দৈনিক ৮ ঘণ্টার বেশি বসে থাকলে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে ৭ গুণ 

ফিচার

টিবিএস ডেস্ক
24 August, 2021, 01:45 pm
Last modified: 24 August, 2021, 01:53 pm
স্ট্রোক নিয়ে আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের গবেষণায় এ তথ্য উল্লেখ করা হয়।

দিনের বেশিরভাগ সময় বসে থাকা ৬০ বছরের কম বয়সী প্রাপ্তবয়স্কদের স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি থাকে বলে নতুন এক গবেষণায় উঠে এসেছে। এসকল লোকের তুলনায় শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকা মানুষের স্ট্রোকের ঝুঁকি কম বলেও উল্লেখ করা হয় গবেষণাটিতে।

যেসকল ব্যক্তি দৈনিক চার ঘণ্টারও কম সময় ধরে বসে থাকেন এবং প্রতিদিন অন্তত ১০ মিনিট ব্যায়াম করেন, তাদের চেয়ে দৈনিক আট ঘন্টা বা তার বেশি সময় ধরে বসে থাকা এবং শারীরিকভাবে সক্রিয় না থাকা ব্যক্তিদের স্ট্রোকের ঝুঁকি সাতগুণ বেশি। স্ট্রোক নিয়ে আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের এক গবেষণায় এসকল তথ্য উল্লেখ করা হয়।

গবেষকেরা তাদের এ বিশ্লেষণে কানাডিয়ান কমিউনিটি হেলথ সার্ভে থেকে ১ লাখ ৪৩ হাজার প্রাপ্তবয়স্ক লোকের স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্য ব্যবহার করেছেন। গত ৯ বছরের মধ্যে স্ট্রোকের কোনো ইতিহাস নেই এরকম ৪০ বছর বা এর বেশি বয়সীদের অনুসরণ করেছিলেন তারা। 

এ বিষয়ে কানাডার অন্টারিওতে ম্যাকমাস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল স্কলার এবং গবেষণার প্রধান ডা. রায়েদ জন্ডি বলেন, "একজন মানুষ দীর্ঘক্ষণ বসে থাকলে কিংবা সক্রিয় না থাকলে তার দেহের গ্লুকোজ, লিপিডের বিপাক এবং রক্ত প্রবাহ বাধাপ্রাপ্ত হয়। এছাড়া এটি তার দেহে প্রদাহও বাড়িয়ে তোলে। সময়ের সাথে সাথে এগুলো রক্তনালীর উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে এবং হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে"।

এদিকে গবেষণার পুরো সময়কালে ২,৯৬৫ বার স্ট্রোকের ঘটনা ঘটে, এবং এর মধ্যে ৯০ শতাংশই ছিল এসকেমিক স্ট্রোক। জন্ডি বলেন, এগুলো হল সবচেয়ে সাধারণ ধরণের স্ট্রোক। মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহকারী কোনো ধমনী বন্ধ হওয়ার কারণে এ স্ট্রোক হয়ে থাকে। এ অবস্থায় যদি স্ট্রোকের দ্রুত চিকিৎসা না করা হয় তাহলে মস্তিষ্কের সে অংশের কোষগুলো অক্সিজেনের অভাবে মারা যেতে শুরু করে, বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

স্ট্রোকের লক্ষণ

মেরিল্যান্ডের বাল্টিমোর শহরে অবস্থিত জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির স্কুল অব মেডিসিনের অধ্যাপক কেরি স্টুয়ার্ট জানান, স্ট্রোকের একাধিক লক্ষণ থাকতে পারে। তবে তিনি উল্লেখিত গবেষণাকাজে জড়িত ছিলেন না।

তিনি বলেন যে, স্ট্রোকের সাধারণ উপসর্গগুলোর মধ্যে রয়েছে হাত, পা বা মুখে দুর্বলতা অনুভব করা, এবং বিশেষ করে দেহের একপাশে এ দুর্বলতা অনুভূত হওয়া। এছাড়াও, কথাবার্তায় অস্পষ্টতা, দেখতে বা শুনতে অসুবিধা হওয়াও স্ট্রোকের লক্ষণ। এমনকি, যদি আপনার হঠাৎ গুরুতর মাথাব্যথা হয় যা আগে কখনও ঘটেনি, তাহলে সেটিও স্ট্রোকের লক্ষণ হতে পারে বলে যোগ করেন স্টুয়ার্ট।

স্ট্রোকের সম্ভাবনা যেভাবে কমিয়ে আনা যায়

স্টুয়ার্ট বলেছেন, দৈনিক বসে থাকার সময় কমিয়ে শারীরিক কার্যকলাপের সময় বাড়ালে তা আপনার স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে পারে। এক্ষেত্রে, মানুষ বসে কাজ করার বদলে দাঁড়িয়ে কাজ করা শুরু করতে পারে, বা লিফটের পরিবর্তে সিঁড়ি ব্যবহারের মত কিছু পরিবর্তন আনতে পারে তাদের দৈনন্দিন রুটিনে।

এছাড়া, আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের মতে, প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে ১৫০ মিনিট মাঝারি মানের শারীরিক ব্যায়াম করা উচিত। জন্ডি বলেছিলেন যে, প্রাপ্তবয়স্কদের একটি নির্দিষ্ট সময় ধরে ব্যায়াম করা উচিত, এবং প্রতিবারে তা ১০ মিনিটেরও বেশি সময় ধরে করা যেতে পারে। তিনি বলেন, "যখন আপনি আপনার হৃদস্পন্দন বাড়ানোর জন্য যথেষ্ট পরিমাণে ব্যায়াম করছেন তখন তা মাঝারি তীব্রতার ব্যায়াম হিসেবে বিবেচিত হয়। দ্রুত হাঁটা বা বাইক চালানোর মত কাজ মাঝারি তীব্রতার ব্যায়াম"।  

এদিকে পূর্ববর্তী গবেষণায় দেখা গেছে যে, অ্যালকোহল সেবনসহ ১০টি সম্ভাব্য এবং পরিবর্তনযোগ্য ঝুঁকির ফলে ৯০ শতাংশ স্ট্রোক হয়ে থাকে। জন্ডি বলেছিলেন, "এসকল ঝুঁকি নিরাময় করা গেলে তত্ত্বগতভাবে ৯০ শতাংশ স্ট্রোক কমিয়ে আনা যাবে"।

স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে শুধুমাত্র বসে থাকার সময় কমিয়ে আনার চেয়ে অন্যান্য বিষয়ের উপরেও নজর দেওয়ার পরামর্শ দেন জন্ডি। তিনি বলেন, "পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ, ধূমপান বন্ধ, উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসের মত রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার পাশাপাশি শারীরিক কাজকর্মের উন্নতিও স্ট্রোকের ঝুঁকি হ্রাসের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।" 

  • সূত্র- সিএনএন

 
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.