রোহিতের অনেক রেকর্ড গড়ার ম্যাচে আফগানদের উড়িয়ে দিল ভারত
ব্যতিক্রমী কিছু না ঘটলে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ভারত জিতবে, এটা অনুমেয় ব্যাপার। চলমান বিশ্বকাপের নবম ম্যাচে সেটাই হয়েছে। ভারতের জয় পাওয়া তাই বড় কোনো খবর নয়। বড় খবর ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মার খুনে ইনিংসটি। এই ইনিংসটি খেলার পথে বেশ কয়েকটি রেকর্ড নিজের করে নিয়েছেন ডানহাতি এই ওপেনার। ইনিংসটি দিয়ে ভারত অধিনায়ক পেছনে ফেলেছেন শচিন টেন্ডুলকার, কপিল দেব, ক্রিস গেইলদের মতো ব্যাটসম্যানদের গড়া কীর্তিকে।
বুধবার দিল্লির অরুন জেটলি স্টেডিয়ামে ব্যাটে-বলে শাসন করে আফগানদের ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে উড়িয়ে দিয়েছে ভারত। বিশ্বকাপ আয়োজকদের এটা টানা দ্বিতীয় জয়, প্রথম ম্যাচে তারা হারায় রেকর্ড পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে। এবার আফগানদের দুমড়ে-মুচড়ে দিয়ে দুইয়ে দুই মিলিয়ে নিলো শিরোপা প্রত্যাশী দলটি।
টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নামে আফগানিস্তান। অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহিদি ও আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের হাফ সেঞ্চুরির সঙ্গে আরও কয়েকটি ছোট ইনিংসে ৮ উইকেটে ২৭২ রান তোলে আফগানরা। জবাবে রোহিতের দাপুটে ব্যাটিংয়ে আফগানিস্তানের দেওয়া লক্ষ্য ভারতের কাছে মামুলি হয়ে ওঠে। তার রেকর্ড গড়া সেঞ্চুরির সঙ্গে বিরাট কোহলির হাফ সেঞ্চুরি ও ইশান কিশানের পঞ্চাশ ছুঁইছুঁই ইনিংসে ২ উইকেটেই জয় তুলে নেয় ভারত, তখনও বাকি ছিল ৯০ বল।
এক ইনিংস দিয়ে সব রেকর্ড নিজের করে নেওয়ার পণ নিয়ে হয়তো ব্যাটিং করতে নেমেছিলেন রোহিত। শুরু থেকেই আফগান বোলারদের ওপর দিয়ে ঝড় বইয়ে দেন ভারত অধিনায়ক। ৬৩ বলে ১১টি চার ও ৪টি ছক্কায় সেঞ্চুরি পূর্ণ করে কয়েকটি রেকর্ডে নিজের নাম তোলেন ম্যাচসেরা রোহিত, কিছু রেকর্ডে হয়ে ওঠেন রাজা। মহাকাব্যিক এই ইনিংস খেলার পথে বিশ্বকাপে ভারতের চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে বিশ্বকাপে ১ হাজার রানের পৌঁছান তিনি।
১ হাজার ১০৯ রান নিয়ে ভারতের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে রোহিত তৃতীয়, তার সামনে আছেন কোহলি ও দেশটির ব্যাটিং বিস্ময় শচিন টেন্ডুলকার। তালিকার সর্বশেষ ও চার নম্বরে ভারতের ইতিহাসের অন্যতম সফল অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলী। বিশ্বকাপে ১৯ ইনিংসে হাজার রানে পৌঁছান রোহিত, যা অস্ট্রেলিয়ার ডেভিড ওয়ার্নারের সঙ্গে যৌথভাবে দ্রুততম। এতোদিন রেকর্ডটি ছিল শচিন ও দক্ষিণ আফ্রিকার এবিডি ভিলিয়ার্সের, তারা ২০ ইনিংসে করেন ১ হাজার রান।
৬৩ বলে সেঞ্চুরি করে বিশ্বকাপে ভারতের ইতিহাস নতুন করে লিখেছেন রোহিত, বিশ্ব আসরে ভারতের কোনো ব্যাটসম্যানের পক্ষে এটাই দ্রুততম সেঞ্চুরি। দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ডটি ছিল কপিল দেবের, ১৯৮৩ বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক ওই আসরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অপরাজিত ১৭৫ রানের ইনিংস খেলার পথে ৭২ বলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেছিলেন। বিশ্বকাপে এটা রোহিতের সপ্তম সেঞ্চুরি, যা বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ। এই রেকর্ডে তিনি পেছনে ফেলেছেন ৬টি সেঞ্চুরির মালিক শচিনকে।
ওয়ানডেতে এটা রোহিতের ৩১তম সেঞ্চুরি, যা এই ফরম্যাটের ইতিহাসে এবং ভারতের পক্ষে তৃতীয় সর্বোচ্চ। এ পথে তিনি পেছনে ফেলেছেন ৩০টি সেঞ্চুরির মালিক অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি রিকি পন্টিংকে। ৫টি সেঞ্চুরি মারার ইনিংসটি দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ডও গড়েছেন রোহিত। ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান তিন ফরম্যাট মিলিয়ে ৪৭৩ ইনিংসে ৫৫৬টি ছক্কা মেরেছেন, যা ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বোচ্চ। ৫৫৩টি ছক্কা মারা ক্রিস গেইল নেমে গেছেন দুই নম্বরে।
রোহিতের রেকর্ড গড়া ইনিংসটি শেষ পর্যন্ত ২৬তম ওভারে থামে। আফগান লেগ স্পিনার রশিদ খানের বলে বোল্ড হওয়ার আগে ৮৪ বলে ১৬টি চার ও ৫টি ছক্কায় ১৩১ রান করেন তিনি। এর আগে ভারতের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন শুভমান গিলের অবর্তমানে ইনিংস উদ্বোধন করা ইশান কিশান, ৪৭ বলে ৫টি চার ও ২টি ছক্কায় ৪৭ রান করেন তিনি। ২ উইকেট যাওয়ার পর জয় তুলে নেওয়ার বাকি কাজটুকু সারেন কোহলি ও শ্রেয়াস আইয়ার। কোহলি ৫৬ বলে ৬টি চারে ৫৫ ও আইয়ার ২৩ বলে একটি করে চার ও ছক্কায় ২৫ রানে অপরাজিত থাকেন। আফগানদের পক্ষে ২টি উইকেটই নেন রশিদ।
এর আগে ব্যাটিং করতে নামা আফগানরা খুব একটা ভালো শুরু করতে পারেনি, উদ্বোধনী জুটিতে ৩২ রান পায় তারা। ইনিংসের সপ্তম ওভারে ইব্রাহিম জাদরান উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে থামেন। রহমানউল্লাহ গুরবাজের সঙ্গে রহমত শাহর জুটিও দীর্ঘ হয়নি। দলীয় ৬৩ রানে গুরবাজকে থামান ভারতের অলরাউন্ডার হার্দিক পান্ডিয়া। দুই বল পরই বিদায় নিতে হয় রহমতকেও।
দুই বলের ব্যবধানে দুই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া দলকে পথ দেখাতে শুরু করেন শহিদি ও ওমরজাই। চতুর্থ উইকেটে ১২৮ বলে ১২১ রান যোগ করেন এ দুজন। ওমরজাইয়ের বিদায়ের পর মোহাম্মদ নবীর সঙ্গে ৪১ রানের জুটি গড়েন শহিদি। আফগান অধিনায়ক ৮৮ বলে ৮টি চার ও একটি ছক্কায় ইনিংস সেরা ৮০ রান করেন। বিশ্বকাপে এটা তার তৃতীয় হাফ সেঞ্চুরি এবং ওয়ানডের ১৭তম। ৬৯ বলে ২টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৬২ রান করেন ওমরজাই। এটা তার দ্বিতীয় ওয়ানডে হাফ সেঞ্চুরি, বিশ্বকাপের প্রথম।
গুরবাজ ২১, ইব্রাহিম ২২, রহমত ১৮, নবী ১৯, রশিদ ১৯ ও মুজিব ১০ রান করেন। ইনিংসগুলো ছোট হলেও দলের মাঝারি সংগ্রহ গড়ার পথে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। আগুনে বোলিং করা বুমরাহ ১০ ওভারে ৩৯ রানে ৪টি উইকেট নেন। ৭ ওভারে ৪৩ রানে ২টি উইকেট নেন পান্ডিয়া। একটি করে উইকেট পান শার্দুল ও কুলদীপ। মোহাম্মদ সিরাজ ও রবীন্দ্র জাদেজা কোনো উইকেট পাননি।