ঠাণ্ডায় উপকার পাবেন যে খাদ্যাভ্যাস থেকে

ফিচার

টিবিএস ডেস্ক
12 January, 2021, 04:45 pm
Last modified: 12 January, 2021, 04:56 pm
ঠাণ্ডাজনিত রোগে সঠিক খাদ্য এবং পানীয়ের উপকারিতা যথাযথভাবে জানা থাকলে তা অনেক সময় প্রচলিত  ওষুধকেও হার মানায়।

কনকনে শীতে সর্দি-কাশি হওয়াটাই স্বাভাবিক। ঘরের ঠাণ্ডা মেঝেতে এক বেলা হাঁটলেই সর্দি লেগে যাচ্ছে। সেই ঠাণ্ডায় নাক বন্ধ হয়ে একেবারে একাকার।

এই ঠাণ্ডা, সর্দি, কাশি কিংবা জ্বরের মতো বিষয়গুলোতে আমরা ওষুধের দ্বারস্থ হতেই বেশি ভালোবাসি।তবে প্রাকৃতিক ওষুধের ব্যবহার জানা থাকলে ওষুধের ব্যবহার অনেকটাই কমিয়ে আনা যায়। আর তা হবে স্বাস্থ্যের পক্ষেও উপকারী। 

এমন কিছু খাদ্যাভ্যাস নিচে তুলে ধরা হলো:

হলুদ

ত্বকের যত্ন এবং খাদ্য পুষ্টিতে হলুদের উপকারিতার বিকল্প নেই। চোখ ধাঁধানো রঙের পাশাপাশি এর গুণাগুণও রয়েছে অনেক।

রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং দেহে এন্টিবডি তৈরি করতে হলুদ সাহায্য করে। তবে হলুদকে আমরা যতটা উপকারী ভাবি, এটি ততটা নয়। হলুদের ভেতর থাকা কারকিউমিনকে চিকিৎসকেরা অত্যন্ত উপকারী মনে করলেও, এই উপাদানকে গবেষকরা অস্থায়ী, প্রতিক্রিয়াশীল ও নন-বায়োঅ্যাভেলেবল বলে ব্যাখ্যা করেছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, কারকিউমিন হলো প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি কম্পাউন্ড। গর্ভবতী নারীদের জন্য এটি উপযোগী নয়।  কারকিউমিন ফ্যাটে দ্রবীভূত হয়। কাজেই ফ্যাট জাতীয় খাবারের সঙ্গে খেলে একে পুরোপুরি পাওয়া যায়। আরেকটি উপায় হলো, গোলমরিচ দিয়ে বেটে খাওয়া। কেননা, গোলমরিচে রয়েছে পিপারিন, যা কারমিউমিনের শোষণ প্রায় ২ হাজার শতাংশ বাড়িয়ে দেয়।

কালো গোল মরিচের গুঁড়ার সঙ্গে হলুদ মিশিয়ে খেলে এর উপকারিতা অনেকাংশে বেড়ে যায়।

শুকনো টার্ট চেরি

শুকনো টার্ট চেরিগুলিতে উচ্চ অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট থাকে, যা শ্বাসযন্ত্রের ঝুঁকি কমায় এবং রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এর ভেতরে প্রাকৃতিক মেলাটোনিন থাকায় স্বাস্থ্যকর ঘুমে সাহায্য করে।

আখরোট

অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি খাবারের মধ্যে আখরোট অন্যতম। এছাড়া, এতে রয়েছে বেশ কয়েকটি পুষ্টি। এর মধ্যে ভিটামিন-ই ও বি-৬, তামা এবং ফোলেট-সহ বিভিন্ন উপাদান মানুষের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সহায়তা করতে ভূমিকা রাখে। অনেকেই জানেন, মানসিক চাপ আমাদের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। গবেষণায় দেখা গেছে, মানসিক চাপ কমাতে আখরোট বেশ উপকারী।

অলিভ অয়েল

অলিভ অয়েল বা জলপাই তেল অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট  ডায়াবেটিস, স্থূলতা, রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস এবং প্রদাহজনক পেটের রোগের প্রতিষেধক। এর  অ্যান্টিব্যাকটিরিয়াল বৈশিষ্ট্য মানুষের শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

স্যুপ বা ব্রোথ

স্যুপ বা ব্রোথের গরম ধোঁয়া নাকের সর্দি দমাতে সহায়ক। ঠাণ্ডা লাগলে দেহের ওপরের শ্বাসনালীর মধ্যে প্রদাহ হয়। আর সেটি কমাতে স্যুপের  উপকারিতা পাওয়া যায়। এছাড়াও, স্যুপ বা ব্রোথ থেকে পাওয়া লবণ শরীরে পানি ধরে রাখতে সাহায্য করে।

গোল মরিচ

গোল মরিচ, মশলাদার মরিচ হালকা সর্দি ও নাক বন্ধ উপশম করতে সহায়তা করে। এতে থাকা ক্যাপসাইসিন কাশি দমনেও সহায়তা করে।

রসুন

অসুস্থতা থেকে রেহাই পেতে, সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে এবং ক্ষতের চিকিৎসায় প্রাচীন যুগ থেকেই রসুনের ব্যবহার চলে এসেছে। প্রতিদিনকার তরকারিতে ব্যবহার্য রসুন সর্দি ও কাশি কমাতে বেশ সহায়ক। শুধু যে বড়দের বেলায়, তা কিন্তু নয়; বরং রসুন ছোটদের ক্ষেত্রেও দারুণ কার্যকরী।

রসুনে থাকা অ্যান্টিসেপটিক গুণাবলী বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। শরীর থেকে হুট করে জ্বর কমাতে রসুনের বিকল্প নেই।

প্রতিদিন একটি রসুনের কোয়া খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। কাঁচা রসুন খাওয়ার মতো কষ্ট করতে হবে না। বরং তরকারি রান্না করার সময় একটি আস্ত রসুন দিয়ে দিন। ভাত খাওয়ার সময় সেই রসুন সবাই মিলে খাওয়া যেতে পারে। কিংবা রসুনের তেল বা গার্লিক অয়েল ব্যবহার করা যেতে পারে।

মধু

মধুতে থাকা অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ও ইনফ্ল্যামাটরি উপাদান শিশুদের কাশি কমাতে সাহায্য করে। নিয়ম মেনে মধু খেলে খুব সহজে সর্দি-কাশি ভালো হয়।

অন্যদিকে, যষ্টিমধু ভেতর থেকে কফ বের করার পাশাপাশি গলা পরিষ্কার রাখে।

আদা

মধুর মতো আদাতেও রয়েছে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ও ইনফ্ল্যামাটরি উপাদান। সর্দি-কাশিতে আদা-পানির ভূমিকা সবচেয়ে বেশি কার্যকর। অন্যভাবে বলা যায়, গলার খুসখুসে ভাব দূর করতে আদা জাদুকরি ভূমিকা রাখে। 

আদা টুকরো করে কেটে পানিতে এক চিমটির সমান লবণ মিশিয়ে ফুটিয়ে নিতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত পানি লাল না হয়ে আসে, ততক্ষণ পর্যন্ত ফুটাতে হবে। তারপর পানিটি কুসুম গরম থাকা অবস্থাতেই পান করতে হবে। দিনে কমপক্ষে তিনবার এভাবে আদা-পানি পান করতে হবে। প্রয়োজনে আরও বেশি করা যেতে পারে; তবে প্রতিবার লবণ যোগ না করাই ভালো।

লেবু

হালকা গরম পানিতে মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে পান করলে ঠাণ্ডা-সর্দি দূর হয়। লেবুর ভিটামিন সি ও মধুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট মিলে এই সুরক্ষা দেয়।

ধুলাবালি ও ঠাণ্ডায় শ্বাসনালি সংকুচিত হয়ে যায়। ফলে শ্বাসকষ্ট হয়। গরম আদা-চা বা লেবু-চা এই কষ্ট দূর এবং জমে থাকা কফ তরল করে।

ডালিমের জুস

সর্দি-কাশি থেকে রক্ষা পেতে আমরা ডালিমের রসকে ওষুধ হিসাবে ব্যবহার করতে পারি। ঠাণ্ডায় খুব বেশি কাবু হয়ে গেলে ডালিমের রস খেয়ে দেখলে খুবই উপকার পাওয়া যায়। 

ডালিমে রয়েছে পটাশিয়াম ও ফাইবার, যা ইমিউন সিস্টেম মজবুত রাখতে সাহায্য করে। ডালিমের রস শুধু জ্বর নিয়ন্ত্রণই করে না; বরং এটি হ্রাস করার মতো পুষ্টি সরবরাহ করে।

ডালিম ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ ধ্বংস করে প্রদাহ কমায় বলে পরিচিত। জৈব রসায়ন এনজাইম প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।

ঠাণ্ডাজনিত রোগে সঠিক খাদ্য এবং পানীয়ের উপকারিতা যথাযথভাবে জানা থাকলে তা অনেক সময় প্রচলিত  ওষুধকেও হার মানায়।

  • সূত্র: হেলথ ডটকম
    ছবি: সংগৃহীত

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.