‘১১ জন যদি ১০০ করে, তাহলে তো ১১০০ রান হবে’
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম ইনিংসে মুশফিকুর রহিম ও লিটন কুমার দাসের জুটিতে বড় সংগ্রহের পথে এগিয়ে যাচ্ছিল বাংলাদেশ। ৩৮৫ রানের মাথায় লিটন আউট হতেই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে ব্যাটিং লাইন আপ। দ্রুত ফিরে যান তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসানরা। শেষ ৮০ রানের মধ্যে বাকি ৬ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
টেস্টে বাংলাদেশের ইনিংসে এমন দৃশ্য প্রায়ই দেখা যায়। ড্র হওয়া চট্টগ্রাম টেস্টের পর এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে অদ্ভুত এক ব্যাখ্যা দিলেন মুমিনুল হক। বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক জানালেন, দলের সবাই রান করেন না। ১১ জন রান করলে তো ১১০০ রান হয়ে যাবে। উইকেট, ম্যাচের ফল, নিজের ব্যাটিং, পেস বোলিং, প্রাপ্তিসহ আরও অনেক বিষয় নিয়ে কথা বললেন মুমিনুল।
প্রশ্ন: উইকেট কি আপনার প্রত্যাশা মতো ছিল?
মুমিনুল হক: চট্টগ্রামের উইকেট প্রায় একই রকম থাকে। এর আগে তো এমন উইকেটে এই সময়ে স্পিনাররা সাহায্য পায়নি। এবার কিছুটা সাহায্য পেয়েছে। চট্টগ্রামের উইকেট সব সময় এরকমই থাকে।
প্রশ্ন: ফল বের করা সম্ভব ছিল?
মুমিনুল: আমার কাছে মনে হয় আরেকটু যদি মাঝের সময়ে একটা উইকেট নেওয়া যেত তাহলে ম্যাচের ফল অন্যরকম হতে পারত।
প্রশ্ন: অধিনায়ক হিসেবে পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট?
মুমিনুল: একটা টেস্টে ড্র হওয়ার পর সবাই যেহেতু রানে আছে, সবাই যেহেতু দল হিসেবে খেলতে পেরেছে…ব্যাটসম্যান হোক বা বোলার দলগতভাবে আমরা যখন ভালো খেলি তখন কিন্তু ভালো ফল পাই। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় যখন ভালো করি তখন দল ভালো পজিশনে থাকে। অবশ্যই এটা ঢাকায় কাজে দেবে।
প্রশ্ন: আপনি রান পাননি, নিজের ব্যাটিং নিয়ে চিন্তিত?
মুমিনুল: আমার ব্যাটিং নিয়ে যেটা… আমি অতো উদ্বিগ্ন না, চিন্তিতও না। সত্যি কথা বেশি অত বেশি চিন্তিত না।
প্রশ্ন: মাঝে বাংলাদেশের ব্যাটিং অনেকটাই থমকে গিয়েছিল, রান আসছিল না। শ্রীলঙ্কাও ধীর গতিতে রান তুলেছে। বাংলাদেশ যদি আরেকটু আক্রমণাত্মক খেলতো, ফল বের করতে পারতো কিনা?
মুমিনুল: যদি পাঁচদিন খেলা খেলা দেখে থাকেন…ওদের ব্যাটিংও দেখেন আমাদের ব্যাটিংও দেখেন, এই উইকেটে আপনি টিকে থাকতে পারবেন। কিন্তু যদি আপনি বেশি এক্সাইটেড হয়ে যান তাহলে উইকেট পড়ার সযোগ বেশি থাকবে। লিটন আউট না হলে হয়তো আমরা ওই সুযোগটা (আক্রমণাত্মক) নিতে পারতাম। যেটা সুযোগটা নিতে গিয়ে ওই সময়ে ২-৩ উইকেট পড়ে যায়। তামিম, সাকিব ভাই আউট হলো। লিটনও আউট হলো। লিটন যদি এক ঘণ্টা মুশফিক ভাইয়ের সঙ্গে খেলতে পারত তাহলে হয়তো অন্যরকম হতে পারত। চট্টগ্রামের এই উইকেটে এক নিতে পারেন। কিন্তু বেশি এক্সেলারেট করতে গেলে আউট হওয়ার সুযোগ বেশি থাকে।
প্রশ্ন: এই ম্যাচ থেকে আপনাদের প্রাপ্তি কী?
মুমিনুল: দলভাগে আমরা সবাই ভালো খেলতে পেরেছি এটাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। এটাই দরকার। সবাই যখন ভালো খেলি তখন দলের একটা ফল হয়।
প্রশ্ন: পেসারদের পারফরশ্যান্সে আপনি সন্তুষ্ট?
মুমিনুল: আমার কাছে মনে হয় পেস বোলাররা আরেকটু ভালো বল করতে পারত। যেহেতু পেস বোলারদের প্রতি সবার প্রত্যাশা একটু বেড়েছে। আমার কাছে মনে হয় প্রথম ইনিংসে আরেকটু ভালো বল করতে পারত। দ্বিতীয় ইনিংসেও শরিফুল ছিল না। খালেদ আরেকটু লেন্থে বল করতে পারলে আরেকটু খুশি হতে পারতাম। তাহলে ভালো হতো।
প্রশ্ন: এবং স্পিন?
মুমিনুল: স্পিনারদের এই উইকেটে উইকেট পাওয়া কঠিন। পেস বোলারদেরও তাই। আমার কাছে মনে হয়, স্পিনারদের ভেতরে নাঈম, সাকিব ভাই…তার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। প্রথম ইনিংসে ওদের রান বাড়ছিল। ওই সময়ে সাকিব ভাই ও তাইজুল এসে ওটা আটকে দিয়েছিল। আমি মনে করি প্রথম ইনিংসে সাকিব ভাইয়ের কাজ খুব ভালো ছিল। দ্বিতীয় ইনিংসেও। ভালো বল করেছে এই উইকেটে।
প্রশ্ন: এখানে ব্যাটিং বান্ধব উইকেটে খেললেও ঢাকায় স্পিন সহায়ক উইকেট হবে। মানিয়ে নিতে সমস্যা হবে কিনা?
মুমিনুল: আপনি বিশ্বের যেখানেই খেলেন না আপনাকে সব কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে। এটা পুরোপুরি মানসিক বিষয়। আমরা তো চট্টগ্রামের উইকেট, ঢাকার উইকেট আমরা সারাবছরই খেলতে থাকি। বিশেষ করে আমরা ঢাকাতেই সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলি। আমার মনে হয়, আমরা জানি আসলে স্পিন কিভাবে খেলতে হয়। পেস কিভাবে খেলতে হয়। এখানে স্পিন আস্তে আসে। ঢাকায় একটু জোরে। কুইক টার্ন করবে, ভেতরে ঢুকবে। মানসিকভাবে সবাই মানিয়ে নেবে। আমার কাছে মনে হয় সবাই মানিতে নিতে পারবে।
প্রশ্ন: অতিরিক্ত গরমে পারফরম্যান্সে কোথাও ঘাটতি দেখছেন?
মুমিনুল: আমার কাছে মনে হয় না। সবাই তো ভালো পারফর্ম করলো দেখলাম। আপনারাও দেখেছেন। বোলাররা ভালো বল করেছে। লং টার্ম বল করেছে। ব্যাটসম্যানরাও ভালো করেছে। ওদের দলেও একশ আছে। আমাদের দলেও। আমার মনে হয় না গরম প্রভাব ফেলেছে। আপনি ক্রিকেট খেলতে নেমে এতোকিছু চিন্তা করতে পারবেন না। যদি গরম হয়েই থাকে মানিয়ে নিয়ে খেলতে হবে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সব কিছুর সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে।
প্রশ্ন: টেস্টে বাংলাদেশের ব্যাটিং ধস হচ্ছে, এবারও হয়েছে। শান্তর পর আপনি দ্রুত আউট হন। এরপর লিটন, তামিম ও সাকিব দ্রুত আউট ফিরে যান। এটার ব্যাখ্যায় কী বলবেন?
মুমিনুল: একটা দলে তো ১১ জনের পারফর্ম করা কঠিন তাই না। ১১ জন যদি একশ করে তাহলে তো রান ১১০০ হবে। আমার কাছে মনে হয় ক্রিকেট খেলাটাই তো এরকম। হয় দুজন পারফর্ম করবে বা তিনজন পারফর্ম করবে। যারা করবে তারা বড় করবে। এটা বড় কোনো বিষয় নয়।