ভূকেন্দ্রের একাংশ আরেক অংশের চেয়ে দ্রুত বর্ধিত হচ্ছে

ফিচার

টিবিএস ডেস্ক
13 August, 2021, 03:10 pm
Last modified: 13 August, 2021, 03:17 pm
পৃথিবীর বয়স প্রায় ৪৫০ কোটি বছর। ভূকেন্দ্র তৈরি হয়েছে আমাদের গ্রহের প্রথম ২০ কোটি বছরের মধ্যে।

আমাদের পায়ের পাঁচ হাজার কিলোমিটার নিচে নীরবে অবস্থান করছে পৃথিবীর ধাতব কেন্দ্র। ১৯৩৬ সালের আগ পর্যন্ত এই কেন্দ্র সম্বন্ধে কিছুই জানতো না বিজ্ঞানীরা। প্রায় একশ বছর পরও ভূকেন্দ্র কখন ও কীভাবে গঠিত হয়েছিল, এ ব্যাপারে পুরোপুরি একমত নন বিজ্ঞানীরা।

এই রহস্য সমাধান করা এতটা সহজও না। আমরা চাইলেও সরাসরি কেন্দ্রের উপাদানগুলোর নমুনা সংগ্রহ করতে পারবো না। এক্ষেত্রে যেটা করা হয়, ভূকম্পবিদরা ভূকম্পন তরঙ্গ বিশ্লেষণ করে নমুনা সংগ্রহ করেন। ভূতাত্ত্বিকরা কেন্দ্রের গতিবিদ্যা অনুযায়ী মডেল তৈরি করেন,  এবং খনিজ পদার্থবিদরা উচ্চ চাপ ও তাপমাত্রায় লোহার খাদগুলোর আচরণ বিশ্লেষণ করেন।

সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এই সবকিছুকে একত্র করে পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ কেন্দ্রে কী হচ্ছে, সেটা নিয়ে সম্যক একটি ধারণা পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এই গবেষণায় উঠে এসেছে ভূকেন্দ্রের একাংশ আরেক অংশের চেয়ে দ্রুত বর্ধিত হচ্ছে। ভূকেন্দ্রের বয়স ও পৃথিবীর চুম্বক ক্ষেত্রের ইতিহাস সম্পর্কেও গুরুত্বপূর্ণ ধারণা পাওয়া গেছে এই গবেষণা থেকে।

শুরুর পৃথিবী

পৃথিবীর বয়স প্রায় ৪৫০ কোটি বছর। ভূকেন্দ্র তৈরি হয়েছে আমাদের গ্রহের প্রথম ২০ কোটি বছরের মধ্যে। মাধ্যাকর্ষণের ফলে ভারী লোহাজাত দ্রব্যাদি টেনে নিয়েছিল ভূকেন্দ্র। এরপর বাকি থাকা পাথরে ও সিলিকেটজাতীয় খনিজগুলো দিয়ে গঠিত হয়েছিল ভূত্বক। 

পৃথিবী যখন একটি গ্রহ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন এটি বেশ উত্তপ্ত অবস্থায় ছিল। সেখান থেকে ধীরে ধীরে পৃথিবী পৃষ্ঠের তাপমাত্রা কমতে থাকে, সাথে সাথে বিবর্তিত হতে থাকে গ্রহটি।

তাপমাত্রা কমেছে ভূকেন্দ্রেও। তাপমাত্রা কমায় কেন্দ্রের বাইরের অংশে তরল লোহার প্রবাহ অনেক বেড়ে যায়। আর এর ফলেই তৈরি হয় পৃথিবীর চুম্বক ক্ষেত্র।

ভূকেন্দ্রের তাপমাত্রা কমতে কমতে একসময় উচ্চচাপে লোহার যে গলনাঙ্ক তারচেয়েও নিচে নেমে যায়। যে কারণে ধীরে ধীরে ঘনীভূত হতে থাকে লোহার স্তর, বাড়তে থাকে কেন্দ্রের ব্যাস। প্রতি বছর ভূকেন্দ্রের ব্যাসার্ধ এক মিলিমিটার করে বাড়ছে। যার মানে, প্রতি সেকেন্ডে মোট আট হাজার টন বায়বীয় লোহা ঘনীভূত হচ্ছে। কোটি কোটি বছর পর পৃথিবীর কেন্দ্র ঠাণ্ডা হয়ে পুরোপুরি কঠিন পদার্থে পরিণত হবে। তখন ধ্বংস হয়ে যাবে পৃথিবীর চুম্বক ক্ষেত্র।

'কেন্দ্রীয়' সমস্যা

আপনি ভাবতে পারেন, ঠাণ্ডা হতে হতে হয়তো একটি সমজাতীয় কঠিন গোলকই তৈরি করছে ভূকেন্দ্র। কিন্তু আসলে তা না। নব্বইয়ের দশকে বিজ্ঞানীরা প্রথমবারের মতো আবিষ্কার করেন ভূকেন্দ্রের মধ্য দিয়ে যাওয়া ভূকম্পন তরঙ্গের গতি অপ্রত্যাশিতভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে। যার মানে, কেন্দ্রের গঠন অসমীয়ভাবেই হচ্ছে। 

বিশেষ করে, কেন্দ্রের পূর্ব এবং পশ্চিমাঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন ভূকম্পন তরঙ্গ দৈর্ঘ্য পাওয়া গেছে। পূর্ব অংশের উপরে অবস্থান করছে এশিয়া, ভারত মহাসাগর ও পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগর। আর পশ্চিমাংশের উপরে রয়েছে দুই আমেরিকা মহাদেশ, আটলান্টিক মহাসাগর এবং পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগর।

নতুন গবেষণাটিতে উঠে এসেছে ইন্দোনেশিয়ার বান্দা সাগরের নীচে অবস্থিত ভূকেন্দ্রের পূর্বাংশ ব্রাজিলের নীচে অবস্থিত পশ্চিমাংশের তুলনায় দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। পৃথিবী পৃষ্ঠের একাংশ আরেক অংশের তুলনায় দ্রুত ঠাণ্ডা হচ্ছে বলেই ভূকেন্দ্রের বৃদ্ধি এমন অসমানভাবে হচ্ছে বলে মনে করছেন গবেষকরা।

তবে যেহেতু পৃথিবীর কেন্দ্রে বিশাল পরিমাণ মাধ্যাকর্ষণ বল কাজ করছে, তাই ভূকেন্দ্রের গোলাকৃতি ছেড়ে অন্যরকম আকৃতি ধারণ করার সম্ভাবনা নেই।

কেন্দ্রের বয়স

নতুন গবেষণায় ভূকেন্দ্রের বয়স নিয়েও ধারণা পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তারা ধারণা করছেন পৃথিবীর প্রথম ৫০ থেকে ১৫০ কোটি বছরের মধ্যেই গড়ে উঠেছে ভূকেন্দ্র। 

গবেষকরা বলছেন ৫০ থেকে ১৫০-র মধ্যে, প্রথমদিকে গঠিত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তবে পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের শক্তির পরিবর্তন পরিমাপ থেকে আসা তথ্য অনুযায়ী শেষের দিকে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। যারাই সঠিক হোক, ভূকেন্দ্র গঠিত হওয়ার বয়স পৃথিবীর মোট বয়সের এক তৃতীয়াংশ থেকে এক নবমাংশের মধ্যেই হবে।

  • সূত্র: স্ক্রল ডট ইন।  

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.