আগাম মুকুলে ছেয়ে গেছে লিচু বাগান

ফিচার

বিপুল সরকার সানি, দিনাজপুর
16 March, 2020, 04:30 pm
Last modified: 16 March, 2020, 05:17 pm
মুকুল আসার সঙ্গে সঙ্গে দিনাজপুরের কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছে। এবার বাম্পার ফলনের আশা করছেন তারা। তাদের আশা, গত বছর লিচু বিক্রি করে যে লোকসান হয়েছিল তা এ বছর পুষিয়ে উঠবেন।

লিচুর জেলা হিসেবে এরই মধ্যে পরিচিতি পেয়েছে দিনাজপুর। এই জেলায় উৎপাদিত সুস্বাদু ও রসালো ফল লিচুর সুনাম এখন দেশ-বিদেশে। এরই মধ্যে জেলার লিচু বাগানের গাছগুলো ছেয়ে গেছে মুকুলে। তবে কৃষকরা বলছেন- চলতি বছর একটু আগেই মুকুল এসেছে। 

মুকুল আসার সঙ্গে সঙ্গে কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছে। তারা এবার বাম্পার ফলনের আশা করছেন। তাদের আশা, গত বছর লিচু বিক্রি করে যে লোকসান হয়েছিল তা এ বছর পুষিয়ে উঠবেন। কৃষিবিদরা বলছেন, এবার শীত দীর্ঘায়িত হওয়ায় ও তাপমাত্রা কম থাকায় গাছের বৃদ্ধি কম হয়েছে। তাই এবার পুস্পমঞ্জুফরী আগাম এসেছে।
 
দিনাজপুর হর্টিকালচার সেন্টার সূত্রে জানা গেছে, গত বছর জেলার ১৩টি উপজেলায় প্রায় পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে লিচুর চাষ হয়েছিল। লিচুর উৎপাদন হয়েছিল ৫০ হাজার টন। চলতি বছর জেলাব্যাপী পাঁচ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে লিচুর চাষ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬০ হাজার টন।

এ জেলায় বোম্বাই, মাদ্রাজি, চায়না-থ্রি, বেদেনা, কাঠালী, হাড়িয়াসহ কয়েক জাতের লিচুর ফলন হয়। পরিপক্ক মৌসুমে এসব লিচু, ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়।

হর্টিকালচার সেন্টার সূত্র আরও জানায়, সাধারণত মার্চ মাসের প্রথম দিকে লিচু গাছে মুকুল আসতে শুরু করে। আর লিচুর মুকুল ফুটে মার্চের মাঝামাঝি সময়ের পরে। তবে চলতি মৌসুমে প্রায় ১৫ দিন আগেই মুকুল এসেছে। ইতিমধ্যেই অনেক গাছের মুকুল ফুটতেও শুরু করেছে। কৃষকরা এবার ভাল ফলনের পাশাপাশি ভাল দামেরও আশা করছেন। গত বছরে যে সময় লিচু পরিপক্ক হয়ে বাজারে উঠেছিল ওই সময়টা ছিল রমজান মাস। তাই অনেকেই আশানুরুপ দাম পাননি, অনেকেই সেবার লোকসান গুনেছেন।

সদর উপজেলার মুকুন্দপুর এলাকার লিচু চাষি মোস্তাক আহমেদ বলেন, লিচুর মুকুল থেকে ফুল ফুটতে প্রায় ১৫ দিন সময় লাগে। সেই ফুল থেকে একটি পূর্ণাঙ্গ লিচুর আকার পেতে সময় লাগে আরও ৩০ দিন। সেই আকার থেকে পরিপক্ক হয়ে বাজারজাত করতে সময় লাগে ৩৫ থেকে ৪৫ দিন। মুকুল থেকে বাজারজাত করা পর্যন্ত লিচুর জাত ভেদে প্রায় তিন মাস পর্যন্ত সময় লাগে।

সদর উপজেলার মাসিমপুর এলাকার আবদুল খালেক বলেন, মুকুল আসার সঙ্গে সঙ্গেই পরিচর্যা শুরু করেছি, সেচ দিয়েছি। সারের পাশাপাশি কীটনাশক ও বালাইনাশকও প্রয়োগ করেছি। লিচুর মুকুল এবার কিছুদিন আগে এসেছে।
 
একই এলাকার জুয়েল ইসলাম বলেন, গত বছর পোকার আক্রমনের কারণে ফলন একটু কম হয়েছিল। আর রোজার কারণে দাম তেমন ওঠেনি। ফলে লাভও তেমন হয়নি।
 
স্থানীয় রমজান আলী বলেন, এবার বোম্বাই জাতের লিচুতে মুকুল ভাল এসেছে। তাছাড়া কয়েকদিন আগে যে সামান্য বৃষ্টি হয়েছে তা লিচুর জন্য আর্শিবাদ নিয়ে এসেছে। 

সদর উপজেলার মাহমুদপুর গ্রামের মোকসেদুল ইসলাম বলেন, আমার ১২৫টি লিচু গাছ আছে। গত বছর কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা কৃষকদের তেমন খোঁজ-খবর নেননি। ফলে আমরা পোকার আক্রমনে দিশেহারা হয়ে পড়ি। তবে কোনো প্রতিকার পাইনি। ফলে উৎপাদনও কম হয়েছে। এ বছর হয়তো লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারবো। এ ছাড়া এবার ভাল দাম পাওয়া যাবে, কারণ এবছর লিচুর রমজানের পরে বাজারে আসবে।

শাহ জালাল নামে আরেক কৃষক বলেন, মুকুল আসার সঙ্গে সঙ্গেই পরিচর্যা শুরু করেছি। ফলে লিচুর দানা ভাল হবে। ফলে উৎপাদন বাড়বে।

লিচু নিয়ে কাজ করে হর্টিকালচার সেন্টার। দিনাজপুর হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ প্রদীপ কুমার গুহ বলেন, এবার শীতকাল দীর্ঘায়িত ছিল। তাপমাত্রা নেমেছিল ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে। এছাড়া দীর্ঘ সময় কম তাপমাত্রা থাকার পাশাপাশি কয়েকটি শৈত্য প্রবাহ যাওয়ায় গাছের দেহজ বৃদ্ধি দীর্ঘ সময় ধরে কম ছিল। তাই এবার পুস্পমঞ্জুরী আগাম এসেছে। এই সময়ে পরিচর্যা ও ফল পরিপক্ক হওয়া পর্যন্ত পরিচর্যার বিষয়ে কৃষকদের কারিগরি সব বিষয়ে পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, ফলনের পর ফলের প্রসেসিং এবং সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। যাতে করে দীর্ঘ সময় ফলের স্বাদ গ্রহণ করা যায়। এতে কৃষকরা লাভবান হবেন। প্রচুর মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। তাই গত বছর থেকেই নীতি নির্ধারনী মহল ও জনপ্রতিনিধিদের বোঝানোর চেষ্টা চলমান রয়েছে।
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.