টাকা পাওয়ার পর মালিকানা ছাড়ার প্রস্তাব মুন সিনেমার

টপ নিউজ

টিবিএস রিপোর্ট
18 August, 2019, 12:35 pm
Last modified: 25 August, 2019, 04:23 am
আজ রবিবার (১৮ আগস্ট) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগে ওই প্রস্তাব মৌখিকভাবে তুলে ধরা হয়।

সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী নিয়ে আলোচিত মুন সিনেমা হলের মালিকানা নিয়ে সরকারকে সমঝোতার প্রস্তাব দিয়েছে ইটালিয়ান মার্বেল কোম্পানি। 

প্রস্তাবে বলা হয়েছে, সম্পত্তির মূল্য বাবদ প্রায় ১০০ কোটি টাকা পাওয়ার পর মুন সিনেমা হল ও তাদের সম্পত্তির মালিকানা ও অধিকার মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের নামে দেওয়া হবে।

আজ রবিবার (১৮ আগস্ট) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগে ওই প্রস্তাব মৌখিকভাবে তুলে ধরা হয়। পরে আদালত আগামী ২২ আগস্ট এই অঙ্গীকারনামা (অ্যাফিডেবিট) লিখিতভাবে দাখিলের দিন নির্ধারণ করেন।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। ইটালিয়ান মার্বেল কোম্পানির পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি।

এর আগে গত ২৮ জুলাই মুন সিনেমা হলের সম্পত্তি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের নামে নিবন্ধনের পদক্ষেপ নিতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমকে নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ।

একইসঙ্গে মুন সিনেমা হলের মালিককে  প্রায় ১০০ কোটি টাকা পরিশোধের জন্য ১৮ আগস্ট পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়।

গত বছরের ৮ অক্টোবর মুন সিনেমা হলের মালিককে প্রায় ১০০ কোটি টাকা পরিশোধের যে নির্দেশ দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ তা পরিশোধে সম্মত হওয়ার কথা জানান অর্থমন্ত্রনালয়। অর্থ পরিশোধে ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দেয়া হয়। ১২ জানুয়ারিতেও একই রকম আদেশ দিয়েছিলেন সর্বোচ্চ আদালত।

প্রসঙ্গত, পুরান ঢাকার ওয়াইজঘাটে অবস্থিত মুন সিনেমা হলের মালিক ছিল ইটালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি। মুক্তিযুদ্ধের সময় ওই সম্পত্তি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। পরে ওই সম্পত্তি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের অধীনে ন্যস্ত করা হয়। ইটালিয়ান মার্বেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাকসুদুল আলম এই সম্পত্তির মালিকানা দাবি করেন।

জিয়াউর রহমানের শাসনামলে ১৯৭৭ সালে এক সামরিক ফরমান জারি করেন। এই ফরমান অনুযায়ী  সরকার কোনও সম্পত্তি পরিত্যক্ত ঘোষণা করলে তা আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যাবে না। ইটালিয়ান মার্বেল ২০০০ সালে হাইকোর্টে ওই ফরমানসহ সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী চ্যালেঞ্জ করেন।সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী অনুযায়ী ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টের সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে ১৯৭৯ সালের ৫ই এপ্রিল পর্যন্ত সামরিক সরকারের যাবতীয় কর্মকান্ড বৈধ।

এর প্রেক্ষিতে ২০০৫ সালের ২৯ আগস্ট হাইকোর্ট এক ঐতিহাসিক রায় দেন। এই রায়ে খন্দকার মোশতাক আহমদ, বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম, মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা গ্রহণ সংবিধান-বহির্ভূত ও বেআইনি ঘোষণা করা হয়।  

এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয় ২০১০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন। পাশাপাশি ৯০ দিনের মধ্যে ইটালিয়ান মার্বেলকে মুন সিনেমা হল ফেরত দিতে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টকে নির্দেশ দেওয়া হয়। 

এ অবস্থায় সম্পত্তি ফিরে পেতে ২০১২ সালের ১০ জানুয়ারি ইটালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদন করেন। এর ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালের ১৫ জানুয়ারি আপিল বিভাগ ওই সম্পত্তি অভিজ্ঞ ও নিরপেক্ষ এক প্রকৌশলীকে দিয়ে জমি ও স্থাপনার মূল্য নির্ধারণ করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেন।

অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীকে দিয়ে এই মূল্য নির্ধারণ করতে বলা হয়। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষ। সেই প্রতিবেদন অনুসারে আজ মুন সিনেমা হল মালিককে প্রায় ১০০ কোটি টাকা পরিশোধের নির্দেশ দিলেন আপিল বিভাগ।

 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.