গৃহপরিচারিকা ও গৃহস্থালি কাজ; দুটোই মিলছে অ্যাপসে

ফিচার

টিবিএস রিপোর্ট
30 December, 2019, 09:45 pm
Last modified: 30 December, 2019, 09:49 pm
‘হ্যালোটাস্ক’ নামে একটি অ্যাপসভিত্তিক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে নিয়ে এসেছে গৃহস্থালী সেবার নতুন এই মাধ্যম।

রায়েরবাজারের শাহ আলি বস্তির বাসিন্দা শামসুন্নাহারের মোবাইল ফোনের অ্যাপসে একটি নোটিফিকেশন আসে যেখানে ধানমন্ডি থেকে তাকে গৃহস্থালি কাজের অনুরোধ জানান একজন গৃহিণী। নোটিফিকেশনটি পেয়েই শামসুন্নাহার বেরিয়ে পড়েন ধানমন্ডির ওই বাসার উদ্দেশ্যে। 

‘হ্যালোটাস্ক’ নামে একটি অ্যাপসভিত্তিক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে নিয়ে এসেছে গৃহস্থালী সেবার নতুন এই মাধ্যম। অ্যাপসের মাধ্যমেই সেবাপ্রদানকারী নারীর গৃহে প্রবেশ থেকে শুরু করে, সাইন-ইন, সাইন-আউট, কাজের সময় ইত্যাদি জানা যাবে। অ্যাপসের মাধ্যমেই সেবা গ্রহীতা এবং সেবাদাতা দুজনেই জানাতে পারবেন তাদের অভিব্যক্তি, করতে পারবেন কাজের মূল্যায়ন। 

শহরে এসে বছর খানেক গতানুগতিক পদ্ধতিতেই খোঁজ নিয়ে বিভিন্ন বাসায় কাজ করেছিলেন শামসুন্নাহার। তবে গতমাস থেকে নতুন এই প্রযুক্তি হাতে পাওয়ার পর নিজেকে এই পদ্ধতির সাথে রপ্ত করিয়ে নিচ্ছেন তিনি। হ্যালোটাস্ক তাদের অ্যাপসে যে ১ হাজার দুইশো জন গৃহস্থালী সেবা প্রদানকারী নারীরকে রেখেছেন শামসুন্নাহার তাদেরই একজন। 

গৃহস্থালী কাজ করা নারীরা বাংলাদেশের আইনে ‘শ্রমিক’ হিসেবেও স্বীকৃতি পান না। প্রযুক্তির বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে ছড়িয়ে পড়া নানা অ্যাপসভিত্তিক সেবার মধ্যে হ্যালোটাস্ক প্রধানত বাংলাদেশের নারীদের করা ঘরোয়া সেবার এই কাজটিকে একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার কাজ শুরু করেছে। 

মেহেদী হাসান স্মরণ এবং মাহমুদুল হাসান লিখন নামে দুই ভাই ২০১৭ সালে এই অ্যাপস তৈরির উদ্যোগ নেন। 

আগামী বছর থেকে এই দুই তরুণ উদ্যোক্তা বেসরকারি সংস্থা অক্সফাম বাংলাদেশের সহায়তায় তাদের এই উদ্যোগকে আরও বড় পরিসরে নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। 

কয়েকমাস আগে রাজধানীর গৃহস্থালী সেবা প্রদানকারী নারীদের দক্ষতা বাড়াতে প্রশিক্ষণ প্রদানের লক্ষ্যে স্থানীয় পাঁচটি এনজিওর সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে অক্সফাম বাংলাদেশ। প্রশিক্ষণ শেষে ওই নারীদের হ্যালোটাস্কের মাধ্যমে একটি নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে কাজ করার জন্য উৎসাহ দেবে সংস্থাটি। 

ছবি: সালাহ উদ্দিন আহমেদ পলাশ

হ্যালোটাস্কের উদ্যোক্তা মেহেদী হাসান স্মরণ জানান, কয়েকমাস আগে ‘গৃহপরিচারিকা সেবা দেওয়া হবে’ শীর্ষক একটি লেখা ফেসবুকে দেন তিনি। সেই পোস্টে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে গৃহপরিচারিকা চেয়ে অভূতপূর্ব সাড়া পড়ে। 

এরপর  একদিন সকালে তিনি মোহাম্মদপুরের একটি গার্মেন্টেসের সামনে গিয়ে দাঁড়ান। মাসের শুরুতে সেখানে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেক নারীই কাজের সন্ধানে আসেন। 

দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি বলেন, “যাদের ভাগ্য ভালো তারা গার্মেন্টসে কাজ পায়। অনেকেই পায় না। দাঁড়িয়ে থাকা ওই নারীদের মধ্যে ২২ জনকে আমি বলেছিলাম, তাদের কাজ দেবো।”

তবে মাত্র দুজন নারী আস্থা পান স্মরণের কথায়। প্রশিক্ষণ পেয়ে অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে কাজের এই সুযোগটি ওই নারীরা গ্রহণ করেন। এরপর একে একে বাড়তে থাকে স্মরণ-লিখনদের উদ্যোগের মূল সদস্য। কড়াইল, রায়েরবাজার এবং মিরপুরের বস্তিসহ বিভিন্ন জায়গায় মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে হ্যালোটাস্কের কার্যক্রমের কথা। বাড়তে থাকে অ্যাপসটির মাধ্যমে সেবা দাতার সংখ্যা। 

হ্যালোটাস্ক তার সেবা প্রদানকারী সদস্যদের মূলত যোগাযোগ, সাধারণ রান্নাবান্না এবং ধোয়ামোছার কাজের প্রশিক্ষণ এবং কাজের সুযোগ করে দেয়।

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.