ফের টেস্ট অধিনায়ক সাকিব, ডেপুটি লিটন দাস
টেস্ট অধিনায়কত্ব নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পর বেশি সময় লাগলো না অধিনায়ক বদলে যেতে। 'অধিনায়কত্ব করতে চাই না'- মুমিনুল হক এমন ঘোষণা দেওয়ার দুই দিনের মধ্যেই নতুন নেতৃত্ব বেছে নিলো বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। টেস্ট অধিনায়ক করা হয়েছে সাকিব আল হাসানকে। এতোদিন সহ-অধিনায়ক না থাকলেও এবার ডেপুটি বাছাই করা হয়েছে। লিটন কুমার দাসকে সহ-অধিনায়ক করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিসিবি কার্যালয়ে বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিষয়ের সঙ্গে অধিনায়কত্ব নিয়ে বিষদ আলোচনা করা হয়। এরপর সর্বসম্মতিক্রমে সাকিবকে টেস্ট অধিনায়ক করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বোর্ড সভা শেষে সাকিবকে অধিনায়ক ঘোষণা করেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন।
বিসিবি সভাপতি বলেন, 'তিন জনের নাম এসেছিল। আমরা অধিনায়কের সঙ্গে একজন সহ-অধিনায়ক রাখবো এমন সিদ্ধান্ত আগেই নিয়েছিলাম। তাই আমরা মিটিংয়ে অধিনায়ক হিসেবে সাকিব আল হাসান এবং সহ-অধিনায়ক হিসেবে লিটন দাসকে বেছে নিয়েছি। পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত তারা এই দায়িত্ব পালন করবে। এখন থেকেই সাকিব অধিনায়ক ও লিটন সহ-অধিনায়ক।'
গত কয়েক বছর ধরে টেস্টে অনিয়মিত সাকিব। তবে বাঁহাতি এই অলরাউন্ডার এবার নিয়মিত টেস্ট খেলবেন বলে জানালেন বিসিবি সভাপতি। তবে সাকিব কতোদিন অধিনায়ক থাকবেন, সে ব্যাপারে বলতে পারলেন না নাজমুল হাসান, 'আমার সাথে যা কথা হয়েছে, আমার সাথে না শুধু, অনেকের সাথে কথা হয়েছে। আমি যতটুক জানতে পেরেছি, সে খেলবে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে সিরিজের পর জিম্বাবুয়ের সাথে খেলা আছে। সেখানে সাকিব অনিশ্চিত। তবে কতদিন সাকিব অধিনায়ক থাকবে, সেটা বলা মুশকিল।'
এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো টেস্ট অধিনায়ক হলেন সাকিব। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে চোটে ছিটকে যান নিয়মিত অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। সব ফরম্যাটে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক করা হয় সাকিবকে। বাঁহাতি এই অলরাউন্ডার অধিনায়কত্ব করেন ২০১১ সাল পর্যন্ত। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে দীর্ঘ মেয়াদে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি দলের নেতৃত্ব পান সাকিব। কিন্তু এ দফায় বেশিদিন অধিনায়কত্ব করা হয়নি তার।
অনৈতিক প্রস্তাব গোপন করায় ২০১৯ সালের অক্টোবরে সাকিবকে এক বছরের জন্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিষিদ্ধ করে আইসিসি। নভেম্বরে নতুন টেস্ট অধিনায়ক করা হয় মুমিনুলকে। তার নেতৃত্বে ১৭ টেস্টে ৩টি জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। হার ১২টিতে, ড্র হয় ২টি ম্যাচ। অধিনায়ক হিসেবে তার সবচেয়ে বড় সাফল্য নিউজিল্যান্ডের মাটিতে তাদেরকেই হারানো। নিষিদ্ধ হয়ে যার কাছে অধিনায়কত্ব হারান, সেই মুমিনুলের কাছ থেকেই দলের দায়িত্ব পেলেন সাকিব।
আগের দুই দফা মিলিয়ে বাংলাদেশকে ১৪টি টেস্টে নেতৃত্ব দিয়েছেন সাকিব। এর মধ্যে ৩টিতে জিতেছে বাংলাদেশ, বাকি সব ম্যাচে হার। এ সময় অধিনায়ক হিসেবে ব্যাট হাতে ৩৫.৩০ গড়ে ৯১৮ রান করেন তিনি, বল হাতে নেন ৬১ উইকেট। ৫০ ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দিয়ে দলকে ২৩টি ম্যাচে জিতিয়েছেন সাকিব। বাকি ২৭ ম্যাচের ২৬টিতে হার, একটি ম্যাচে ফল আসেনি। টি-টোয়েন্টিতে সাকিবের নেতৃত্বে ২১ ম্যাচে ৭টিতে জিতেছে বাংলাদেশ।
ব্যাট হাতে ব্যর্থতার বৃত্তে বন্দি হয়ে পড়ায় মুমিনুলের অধিনায়কত্ব নিয়েও প্রশ্ন উঠে যায়। গত ৩১ মে বিসিবি সভাপতির সঙ্গে বৈঠকের পর অধিনায়কত্ব ছাড়ার কথা জানান তিনি। জাতীয় দলের হয়ে ৫৩টি টেস্ট খেলা মুমিনুল অধিনায়ক হিসেবে ১৭ টেস্টের ৩১ ইনিংসে ৩ সেঞ্চুরি ও ২ হাফ সেঞ্চুরিতে ৯১২ রান করেছেন। অধিনায়কত্ব পাওয়ার প্রথম ৭ টেস্টে তিনটি সেঞ্চুরি পেলেও পরের ১০ টেস্টে সেঞ্চুরিবিহীন তিনি। সর্বশেষ ১৫ ইনিংসে তার রান ১৭০, গড় ১২.১৪। অধিনায়ক হিসেবে ১৭ টেস্টে মুমিনুলের ব্যাটিং গড় ৩১.৪৪। অধিনায়ক হওয়ার আগে তার গড় ছিল ৪১.৪৭।