গৌরমতি আমের মৌসুম শুরু

ফিচার

30 August, 2020, 02:00 pm
Last modified: 30 August, 2020, 05:38 pm
গৌরমতি আমের প্রধান বৈশিষ্ট্য- এটি ব্যাগিং পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করে উৎপাদন করতে হয়। ফলে আমগুলো বিষ ও ভাইরাসমুক্ত থাকে। পোকামাকড় আক্রমণ করতে পারে না যাতে নষ্টও হয় কম। মূলত ১৫ আগষ্ট থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর এই আমের মৌসুম।

অন্যসব গাছের আম শেষ, বাজারেও আমের দেখা নেই তেমন। ঠিক এই সময়ে শুরু হয়েছে গৌরমতি আমের মৌসুম। এই জাতের আম চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন দিনাজপুরের বীরগঞ্জের অধ্যাপক ওসমান গনি। 

শুধু আমের ফলনই নয়, এই জাতের আমের কলম চারা তৈরী কম দামে কৃষকদের মাঝে বিক্রি করে জাতটি সম্প্রসারণে ভুমিকা রাখছেন। এতে তিনি একদিকে যেমন আমে লাভবান হচ্ছেন অপরদিকে চারা বিক্রি করেও বাড়তি উপার্জন হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, গৌরমতি আমের প্রধান বৈশিষ্ট যে এটি ব্যাগিং পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করে উৎপাদন করতে হয়। ফলে আমগুলো বিষ ও ভাইরাসমুক্ত থাকে। পোকামাকড় আক্রমণ করতে পারে না যাতে নষ্টও হয় কম। মূলত ১৫ আগষ্ট থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর এই আমের মৌসুম।

আগ্রহ ও চাষাবাদ 

বগুড়া সরকারী আজিযুল হক কলেজের অবসরপ্রাপ্ত ইংরেজী বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ওসমান গনি। আগে চাকরি করতেন রংপুর কারমাইকেল কলেজে। সেখানেই তিনি এক সেনা কর্মকর্তার বাগান ও ফলন দেখে এটি চাষ করার মনস্থির করেন। 

প্রথমে তিনি দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ পলাশবাড়ী করবুলা ডাঙ্গা নামক স্থানে প্রাথমিকভাবে আম ও লিচুর বাগান করেন। তবে তার স্বপ্ন ছিল বিষমুক্ত ফল উপহার দেওয়া। সেই বাগানে প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে রাজশাহী থেকে ৪০০ টাকা পিস দরে ১০০টি গৌরমতি আমের চারা কিনে রোপন করেন। 

পরে গাছগুলো একটু বড় হলে সেই গাছের ডাল থেকেই আবার কলম চারা তৈরী করে মোট এক একর ২০ শতক জমিতে ২৪০টি আমের চারা রোপন করে বৃহৎ বাগান তৈরী করেন। এখন তার উদ্দেশ্য কৃষকদের মাঝে এই জাতটি সম্প্রসারণ করা। বর্তমানে তিনি পরিবার নিয়ে বগুড়ায় বসবাস করেন। তবে তার গ্রামের বাড়ি দিনাজপুরের সদর উপজেলার রানীগঞ্জ এলাকায়। 

ফলন, বিক্রি ও সম্প্রসারণ

গত বছর আম গাছগুলোতে মুকুল আসে এবং গাছগুলো থেকে কিছু আম পাওয়া যায়। তবে প্রথমবার হওয়ায় উৎপাদন তেমন হয়নি এবং পরিচর্যারও অভাব ছিল। তবে এবার আমের মুকুল আসার পর থেকেই পরিচর্যা শুরু হয়। 

চলতি বছরে আমগাছগুলোতে মুকুল আসলে রাজশাহীর চাপাই এগ্রো থেকে তিন টাকা ৫০ পয়সা দরে প্যাকেট কিনে ১৭ হাজার আম ব্যাগিং করেন। এবারে ওই বাগানের আম সাত লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন তিনি। তার আশা আগামী বছরে প্রায় ১০-১৫ লাখ টাকার আম বিক্রি করবেন।

আমের মাতৃগাছ থেকে প্রায় ২১ হাজার কলম চারা তৈরী করা হয়েছে যেগুলো বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা পিস হিসেবে। অথচ এই আমের চারার মূল্য বাজারে প্রতি পিস তিন থেকে সাড়ে ৩শ' টাকা। এই আমের জাতটি সম্প্রসারণ করার জন্য নিজ উদ্যোগে লিফলেট তৈরী করেছেন এবং সেগুলো জেলা-উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বিতরণ করছেন। তার স্বপ্ন এই জাতের আমের বাগান করে কৃষকরা আরও লাভবান হবেন এবং কৃষি অর্থনীতিতে আরও বেশি ভুমিকা রাখবেন। 

আমের মূল্য 

মৌসুমের সময়ে বিভিন্ন জাতের আম পাওয়া যায় ৫০-১০০ টাকা কেজির মধ্যে। তবে বর্তমানে আমের মৌসুম শেষ হওয়ায় বাজারে আশ্বিনী জাতের আম বিক্রি হচ্ছে ৮০-১৫০ টাকা কেজি ও ফজলী জাতের বিক্রি হচ্ছে ২০০-৩০০ টাকা কেজি দরে। ঠিক এই সময়ই বাজারে উঠছে গৌরমতি আম। বর্তমানে এই আমের কেজি ২৫০-৩০০ টাকা। 

ওসমান গনি জানান, এখন তার স্বপ্ন আমের এই জাতটি সম্প্রসারিত করা। আর এজন্য বাগানের মাতৃগাছ থেকে কলম চারা তৈরী করে স্বল্পমূল্যে বিক্রি করা হয়। তিনি বলেন, এই আমটির ফলন ও চাহিদা এতটাই যে, দুই বছরের উৎপাদনের অর্থ দিয়ে বাগানের সমপরিমাণ জমি কেনা যাবে। 

বাগানটি দেখাশুনা করছেন ওই শিক্ষকের ফুফাতো ভাই গোলাম মোস্তফা। তিনি জানান, নতুন জাতের আম হওয়ায় সার্বক্ষনিক কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ নিয়ে পরিচর্যা করা হয়। এ বছরে আম উৎপাদন করতে প্রায় দেড় লাখ টাকা খরচ হয়েছে। আর উৎপাদিত আম বিক্রি করা হয়েছে সাত লাখ টাকায়। এই আম মৌসুমের শেষে পাকতে শুরু করে তাই দাম ভাল পাওয়া যায়। 

এই বাগানের আমগুলো কিনে নিয়েছেন ঢাকার ফল ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, যেহেতু আমটি মৌসুমের শেষে উঠছে এবং নতুন জাত তাই এর চাহিদা রয়েছে। এই আম সরাসরি ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে সেখানে কেজি প্রতি সাড়ে ৩শ' থেকে ৪শ' টাকা বিক্রি হচ্ছে। 

বীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু রেজা আসাদুজ্জামান বলেন, আমের মৌসুম যখন শেষ তখন এই জাতের আম পাকতে শুরু করে। তাই স্বভাবতই চাহিদা ও দাম ভাল পাওয়া যায়। আর ব্যাগিং পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করায় বিষমুক্ত ও ভাইরাসমুক্ত থাকে এবং নষ্টও হয় কম। অবসরপ্রাপ্ত ওই শিক্ষক উপজেলার মধ্যে প্রথম এই জাতটির বাগান করেছেন। এবারে তার ফলনও ভাল হয়েছে এবং দামও ভাল পেয়েছেন। জাতটি সম্প্রসারনে কৃষি বিভাগ কাজ করছে এবং এক্ষেত্রে যে কোন ধরনের সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। 

দিনাজপুর হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ প্রদীপ কুমার গুহ বলেন, দিনাজপুরে গৌরমতি আম চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে যারা বাগান করছেন তারা এই জাতের আমের চারা কিনছেন। 

তিনি বলেন, ২০১৭ সাল থেকে দিনাজপুরে গৌরমতি আমের বাগান করা শুরু হয়েছে। প্রতি একরে এই জাতের আমের ২৫০-৩০০টি চারা রোপন করা যায়।

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.