এই মুক্তাগুলো আপনার দেখা চিকন মালার মতো কিছু নয়!
১৯ শতকের শুরুতেও মুক্তার একমাত্র উৎস ছিল ঝিনুক। কালেভদ্রে তা পাওয়া যেত। ফলে তখন মুক্তা ছিল এক ধরনের মহার্ঘ্য ও বিরল রত্ন। মুক্তাকে আভিজাত্য ও মহত্বের প্রতীক হিসেবে ধরা হতো।
বর্তমানে প্রাকৃতিক ভাবে সংগৃহীত মুক্তার চেয়ে চাষের মুক্তাই বেশি। কিন্তু তাতে মুক্তার আবেদন কখনো কমে যায়নি, কারণ এসব মুক্তাও দেখতে একদম সত্যিকারের প্রাকৃতিক মুক্তার মতোই।
উৎপাদিত মুক্তা কতটা সুনিপুণ তার ওপর ভিত্তি করে মূল্য নির্ধারিত হয়। সম্পূর্ণ গোলাকার, মসৃণ ও নিখুঁত এবং নির্দিষ্ট রঙের মুক্তার সন্ধানই সবথেকে বেশি করা হয়ে থাকে। চিরাচরিতভাবে এই বৈশিষ্ট্যগুলোই মুক্তাকে করে তোলে অনবদ্য।
কিন্তু প্রথাগত গোল আকৃতি থেকে বেরিয়ে এসে ভিন্নধর্মী মুক্তার প্রচলনও শুরু হয়ে গেছে। বারোক ও মেলো মেলো মুক্তার ভিন্নধর্মী আকৃতি তাদেরকে মানুষের মধ্যে জনপ্রিয় করে তুলেছে। ধবধবে সাদা থেকে শুরু করে গাঢ় চারকোল রঙ কিংবা সোনালি রঙেরও হয় এসব মুক্তা। সেই সাথে আকার-আকৃতির ভিন্নতা তো আপনাকে মুগ্ধ করবেই। আজ জানবো তেমনই ভিন্নধর্মী পাঁচ ধরনের মুক্তার অলঙ্কারের কথা।
১. আকোয়া নেকলেস
জাপানি অলংকার প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান কে মিকিমোতো অ্যান্ড কোম্পানি প্রথম ১৮৯৩ সালে চাষের মাধ্যমে উৎপাদিত মুক্তা বাজারে আনে। আর এই কাজে তারা প্রথম ব্যবহার করেছিল আকোয়া ঝিনুক।
আকোয়া মুক্তা সাধারণত সাদা-গোলাপি আভাযুক্ত ও অত্যন্ত উজ্জ্বল দীপ্তি সম্পন্ন হয় যা তাদেরকে অন্যান্য মুক্তা থেকে করে তোলে অনন্য। এই মুক্তাগুলোর আকৃতিও অপেক্ষাকৃত ছোট।
২. বারোক নেকলেস
বারুক মুক্তা যেকোনো আকৃতি ও রঙের হতে পারে। একসময় বারোক মুক্তার চাহিদা ছিল। তখন প্রাকৃতিক সকল মুক্তাই ছিল মূল্যবান। কিন্তু চাষের মাধ্যমে নিখুঁত গোলাকার মুক্তার আবির্ভাবের পর তাদের আবেদন কমে যায় এবং আস্তে আস্তে তা হারিয়ে যায়। কিন্তু বর্তমানে অনেক সংগ্রাহকই আবার নতুন করে বারোক মুক্তার এই বর্ণিল রূপ পছন্দ করছেন। বিভিন্ন ব্র্যান্ড এদেরকে ক্রেতার সামনে তুলে আনার চেষ্টা করছে।
৩। বিওয়া ব্রেসলেট
সর্বপ্রথম মিকিমতো এই ধারার মুক্তা চাষ করে। জাপানের বিওয়া হ্রদ থেকে প্রাপ্ত এই অসম আকৃতির মুক্তা ওয়েস্টারের ভেতরে নয়, বরং মাসেলের মধ্যে তৈরি হয়। ফলে তাদের রঙও হয় আকর্ষণীয়।
৪। গোল্ডেন সাউথ সি নেকলেস
ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনের উষ্ণতর পানিতে জন্মানো এই মুক্তার চকচকে সোনালি রঙের প্রেমে পড়তে আপনি বাধ্য! হালকা শ্যাম্পেইনের রঙ থেকে শুরু করে চমৎকার-উজ্জ্বল সোনালি রঙের এই মুক্তা আপনাকে আভিজাত্যের কথা স্মরণ করিয়ে দিবে। এই মুক্তার মধ্যে হালকা দীপ্তি লক্ষ্য করা যায়।
৫। মেলো মেলো নেকলেস
মেলো মেলো নেকলেসের সাথে সমসাময়িক অন্যান্য মুক্তার পার্থক্য হলো এই যে, মেলো মেলো মুক্তা উৎপাদন করা যায়না। দক্ষিণ এশিয়ার সামুদ্রিক শামুকের মধ্যে এই মুক্তা পাওয়া যায়, যা অত্যন্ত বিরল। তাই মেলো মেলোকে বিশ্বের সবচেয়ে দুর্লভ মুক্তা বললেও ভুল হবে না।
এই মুক্তা জন্মাতে কয়েক দশক লেগে যায় এবং শামুকের খোলের অনন্য আকৃতির কারণে মুক্তাগুলোও আকারে বড় হয়। এযাবৎ পাওয়া সবচেয়ে বড় মেলো মেলো মুক্তার ওজন ছিল প্রায় ৪০০ ক্যারেট! এই শ্রেণীর সবচেয়ে সেরা মুক্তার মধ্যে পোর্সেলিনের মতো ফিনিশিং থাকে এবং এক ধরনের অনবদ্য ফ্লেইম প্যাটার্ন একে অগ্নিশিখার মতো জ্বলজ্বলে করে তোলে।
সূত্র: ব্লুমবার্গ