আলোড়ন সৃষ্টিকারী যে ৫ শাসকের সমাধিক্ষেত্র অজানাই রয়ে গেছে

ফিচার

টিবিএস ডেস্ক
25 November, 2020, 05:55 pm
Last modified: 25 November, 2020, 06:03 pm
বিশ্ববিখ্যাত অনেক ব্যক্তির বিশেষত শাসকদের মৃতদেহ খুঁজে পাওয়া যায়নি বা সমাধিক্ষেত্র সম্পর্কে জানা যায়নি।

বিশ্বজুড়ে বিখ্যাত ব্যক্তিদের সমাধিক্ষেত্রে প্রতিবছর হাজার হাজার পর্যটক ভীড় জমায়। বিখ্যাত সব রাজা-রানি, কবি ও বিজ্ঞানীদের সমাধিক্ষেত্র ইংল্যান্ডের ওয়য়েস্টমিনিস্টার অ্যাবেতে প্রতি বছর লাখ লাখ দর্শনার্থী আসেন। রক কিংবদন্তি এলভিস প্রেসলি তার বাসভবন গ্রেসল্যান্ডে সমাহিত আছেন, প্রতিবছরে গ্রেসল্যান্ডে প্রায় ৭ লাখ ৫০ হাজার মানুষ আসেন। 
ইতিহাসের আরও পেছনে তাকালে দেখা যায় বিশ্ববিখ্যাত অনেক ব্যক্তির বিশেষত শাসকদের মৃতদেহ খুঁজে পাওয়া যায়নি বা সমাধিক্ষেত্র সম্পর্কে জানা যায়নি।  

বিদ্রোহী রানি বৌডিকা

৪৩ খ্রিস্টাব্দে রোমানরা ইংল্যান্ড দখল করে নেয়, তবে তারা ইচানি সম্প্রদায়ের রাজা প্রাসুটাগাসকে নিজ সম্প্রদায় শাসনের অনুমতি দেন। ৬০ খ্রিস্টাব্দে রাজা প্রাসুটাগাসের মৃত্যুর পরই রোমানরা ইচানি সম্প্রদায়ের ভূমি দখল করে নেয়, রানি বৌডিকাকে বন্দী করে। তার দুই মেয়ে নির্যাতন ও ধর্ষণের শিকার হয়। রানি বৌডিকা তখন ইচানি ও অন্যান্য সম্প্রদায়কে সংঘবদ্ধ করে ইংল্যান্ডে রোমানদের রাজ্যগুলোতে আক্রমণ শুরু করেন। তবে শেষ পর্যন্ত ৬১ খ্রিস্টাব্দে রানি বৌডিকার বাহিনী পরাজিত হয়। রোমান ইতিহাসবিদ ট্যাসিটাসের মতে বৌডিকা পরাজিত হওয়ার পর বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেন। আরেকজন রোমান ইতিহাসবিদ ক্যাসিও ডিও'র মতে বৌডিকা যুদ্ধক্ষেত্রে আহত হয়ে মারা যান। 

তবে তার মৃত্যুর পর তার মৃতদেহ খুঁজে পাওয়া যায়নি। অনেকের মতে রানি বৌডিকাকে লন্ডনের কিংস ক্রস স্টেশনের নিচে সমাহিত করা হয়। শ্রোপসায়ারে বৌডিকার বাহিনী রোমানদের কাছে পরাজিত হয়, এ অঞ্চলের আশেপাশেই তাকে সমাহিত করা হয়েছিল এমনটাই মত বেশিরভাগ ইতিহাসবিদদের। তবে তার সমাধিক্ষেত্র যেখানেই হোক, বর্তমানে এব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার উপায় নেই। ইউনিভার্সিটি অব ইউর্কের প্রত্নতাত্ত্বিক লিন্দসে বাস্টার জানান, মৃতদেহের দেহাবশেষ সংরক্ষিত না থাকলে এব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব নয়, ডিএনএ পরীক্ষার জন্য তার বর্তমান সময়ের কোনো আত্মীয়ের খোঁজও প্রয়োজন। সমাধিক্ষেত্র খুঁজে পাওয়া না গেলেও ব্রিটেনের ইতিহাসে নারী অধিকার আন্দোলনকারীদের জন্য বৌডিকা সবসময়ই অনুপ্রেরণার দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবেন। 

আলেক্সান্ডার দ্য গ্রেট 

আলেক্সান্ডার তার পিতা দ্বিতীয় ফিলিপের মৃত্যুর পরই খ্রিস্টপূর্ব ৩৩৬ অব্দে মেসিডোনিয়ার সিংহাসনে বসেন। সিংহাসনে বসার পরবর্তী ১৩ বছরের মধ্যেই পারস্য, মিশর, ব্যবিলন, পাঞ্জাবে তার সাম্রাজ্য বিস্তার করেন। খ্রিস্টপূর্ব ৩২৩ অব্দেই মাত্র ৩২ বছর বয়সেই তিনি মারা যান। তার মৃত্যুর পরবর্তী বছরগুলোতে হাজার হাজার ভক্ত তার সমাধিক্ষেত্রে ভীড় জমাতো। 

৩৫৬ ক্রিস্টাব্দে আলেকজান্দ্রিয়ায় আঘাত হানে ভয়াবহ সুনামি এবং ভূমিকম্প। আলেকজান্দ্রিয়ার বিশাল অঞ্চল সেসময় পানির নিচে হারিয়ে যায়, ভূমিকম্পে মাটির নিচেও তলিয়ে যায় শহরের একাংশ। পুরনো শহরের ধ্বংসাবশেষের ওপরেই পরবর্তীতে নতুন শহর নির্মিত হয়। 
বিগত বছরগুলোতে অনেক প্রত্নতাত্ত্বিকই এ মহাবীরের সমাধি খুঁজে বের করতে খননকাজ চালাচ্ছেন। অত্যাধুনিক ইলেকট্রিক্যাল রেজিস্টিভিটি টেমোগ্রাফিও ব্যবহার করেছেন তারা। এপর্যন্ত বেশ কিছু সূত্র পাওয়া গেলেও এখনো সফল হননি তারা। 

মিশরের শেষ রানি ক্লিওপেট্রা

প্রাচীন মিশরের শেষ ফারাও ছিলেন রানি ক্লিওপেট্রা, তার রাজ্যকে রোমানদের থেকে মুক্ত রাখতে যুদ্ধ করে গেছেন তিনি। জুলিয়াস সিজারের মৃত্যুর পর তিনি মার্ক অ্যক্সান্টোনির সাথে জোট বাঁধেন। তবে শেষ পর্যন্ত নিজের রাজ্যের সার্বভৌমত্ত্ব বজায় রাখতে ব্যর্থ হন। পরাজয়ের পর মার্ক অ্যান্টনিও আত্মহত্যা করেন। এর কিছুদিন পর ক্লিওপেট্রাও আত্মহত্যা করেন। অনেকের মতে তিনি আত্মহত্যা করেননি, তাকে হত্যা করা হয়েছিল।

তার মৃত্যুর পর তাকে অ্যান্টনিওর আশেই সমাহিত করার নির্দেশ দেয়া হয়। ক্লিওপেট্রাকেও আলেকজান্দ্রিয়ায় সমাহিত করা হয়। তবে আলেকজান্দ্রিয়ায় আঘাত হানা ভয়াবহ সুনামি, ভূমিকম্প এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে তার সমাধিক্ষেত্রও হারিয়ে গেছে পানির অতল গহ্বরে।  

অলেকজান্দ্রিয়ার ৩০ মাইল উত্তরে তাপোসিরিস মাগনা গ্রামে ক্লিওপেট্রার সমাধি খুঁজে পাওয়া যেতে পারে বলে জানিয়েছেন একদল প্রত্নতাত্ত্বিক। তবে এখনো এই দাবীর স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ মেলেনি। 

হুনসদের রাজা আত্তিলা 

আল্পস থেকে কাসপিয়ান সাগর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল রাজা আত্তিলার সাম্রাজ্য। সেসময় বেশিরভাগ সাম্রাজ্যের সাথে রোমানদের বিরোধ থাকলেও আত্তিলা রোমানদের সাথে চুক্তি করেন। চুক্তি অনুযায়ী রোমানরা অর্থ পরিশোধ না করায় রোমান সাম্রাজ্য আক্রমণ করেন তিনি। তার এই আক্রমণ রোমান সাম্রাজ্যের পতনকে তরান্বিত করে। 

হুনসরা তাদের রক্তক্ষয়ী, দুর্ধর্ষ যুদ্ধপন্থার কারণে বর্বর জাতি হিসেবে পরিচিত। তবে আত্তিলা কোনো যুদ্ধে মারা যায়নি, নিজের বিছানায় স্বাভাবিক মৃত্যু হয় তার। প্রচলিত আছে স্বর্ণ, রূপা ও লোহার কফিনে আত্তিলাকে দাফন করা হয়। তাকে সমাহিত করার কাজে জড়িত ব্যক্তিদের পরবর্তীতে হত্যা করা হয়। একারণে রোমান সাম্রাজ্যের পতনে ভূমিকা রাখা এই শাসকের সমাধিক্ষেত্র কোথায় তা অজানাই রয়ে গেছে। ধারণা করা হয় বর্তমান হাঙ্গেরির কোনো অঞ্চলেই তাকে সমাহিত করা হয়েছিল, তবে নির্দিষ্ট স্থানের ব্যাপারে আজও জানা যায়নি। 

মঙ্গোলিয়ার শাসক চেঙ্গিস খান

ইতিহাসের সবচেয়ে দুর্ধর্ষ শাসক হিসেবে পরিচিত মঙ্গোলিয়ার শাসক চেঙ্গিস খান। তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রশান্ত মহাসাগর থেকে ক্যাসপিয়ান সাগর পর্যন্ত তিনি তার সাম্রাজ্য বিস্তার করেন।

১২২৭ খ্রিস্টাব্দে চীনে তার মৃত্যুর হয়, প্রচলিত আছে ঘোড়া থেকে পড়ে গিয়েই তার মৃত্যু হয়। তাকে সমাহিত করার জন্য তার ছেলে তার মরদেহ মঙ্গোলিয়ায় নিয়ে যায়। তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী নামফলক ছাড়াই তাকে সমাহিত করে তার পরিবার।

ধারণা করা হয় তার জন্মস্থানের নিকটে খেনতি পর্বতমালার আশেপাশে কোথাও তাকে সমাহিত করা হয়েছিল। তার জন্মস্থানের আশেপাশে সমাধিক্ষেত্র আবিষ্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বেশ কয়েকবার। তবে বেশিরভাগ মঙ্গোলিয়ান তার শেষ ইচ্ছা বজায় রাখার পক্ষে থাকায় এ চেষ্টা সফল হয়নি। 

 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.