নিউজিল্যান্ডে ঐতিহাসিক জয় বাংলাদেশের

খেলা

23 December, 2023, 08:25 am
Last modified: 23 December, 2023, 11:02 am
স্বপ্নের জয় মিললো, এড়ানো গেল হোয়াইটওয়াশও। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে তাদের বিপক্ষে ১৯ ওয়ানডে খেলা বাংলাদেশের এটা প্রথম জয়।

পেস সহায়ক উইকেটে শাসন করলেন শরিফুল ইসলাম ও ম্যাচসেরা তানজিম হাসান সাকিব। ছড়ি ঘোরালেন মিডিয়াম পেসার সৌম্য সরকারও। এই তিন পেসারের আগুনে বোলিংয়ে অবিশ্বাস্যভাবে একশ রানের আগেই অলআউট নিউজিল্যান্ড। যে রান পাড়ি দিতে নেমে কোনো বেগই পোহাতে হলো না বাংলাদেশকে। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ওয়ানডেতে ঐতিহাসিক জয় পেল নাজমুল হোসেন শান্তর দল।

শনিবার নেপিয়ারে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে নিউজিল্যান্ডকে ৯ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। স্বপ্নের জয় মিললো, এড়ানো গেল হোয়াইটওয়াশও। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ১৯ ওয়ানডে খেলা বাংলাদেশের এটা প্রথম জয়। এই ফরম্যাটে দেশটিতে এর আগে তাদের একমাত্র জয় ছিল স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে। সব মিলিয়ে নিউজিল্যান্ডে ২০ ওয়ানডে খেলা বাংলাদেশের এটা দ্বিতীয় জয়।

ওয়ানডেতে উইকেটের ব্যবধানে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এটাই বাংলাদেশের সবচেয়ে সবচেয়ে বড় জয়, সব মিলিয়ে সপ্তম বড় জয়। আগের বড় জয়টি ছিল ৭ উইকেটে, ২০০৮ সালে মিরপুরে। ৪৫ ওয়ানডেতে কিউইদের বিপক্ষে এটা বাংলাদেশের একাদশতম জয়। ২০২২ সালে মাউন্ট মঙ্গানুইতে টেস্টে স্মরণীয় জয়ণীয় জয় পাওয়া বাংলাদেশ এবার ওয়ানডেতেও পেল জয়ের স্বাদ। বাকি কেবল টি-টোয়েন্টি, অধরা জয়ের খোঁজে আগামী ২৭ ডিসেম্বর তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে কিউইদের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। 

টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নেমে বাংলাদেশের পেসারদের অসাধারণ বোলিংয়ে দিক হারিয়ে বসে নিউজিল্যান্ড, কিউইরা আর আলোর পথ খুঁজে পায়নি। মাত্র ৩১.৪ ওভারে ৯৮ রানে অলআউট হয়ে যায় স্বাগতিকরা। দলটির চারজন ব্যাটসম্যান কেবল দুই অঙ্কের রান করেন, সর্বোচ্চ রানের ইনিংস ২৬। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের বিপক্ষে এটাই নিউজিল্যান্ডের সর্বনিম্ন দলীয় সংগ্রহ। নিউজিল্যান্ডের সবকটি উইকেটই নেন বাংলাদেশের পেসাররা। দ্বিতীয়বারের মতো ওয়ানডেতে প্রতিপক্ষের সব উইকেট নিলেন তারা। এরআগে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে এই কীর্তি ছিল বাংলাদেশের পেসারদের।

ছোট লক্ষ্য তাড়ায় উইকেট না হারালেও শুরুতেই বিপাকে পড়তে হয় বাংলাদেশকে। চোখের সমস্যায় মাঠ ছাড়তে হয় সৌম্য সরকারকে। এরপর অবশ্য আর বেড় পেতে হয়নি, জুটি গড়ে দলকে জয়ের খুব কাছে পৌঁছে দেন এনামুল হক বিজয় ও অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। একেবারে কাছে গিয়ে বিজয় আউট হলেও ওয়ানডে ক্যারিয়ারের সপ্তম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া শান্ত দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন। 

১৫.১ ওভারেই এক উইকেট হারিয়ে স্মরণীয় জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। সবচেয়ে বেশি বল হাতে রেখে জেতার দিক থেকে এটা বাংলাদেশের তৃতীয় বড় জয়, বিদেশের মাটিতে সবচেয়ে বড়। এদিন ২০৯ বল হাতে রেখে জয়ের বন্দরে পৌঁছায় সফরকারীরা। বল হাতে রেখে জেতার দিক থেকে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে, ২০০৯ সালে চট্টগ্রামে ২২৭ বল বাকি থাকতেই বিজয় নিশান ওড়ায় ঘরের মাঠের দলটি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জয় আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে, গত মার্চে সিলেটে বাংলাদেশ ১০ উইকেটের জয় নিশ্চিত করে ২২১ বল হাতে রেখে।   

জয়ের লক্ষ্যে সাবধানী শুরু করে বাংলাদেশ, কিন্তু পঞ্চম ওভারে মাঠ ছাড়তে হয় সৌম্যকে। চোখে কিছু একটা পড়ে বাঁহাতি এই ওপেনারের। শুরুতে পানি দিয়ে পরিষ্কার করার চেষ্টা করেও লাভ হয়নি। ফিজিও আসার পর ড্রপ দিয়েও চেষ্টা করা হয়, তাতেও সমস্যা না মেটায় বাধ‍্য হয়ে মাঠ ছাড়ের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ১৬৯ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলা বাংলাদেশের এই ওপেনার। মাঠ ছাড়ার আগে ১৬ বলে ৪ রানে ব্যাটিং করছিলেন তিনি। 

যদিও এতে কোনো সমস্যা হয়নি বাংলাদেশের, দ্বিতীয় উইকেটে দাপুটে ব্যাটিংয়ে ৫০ বলে ৬৯ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশকে জয়ের খুব কাছে পৌঁছে দেন বিজয় ও শান্ত। ৩৩ বলে ৭টি চারে ৩৭ রান করে আউট হন বিজয়। ৫২ বলে ৮টি চারে ৫১ রানে অপরাজিত থাকেন সাকিব আল হাসানের অবর্তমানে নেতৃত্ব পাওয়া শান্ত। বাংলাদেশের যাওয়া একমাত্র উইকেটটি নেন কিউই পেসার উইলিয়াম ও'রোক।

এরআগে নিউজিল্যান্ডকে পথ ভুলিয়ে দেন বাংলাদেশের তিন পেসার শরিফুল, তানজিম ও সৌম্য। তিনজনই ৩টি করে উইকেট নেন। ৭ ওভারে ২টি মেডেনসহ মাত্র ১৪ রান খরচায় ৩টি উইকেট নেন ম্যাচসেরা তানজিম। ওয়ানডেতে এটাই তার সেরা বোলিং। ৭ ওভারে ৩ উইকেট নেওয়া শরিফুলের খরচা ২২ রান। ৬ ওভারে একটি মেডেনসহ ১৮ রানে ৩ উইকেট নেন সৌম্য। বাকি উইকেটটি নেন হাসান মাহমুদের জায়গায় সুযোগ পাওয়া মুস্তাফিজুর রহমান। ৭.৪ ওভারে ৩৬ রান দেন তিনি।

বাংলাদেশের পেসারদের তোপে দিক হারানো কিউইদের পক্ষে কিছুটা সময় লড়েছেন উইল ইয়াং ও অধিনায়ক টম ল্যাথাম। ৪৩ বলে ৩টি চারে ইনিংস সেরা ২৬ রান করেন ইয়াং। ২১ রানে আসে ল্যাথামের ব্যাট থেকে। এ ছাড়া জশ ক্লার্কসন ১৬ ও আতিথ্যিয়া অশোক ১০ রান করেন। স্বাগতিকদের আর কোনো ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কের রান করতে পারেননি। 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.