রিয়াল নাকি লিভারপুল; কার মাথায় উঠবে শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট?
ইউরোপ সেরার লড়াই, এমন আসরের ফাইনালে যে দুই দলই উঠুক না কেন; যে কারও হাতে শিরোপা তুলে দেওয়া যায়। তাতে সামর্থ্যের প্রশ্ন উঠবে না। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে যে দল ফাইনালে উঠতে পারে, তাদের সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ কই! কিন্তু ফাইনালের লড়াইয়ে নাম দুটি যদি রিয়াল মাদ্রিদ ও লিভারপুল? উত্তরে যে কেউ বলবেন, 'সেয়ানে সেয়ানে লড়াই হতে যাচ্ছে।' যেখানে এগিয়ে বা পিছিয়ে নেই কেউ-ই।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে শনিবার রাতে প্যারিসের জাতীয় স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হচ্ছে রিয়াল মাদ্রিদ ও লিভারপুল। ম্যাচটি বাংলাদেশ সময় রাত ১টায় শুরু হবে। কোয়াড্রপল জেতার সুযোগ হারালেও লিভারপুলের সামনে ট্রেবল জেতার হাতছানি। কিন্তু প্রতিপক্ষ যখন চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসের সবচেয়ে বেশিবারের চ্যাম্পিয়ন রিয়াল, তখন অনেক হিসাব নিকাষই এসে যায়।
তৃতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে মুখোমুখি হচ্ছে রিয়াল-লিভারপুল। শিরোপা নিষ্পত্তির আগের দুই লড়াইয়ে একবার করে জিতেছে দল দুটি। ১৯৮১ সালে (তখন আসরের নাম ছিল ইউরোপিয়ান কাপ) প্রথমবারের ফাইনালে মুখোমুখি হয় তারা। প্রথম সাক্ষাতে ১-০ গোলে রিয়ালকে হারিয়ে শিরোপা জেতে দ্য রেডসরা। ৩৭ বছর পর এসে প্রতিশোধ নেয় রিয়াল। ২০১৮ চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে লিভারপুলকে ৩-১ গোলে হারিয়ে শিরোপা জেতে লস ব্লাঙ্কোসরা।
ফাইনালের লড়াইয়ে এখন পর্যন্ত হিসাব বরাবর থাকলেও চ্যাম্পিয়ন্স লিগের রেকর্ডে লিভারপুলের চেয়ে অনেক এগিয়ে রিয়াল। সবচেয়ে বেশি ১৬ বার আসরটির ফাইনাল খেলেছে তারা। স্প্যানিশ জায়ান্টরা শিরোপাও জিতেছে সবচেয়ে বেশি, ১৩ বার। এ ছাড়া চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে উঠলেই যে শিরোপা নিজেদের করে নেবে রিয়াল, সেটাও এক প্রকার নিয়মে পরিণত হয়ে গেছে। সর্বশেষ সাত ফাইনালের সবকটি জিতেছে রিয়াল।
সবচেয়ে বেশি ফাইনাল খেলার তালিকায় লিভারপুল আছে চার নম্বরে। রিয়ালের পর ১১ বার করে ফাইনাল খেলেছে এসি মিলান ও বায়ার্ন মিউনিখ। এরপরই লিভারপুল, দ্য রেডসরা ৯ বার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল খেলেছে। সর্বোচ্চ শিরোপা জেতার তালিকাতেও তারা চার নম্বরে। এসি মিলান ৭ বার ও বায়ার্ন ৬ বার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জিতেছে। ৬ বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে লিভারপুলও। বায়ার্ন ও লিভারপুলের সমান শিরোপা হওয়ায় ফাইনাল খেলার হিসাব করা হয়। দুটি ফাইনাল বেশি খেলায় এক ধাপ এগিয়ে জার্মান ক্লাবটি।
এবারের মৌসুমটা দারুণ কেটেছে লিভারপুলের। বিশেষ করে গত মার্চ থেকে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে ইংলিশ ক্লাবটি। মার্চ থেকে কোনো ম্যাচ হারেনি তারা। ইয়ুর্গেন ক্লপের শিষ্যরা পুরো মৌসুমে মাত্র তিনটি ম্যাচ হেরেছে। তাদের ট্রফি কেসে উঠেছে লিগ কাপ ও এফএ কাপের শিরোপা। খুব কাছে গিয়ে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ জেতা হয়নি লিভারপুলের। শিরোপা জেতা ম্যানচেস্টার সিটির চেয়ে মাত্র ১ পয়েন্টে পিছিয়ে থেকে মৌসুম শেষ করেছে তারা।
সেদিক থেকে রিয়ালের শুরুটা ভালো ছিল না। মৌসুমের শুরুতে তাদের পারফরম্যান্স ছিল চরম হতাশার। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে কার্লো আনচেলত্তির শিষ্যরা জিতে নেয় লা লিগার শিরোপা। অনেক পয়েন্টের ব্যবধানে শিরোপা ঘরে তোলে লস ব্লাঙ্কোসরা। ৩৮ ম্যাচে ৮৬ পয়েন্ট তোলে তারা, দুই নম্বরে থাকা বার্সেলোনার পয়েন্ট ছিল ৭৩। লা লিগা জিতে এবার চিরচেনা আঙিনা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা ঘরে তোলার অপেক্ষায় তারা।
মৌসুমে পারফরম্যান্সের হিসাব কষলে আজকের রাতের ম্যাচে লিভারপুলকে এগিয়ে রাখতে হবে। এবারের মৌসুমে রিয়ালের চেয়ে বেশি দাপট জারি রেখে খেলেছে লিভারপুল। এই মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে রিয়াল যত ম্যাচ হেরেছে, সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে তার চেয়ে কম ম্যাচ হেরেছে লিভারপুল। তাই ফাইনালে ইংলিশ দলটির গায়েই ফেভারিটের তকমা।
খুব বাজে শুরু করেও রিয়ালের লা লিগা শিরোপা জেতা এবং চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে ওঠার পেছনে যার সবচেয়ে বেশি অবদান, তিনি করিম বেনজেমা। ফরাসি এই স্ট্রাইকার স্বপ্নের মতো সময় পার করছেন। দলের দুঃসময়ে আলোক বর্তিকা হাতে ছুটে প্রতিপক্ষের জালের ঠিকানা করে নেওয়াটা অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছেন তিনি।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের এবারের আসরে ১১ ম্যাচে ১৫ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় শীর্ষে আছেন বেনজেমা। ১৫ গোলের ১০টিই নকআউট পর্বে করেছেন তিনি। এবারের লা লিগারও সর্বোচ্চ গোলদাতা বেনজেমা। ৩২ ম্যাচে ২৭ গোল করেছেন ৩৪ বছর বয়সী এই স্ট্রাইকার। ২০২১-২২ মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৪৫ ম্যাচে বেনজেমার গোল ৪৪টি, অ্যাসিস্টও করেছেন ১৫টি।
লড়াইটা বেনজেমা বনাম মোহামেদ সালাহর মধ্যেও। যদিও সালাহর নাম সেভাবে উচ্চারিত হচ্ছে না। কারণ লিভারপুলের তারকা এই ফরোয়ার্ড গত কয়েক সপ্তাহ ধরে চোটে ভুগছেন। এ ছাড়া ভার্জিল ফন ডাইক, ফাবিনিয়ো ও থিয়াগোও চোটে ভুগছেন। ফাইনালের জন্য তারা কতোটা ফিট, সেই প্রশ্নও আছে।
যদিও প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে আছেন সালাহ। মিশরীয় এই ফরোয়ার্ড বারবার বলেছেন, তিনি তার ক্যারিয়ারের 'সবচেয়ে বাজে' মুহূর্তের বদলা নেবেন। অসাধারণ পারফরম্যান্সে লিভারপুলকে ২০১৮ চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে তুলেছিলেন তিনি। কিন্তু ফাইনালে জার্সিও রামোসের চ্যালেঞ্জে কাঁধে চোট নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে মাঠ ছাড়তে হয়েছিল সালাহকে।
সালাহর স্বপ্নভঙ্গের সেই ম্যাচে লিভারপুল হেরে যায় ৩-১ গোলে। চার বছর আগের প্রতিশোধ এবার নিতে চান তিনি। লিভারপুল শিরোপা ঘরে তোলে নাকি রিয়াল নিজেদেরই আরও ছাড়িয়ে যাবে, সেটা জানতে আরও কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে সবাইকে।