জাফরান: কাশ্মীরের ফুল থেকে মূল্যবান মশলা হয়ে ওঠার গল্প

ফিচার

লেখা ও ছবি: দার ইয়াসিন
19 November, 2020, 05:25 pm
Last modified: 19 November, 2020, 05:31 pm
প্রায় দেড় লাখ ফুল থেকে ১ কেজি পরিমাণ জাফরান মশলা পাওয়া যায়, যার দাম তিন থেকে চার হাজার মার্কিন ডলার বা প্রায় ২ লাখ ৫৫ হাজার থেকে ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা।

নিচু পাহাড়ের কোল ঘেঁষে শুয়ে রয়েছে আদিগন্ত ছোট ছোট উর্বর জমিন। তার বুকে ঢেউ খেলে যাচ্ছে যেন এক সমুদ্র বেগুনি ফুল। এই ফুলের নাম জাফরান। এই ফুল থেকেই তৈরি হয় পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান মশলাগুলোর একটি। সেই মশলার নামও জাফরান।

মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ ওই অঞ্চলের পরিবারগুলো সারা বছর খেটে জাফরানের ফসল ফলায়। শরতের শেষদিকে, বছরে মাত্র দুই সপ্তাহ ফুল ফোটে জাফরানের। আর তখন নারী, পুরুষ ও শিশুরা সেই ফুল তুলে নিজেদের ঝুড়িতে রাখতে কাটায় ব্যস্ত সময়।

৩১ অক্টোবর ২০২০; ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের শ্রীনগরের দক্ষিণাঞ্চল খ্রিও'তে চাষ করা জমিন থেকে জাফরান ফুল তুলছেন এক কৃষক

এরপর তারা বেগুনি পাপড়িগুলো বেছে আলাদা করে। প্রতিটি ফুল থেকে পাওয়া যায় তিনটি করে ছোট্ট পরাগদানি।  তারপর সেগুলো রোদে শুকিয়ে তৈরি করা হয় মূল্যবান জাফরান মশলা।

দুনিয়াজুড়ে খাদ্য থেকে শুরু করে ওষুধ ও কসমেটিকস উৎপাদনে রয়েছে জাফরানের ব্যবহার। প্রায় দেড় লাখ ফুল থেকে ১ কেজি পরিমাণ জাফরান মশলা পাওয়া যায়, যার দাম তিন থেকে চার হাজার মার্কিন ডলার বা প্রায় ২ লাখ ৫৫ হাজার থেকে ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা।

কাশ্মীরে এই মশলাকে গর্বের উৎস হিসেবে গণ্য করা হয়। এ অঞ্চলের অর্থনীতি ও সংস্কৃতিতে শত-শত বছর ধরে জ্বালানী যোগাচ্ছে এটি। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, সেচ প্রকল্প সুবিধার ঘাটতি এবং কমদামি ইরানি জাফরান আমদানির কারণে এ অঞ্চলে জাফরান চাষ কঠিন হয়ে উঠেছে।

চলছে ফুল সংগ্রহ
ঝুড়ি ভর্তি ফুল নিয়ে জমিনে হাঁটছেন গুলশান বানু নামে এক কৃষাণী
পরিবারের সবাই মিলে ফুল তোলায় ব্যস্ত
ছোটবেলা থেকেই শিশুরা অভ্যস্ত হয়ে ওঠে এই চর্চায়

তাছাড়া রাজনৈতিক অস্থিরতাও এই পণ্যের উৎপাদন ও রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। দশকের পর দশক ধরে কাশ্মীরে ভারতের ভূমিকার বিরুদ্ধে একটি কথিত 'বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন' চলছে, আর তা এই ভূখণ্ডকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দুই ভাগে বিভক্ত করে দিয়েছে। উভয় দেশই এই ভূখণ্ডের অনড় দাবিদার। সেই সংঘাতে এ পর্যন্ত অন্তত ১০ হাজার বেসামরিক নাগরিক, বিদ্রোহী ও সরকারি বাহিনী সদস্যের প্রাণ গেছে।

তুলে আনা ফুল জড়ো করছেন কৃষাণী তাসলিমা বানু
বছরে মাত্র ২ সপ্তাহ ফুটে জাফরান ফুল
কাশ্মীরি কৃষক মোহাম্মদ রমজানের [মাঝখানে] পরিবারের ব্যস্ততা। ফুল থেকে পরাগদানি আলাদা করছেন পরিবারের সবাই মিলে

জাফরান চাষাবাদ ও রপ্তানি চাঙ্গা করতে এবং এটির উৎপাদন ও গুণগত মান বাড়াতে কাশ্মীর কর্তৃপক্ষ একটি হাই-টেক স্পাইস পার্ক গড়ে তুলেছে। তবে এই আধুনিক প্রযুক্তিতে উপকার হয়েছে খুব কম কৃষকেরই। কেননা, জাফরান তোলা ও শুকানোর কাজে বেশিরভাগ কৃষকই এখনো পুরনো টেকনিকগুলো ব্যবহার করেন।

জাফরান

কাশ্মীরের বেশিরভাগ জাফরানই উৎপন্ন হয় ওই অঞ্চলের প্রধান শহর শ্রীনগর থেকে দক্ষিণ দিকের একটি ছোট্ট শহর পামপুরে।

কাশ্মীরে মশলাটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কেহওয়া নামে এক বিশেষ ধরনের চায়ে ব্যবহার হয়। ৩০ পদেরও বেশি খাবারে সমৃদ্ধ ওয়াজওয়ান নামে কাশ্মীরি ঐতিহ্যবাহী বিয়ের খাবারেও জাফরানের ব্যাপক কদর।

শ্রীনগরের দক্ষিণাঞ্চলের লেথপুর এলাকায় নিজের শোরুমে থাকা জাফরানের বাক্স দেখাচ্ছেন কাশ্মীরি দোকানি শাবেহ ফারুক
শ্রীনগরের দক্ষিণাঞ্চল দুসু’তে অবস্থিত ইন্ডিয়ান ইন্টারন্যাশনাল কাশ্মীর জাফরান ট্রেড সেন্টারের কর্মীরা মেশিনের মাধ্যমে শুকানোর আগে বেছে নিচ্ছেন জাফরানের পরাগদানি
ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল জাফরান ট্রেড সেন্টারে শুকানোর জন্য জড়ো করে রাখা পরাগদানি
ফুল থেকে পরাগদানি আলাদা করার কাজে ব্যস্ত এক কৃষক পরিবার
ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল কাশ্মীর জাফরান ট্রেড সেন্টারে কাশ্মীরি কৃষক আবিদ আহমেদকে [বাঁয়ে] পরগদানি আলাদার কাজে সাহায্য করছেন তার ভাই মুনিব আহমেদ
বস্তা ভর্তি ফুল নিয়ে বাড়ি ফিরছেন তাসলিমা বানু
  • এপি থেকে অনুবাদ: রুদ্র আরিফ

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.