অক্সিজেন উৎপাদন ও প্রাণের বিকাশের জন্যই পৃথিবীর ঘূর্ণন ধীরতর হয়েছে, বলছে গবেষণা

ফিচার

টিবিএস ডেস্ক
10 August, 2021, 12:50 pm
Last modified: 10 August, 2021, 03:22 pm
পৃথিবীর বয়স যখন ৪০০ কোটি বছর, তখন মাত্র ছয় ঘণ্টায় সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতো এই গ্রহটি। ধীরে ধীরে সেটা কমে এখন ২৪ ঘণ্টায় নেমে এসেছে।

প্রায় ২৪০ কোটি বছর আগে সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘূর্ণনের গতি কমিয়ে দিয়েছিল পৃথিবী, যার ফলে বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের পরিমাণ বেড়েছে এবং এই গ্রহে প্রাণের বিকাশ ঘটেছে।

মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন গবেষণায় উঠে এসেছে, পৃথিবীর বয়স যখন ৪০০ কোটি বছর, তখন মাত্র ছয় ঘণ্টায় সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতো এই গ্রহটি। ধীরে ধীরে সেটা কমে এখন ২৪ ঘণ্টায় নেমে এসেছে।

২৪০ কোটি বছর আগে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে বলতে গেলে অক্সিজেনের অস্তিত্বই ছিল না। প্রাণের বিকাশের মতো পরিবেশও ছিল না তখন। তবে সেসময় জীবাণুরা কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করতো ও সায়ানোব্যাকটেরিয়া অক্সিজেন উৎপাদন করতো, যা সালোকসংশ্লেষণের প্রাচীনতম দৃষ্টান্তগুলোর মধ্যে একটি।

৪০ কোটি বছর আগে পৃথিবীর অক্সিজেনের পরিমাণ ছিল বর্তমানের দশভাগের এক ভাগ, পূর্বের তুলনায় যা অনেক বেশি। বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেন বাড়ার ফলেই প্রাণী ও গাছপালারা বিবর্তিত হতে পেরেছে। এবং সেই বিবর্তনের সাথে সাথে গাছগাছালিরা আরও বেশি করে অক্সিজেন উৎপাদন শুরু করে।

অক্সিজেনের এই বৃদ্ধি কোথায় ও কীভাবে হয়েছিল, সেটা জানতে গবেষকরা উত্তর আমেরিকার হুরন হ্রদের দ্বীপ সিংকহোলের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। এই হ্রদে প্রায় ৪০ কোটি বছরের পুরোনো চুনাপাথর, ডলোমাইট এবং জিপসাম বেডরক রয়েছে যা নোনা পানির সমুদ্র থেকে তৈরি হয়েছিল এবং একসময় মহাদেশের সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল।

এছাড়া এখানে অক্সিজেন উৎপাদনকারী বেগুনী সায়ানোব্যাকটেরিয়াও রয়েছে। কিন্তু এদের সঙ্গে থাকে সালফার-অক্সিডাইজিং শ্বেত ব্যাকটেরিয়া, যারা দিনের বেলা সায়ানোব্যাকটেরিয়াকে ঢেকে রাখে। এতে করে সায়ানোব্যাকটেরিয়া সূর্যের আলো পায় না এবং সালোকসংশ্লেষণও করতে পারে না। যখন সূর্যের তাপ অনেক বেড়ে যায়, তখন সায়ানোব্যাকটেরিয়াকে ছেড়ে ব্যাকটেরিয়া নিচে নেমে যায় এবং তাদের অক্সিজেন উৎপাদন করতে দেয়।

গবেষণার প্রধান লেখক জুডিথ ক্ল্যাট বলেন, "সিংকহোলে জীবাণুদের দুইটি গ্রুপ শ্রেষ্ঠত্বের জন্য লড়াই করে, যেখানে সালফার-অক্সিডাইজিং ব্যাকটেরিয়া প্রায়শই সালোকসংশ্লেষণকারী  সায়ানোব্যাকটেরিয়াকে ঢেকে দেয়। হতে পারে, পৃথিবীর আদিলগ্নে জীবাণুদের এরকম প্রতিযোগিতার জন্যই অক্সিজেনের উৎপাদন পিছিয়ে গিয়েছিল।" 

মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের জিও-মাইক্রোবায়োলজিস্ট গ্রেগরী ডিক এরসঙ্গে যোগ করেন, "দিন ছোট হলে এবং বিকেলের উচ্চ-সূর্যতাপের সময়টি আরও কমে আসলে, এই সালফার-খাদক ব্যাকটেরিয়ারা সালোকসংশ্লেষণকারী ব্যাকটেরিয়াদের উপর বেশি সময় ধরে থাকবে, যে কারণে অক্সিজেনের উৎপাদনও অনেক কমে আসবে।"

সূত্র: ইন্ডিয়া টাইমস

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.