ক্যাপিটাল গেইট: মধ্যপ্রাচ্যের বিলাসবহুল হেলানো ভবন

ফিচার

টিবিএস ডেস্ক
25 September, 2020, 01:05 pm
Last modified: 25 September, 2020, 01:10 pm
৫ তলার এই ভবনটিকে গগনচুম্বী অট্টালিকা বললে এর প্রকৃতি বোঝা যায়না। ভবনটির নির্মাণকাজে নিয়োজিত প্রকৌশলী ও স্থপতিদের ভবনটির উচ্চতার চেয়ে স্থপতি বিদ্যার প্রচলিত নিয়মের চেয়ে আলাদা করে বানানোর জন্য বলা হয়

রৌদ্রজ্জ্বল নীল আকাশের নীচে ঝিকমিক করা কাঁচের দেয়ালে আচ্ছাদিত ক্যাপিটাল গেইট নামের আকাশচুম্বী অট্টালিকাটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে অবস্থিত। 

ভবনটির এমন আকৃতি সচরাচর দেখা যায়না, ভিন্ন আকৃতির জন্য দেয়ালে ব্যবহৃত গ্লাস প্যানেলগুলো বিশেষ ভাবে বানানো হয়েছে। 

৩৫ তলার এই ভবনটিকে গগনচুম্বী অট্টালিকা বললে এর প্রকৃতি বোঝা যায়না। ভবনটির নির্মাণকাজে নিয়োজিত প্রকৌশলী ও স্থপতিদের ভবনটির উচ্চতার চেয়ে স্থপতি বিদ্যার প্রচলিত নিয়মের চেয়ে আলাদা করে বানানোর জন্য বলা হয়, জানান আবুধাবি ন্যাশনাল এক্সিবিশন কোম্পানির পরিচালক ও নির্মাণকাজে নিয়োজিত প্রকৌশলী আহমেদ আল মানসুরি। 

গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের তথ্যানুযায়ী, নির্মাণের ১০ বছর পরও ক্যাপিটাল গেট এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি দূরত্বে হেলে থাকা ভবন। ভবনটি ১৮ ডিগ্রি কোণে পশ্চিমদিকে হেলে আছে, প্যারিসের পিসা টাওয়ারের চেয়েও এটি প্রায় ৫ গুণ বেশি কোণে হেলে আছে। ভবনটির উপরের ১৭ তলা ঝুঁকে থাকায় নিচের তলার ওপর হাজার হাজার টন ভরের চাপ সৃষ্টি হয় । 

আল মানসুরি বলেন, ' এই ভিন্ন আকৃতির জন্য ভবনটি ধসে পড়বে বলে মনে হয়। তবে এই ঘটনা যাতে না ঘটে সেভাবেই নির্মাণ করা হয়েছে।'

ভবনটির ১৫ তলা অফিসের জন্য বরাদ্দ, এছাড়াও আছে রেস্টুরেন্ট, বার ও অ্যান্দাজ ক্যাপিটাল গেট নামের একটি হোটেল। ২০০টি কক্ষের পাশাপাশি এই হোটেলে আছে একটি বিলাসবহুল প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুট। হোটেলের একজন কর্মকর্তা জুলিয়া গিমাদেভা জানান, ভবনটির আকৃতির কারণে হোটেলের প্রতিটি কক্ষই অন্যটির চেয়ে আলাদা।

ভবনটির উপরের রেস্টুরেন্ট থেকে আবুধাবি ন্যাশনাল এক্সিবিশন সেন্টার দেখা যায়। এছাড়াও পারস্য উপসাগর ও আবুধাবির দ্বীপের অপূর্ব দৃশ্যও দেখা যায়। আবুধাবির ভূপ্রাকৃতিক অবস্থাই ভবনটির নকশার অনুপ্রেরণা ছিল জানান আল মানসুরি। 

প্রকৌশলী দলের জন্য এক্সিবিশন সেন্টারের মুখোমুখি করে হোটেলের রেস্টুরেন্ট ও সুইমিংপুল বানানোর কাজ অন্যতম কঠিন ব্যাপার ছিল। 

ভবনটি থেকে শহরের বিস্তৃত দৃশ্যের দিকে তাকিয়ে হোটেলের আরেকজন কর্মকর্তা আসাদ হারুন বলেন, ' আবুধাবি এখন সম্পূর্ণ বদলে গেছে, একদম ভিন্ন একটি শহর। আমি ২০১১ সালে যখন এসেছিলাম, তখনকার সাথে তেমন কোনো মিলই নেই।'

সংযুক্ত আরব আমিরাতের ৮০ শতাংশ বাসিন্দার মতো আসাদ হারুনও একজন প্রবাসী, তিনি মূলত পাকিস্তানি। তার সহকর্মী জুলিয়া রাশিয়ান।

হারুন রেস্টুরেন্টে বসে আশেপাশের অনেক ভবন দেখিয়ে বলেন, তিনি প্রথম আবুধাবিতে আসার পর এগুলোর কোনোটিই ছিলনা। 'এটি একমদই খালি জায়গা ছিল। এক্সিবিশন সেন্টার থেকে বের হলেই আশেপাশে আর কিছু দেখা যেতো না।'

ইতিহাদ টাওয়ার, আলদার ভবন ও বিনোদন কেন্দ্র ফেরারি ওয়ার্ল্ডের মতো আবুধাবির অনেক স্থাপনাই ক্যাপিটাল হেটের সমসাময়িক সময়ে গড়ে উঠেছে। ২০১৭ সালে নির্মিত ভাসমান ল্যুভর আবুধাবি জাদুঘর দেখতে দেশ-বিদেশের অনেক শিল্প প্রেমীরা ছুটে আসেন।

পর্যটনের জন্য আবুধাবি দুবাইয়ের চাকচিক্যের আড়ালে খুব একটা জনপ্রিয়তা পায়নি। তবে আবুধাবি আরব আমিরাতের সংস্কৃতি কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠছে।
অ্যান্দিজ হোটেলের নকশাও আমিরাতের সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব করে। 

আসাদ হারুন বলেন, 'আবুধাবি কখনোই দুবাই হবে না,  কারণ এধরণের উদ্দেশ্য-ই নেই। আপনি যদি আমোদপ্রমোদের জন্য আমিরাতে আসেন, আপনার গন্তব্যস্থল দুবাই৷ তবে আরব আমিরাতের সংস্কৃতি অন্বেষণের জন্য উপযুক্ত জায়গা আবুধাবিই।'

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.