নিজের রেস্তোরাঁয় কফি বানাতেন মেয়র মহিউদ্দিনের ছেলে

ফিচার

03 October, 2021, 01:50 pm
Last modified: 03 October, 2021, 03:11 pm
'বিদেশে পড়াশোনা করে আমি রেস্তোরাঁ ব্যবসায় নামি- বাবা এটি পছন্দ করতেন না। জানিয়ে দেওয়া হয়, বাসা থেকে কোনো পয়সা-কড়ি দেওয়া হবে না।'

চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর কনিষ্ট সন্তান বোরহানুল হাসান চৌধুরী বেড়ে উঠেছেন জমজমাট পরিবেশে। রাজনৈতিক পরিবারের এই সন্তান পরিবার ছেড়ে যুক্তরাজ্যে উচ্চশিক্ষা নিতে গিয়ে অনেকটা একাকিত্বে ভুগতে থাকেন। সময় কাটাতে স্থানীয় রেস্তোরাঁয় পার্ট-টাইম চাকরি নেন। সেখান থেকেই শুরু। বর্তমানে চট্টগ্রামের অন্যতম রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিতি রয়েছে বোরহানুলের।

তিন স্কুল বন্ধু ‍মিলে সিপি রেস্তোরাঁ শাখা খোলার মাধ্যমে নাম লিখিয়েছেন তিনি এই ব্যবসায়।

প্রয়াত রাজনীতিবিদ মহিউদ্দিনের বড় ছেলে বর্তমান শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী রাজনীতিতে মগ্ন। অপরদিকে ছোট ছেলে বোরহানুলে নীরবে ব্যবসায় মনোযোগ দিয়েছেন। সফলতার ধারাবাহিকতায় ক্যাফে মিলানো ও লিটল এশিয়া নামে চট্টগ্রামের জনপ্রিয় দুটি রেস্তোরাঁর উদ্যোক্তাও তিনি।

তবে বোরহানুলের এই পথচলা মসৃণ ছিল না। রাজনীতিবিদ পিতার সন্তান পরিচয়ের কারণে রেস্তোরাঁর জন্য স্থান ভাড়া পাননি। বিদেশ থেকে পড়াশোনা করে রেস্তোরাঁ ব্যবসায় শুরুর বিষয়টি পরিবার ভালোভাবে নেয়নি।

এই কঠিন পথচলার গল্পটি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে শুনিয়েছেন বোরহানুল হাসান চৌধুরী।

টিবিএস: খাবারের ব্যবসার ভাবনা কীভাবে পেলেন?

বোরহানুল হাসান চৌধুরী: আমাদের বাসায় সবসময় অনেক মানুষের খাবারের আয়োজন থাকত। তখন থেকেই এ ব্যাপারে আমার আগ্রহ ছিল। ২০০৫ সালের বিদেশে পড়তে গিয়েছিলাম। সময় কাটাতে রেস্তোরাঁয় পার্ট-টাইম চাকরি নিয়েছিলাম। ওই সময় আমাকে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। দেশে ফিরে ঢাকায় মাস্টার্স করি।

টিবিএস: ব্যবসার শুরু কীভাবে?

বোরহানুল: চট্টগ্রামে বসে কফি খাওয়ার জন্য ভালো একটি জায়গার অভাব অনুভব করি। ২০১১ সালে আমি ও আমার দুই বন্ধু মাহমুদুর রেজা ও ইফাস খান মিলে নগরীর প্রবত্তক মোড়ে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের নিচতলায় ঢাকার জনপ্রিয় ব্র্যান্ড সিপির শাখা খুলে। পরে ২০১৩ সালে ক্যাফে মিলানো এবং লিটল এশিয়া প্রতিষ্ঠা করি।  

টিবিএস: শুরুর দিকে চ্যালেঞ্জ কেমন ছিল?

বোরহানুল: শুরুটা অনেক চ্যালেঞ্জিং ছিল। রেস্তোরাঁর জন্য অনেক স্থানে গিয়েও জায়গা মিলেনি। মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে বলে অনেকে ভাড়া দেয়নি- যদি ঠিকভাবে ভাড়া পরিশোধ না করি অথবা ঝামেলা করি! পরে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের নিচতলায় স্টোররুমের পরিত্যক্ত স্থানটির জন্য আবেদন করি। এই কারণে আমার বাবা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভায় অনেকদিন অংশ নেননি, যদি মানুষ প্রশ্ন তুলে। ১০ মাস পর স্থানটির আবেদন গৃহীত হয়, তবে কঠিন শর্তে। পাঁচদিনের মধ্যে সালামির টাকা দিতে হবে।

বিদেশে পড়াশোনা করে আমি রেস্তোরাঁ ব্যবসায় নামি- বাবা এটি পছন্দ করতেন না। জানিয়ে দেওয়া হয়, বাসা থেকে কোনো পয়সা-কড়ি দেওয়া হবে না। পরে আমার বোনের এফডিআর সিকিউরিটি হিসেবে রেখে ব্যবসায় শুরু করি।

টিবিএস: প্রতিষ্ঠান পারিচালনায় আপনার ভূমিকা কী ছিল?

বোরহানুল: সিপি থেকে আমাকে চিকেন ভাজাসহ প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। শুরুর দিকে আমি নিজেই ভাজতাম। এরপর ২০১৩ সালে ক্যাফে মিলানো শুরু করি। তখন ৫ লাখ টাকা দিয়ে কফির মেশিন কিনি। চট্টগ্রামে আমরাই প্রথম অথেনটিক কফি চালু করি। শেপ বা কফি বারেস্তার বেতন নিয়ে আমাদের কোনো ধারণা ছিল না। তাই লোকবল পাওয়াও কঠিন ছিল। প্রথম তিন হাজার কাপ কফি আমি হাতে বানিয়েছে।

টিবিএস: নতুন কিছু শুরু করতে গিয়ে কী ধরনের চ্যালেঞ্জ ছিল?

বোরহানুল: কফির স্বাদ যে তিতা হয়, চট্টগ্রামের মানুষকে এটি বোঝানো অনেক কঠিন ছিল! ১০ দিনে ৫০ কেজি চিনি শেষ হয়ে গিয়েছিল। আস্তে আস্তে মানুষ অভ্যস্ত হয়েছেন। কেনিয়া থেকে কফির বিন এসে ঢাকায় রোস্ট করি। দেশের বাইরে থেকে রোস্ট করা কফির পাউডার দিয়ে বানানো কফিতে আসল স্বাদ পাওয়া যায় না।

টিবিএস: করোনা পরিস্থিতিতে ব্যবসায় কেমন গেল? 

বোরহানুল: মহামারির প্রথমদিকে যখন হোম ডেলিভারি সার্ভিস শুরু হয়, তখন অনেক কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হয়েছে। একবার লকডাউন, পরে সব খুলে দেওয়া, পরে আবার লকডাউন; এসব পরিস্থিতি আমাদের নতুন করে অনেক কিছু শিখিয়েছে। আবারও যদি লকডাউন আসে, তবে আমরা প্রস্তুত। এই করোনায় আমরা একজন কর্মচারীও ছাটাই করিনি। আমাদের দুই প্রতিষ্ঠানে করোনার আগেও ২২১ জন ছিলেন, এখনো তারা আছেন।

টিবিএস: সফলতা বিষয়ে আপনার চিন্তা কী?

বোরহানুল: বিদেশে পড়াশোনা করতে গিয়ে শিখেছি, কোনো কাজকে ছোট করে দেখতে নেই। সেখানে পড়াশোনা অনেক বাস্তবসম্মত। বিদেশের শিক্ষা এখানে কাজে লেগেছে। ভবন সংস্কারের কারণে ক্যাফে মিলানো যখন সাময়িক বন্ধ ছিল, তখন আমরা গ্রাহকদের ভালোবাসা বুঝেছি। প্রায় পাঁচ হাজার গ্রাহকের ম্যাসেজ পেয়েছি। মানুষ ক্যাফে মিলানোকে মিস করেছেন। আমরা চট্টগ্রামে কাস্টমার বেইজড তৈরি করতে পেরেছি। এটাই আমাদের সফলতা।

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.