‘লাভের আশায় বিপিএলে আসিনি’

খেলা

19 January, 2022, 08:20 pm
Last modified: 19 January, 2022, 08:27 pm
বিপিএলে মালিকানা কেনা, দল নিয়ে পরিকল্পনা, এবারের দলটির কাছে আশা, বড় প্ল্যাটফর্মে কোম্পানির মার্কেটিং, বিনোয়োগের উদ্দেশ্যসহ আরও অনেক বিষয় নিয়ে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সঙ্গে কথা বলেছেন সিলেট সানরাইজার্সের চেয়ারম্যান ইবতিয়াজ জয়।

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) প্রাইজমানি ঘোষণার পর চরম সমালোচনা হয়েছিল। বিশ্বের অন্যান্য লিগগুলোর তুলনা টেনে বিপিএলের চ্যাম্পিয়ন দলের জন্য ঘোষণা করা ১ কোটি টাকার পুরস্কারের ব্যাপারটি নিয়ে বিসিবিকে কাঠগড়ায় তোলেন অনেকেই। যদিও এই ব্যাপারটি একেবারেই গুরুত্বহীন সিলেট সানরাইজার্সের স্বত্বাধিকারী শেখ কুদরত ই ইবতিয়াজ জয়ের কাছে। 

তার কাছে এটা কেবলই সম্মানী। কেবল বিপিএলের প্রাইজমানিই নয়, ঘরোয়া ক্রিকেটের সবচেয়ে জমজমাট আসরটি থেকে আয় করারও উদ্দেশ্য নেই ইবতিয়াজ জয়ের। প্রগতি গ্রিন অটো রাইস মিলস লিমিটেডের ব্যানারে দল কিনে কোম্পানির প্রচার ও ক্রিকেটের উন্নয়ন করাই লক্ষ্য কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদে থাকা তরুণ এই ব্যবসায়ীর। 

বিপিএলে মালিকানা কেনা, দল নিয়ে পরিকল্পনা, এবারের দলটির কাছে আশা, বড় প্ল্যাটফর্মে কোম্পানির মার্কেটিং, বিনোয়োগের উদ্দেশ্যসহ আরও অনেক বিষয় নিয়ে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সঙ্গে কথা বলেছেন সিলেট সানরাইজার্সের চেয়ারম্যান ইবতিয়াজ জয়। বিপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজি স্বত্বাধিকারীদের নিয়ে টিবিএসের বিশেষ সিরিজে আজ থাকছে তৃতীয় পর্ব।     

দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড: প্রথমবারের মতো বিপিএলের মালিকানা নিয়েছেন। আসর ঘনিয়ে এসেছে, প্রস্তুতি কেমন হয়েছে দলের?

শেখ কুদরত ই ইবতিয়াজ জয়: আলহামুলিল্লাহ, সব কাজ প্রায় শেষের দিকে। সবকিছু গুছিয়ে ফেলেছি। আমাদের একটু ঝামেলা হয়েছিল শ্রীলঙ্কান দুজন খেলোয়াড় আসতে পারছে না বলে। তাদের বিকল্প আমরা নিয়ে নিয়েছি। সবকিছু ঠিকঠাকভাবেই এগোচ্ছে, দেখা যাক।

টিবিএস: দল নিয়ে কতোটা আশাবাদী, কেমন করতে পারে?

ইবতিয়াজ জয়: আমাদের দলটা ভালো হয়েছে। প্রস্তুতিও ভালো নিয়েছি আমরা। দল হিসেবে খেলতে পারলে আমাদের জার্নিটা লম্বা হতে পারে, আমি আশাবাদী। 

টিবিএস: ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার গল্পটা জানতে চাই। কী ভেবে ক্রিকেটে যুক্ত হওয়া? বিপিএলকেই কেন বেছে নিলেন?

ইবতিয়াজ জয়: ক্রিকেটে অবদান রাখার জন্যই বিপিএলে যুক্ত হওয়া। এর বাইরে তেমন কিছু নেই। আমি ছোট বেলায় ক্রিকেট খেলতাম। ওটা থেকে একটা ভালোবাসা কাজ করে। তো সেই ভাবনা থেকেই ক্রিকেটে অবদান রাখার জন্য বিপিএলের সঙ্গে যুক্ত হওয়া।  

টিবিএস: অবদান রাখার কথা বললে বলতে হয়, বিপিএল ক্রিকেটের উন্নয়নের জায়গা নয়। ক্রিকেটের উন্নয়নের জায়গা ঘরোয়া ক্রিকেট। আপনাদের কি কোনো পরিকল্পনা আছে ঘরোয়া ক্রিকেট নিয়ে কাজ করার?

ইবতিয়াজ জয়: ঘরোয়া ক্রিকেটেও যুক্ত হওয়ার ইচ্ছা আছে আমাদের। এটা আমাদের প্রথম পদক্ষেপ। এরপর আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেটে যাওয়ার ইচ্ছা আছে। ঘরোয়া ক্রিকেট নিয়ে কাজ করতে চাই আমরা। উন্নয়নের শেকড় ঘরোয়া ক্রিকেট, উন্নতি চাইলে এখানেই কাজ করতে হবে।  

টিবিএস: বিপিএলে যুক্ত হওয়ার আগে ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট কোনো কার্যক্রম ছিল আপনাদের?

ইবতিয়াজ জয়: কোম্পানির ব্যানার থেকে সেভাবে বড় আকারে কোনো কাজ করা হয়নি। তবে গোপালগঞ্জে আমি আমার নিজের দুই-তিনটি দল চালিয়েছি। দলগুলো প্রথম শ্রেণি ও দ্বিতীয় শ্রেণির ছিল। এ ছাড়া অনেকগুলো টুর্নামেন্ট আয়োজন করেছি। আসলে নিজে ক্রিকেট খেলেছি, অনূর্ধ্ব-১৭ পর্যন্ত খেলেছি। তো ভালোবাসার জায়গা থেকেই বড় পরিসরে যুক্ত হওয়া। 

টিবিএস: ফ্র্যাঞ্চাইজি ফি ও খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক বাবদ বিসিবিকে ৫ কোটি টাকার পে অর্ডার দিতে হয়েছে আপনাদের। এর বাইরেও বেশ খরচ আছে, সব মিলিয়ে বিপিএলে একটি দল চালাতে কতো খরচ হয় কিংবা এবার আপনাদের কতো খরচ হবে বলে মনে হচ্ছে?

ইবতিয়াজ জয়: বিপিএলে দল চালাতে বেশ টাকার প্রয়োজন। তবে এটা নিয়ে নিশ্চিতভাবে বলতে পারছি না। আমার প্রধান নির্বাহী এই ব্যাপারগুলো দেখছেন, তিনি বলতে পারবেন। 

টিবিএস: বিপিএল দিয়ে আপনার কোম্পানির যে প্রচার হবে, সেটা খরচের তুলনায় কতোটা কভার করবে?

ইবতিয়াজ জয়: মার্কেটিংয়ের ব্যাপারটি হিসাব-নিকাশ করেই এটা করা হয়েছে। মার্কেটিংয়ের যে ইনপুটটা এখানে আছে, সেটা যেন কভার করে। বিপিএল ঘরোয়া ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় মঞ্চ। এখান থেকে যে মার্কেটিং হবে, সেটা খারাপ নয়। 

টিবিএস: ১০-১২ কোটি টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে। যদিও এবারের বিপিএল আগের মতো জৌলুশপূর্ণ হচ্ছে না। অনেক তারকা ক্রিকেটার আসছে না। যেহেতু আপনি ব্যবসায়ী মানুষ, ব্যবসার ব্যাপারটা নিশ্চয়ই মাথায় থাকে। এতো খরচ করে এখান থেকে কতোটা পেতে পারেন? খরচটা কি উঠে আসবে? কিংবা লাভের কথা যদি বলি, সেটা কি সম্ভব?

ইবতিয়াজ জয়: লাভের জন্য বিপিএলে আসিনি, সত্যি বলতে লাভের আশায় বিপিএলে নাম লেখাইনি। 

টিবিএস: আপনি বলেছেন ভালোবাসা থেকে বিপিএলের সঙ্গে যুক্ত হওয়া। এরপরও আপনি ব্যবসায়ী হওয়ায় প্রশ্নটা আসছে, বিপিএল থেকে কি আয় করা সম্ভব?

ইবতিয়াজ জয়: একটা নির্দিষ্ট ব্রেক-ইভেন্টে যাবে যদি আগামী বছর পাঁচ বছরের জন্য দেয়। দীর্ঘমেয়াদে কাজ করার সুযোগ পেলে হয়তো একটা স্থিতিশীল অবস্থায় থাকা যাবে। স্বল্প মেয়াদের হলে সেটা সম্ভব নয়। পাঁচ বছরের জন্য হলে সম্ভব। তবে এখানে লাভের জন্য জন্য নয়, কর্পোরেট সোশ্যাল রেনপনসিবিলি বলতে পারেন। যেখানে কোম্পানির মার্কেটিংও হলো। 

টিবিএস: চ্যাম্পিয়ন দলের প্রাইজমানি ১ কোটি টাকা। এটা ঠিক আছে বলে মনে করেন?

ইবতিয়াজ জয়: এটা আসলে বিসিবি বলতে পারবে। এটা নিয়ে কিছু বলতে পারছি না। ফ্র্যাঞ্চাইজি নেওয়ার সময়ই এটা আমাদের জানানো হয়েছিল। তবে এটা আমাদের কাছে তেমন গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার নয়। আগেই বলেছি, লাভের আশায় বিপিএলের সঙ্গে যুক্ত হইনি। সেখানে প্রাইজমানি কতো, সেটা বড় কিছু নয়।    

টিবিএস: তাহলে বিপিএল আপনাদের কাছে ক্রিকেটে অবদান রাখা এবং কোম্পানির প্রচারের মঞ্চ? এটা কতোটা মূল্য যুক্ত করতে পারে আপনার কোম্পানিতে?

ইবতিয়াজ জয়: এখানকার মার্কেটিংটা মূল্যবান। তবে আবারও আমি বলছি পাঁচ বছরের চুক্তি হলে সেটা ভালো। তাতে পরিকল্পনা মতো কাজ করা যায়। আগামী আসরকে সামনে রেখে আগেই কাজ শুরু করা যায়। সারা বছর কাজ করার সুযোগ থাকে। এটা আমরা একটা টুর্নামেন্ট হিসেবে নিচ্ছি। পাঁচ বছরের জন্য হলে তখন ভালোভাবে চালানো যাবে। 

টিবিএস: আপনাদের দলের প্রচার-প্রচারণা খুব একটা দেখা যায়নি। কতোটা কাজ করেছেন?

ইবতিয়াজ জয়: এবার সত্যি বলতে এতো কম সময়ের মধ্যে হয়েছে যে, সব মানিয়ে নেওয়া যায়নি। এ ছাড়া কোভিডের কারণে কিছু বিধিনিষেধ চলে এলো। তাই ইচ্ছা থাকলেও অনেক কিছু করা যায়নি। তবে ইচ্ছা আছে আগামীতে আরও ভালোভাবে করার। 

টিবিএস: বিসিবি দীর্ঘমেয়াদীভাবে মালিকানা বিক্রি করবে, সেটা হলে নিশ্চয়ই মালিকানায় থাকতে চাইবেন?

ইবতিয়াজ জয়: জ্বি, অবশ্যই। বলা যায় দীর্ঘমেয়াদ পরিকল্পনা মাথায় রেখেই বিপিএলে নাম লেখানো। বিসিবি এভাবে ভেবে থাকলে সেটা দারুণ ব্যাপার হবে। এটা ফ্র্যাঞ্চাইজিদের পরিকল্পনা করার জন্য যেমন ভালো হবে, তেমনি টুর্নামেন্টের উন্নতির জন্য সহায়ক হিসেবে কাজ করবে। আমার মনে হয় সব ফ্র্যাঞ্চাইজিই চায় দীর্ঘমেয়াদে থাকতে। 

টিবিএস: আইপিএল মালিকানা না বদলানোয় দলগুলোর নামে খুব বেশি পরিবর্তন আসে না। দলগুলোর নির্দিষ্ট ভক্ত-সমর্থক গোষ্ঠী আছে। কিন্তু বিপিএলে সেটা নেই, প্রতিবার মালিকানার সঙ্গে সঙ্গে দলের নাম পরিবর্তন হয়। এটা কি টুর্নামেন্টের জনপ্রিয়তা নষ্ট করছে, জনপ্রিয়তা তৈরিকে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে? 

ইবতিয়াজ জয়: বারবার নাম পরিবর্তনের ফলে জনপ্রিয়তায় অবশ্যই বাধাগ্রস্ত হয়। নির্দিষ্ট ভক্ত-সমর্থক গোষ্ঠি গড়ে ওঠে না। আমি যতোটা জানতে পেরেছি, সামনের বছর পঁচে বছরের চুক্তি করবে বিসিবি। এবারই পাঁচ বছরের জন্য দেওয়ার কথা ছিল, সেটা হয়নি। আমাদের ধারণা দেওয়া হয়েছে, আগামী বছর পাঁচ বছরের জন্য করবে। সেটা করা হলে অবশ্যই দারুণ একটা ব্যাপার হবে।  

টিবিএস: বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে বড় পরিসরে কাজ করার পরিকল্পনা আছে আপনাদের?

ইবতিয়াজ জয়: আমরা ক্রিকেট একাডেমি করার কথা চিন্তা করছি। এটা একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। দেখা যাক আমরা কতোটা কী করতে পারি। সত্যি বলতে কোভিড পরিস্থিতির কারণে ইচ্ছা থাকার পরও অনেক কাজ করা সম্ভব হয় না। তবে বাংলাদেশের ক্রিকেটের উন্নয়নে একাডেমি তৈরির সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা আছে আমাদের। এ ছাড়া এই বছরই আমি ক্রিকেটে যুক্ত হলাম, সময় লাগবে। 

টিবিএস: আপনাদের কোম্পানি সম্পর্কে একটু জানতে চাই…

ইবতিয়াজ জয়: আমাদের অটো রাইস মিলের কোম্পানি। আমাদের ডিস্ট্রিবিউশন আছে, অটো রাইস মিল আছে। এ ছাড়া ইট তৈরি কারখানা, শিপিং লাইন, কনস্ট্রাকশন আছে, মূলত এ কাজগুলো করে থাকি আমরা আমাদের কোম্পানি থেকে। আমি এই কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক। আর সিলেট সানরাইজার্সের চেয়ারম্যান আমি। 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.