অন্ধকার পেরিয়ে আলো ঝলমলে দিন

সকালটা বিদঘুটে, যেখানে শুধু ঘুটঘুটে অন্ধকার। নেই আলোর কোনো অস্তিত্ব। নিকষ কালো অন্ধকারে আলপিন কুড়ানোর মতো অবস্থা। এমন সময়ে আলোক বর্তিকা হাতে ছুটে এলেন মুশফিকুর রহিম ও লিটন কুমার দাস। কাণ্ডারী হয়ে কেবল অন্ধকারই দূর করলেন না তারা, গড়লেন বিশ্ব রেকর্ডও। স্বস্তি নিয়ে মিরপুর টেস্টের প্রথম দিন শেষ করলো বাংলাদেশ।
২৪ রানে ৫ উইকেট হারানো বাংলাদেশই প্রথম দিন শেষ করেছে ২৭৭ রান তুলে। দুঃসহ সেই সকালের পর আর খারাপ সময় আসতে দেননি দুই সেঞ্চুরিয়ান মুশফিক ও লিটন। মুশফিক ১১৫ ও লিটন ১৩৫ রানে অপরাজিত আছেন। ইতোমধ্যে তাদের জুটি থেকে ২৫৩ রান পেয়েছে বাংলাদেশ। যা যেকোনো উইকেটে বাংলাদেশের পঞ্চম সর্বোচ্চ রানের জুটি।
অথচ সকালের ৪২ মিনিট কতোই না যন্ত্রণাদায়ক ছিল বাংলাদেশের জন্য। মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশে অধিনায়ক মুমিনুল হক। দুই ওপেনার উইকেটে যেতে না যেতেই বেজে ওঠে করুণ সুর। স্কোরকার্ডে কোনো রান যোগ হওয়ার আগেই ফিরে যান মাহমুদুল হাসান জয়। দলীয় ৬ রানে থামেন তামিম ইকবাল, তিনিও পারেননি রানের খাতা খুলতে।
এরপর একে একে ফিরে যান অধিনায়ক মুমিনুল হক, নাজমুল হোসেন শান্ত ও সাকিব আর হাসান। শান্ত ৮ ও মুমিনুল ৯ রান করলেও সাকিব প্রথম বলেই এলবিডব্লিউর শিকার হন। লঙ্কান দুই্ পেসার কাসুন রাজিথা ও আসিথা ফার্নান্দোর তোপে সাত ওভারের মধ্যেই কোণঠাসা হয়ে পড়ে বাংলাদেশ।
এমন ধ্বংস্তূপ থেকে দলকে উদ্ধার করার গুরুদায়িত্ব নেন মুশফিক ও লিটন। দ্রুতই উইকেটে নিজেদের মানিয়ে নিয়ে ছন্দময় ব্যাটিং করতে থাকেন তারা। সেঞ্চুরিতে পৌঁছাতে ১৪৯ বল খেলেন লিটন, তার ইনিংসে আছে ১৩টি চারের মার। ৩৩তম টেস্ট খেলতে নামা লিটনের এটা তৃতীয় সেঞ্চুরি। এরপর ২১৮ বলে ১১টি চারে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন মুশফিক। এটা তার নবম টেস্ট সেঞ্চুরি। কদিন আগেই শেষ হওয়ায় চট্টগ্রাম টেস্টেও সেঞ্চুরি করেছিলেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান।
২৫৩ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ার পথে কয়েকটি রেকর্ড নিজেদের করে নিয়েছেন মুশফিক-লিটন। দলকে মহা বিপদ থেকে উদ্ধার করার দিনে ৬৩ বছরের পুরনো বিশ্ব রেকর্ডও ভেঙেছেন তারা। ২৫ বা এর চেয়ে কম রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ষষ্ঠ উইকেটে সর্বোচ্চ রানের বিশ্ব রেকর্ড গড়া জুটিটি ৬৩ বছর আগের। যে জুটির সাক্ষী ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। তখন ছিল ডাক্কা স্টেডিয়াম।
১৯৫৯ সালে এই স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও পাকিস্তান। সেই ম্যাচে ২২ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর ষষ্ঠ উইকেটে পাকিস্তানের ওয়ালিস মাথিয়াস ও সুজাউদ্দিন গড়েন ৮৬ রানের জুটি। যা এতোদিন ধরে সর্বোচ্চ ছিল। দলকে খাদের কিনারা থেকে টেনে তোলার লড়াইয়ে বহু পুরনো সেই রেকর্ড ভেঙে টেস্ট ইতিহাসে নতুন পাতা যোগ করলেন মুশফিক ও লিটন।
আরও একটি রেকর্ড নিজেদের করে নেন মুশফিক ও লিটন। ষষ্ঠ উইকেটেও বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের জুটি গড়ে ফেলেছেন তারা। আগের সর্বোচ্চ রানের জুটিতেও ছিল মুশফিকের নাম। ২০০৭ সালে কলম্বোতে ষষ্ঠ উইকেটে মোহাম্মদ আশরাফুল ও মুশফিক ১৯১ রান করেন। যা এতদিন সর্বোচ্চ রানের ছিল। মুশফিক-লিটন বীরত্বে ওই জুটিটা নেমে গেল দুই নম্বরে।
টেস্টে মুশফিক-লিটনের রসায়ণ বরাবরই দারুণ। ১৬ ইনিংসে এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো শতরানের জুটি গড়লেন তারা। শতরানের জুটিতে সবার ওপরে হাবিবুল বাশার ও জাভেদ ওমর বেলিম জুটি। জাতীয় দলের সাবেক এই দুই ব্যাটসম্যান ৩২ ইনিংসে পাঁচবার শতরানের জুটি গড়েছেন।