তাইজুল পারলেও পারেন না জয়-শান্ত-লিটনরা

খেলা

শান্ত মাহমুদ, চট্টগ্রাম থেকে
03 April, 2024, 08:55 pm
Last modified: 04 April, 2024, 04:07 am
শেষ বিকেলে বিপদ বাড়লেই নাইট ওয়াচম্যান করা হয় তাইজুলকে। অভিজ্ঞ এই স্পিনার উইকেটে যান, গড়ে তোলেন প্রতিরোধ। চার ইনিংসে তার রান ৮৯, বল খেলেছেন ১৮৪টি। দুই ক্ষেত্রেই যা ওপেনার জয়, অধিনায়ক শান্ত, লিটন ও শাহাদাতের চেয়ে বেশি।

বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা টেস্ট সিরিজে রান সংগ্রাহকের তালিকায় সবার ওপরে সিরিজসেরা কামিন্দু মেন্ডিস। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের জায়গা হয়েছে তিন নম্বর থেকে, শুরুতে মুমিনুল হক। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের তালিকার হিসাবে এরপর মেহেদী হাসান মিরাজ, জাকির হাসান। চার নম্বরে যার নাম, এই তালিকায় তার পেছনের দিকে থাকার কথা। ব্যাটসম্যানরা নিজেদের কাজ ঠিকঠাকভাবে করলে অন্তত তেমনই হওয়ার কথা, আর তাতেই দলের ভালো।  

রান সংগ্রাহকের তালিকায় বাংলাদেশের চতুর্থ সেরা তাইজুল ইসলাম। অথচ দলে তার জায়গা মেলে বোলার হিসেবে, বিশেষজ্ঞ স্পিনার হিসেবে খেলেন তিনি। কিন্তু লঙ্কানদের বিপক্ষে চরম ব্যাটিং ব্যর্থতার সিরিজে বোলিংয়ের পাশাপাশি ব্যাট হাতেও গুরুদায়িত্ব পালন করতে হয়েছে তাইজুলকে। বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞ বেশ কয়েকজন ব্যাটসম্যানের চেয়ে বেশি রান করেছেন বাঁহাতি এই স্পিনার।  

শেষ বিকেলে বিপদ বাড়লেই নাইট ওয়াচম্যান করা হয় তাইজুলকে। অভিজ্ঞ এই স্পিনার উইকেটে যান, গড়ে তোলেন প্রতিরোধ। টানা কয়েকটি ইনিংসে কাজটি করে দেখিয়েছেন তিনি। সিলেট টেস্টের প্রথম ইনিংসে বিপর্যয়ের মাঝে পুরোদস্তুর ব্যাটসম্যান ওয়ে ওঠেন তাইজুল, ৮০ বলে করেন ৪৭ রান। বল ও রান; দুটোই বাংলাদেশের ইনিংসের সর্বোচ্চ ছিল। পরের ইনিংসে ১৫ বলে করেন ৬ রান।

চট্টগ্রাম টেস্টেও একই তাইজুলকে দেখা গেছে। প্রথম ইনিংসে নাইট ওয়াচম্যান হিসেবে তিন নম্বরে নামা এই বাঁহাতি ৬১ বল টেকেন, যা বাংলাদেশের ইনিংসের তৃতীয় সর্বোচ্চ। তার করা ২২ রানও ইনিংসের তৃতীয় সেরা। দ্বিতীয় ইনিংসে নাইট ওয়াচম্যান হতে হয়নি তাকে। ৯ নম্বরে নেমে ২৮ বলে ১৪ রান করেন তিনি। সব মিলিয়ে দুই টেস্টে ১৮৪ বল খেলেছেন তাইজুল। যা বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে চতুর্থ সর্বোচ্চ। 

চার ইনিংসে তাইজুল রান করেছেন ৮৯। যা ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়, অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত, লিটন কুমার দাস ও শাহাদাত হোসেন দিপুর চেয়ে বেশি। তাইজুলের বল মোকাবিলা করা ও রানের সংখ্যা আরও বাড়তে পারতো। কিন্তু চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে বাকিদের মতো বাজে শট খেলে থামেন তিনি। তবে দুই টেস্টেই তিনি প্রমাণ করেছেন, চাইলেই উইকেটে টেকা যায়। এর জন্য দরকার কেবলই টেস্ট খেলার মানসিকতা।

ব্যাট হাতে অবদান রাখায় তাইজুলের ওপরে থাকা মুমিনুল চার ইনিংসে রান করেছেন ১৭৫, বল খেলেছেন ২৯৫টি। মিরাজ সমান ইনিংসে ২২৫ বল খেলে করেছেন ১৩২ রান। জাকির করেছেন ১০১ রান, বল খেলেছেন ১৭৩টি। তাইজুলের রান ৮৯, জাকিরের চেয়ে রান কম হলেও বল খেলেছেন বেশি। জাতীয় দলের হয়ে ৪৬টি টেস্ট খেলা তাইজুল খেলেছেন ১৮৪ বল। 

ইনিংস উদ্বোধনের দায়িত্ব থাকা জয় চার ইনিংসে রান করেছেন ৫৭, বল খেলেছেন ১২৪টি। নিজের ছায়া হয়ে থাকা অধিনায়ক শান্ত ৮১ বল খেলে করেছেন ৩২ রান। ব্যাটিং বিভাগের অন্যতম ভরসা ভাবা হলেও বরাবরই হতাশ করে আসা লিটনের রান ৬৭, বল খেলেছেন ১১৯টি। মিডল অর্ডারে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ ভাবা শাহাদাত সমান চার ইনিংসে করেছেন ৪১, বল খেলেছেন ৯৯টি। 

মনোযোগ ও ধৈর্য নিয়ে খেললে উইকেটে টেকা সম্ভব ছিল, আসতো রানও। শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং ও বোলার তাইজুলের চেষ্টা সেটার সবচেয়ে বড় প্রমাণ। এ ছাড়া দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং করা তুলনামূলক সহজ ছিল, চতুর্থ দিনের খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে জানান মুমিনুল। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের খেলা বলের সংখ্যা সেই সাক্ষ্য দেয়। খালেদ আহমেদ ছাড়া বাংলাদেশর বাকি ১০ জনই ২০ বলের বেশি খেলেছেন। অর্থাৎ, বেশিরভাগ ব্যাটসম্যান উইকেটে সেট হয়ে আউট হন। তাইজুল চেষ্টা করেন, সেট হয়ে সামাল দেন বিপর্যয়। বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান হয়েও তা পারেন না জয়, শান্ত, লিটনরা।    

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.