

কীভাবে শিয়ালটি এ বাড়ি এলো- তা জানতে চাইলে ইসমাইল বলেন, 'প্রায় আট মাস আগে পাশের গ্রামের এক বাড়িতে পাম্প মেশিন দিয়ে পানি সেচ করার সময় একটি গর্তে তিনটি অচেনা প্রাণীর বাচ্চা খুঁজে পাই। দুষ্ট কিশোরদের হাত থেকে বাঁচিয়ে ওদেরকে বাড়িতে নিয়ে এসে বাচ্চাদের ফিটারে দুধ খাওয়াতে শুরু করি। ওরা ক্রমেই বড় হয়ে এক সময় চোখ ফোটে। এরপর বুঝতে পারি, এগুলো লাল শিয়ালের বাচ্চা। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত দুটি শিয়াল ছানা মারা যায়। বেঁচে থাকে বন্ধু নামের শিয়ালটি।'

ইসমাইল আরও বলেন, 'আমার পরিবারের সবাই শিয়ালটিকে আমাদের একজনের মতোই আদর যত্ন করি। ওর কোনো অসুখ হলে চিকিৎসা করাই। আমরা চাচ্ছি সে যতদিন থাকার, থাকুক। অন্যদিকে শিয়ালটির মা-বাবা মাঝে মধ্যে রাতে ওকে নেওয়ার জন্য আসে। কিন্ত সে যায় না; দৌড়ে এসে আমাদের কোলে ওঠে। প্রতিবেশীরাও ওকে যত্ন করে। শিয়ালটি আমার পরিবারের সদস্য।'

ছবি: টিবিএস

কমলনগর উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. আখতারুজ্জামান বলেন, 'শিয়ালের কামড়ে জলাতঙ্ক রোগ হয়। তবু কুড়িয়ে পাওয়া শিয়াল ছানাকে যত্ন করে বাঁচিয়ে রেখে বড় করা সত্যিই মানবিক। বন্যপ্রাণীর প্রতি কৃষকের এমন ভালোবাসা প্রশংসনীয়। সম্ভব হলে এটিকে বনবিভাগের কাছে হস্তান্তর করা উচিত।'

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.