শিশুরা কবে কোভিড টিকা পাবে, উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা যেসব প্রশ্নের উত্তর চান

ফিচার

টিবিএস ডেস্ক
26 January, 2021, 07:10 pm
Last modified: 26 January, 2021, 08:23 pm
ইতিহাসের দ্রুততম সময়ে আবিষ্কৃত কোভিড টিকার প্রভাব শিশুদের মধ্যে কেমন হবে সেটাও অজানা

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ নানা দেশে জোরতালে চলছে কোভিড-১৯ টিকাদান কর্মসূচি। আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে বাংলাদেশেও সেরাম ইনস্টিটিউড উৎপাদিত কোভিশিল্ড টিকাদান অগ্রাধিকার পাওয়াদের মধ্যে শুরু হচ্ছে। 

কিন্তু, এপর্যন্ত এসব কর্মসূচির আওতায় আসেনি একটি গুরুত্বপূর্ণ জনসমষ্টি: শিশুরা। 

উন্নত দেশে টিকাদানে অগ্রাধিকার পাচ্ছে বয়োবৃদ্ধ এবং ১৬ বছর এবং তার বেশি বয়সী কিশোরেরা। অপরদিকে, শিশুদের জন্য বিশেষভাবে টিকা তৈরির চেষ্টা কেবল শুরু হয়েছে। চলছে তা নিয়ে প্রাথমিক পর্যায়ের পরীক্ষা-নিরীক্ষা। শিশুদের মধ্যে ইতিহাসের দ্রুততম সময়ে আবিষ্কৃত কোভিড টিকার প্রভাব কেমন হবে সেটাও অজানা। 

সংক্রামক ব্যাধি বিশেষজ্ঞ হিসেবে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সহায়তা দেন স্টেট ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্কের ক্লিনিক্যাল অ্যাসিসটেন্ট প্রফেসর ডা. ওয়েসলি কুফেল। প্রায়ই তিনি উদ্বিগ্ন অভিভাবকদের কাছ থেকে শিশুদের টিকা নিয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হন। এর মধ্যে বহুল জিজ্ঞাসিত কিছু ব্যাপারকে তিনি তুলে ধরেন মার্কিন গণমাধ্যম- দ্য কনভারসেশনে প্রকাশিত নিজ লেখায়। সেই সূত্রেই জেনে নেওয়া যাক শিশুদের টিকা নিয়ে এপর্যন্ত জানা- অজানা নানা বিষয়।   

অভিভাবকের প্রশ্ন: আমার শিশু কবে টিকা পাবে?

ওয়েসলি কুফেল: আগস্টে (যুক্তরাষ্ট্রে) নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরুর আগে শিশুর জন্যে গবেষণাধীন টিকাটি প্রস্তুত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।   

প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে টিকার ট্রায়ালে আশাজনক সফলতা পাওয়া গেছে। এই প্রেক্ষিতে গেল ডিসেম্বরে পরিণত বয়সের নাগরিক এবং তারুণ্যের কাছাকাছি বয়সের কিশোরদের মধ্যে জরুরিভাবে টিকা প্রয়োগের অনুমোদন দেয় মার্কিন খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ)।   

অনুমোদিত টিকার মধ্যে ফাইজারের টিকা ১৬ এবং তার বেশি বয়সের কিশোরেরাও পাবে। অন্যদিকে, মডের্নার টিকা পাবে ১৮ বছরের তরুণ এবং তার বেশি বয়সের ব্যক্তি। ইতোমধ্যে, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডাতেও এই একই বয়স সীমা মেনে ভ্যাকসিন দুটি দেওয়া হচ্ছে। 

যার বিপরীতে শিশুদের জন্যে টিকা তৈরির ট্রায়াল কেবল শুরু হয়েছে। 

১২ বছর এবং তার বেশি বয়সের শিশুদের আবিষ্কৃত টিকার আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে ফাইজার ইঙ্ক। এজন্য, তারা অংশীদার সংস্থা জার্মানির বায়োএনটেকের সঙ্গে গবেষণা শুরু করেছে। গেল বছরের অক্টোবরে এই কার্যক্রম শুরু হয়। অন্যদিকে, মডের্না গত ১০ ডিসেম্বর ১২-১৭ বছরের শিশু-কিশোরদের জন্যে ট্রায়াল শুরুর ঘোষণা দেয়।

তবে মনে রাখা উচিৎ, বয়স্কদের জন্য অনুমোদিত যেকোনো টিকাকে আগে ট্রায়ালের মাধ্যমে আলোচিত বয়স শ্রেণির মধ্যে সফল ও নিরাপদ বলে প্রমাণিত হতে হবে। তারপর শিশুদের মধ্যে প্রয়োগের স্বীকৃতি মিলবে। 

এছাড়া, সদ্যজাত থেকে ১১ বছর বয়সী শিশুদের জন্যে এখনও টিকা তৈরির প্রচেষ্টা শুরু হয়নি।    

প্রশ্ন: শিশুদের কী বয়স্কদের চাইতে বেশি ডোজ নিতে হবে? 

কুফেল: বড়দের তুলনায় শিশুদের ক্ষেত্রে টিকার ডোজগ্রহণ আলাদা হবে বলে মনে হচ্ছে না। তবে পরীক্ষা চলমান থাকায় এটি বদলাতেও পারে।  

অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোরদের মধ্যে ফাইজার টিকা দুই ডোজ করে দিয়ে পরীক্ষা চালানো হয়েছে। প্রাপ্তবয়স্কদের মতোই তাদের ক্ষেত্রে প্রথম ডোজের সঙ্গে শেষ ডোজ ইঞ্জেকশন দেওয়ার ব্যবধান ছিল তিন সপ্তাহ। মডের্না ইঙ্ক প্রাপ্তবয়স্কদের ডোজ সূচি অনুসারেই দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ৩ হাজার কিশোরের মধ্যে টিকার ট্রায়াল চালানোর উদ্যোগ নিয়েছে।

প্রথম ডোজ সবচেয়ে ভালো সুরক্ষা দিতে পারে না, দ্বিতীয় ডোজ আসলে 'বুস্টার' বা প্রথমটির কার্যকারিতা এবং স্থায়িত্ব বৃদ্ধি করে। হেপাটাইটিস বি, হাম, মাম্পস এবং রুবেলা থেকে শুরু করে এপর্যন্ত আবিষ্কৃত প্রায় সকল রোগের টিকার ক্ষেত্রেই একথা প্রযোজ্য। 

শিশুদের জন্যেও দুই ডোজের পরিকল্পনা রাখা হলেও, এটি ট্রায়ালের ফলাফলের ভিত্তিতে পরিবর্তন হতেই পারে। নানা বয়সের শিশু-কিশোর বয়স শ্রেণির মধ্যে কোভিড-১৯ টিকা কোন মাত্রায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করবে এবং কতদিন সে প্রভাব থাকবে; সেটাও অজানা। এসব তথ্যের ভিত্তিতেই অদূর ভবিষ্যতে ডোজ সংখ্যা নির্ধারণ করা হবে।  

উদাহরণস্বরূপ বলা যায় ফ্লু ভ্যাকসিনের কথা, প্রতিবছর জীবাণুর অভিযোজনের কারণে এই টিকার ডোজ পরিবর্তন করতে হয়। মডের্না প্রকাশিত সাম্প্রতিক কিছু তথ্য-উপাত্ত অবশ্য আশা জাগাচ্ছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, তাদের আবিষ্কৃত ভ্যাকসিন নেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তত তিন মাসব্যাপী সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা তৈরি হয়েছে।

প্রশ্ন: টিকা কী শিশুদের জন্যে নিরাপদ?    

কুফেল: এপর্যন্ত ফাইজার বা মডের্না ইঙ্কের টিকাগ্রহণকারী তরুণ এবং একটু বয়সী কিশোরদের (১৬-১৭ বছর) মধ্যে কোনো মারাত্মক সমস্যা লক্ষ্য করা যায়নি। কিন্তু, তার চাইতে কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে নিরাপদ কিনা- তা সবশেষ ট্রায়ালের ফল প্রকাশ পাওয়ার পরই বলা যাবে। 

বিশ্বব্যাপী আরও কিছু ওষুধ আবিষ্কারক তাদের টিকাকে শিশু জনসংখ্যার উপযোগী করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এদের কেউ কেউ নানা দেশের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে শুরু করেছে ট্রায়ালের উদ্যোগ।

তবে সেক্ষেত্রে আছে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি নিয়ে উদ্বেগ।  

সাধারণত প্রাপ্তবয়স্কদের চাইতে শিশুদের মধ্যেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। ফলে টিকা নেওয়ার ফলে তাদের মধ্যে স্বল্পস্থায়ী কিন্তু শক্তিশালী প্রভাব পড়তে পারে। এর ফলে টিকাগ্রহণের জায়গা ফুলে যাওয়াসহ মাংশপেশির তীব্র ব্যথায় ভুগতে পারে তারা। ব্যথার কারণে জ্বরও আসতে পারে। 

প্রায় সকল রোগের টিকা নেওয়ার ফলে কোনো কোনো শিশুর মধ্যে এসব প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। এটা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই, বরং এর অর্থ হলো; শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কার্যকরভাবে কাজ করছে। তবে অভিভাবকরা বিষয়টি নিয়ে ভয় পাবেন- সেটাও স্বাভাবিক।  

প্রশ্ন: শুধু বয়স্কদের টিকা দেওয়াই কী যথেষ্ট? 

কুফেল: মহামারি অবসান করতে হলে শুধুমাত্র প্রাপ্তবয়স্কদের টিকা দেওয়া যথেষ্ট নয়। শিশুরাও আক্রান্ত হতে পারে, গুরুতর অসুস্থ হতে পারে এবং তাদের মাধ্যমেও জীবাণুর বিস্তার ঘটে। সঠিক টিকা না পেলে শিশুরা জীবাণুর ধারক হয়ে উঠবে, ফলে মহামারির ইতি টানা সম্ভব হবে না।   

বৈশ্বিকভাবে স্বীকৃত ভ্যাকসিনের মধ্যে শীর্ষ অবস্থানে আছে ফাইজার ও মডের্নার টিকা। ভ্যাকসিন দুটির সফলতা যথাক্রমে; ৯৫ ও ৯৪ শতাংশ। তার মানে আদর্শ অবস্থায় টিকাগ্রহণকারী ৯৫ শতাংশ পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তি সুরক্ষিত থাকেন। এটা ছিল প্রত্যাশাতীত সাফল্য।   

শিশুদের মধ্যেও একইরকম সফলতা পাওয়া যাবে কিনা- সেটাই এখন দেখার বিষয়। 

  • সূত্র: দ্য কনভারসেশন
     

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.