আফগানিস্তানের প্রথম নারী অ্যানিমেশন আর্টিস্টের স্বপ্নগুলো

ফিচার

টিবিএস ডেস্ক
02 March, 2021, 07:30 pm
Last modified: 02 March, 2021, 07:34 pm
'আমি আমার কাজের জন্য হুমকির সম্মুখীনও হয়েছি। তবু ছোট মেয়েদের অ্যানিমেশন শেখানোর জন্য আফগানিস্তানে ফিরে এসেছি। একদিন এখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ও প্রতিষ্ঠা করতে চাই।'

ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরিহিত এক নারী কারাগারের গরাদ ভেঙে ফেলছেন। ঝাপসা ট্যাংক আর বিস্ফোরণ পেছনে ফেলে ভেসে উঠেছে নৃত্যরত এক শিশুর মুখ। ছবিগুলো আফগান অ্যানিমেশন আর্টিস্ট সারা বারাকজের তৈরি। আফগানিস্তানের প্রথম পেশাদার অ্যানিমেশন আর্টিস্ট তিনি। তার কাজে নিজ শৈশব ও কৈশোর জীবনের সংগ্রামেরই প্রতিফলন ফুটে রয়েছে।

শিশুকালেই শ্রবণ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন সারা। পরবর্তীকালে শিক্ষার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান তুরস্কে। তবে তিনি আফগানিস্তানে আবার ফিরে এসেছেন। স্বপ্ন দেখছেন নিজ দেশেই অ্যানিমেশন আর্টের স্কুল খোলার।

শিশুদের বই ও কাপড়ে ইলাস্ট্রেশনের কাজ করা ছাড়াও সারা চিত্রাঙ্কন শেখান। এখন পর্যন্ত পেয়েছেন বহু অ্যাওয়ার্ড। এছাড়া, সারা এখন নিজের কার্টুন সিরিজ নিয়ে কাজ করছেন।

সারা বারাকজ

তিনি জানান, তার কাজের বিষয়বস্তুর মধ্যে রয়েছে যুদ্ধ, শান্তি, নারী অধিকার ইত্যাদি। এছাড়াও শৈশবে তার সঙ্গে থাকা বিড়াল, খরগোশ, মুরগি, এমনকি ব্যাঙ নিয়েও কাজ করেন তিনি।

'আফগান নারীরা নিজেদের লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য অনেক চেষ্টা ও পরিশ্রম করেন, সম্ভবত অন্যদের চেয়েও বেশি। আমি আমার চিত্রকর্মের মধ্য দিয়ে যে বার্তাগুলো দিতে চাই, তার মধ্যে এটি একটি', বলেন তিনি।

'আমি সব সময় বড় স্বপ্ন দেখতাম; কিন্তু সেগুলোর জন্য লড়াই করা অত সহজ ছিল না। আফগান নারীরা বহু সীমাবদ্ধতার সম্মুখীন হয়। স্বাধীনতা অর্জনই সম্ভবত আমার সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। আমার সেই সংগ্রাম এখনো চলছে। আমি এখনো আমার পথের সন্ধান করছি,' বলেন সারা।

তিনি আরও বলেন, 'আমার আরেকটি লক্ষ্য হলো আফগানিস্তানের বিষয়ে মানুষের ধারণা পরিবর্তন করা: আমাদের দেশে বহু দয়ালু মানুষ রয়েছেন। এখানকার খাবার-দাবার চমৎকার। এছাড়া, এখানে আছে এক প্রাচীন সংস্কৃতি। আমি বিশ্বকে এর সব কিছুই দেখাতে চাই।'

আফগানিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল হেরাত ও এর আশেপাশে বেড়ে ওঠেন সারা। হেরাত এক প্রাচীন নগরী, যেখানে রয়েছে ঐতিহাসিক নীল মসজিদ ও প্রাচীন দুর্গ।

অ্যানিমেশন আঁকছেন সারা

সারা মাত্র চার বছর বয়সে ছবি আঁকা শুরু করেন। তার জন্মের পর তালেবান শাসন থেকে বাঁচতে পরিবার সাময়িকভাবে গ্রামে চলে যায়। ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্র পরিচালিত অভিযানের পর তারা ছোট ইটের বাড়িটিতে ফিরে আসেন।

'যখন ছোট ছিলাম, তখন যুদ্ধ চলছিল,' বলেন সারা। 'বাবা আমাকে শেখান, কীভাবে শোনা ছাড়াই কথা বলতে হয়; তবে বিষয়টি বেশ কঠিন ছিল।'

পরবর্তীকালে, আট বছর বয়সে শ্রবণযন্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে সারার জীবনে পরিবর্তন আসে। তিনি বোনদের সঙ্গে স্কুলে যেতে শুরু করেন।

সারা বলেন, 'এর ফলে আমার দুনিয়া সম্প্রসারিত হয়ে ওঠে।' 

১৫ বছর বয়সে স্কুলের পাঠ শেষ করেন তিনি। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন। তুরস্কে অ্যানিমেশন আর্ট শেখার জন্য স্কলারশিপের আবেদন করেন। ফুল ফান্ডের স্কলারশিপ পাওয়ার পর সারা পড়াশোনা চালাতে পরিবারকে রাজি করান।

"'দ্য স্মার্ফস' দেখে আমি অল্প বয়সে তুর্কি ভাষা শিখি। এমনকি টেলিভিশনে জার্মান, আরবি ও ইংরেজি ভাষার অনুষ্ঠানও দেখতাম। এখন সবগুলো ভাষায় কথা বলতে জানি," বলেন সারা।

তিনি এখন অন্যান্য আফগান শিশু-কিশোরকেও তার দক্ষতার পাঠ দিচ্ছেন।

সারার আঁকা আরেকটি অ্যানিমেশনের দৃশ্য

সারা বলেন, 'আমি আমার কাজের জন্য হুমকির সম্মুখীনও হয়েছি। তবু ছোট মেয়েদের অ্যানিমেশন শেখানোর জন্য আফগানিস্তানে ফিরে এসেছি। একদিন এখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ও প্রতিষ্ঠা করতে চাই।'

বাড়তে থাকা অনিরাপত্তা এবং সু-স্বাস্থ্যসেবার অভাব সারাকে আজীবন ভুগিয়েছে বলে জানান তিনি।

এদিকে, আফগানিস্তানে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বেড়েই চলেছে। জাতিসংঘের মতে, গত বছর দেশটিতে তিন হাজারের বেশি নাগরিক সহিংসতার কারণে মৃত্যুবরণ করেন। সম্প্রতি সেখানে সহিংসতার পরিমাণ বেড়েছে। সেপ্টেম্বর থেকে নির্দিষ্ট কাউকে টার্গেট করে 'হিট অ্যান্ড রান' আক্রমণের সংখ্যাও ২০০ ছাড়িয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্র মে মাসে সেখান থেকে সৈন্য কমিয়ে আনার চিন্তা করায় সহিংসতার আশঙ্কা বাড়ছে।

'আমি আফগানিস্তানের অন্তত কিছু মেয়ের ভবিষ্যৎ সহজ করতে চাই। একদিন ডিজনি কিংবা পিক্সারে অ্যানিমেশন আর্টিস্ট হিসেবে কাজ করার স্বপ্নও দেখি,' বলেন সারা। 'তবে আমার প্রথম স্বপ্ন নিজের দেশকে ঘিরেই। তা হলো: চিরকালীন শান্তি।'


  • সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.