ফিনটক: যেভাবে টিকটক থেকে বিনিয়োগ শিখছে তরুণ প্রজন্ম

ফিচার

টিবিএস ডেস্ক
11 July, 2021, 05:00 pm
Last modified: 11 July, 2021, 05:24 pm
৬০ সেকেন্ডের ভিডিওতে ক্রিপ্টোকারেন্সি, পুঁজিবাজার এবং বিনিয়োগ ছাড়াও কর ব্যবস্থা, ঋণ গ্রহণ, বাজেট প্রণয়ন ইত্যাদি বিষয় ব্যখ্যা করা হয়ে থাকে। আপাতদৃষ্টিতে নিরস অর্থ ব্যবস্থাপনায় তরুণদের আগ্রহী করে তুলতে ভূমিকা রাখছে এসব ভিডিও।

অধিকাংশ মানুষের কাছেই টিকটক স্রেফ বিনোদনের একটি মাধ্যম। ২০২০ সালে মহামারি শুরু হওয়ার পর তরুণদের মাঝে টিকটক তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে।

অ্যাপটি ব্যবহার করে কনটেন্ট নির্মাতারা গান ও মিউজিক সহকারে ৬০ সেকেন্ডের এক বা একাধিক ভিডিও তৈরি করে শেয়ার করতে পারেন। এ পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী অ্যাপটি ২০০ কোটি বারের বেশি নামানো হয়েছে।

তবে, টিকটকের আরেকটি দিক সম্পর্কে অনেকেই হয়তো অবগত নন। বিনোদন কেন্দ্রিক এই যোগাযোগ মাধ্যমে বর্তমানে পুঁজিবাজার, বিনিয়োগ এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি বিষয়ক বহু ভিডিও নিয়মিত শেয়ার করা হচ্ছে। ফিন্যান্সিয়াল বিভিন্ন বিষয়ে আগ্রহী ব্যবহারকারীরা এসব কনটেন্টকে ফিন্যান্সিয়াল টিকটক বা সংক্ষেপে ফিনটক বলছেন।

অর্থ-সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ের ওপর নির্মিত সংক্ষিপ্ত ভিডিওগুলোর দর্শক সংখ্যাও নিতান্ত কম নয়। পুঁজিবাজার সম্পর্কিত হ্যাশট্যাগ স্টকটক সম্বলিত কনটেন্ট ১৪০ কোটি বারের বেশি দেখা হয়েছে।

অন্যদিকে ব্যক্তিগত অর্থ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক হ্যাশট্যাগ পারসোনাল ফিন্যান্স লেখা ভিডিওগুলো ব্যবহারকারীরা ৪৪০ কোটি বারের বেশি দেখেছেন।

কী আছে ফিনটকে?

মূলত ক্রিপ্টোকারেন্সি এবং বিনিয়োগ বিষয়ের ভিডিও ছাড়াও এসব ভিডিওতে কর ব্যবস্থা, ঋণ গ্রহণ, বাজেট প্রণয়ন ইত্যাদি বিষয় ব্যখ্যা করা হয়ে থাকে।

সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো তরুণরা এসব ভিডিও থেকে অর্থ-বাণিজ্য, হিসাববিজ্ঞান ও বিনিয়োগের মতো আপাত নিরস সব বিষয়ে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। মিলেনিয়াল থেকে শুরু করে জেড প্রজন্মের বহু ব্যবহারকারীরা টিকটকের মাধ্যমে অর্থ ব্যবস্থাপনার প্রথম পাঠ লাভ করছেন।

টিকটক মূলত ব্যবহারকারীদের রুচি এবং পূর্বে বেশিবার দেখা ভিডিওগুলোর মতো নতুন সব ভিডিও রেকমেন্ড করে থাকে। ব্যবহারকারীদের জন্য নিজস্ব ফিড তৈরি করার অ্যালগরিদমটি ফর ইওর পেজ (এফওয়াইপি) নামে পরিচিত। তবে, এফওয়াইপি অন্যান্য অ্যালগরিদমের মতো নয়। তারা ব্যবহারকারীর রুচি ও অভিজ্ঞতার বাইরেও প্রতিনিয়ত নতুন সব বৈচিত্র্যপূর্ণ ভিডিও সাজেস্ট করে থাকে।

সুতরাং, কোনো ব্যবহারকারী যদি ইতঃপূর্বে ফিনটকের ভিডিও নাও দেখে থাকেন, তবু এ ধরনের ভিডিও তাদের সামনে আসবে।

লরা পমফ্রেট ও তার বোন ইন্সটাগ্রাম থেকে ফিন্যান্সিয়ালির যাত্রা শুরু করেন। বর্তমানে টিকটকে নিয়মিত ফিনটক ভিডিও আপলোড করেন লরা। ছবি: দ্য গার্ডিয়ান

"বাড়ি কিনবেন নাকি ভাড়া থাকবেন?" এমন একটি ভিডিওতে বিভিন্ন বাড়ির বাজারমূল্যসহ বিভিন্ন বিষয় সহজ ভাষায় ব্যখ্যা করেন ফিনটক নির্মাতা লরা। ৬০ সেকেন্ডের ভিডিওর শেষে তিনি বলেন, এখানে কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম নেই। সবাই নিজেদের মতো করে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তবে, দুই ক্ষেত্রেই বিভিন্ন সুবিধা ও অসুবিধার বিষয়গুলো বিবেচনা করার উপদেশ দেন তিনি।

ফিন্যান্সিয়েলি'র আরেকটি সিরিজে প্রতিদিন অর্থনীতি সংক্রান্ত বিভিন্ন শব্দের সংজ্ঞা দেওয়া হয়। এমন একটি ভিডিওতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বহুল ব্যবহৃত 'গ্রিনওয়াশিং' শব্দের ব্যখ্যা দেন ফিন্যান্সিয়েলির ইন্টার্ন লুসি। সেখানে বলা হয়, "যখন কোনো প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব হিসেবে তুলে ধরে ক্রেতাদের ধোঁকা দেয়, তখন তাকে গ্রিনওয়াশিং বলা হয়।"

তবে, এই ফিনটক ভিডিওগুলো বিশ্বের সর্বত্র সমানভাবে জনপ্রিয় নয়। অধিকাংশ ফিনটক কনটেন্টই আমেরিকান। আর তাই অন্যান্য দেশের অর্থ ব্যবস্থার সাথে সেগুলোর কিছু মৌলিক তারতম্য আছে।

৩৭ বছর বয়সী ম্যাথিউ ফ্লাওয়ার টিকটকের অন্যান্য ব্যবহারকারীদের থেকে ভিন্ন। তিনি মূলত বাচ্চাদের নজরে রাখতে অ্যাপটি ব্যবহার করে। ফিনটকের ভিডিওর বিষয়ে তিনি বলে, "অধিকাংশ ভিডিওই ফালতু।"

যা মাথায় রাখতে হবে

আস্কট্রেডার ওয়েবসাইটের বিশ্লেষক নাইজেল ফ্রিদ বলেন, অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো সমৃদ্ধ হওয়ার সাথে ওয়াল স্ট্রিট বা লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে গ্রাহকরা এখন সহজেই জানতে পারেন।

কিন্তু, এই ভিডিওগুলোর ওপর নজরদারি না থাকা নিয়েও তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন। তিনি জানান, টিকটকে ভাইরাল হওয়া খুব সহজ। কনটেন্ট নির্মাতারা বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের পূর্বেই ভাইরাল হয়ে যেতে পারেন। ফলে, ভিডিওগুলোর মান বা নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।

নিয়ন্ত্রণহীন ইনফ্লুয়েন্সারদের কারণে বিনিয়োগের ক্ষেত্রও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। কেননা, নিজেদের বিনিয়োগের লাভক্ষতি বিবেচনায় তারা বাজার নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখতে পারেন।

একইসঙ্গে, ইনফ্লুয়েন্সারদের প্রকৃত উদ্দেশ্য জানাও সম্ভব নয়। কখনো তারা নিজেদের স্বার্থে কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রচারণা করতে পারেন। আবার, কখনো ডজকয়েনের মতো ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগের ঝুঁকিসমূহ ব্যখ্যা না করেই বিনিয়োগে উৎসাহিত করেন।

তবে, টিকটক ব্র্যান্ডেড বা পণ্য ও আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের প্রচারণামূলক কনটেন্টগুলো নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। কোনো নির্দিষ্ট ক্রিপ্টোকারেন্সি থেকে শুরু করে ডেবিট কার্ড ব্যবহারে প্ররোচিত করাও এখানে নিষিদ্ধ। তবে, এই নিষেধাজ্ঞা কতটুকু কার্যকর তা পরিষ্কার নয়।

তবে, নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারি বৃদ্ধি করা হলেও ফিনটক ভিডিও সরানোর পরিকল্পনা টিকটকের নেই। বরং, তরুণ প্রজন্মের বিনিয়োগ ও ব্যয় সংক্রান্ত ধ্যানধারণার স্বল্পতা দূর করতে ভূমিকা রাখতে পারে এসব ভিডিও।

তবে, এখন একটাই উপদেশ দেওয়া যেতে পারে। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অন্যের কথায় ভরসা না করে নিজেই গবেষণা করুন। হুজুগে বা ট্রেন্ডি বিষয়ের পিছে ছোটার আগে ঝুঁকিগুলো বিবেচনা করুন। ইনফ্লুয়েন্সারদের বক্তব্য দেখুন এবং শুনুন। তবে, পাশাপাশি একাধিক বিকল্প রাখুন।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.