ডুব: করোনাকালের শিল্পকর্ম নিয়ে অনলাইনে মিনিয়েচার আর্ট প্রজেক্ট

ফিচার

রুদ্র আরিফ
26 June, 2020, 04:40 pm
Last modified: 26 June, 2020, 05:10 pm
বৈশ্বিক মহামারির প্রকোপে বর্তমান পৃথিবীর মানুষের ডুব দিয়ে থাকা জীবনযাত্রা, তার প্রকৃতি এবং সেই প্রকৃতির জীববৈচিত্র্য প্রভৃতি বিষয়গুলো নিয়ে শিল্পীমনের উপলব্ধিকে শিল্পকর্মে রূপান্তরের নিমিত্তে এই প্রজেক্ট।

বাংলাদেশের নয় উদীয়মান শিল্পীর অংশগ্রহণে শুরু হয়েছে 'ডুব' শীর্ষক অনলাইনভিত্তিক মিনিয়েচার আর্ট প্রজেক্ট। বৈশ্বিক মহামারির প্রকোপে বর্তমান পৃথিবীর মানুষের ডুব দিয়ে থাকা জীবনযাত্রা, তার প্রকৃতি এবং সেই প্রকৃতির জীববৈচিত্র্য প্রভৃতি বিষয়গুলো নিয়ে শিল্পীমনের উপলব্ধিকে শিল্পকর্মে রূপান্তরের নিমিত্তে এই প্রজেক্ট।

'ডুব'-এর ইনিশিয়েটর হিসেবে রয়েছেন তরুণ শিল্পী আজিজি ফাওমি খান। এটি তার প্রথম প্রজেক্ট কিউরেশন। প্রজেক্টে করা শিল্পকর্মগুলো নিয়ে জুন ২৫ থেকে জুলাই ৩ পর্যন্ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে চলছে প্রদর্শনীটি।

আজিজি ফাওমি খান জানান, 'ডুব'-এর গল্পটা শুরু জুন মাসের প্রথম দিকে, বিশ্ব পরিবেশ দিবসের ঠিক আগ মুহূর্তে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কয়েক শিল্পীর আড্ডার মধ্য দিয়ে। আড্ডার বিষয় ছিল- পৃথিবী, যেটি ৮.৭ বিলিয়ন জীবের আবাসভূমি। আর সেই জীব সম্প্রদায়ের প্রায় ১ বিলিয়ন প্রজাতির বিলুপ্তির কারণ আমরা- মানুষেরা। আজ ২০২০ সালে পৌঁছে, অল্প সময়ের জন্যে হলেও ঠিক একই রকমের একটা ভয় আমাদের মাঝেও ভর করছে।

'অল্টারনেটিভ রিয়্যালিটি'। শিল্পী: নুসরাত জাহান তিতলী

আজিজি ফাওমি খান বলেন, "প্রকৃতিগতভাবে সামাজিক প্রাণী মানুষের কাছে 'সামাজিক দূরত্ব', 'কোয়ারেন্টিন' বা 'সঙ্গরোধ' –এর মত শব্দগুলো এখন নৈমিত্তিক ব্যবহার্যে পরিণত হয়েছে। স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় হঠাৎ করে অনাকাঙ্ক্ষিত ছুটি শুধু যে হতাশা বা বিষাদের উদ্রেক ঘটিয়েছে এমন নয়, জীবন সম্পর্কে কিছু নতুন কিছু উপলব্ধিরও জন্ম দিয়েছে। কেউ কেউ বাধ্য হয়েছেন শহর ছেঁড়ে আবার নিজের গাঁয়ে ফিরে যেতে। কেউ কেউ নিজের বারান্দা বা ছাদটাকেই প্রমোদের জায়গা হিসেবে আবিষ্কার করেছেন। পালটে যাওয়া নিত্যদিনের কাজের তালিকা, স্বাভাবিক গতিময় জীবনের অনুপস্থিতি এবং প্রকৃতি ও তার মাহাত্ম্যকে পুনরাবিষ্কার - অংশগ্রহণকারী শিল্পীদের বিশেষভাবে নাড়া দিয়েছে।"

এই আর্ট প্রজেক্টে শিল্পীরা নিজেরদের উপলব্ধ ভাবনাগুলোকে স্ব স্ব পরিপ্রেক্ষিতে তুলে ধরেছেন। কিছু শিল্পী কাজ করেছেন সামাজিক ও পারিপার্শ্বিক অসঙ্গতিগুলো নিয়ে, শিল্পের মাধ্যম হিসেবে এসেছে বর্তমান সময়ের একটি মহামূল্যবান বস্তু- সাবান। আবার কিছু শিল্পীর কাজে ব্যক্ত হয়েছে প্রকৃতি ও শান্ত জীবনের সরলতার আশাবাদ। কোনো শিল্পী মননের আরও গভীরে ঢুকে ব্যাখ্যা করেছেন সত্তাকে।

কিউরেটর জানান, যেহেতু সবাই এখন নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থান করছেন, স্বাভাবিক সময়ের গ্যালারি ভিত্তিক শিল্পচর্চার সুযোগ কম, তাই মিনিয়েচারধর্মী কাজ বেছে নেওয়া হয়েছে প্রজেক্টের জন্যে। যেন প্রতিটি শিল্পী নিজেদের অবস্থানের থেকেই স্থানস্বল্পতার মধ্যেই কাজ করতে পারেন।

'ন্যাচার'। শিল্পী: সারা হোসাইন

'এখন আমরা আবার ধীরে ধীরে ওপরের দিকে মাথা তুলছি। এমন সময়ে এই আর্ট প্রজেক্ট আয়োজনের উদ্দেশ্য প্রকৃতি ও মানব জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা। যেন আমরা আরও পরিশীলিত ও সহানুভূতিশীল একটা পৃথিবীতে শ্বাস নিতে পারি', বলেন আজিজি ফাওমি খান।

এই প্রজেক্টে অংশগ্রহণকারী শিল্পীরা হলেন- সারা হোসাইন, অন্তরা মেহরুখ আজাদ, অনন্যা মেহপার আজাদ, নুসরাত জাহান তিতলী, সারা জাবীন, আরঝিনা আহসান, শিপ্রা রানী বিশ্বাস, তানিয়া রহমান রশ্নি ও শৈলী শ্রাবন্তী। তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বর্তমান ও সদ্য-সাবেক শিক্ষার্থী। এই নয় শিল্পীর ৩০টি চিত্রকর্ম প্রদর্শিত হবে এই অনলাইন এক্সিবিশনে।

'ইন অল ওয়েদার'। শিল্পী: অন্তরা মেহরুখ আজাদ

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.