পারিবারিক সোনা বিক্রি করে দিচ্ছেন কেন ভারতীয় তরুণীরা 

ফিচার

টিবিএস ডেস্ক
22 September, 2021, 07:25 pm
Last modified: 22 September, 2021, 08:42 pm
উপমহাদেশের পরিবারগুলো বিকল্প আর্থিক নিরাপত্তা হিসেবে যুগ যুগ ধরে গয়নার আকারে সোনা সংরক্ষণ করে আসছে। কিন্তু তরুণ প্রজন্মের সোনার গয়না আবেদন হারিয়েছে। কেন?

দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে প্রিয়জনদের সোনার গয়না উপহার দেওয়া একটা নিয়মিত ঘটনা। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে মায়েরা তাদের মেয়েদের জন্মদিন, বিয়ে ও বিভিন্ন বার্ষিকীতে নিজেদের সোনার গয়না উপহার দিয়ে আসছেন।

শিল্পগোষ্ঠী ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের হিসাব অনুসারে, ভারতের পরিবারগুলোর কাছে ২২ হাজার টন সোনা রয়েছে। যার মূল্য প্রায় ১.৫ ট্রিলিয়ন ডলার। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে পরিবারগুলোর সংগ্রহ। আবার নতুন প্রজন্মের অনেকের কাছেই এসব সোনার গয়না সেকেলে হয়ে গেছে। কিন্তু উপমহাদেশের পরিবারগুলো বিকল্প আর্থিক নিরাপত্তা হিসেবে যুগ যুগ ধরে গয়নার আকারে সোনা সংরক্ষণ করে আসছে। 

লন্ডনের ২৩ বছর বয়সি মার্কেটিং নির্বাহী রিয়া প্যাটেলের কাছে পারিবারিক প্রাচীন গয়না পরাটা অকল্পনীয় মনে হয়। তার দৃষ্টিতে, এত দামি গয়না রাখা স্রেফ লোকদেখানো। তবে করোনা মহামারির প্রথম লকডাউনের সময় রিয়া বুঝতে পারেন, উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া গয়না (প্রায় ৮০ হাজার ডলার মূল্যের) এই অর্থসঙ্কটের সময় তার বেশ কাজে আসবে। 

তাই রিয়া ও তার পরিবার এ গয়না বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু তাদের গয়নায় হলমার্ক ছিল না। হলমার্ক হচ্ছে সোনার বিশুদ্ধতার সপক্ষে দেওয়া সরকারি চিহ্ন। হলমার্ক না থাকায় সোনা বিক্রি করা কঠিন হয়ে গেল রিয়ার জন্য। শেষে তিনি পরিচিত এক স্বর্ণকারের মাধ্যমে গয়নাটি বিক্রি করেন। 

২৩ বছর বয়সি ব্যবসা-বিশ্লেষক রাজভি পোপাতও পারিবারিক সোনা হাতে পাওয়ার পর বেচে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি বলেন, 'আগের প্রজন্ম সোনাদানা পছন্দ করত, কিন্তু আমি এসব গয়না খুব একটা পরি না। এসব গয়নার বেশিরভাগই ভারী নেকলেস আর কানের দুল। তাই আমার মনে হয়, এসব পরে যাব কোথায়? এসব গয়না একেবারেই সেকেলে।'

তাই মায়ের কাছ থেকে পাওয়া একটা গয়না রেখে সংগ্রহের বাকি সব গহনা বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রাজভি।

তবে কারও কারও কাছে টাকার চেয়ে সোনাই বেশি নিরাপদ মনে হয়। মেডিকেল শিক্ষার্থী সাঙ্কাভি অরুলারুরান (২৩) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফকে বলেন, তিনি তার পারিবারিক সোনা কখনোই বিক্রি করবেন না। যদিও এসব গয়নাও তিনি পরবেন না।

তিনি বলেন, 'আমার পরিবারে সোনা উপহার দেওয়ার চল আছে, কারণ এর মূল্য কখনোই কমবে না। পরিবারের ছেলেমেয়েরা যদি বিপদে পড়ে, তাহলে এসব গয়না তাদের কাজে আসবে।'

আফগান বংশোদ্ভূত এনিলা আনসারি বলেন, এশিয়ার পরিবারগুলোতে সোনা একইসাথে একটা ঐতিহ্য ও বিনিয়োগ। 

কিন্তু বর্তমান প্রজন্মের কাছে এসব জমকালো সোনার গয়না রাখা স্রেফ লোকদেখানো ব্যাপার মনে হয়। তাদের কাছে, এসব 'সেকেলে' গয়না আবেদন হারিয়েছে। বর্তমান প্রজন্মের কাছে এসব সোনা রেখে দেওয়ার চাইতে বিক্রি করে নগদ অর্থ প্রাপ্তিটাই বেশি অর্থবহ মনে হয়। তাছাড়া মহামারির ধাক্কাও তাদের পারিবারিক সোনা বিক্রি করে দেওয়ার একটা অন্যতম কারণ। মহামারিকালে অনেক তরুণ-তরুণী চাকরি হারিয়েছেন, ব্যবসায় ধস নেমেছে অনেকের। এ কারণে টিকে থাকার জন্যও অনেক তরুণী এখন পারিবারিক সোনা বিক্রি করে দিচ্ছেন।


  • সূত্র: দ্য টেলিগ্রাফ

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.