পৃথিবীর তাপমাত্রা আরও ৩ ডিগ্রি বৃদ্ধি পেলে, শহরগুলোর অবস্থা কী হবে?

ফিচার

টিবিএস ডেস্ক
20 October, 2021, 11:10 am
Last modified: 20 October, 2021, 12:47 pm
সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির সংস্পর্শে থাকা শীর্ষ ১০টি অঞ্চলের মধ্যে ৮টিই রয়েছে এশিয়ায়। এই অঞ্চলে প্রায় ৬০০ মিলিয়ন মানুষের বাস।

অনুমানের চেয়েও দ্রুতগতিতে বেড়ে চলেছে পৃথিবীর তাপমাত্রা। ফলে বিশ্বজুড়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগের হার বাড়ছে।

ভয়াবহ খরা এবং মারাত্মক বন্যার পাশাপাশি আর্কটিক অঞ্চলের বরফ অস্বাভাবিক হারে গলছে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়তে থাকায় বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতাও। আগামী কয়েক দশক ধরে এই অবস্থা চলমান থাকবে বলে জানিয়েছে বিজ্ঞানীরা।

ক্লাইমেট সেন্ট্রালের একটি নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, সমুদ্র থেকে নিজেদের জনবহুল এলাকা সুরক্ষিত রাখতে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে হবে প্রায় ৫০টি প্রধান উপকূলীয় শহরকে।

প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির গবেষকদল এবং জার্মানির পসডাম ইনস্টিটিউট ফর ক্লাইমেট ইমপ্যাক্ট রিসার্চের সহযোগিতায় তৈরি এই গবেষণায় পৃথিবীর এক নতুন চিত্র ফুটে উঠেছে। যদি পৃথিবীর তাপমাত্রা আর ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পায়, তাহলে শহরগুলোর কী অবস্থা হবে তাই উঠে এসেছে এই গবেষণায়।

সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিতে ভিয়েতনামের টেম্পল অফ লিটারেচারের সম্ভাব্য পরিণতি; ছবি- ক্লাইমেট সেন্ট্রাল

এ বছরের আগস্টে জলবায়ু বিজ্ঞানীরা জানিয়েছিলেন, শিল্পায়নের আগে পৃথিবীর যে তাপমাত্রা ছিল সেই তুলনায় এখন গ্রহটি প্রায় ১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি উষ্ণ। বাড়তে থাকা এই তাপমাত্রা সর্বসাকল্যে ১.৫ ডিগ্রির নিচে থাকা উচিত বলে উল্লেখ করেন তারা। জলবায়ু সংকটের সবচেয়ে মারাত্মক প্রভাব এড়ানোর গুরুত্বপূর্ণ সীমা এটি।

কিন্তু, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমতে শুরু করলেও কয়েক দশকে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যাবে। যদি তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে, তাহলেও চরমভাবাপন্ন পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকেই যাবে।

এদিকে, ২০৫০ সালের মধ্যে গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছে বিভিন্ন দেশ। তাদের পরিকল্পনা সফল হলেও ২০৬০ থেকে ৭০ এর দশকের শুরুতে তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রি পর্যন্ত বাড়তে পারে। ফলে, কয়েক দশক ধরে বাড়বে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা।

সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিতে মুম্বাইয়ের ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ বাস্তু সংগ্রহালয় জাদুঘরের সম্ভাব্য পরিণতি; ছবি- ক্লাইমেট সেন্ট্রাল

গবেষকদের মতে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকবে এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল। বিশ্লেষণ অনুসারে, সমুদ্রপৃষ্ঠের দীর্ঘমেয়াদী উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা শীর্ষ পাঁচ দেশের মধ্যে রয়েছে চীন, ভারত, ভিয়েতনাম এবং ইন্দোনেশিয়া। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্ষুদ্র দ্বীপের দেশগুলো পুরোপুরি তলিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। এছাড়া, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির সংস্পর্শে থাকা শীর্ষ ১০টি অঞ্চলের মধ্যে ৮টি রয়েছে এশিয়ায়। এই অঞ্চলে প্রায় ৬০০ মিলিয়ন মানুষের বাস।

ক্লাইমেট সেন্ট্রালের প্রধান বিজ্ঞানী এবং প্রতিবেদনের প্রধান লেখক বেঞ্জামিন স্ট্রাউস বলেন, "আজকের পদক্ষেপ আমাদের আগামী দিনের পথ নির্ধারণ করবে।"

এদিকে, সেপ্টেম্বরে নেচার জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় বলা হয়, পৃথিবীর অবশিষ্ট তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রায় ৬০ শতাংশ এবং কয়লার ৯০ শতাংশ মজুদ ২০৫০ সালের মধ্যে ভূগর্ভেই রাখা উচিত। একই মাসে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে চীন জানায়, বিদেশে নতুন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ করবে না তারা।

তবে, পৃথিবীর তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়লে ২১০০ সাল পর্যন্ত উচ্চ-জোয়ারের নিচে থাকা ভূমিতে বসবাস করতে হবে চীনের প্রায় ৪৩ মিলিয়ন মানুষকে। এছাড়া, দেশটির ২০০ মিলিয়ন মানুষ সমুদ্রপৃষ্ঠের দীর্ঘমেয়াদী উচ্চতা বৃদ্ধির ঝুঁকিতে রয়েছে।

সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিতে বাকিংহাম প্যালেসের সম্ভাব্য পরিণতি; ছবি- ক্লাইমেট সেন্ট্রাল

ক্লাইমেট সেন্ট্রালের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমলেও উচ্চ জোয়ারের ফলে প্রভাবিত হবে ৩৮৫ মিলিয়ন মানুষ। যদি উষ্ণায়ন ১.৫ ডিগ্রির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে, তাহলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ৫১০ মিলিয়ন মানুষের বাসযোগ্য ভূমিকে প্রভাবিত করবে। কিন্তু, যদি তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রি ছাড়িয়ে যায়, তাহলে প্রভাবিত হবে ৮০০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ।

এদিকে, আগামী নভেম্বরে আয়োজিত হতে যাচ্ছে কপ-২৬ জলবায়ু সম্মেলন। স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে জলবায়ু বিষয়ক আলোচনায় বসবেন বিশ্ব নেতারা। গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনকে আরও সীমিত করার পাশাপাশি জলবায়ু সংকটের প্রভাবের সাথে খাপ খাইয়ে চলার বিষয়ে আলোচনা করবেন তারা। 

স্ট্রাউস বলেন, "জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে নিজেদের পদক্ষেপের মাধ্যমে বিশ্বনেতারা মানুষের ভবিষ্যতকে সাহায্য করা বা এর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করার একটি সুযোগ পাচ্ছেন। গ্লাসগোতে জলবায়ু আলোচনার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে আমাদের এই গবেষণা এবং এর ফলাফল।"
 

  • সূত্র: সিএনএন 

 
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.