বিশ্বকাপ: হৃদয়সহ যে পাঁচ ক্রিকেটারের দিকে থাকবে নজর
আগামী ৫ অক্টোবর ভারতে পর্দা উঠবে ওয়ানডে বিশ্বকাপের। প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে শেষবারের মতো নিজেদের ঝালিয়ে নিচ্ছে দলগুলো। বিশ্ব আসরটিতে বিরাট কোহলি, বেন স্টোকস, বাবর আজমদের মতো তারকা ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স দেখার অপেক্ষায় সবাই। এবারের বিশ্বকাপে নজর থাকবে এমন কয়েকজন ক্রিকেটারের দিকেও, যারা বিশ্বমঞ্চে আলো ছড়িয়ে নিজেদের করে তুলতে পারেন অনন্য। তেমন পাঁচজনকে নিয়ে এই আয়োজন।
তাওহিদ হৃদয় (বাংলাদেশ): ২০২০ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী বাংলাদেশ দলের সদস্য তাওহিদ হৃদয়। তিন বছর পর জাতীয় দলের হয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে অভিষেক হওয়া মিডল অর্ডার এ ব্যাটসম্যানের মেধা ও সক্ষমতায় বিশ্বাস রেখেছে বাংলাদেশ। বিপিএলে দারুণ ব্যাটিং করার পর গেল মার্চে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক হয় ২২ বছর বয়সী হৃদয়ের। এরপর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের দলেও সুযোগ পেয়ে যান তিনি।
১৭টি ওয়ানডে খেলা ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান ৫টি হাফ সেঞ্চুরিসহ ৩৭.০০ গড়ে ৫১৮ রান করেছেন। আদর্শ মানা মুশফিকুর রহিমের উপহার দেওয়া ব্যাট দিয়ে ভারত মাতানোর অপেক্ষায় হৃদয়। তরুণ এই ক্রিকেটারের প্রশংসা করে বাংলাদেশের সহকারী কোচ নিক পোথাস বলেন, 'দক্ষতার দিক দিয়ে সেরাটা ছোঁয়ার প্রবল ইচ্ছা তার মধ্যে। এ ছাড়া তার মধ্যে অনেক সম্ভাবনা এবং শেখার ইচ্ছা আছে। তার সক্ষমতায় আমি রোমাঞ্চিত।'
নূর আহমেদ (আফগানিস্তান): বলের উপর দারুণ নিয়ন্ত্রণ; গতি ও বৈচিত্র্যপূর্ণ বোলিংয়ে নতুনত্ব এনে বিশ্ব ক্রিকেটে নজর কেড়েছেন আফগানিস্তানের বাঁহাতি রিস্ট স্পিনার নূর আহমেদ। মাত্র ১৪ বছর বয়সে আফগানিস্তানের হয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেটে অভিষেক হয় তার। গত বছর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৭ বছর বয়সে ওয়ানডে অভিষেক হয় নূরের। আফগানদের হয়ে একমাত্র টি-টোয়েন্টিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১০ রানে ৪ উইকেট নিয়ে নিজের জাত চেনান চায়নাম্যান এই বোলার।
জাতীয় দলের সতীর্থ রশিদ খানকে আদর্শ মানা নূর গেল বছর আইপিএলে গুজরাট লায়ন্সের হয়ে আলো ছড়ান। আইপিএলের পাশাপাশি সারা বিশ্বের ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে ১৮ বছর বয়সী নূরের চাহিদা এখন আকাশচূম্বী। বিশ্বকাপে রশিদের পাশাপাশি নূরের আলোতে পথ চলতে চায় আফগানরা। নূরকে নিয়ে রশিদ খান বলেন, 'এই ছোট বাচ্চাটা শুধু শিখতে চায়। সে এখন সুযোগ পেয়েছে এবং আমি খুব খুশি, সে সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে। এটা আফগানিস্তান ক্রিকেটের জন্য দারুণ খবর।'
মাথিশা পাথিরানা (শ্রীলঙ্কা): ২০১৯ বিশ্বকাপ শেষে লাসিথ মালিঙ্গার অবসরের পর থেকে শ্রীলঙ্কা এমন একজন বোলারের সন্ধান করেছে, যে কিনা প্রতিপক্ষের উইকেট শিকারে পারদর্শীতা দেখাবেন এবং ব্যাটসম্যানদের একপ্রান্তে আটকে রাখবেন। মালিঙ্গার জায়গায় শ্রীলঙ্কা সম্ভাব্য বোলার হিসেবে মাথিশা পাথিরানাকে খুঁজে পেয়েছে বলে বিশ্বাস অনেকেরই। মালিঙ্গার মতোই স্লিঙ্গিং, ডেলিভারির সময় নিচ থেকে হাত নিয়ে আসা ও ভয়ঙ্কর ইয়র্কারে প্রতিপক্ষকে নাস্তানাবুদ করায় দারুণ পটু পাথিরানা।
গত বছর আইপিএলে অ্যাডাম মিলনের বদলি হিসেবে পাথিরানাকে দলে নেন চেন্নাই সুপার কিংসের অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি। সুযোগ পেয়েই অভিষেকের প্রথম বলেই শুভমান গিলের উইকেট তুলে নেন পাথিরানা। গত জুনে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেক হয় তার। বিশ্বকাপে লঙ্কানদের সবচেয়ে বড় অস্ত্র হতে পারেন পাথিরানা। তাকে নিয়ে শ্রীলঙ্কার কোচ ক্রিস সিলভারউড বলেন, 'খুব দ্রুতই শিখতে পারে এবং ম্যাচে তা দ্রুত প্রয়োগও করতে পারে। এটি নিজের মতো করেই করে সে।'
গাস অ্যাটকিনসন (ইংল্যান্ড): ২০১৯ সালে ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ জয়ে বড় কৌশল ছিলো গতিময় বোলিং। ও দলে ছিলেন জফরা আর্চার এবং মার্ক উডের মত গতিময় বোলার, যারা ধারাবাহিকভাবে ঘণ্টায় ৯০ মাইল গতিতে বোলিং করেছেন। আসন্ন বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড দলে উড থাকলেও দীর্ঘমেয়াদী কনুইয়ের ইনজুরি থেকে সুস্থ হতে লড়াই করতে থাকা আর্চারকে স্ট্যান্ড বাই হিসেবে রাখা হয়েছে। আর্চারের বদলি হিসেবে ভাবা হচ্ছে গতির ঝড় তুলে নিজেকে চেনানো গাস অ্যাটকিনসন, বিশ্বকাপ মিশনে তাকে দলে রেখেছে ইংলিশরা।
চলতি বছরের শুরুর দিকে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের সুবাদে গত সেপ্টেম্বরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রথমবারের মতো ডাক পান ২৫ বছর বয়সী ডানহাতি এই পেসার। ৩ ম্যাচে মাত্র ১টি উইকেট নিলেও ঘণ্টায় ৯৫ মাইল গতিতে বোলিং করেছেন অ্যাটকিনসন। তাকে নিয়ে ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক অ্যালিস্টার কুক বলেন, 'দেখে মনে হয় না দ্রুত গতিতে বল করতে তার খুব বেশি পরিশ্রম করতে হয়। তার বোলিংয়ে আরও গতি আছে বলে মনে হয়।'
তেজা নিদামানুরু (নেদারল্যান্ডস): সব ভারতীয় ক্রিকেটারেরই স্বপ্ন থাকে বিশ্বকাপ খেলা। তেজা নিদামানুরুর স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে, তবে ভারতের হয়ে নয়। ভারতের অন্ধ্র প্রদেশে জন্ম নেওয়া নিদামানুরু নেদারল্যান্ডসের হয়ে বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছেন। ২৯ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার বেড়ে উঠেছেন নিউজিল্যান্ডে, পরবর্তীতে পাড়ি জমান নেদারল্যান্ডসে। গত বছরের মে মাসে নেদারল্যান্ডসের হয়ে খেলার সুযোগ হয় তার। অভিষেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে হাফ সেঞ্চুরি করেন নিদামানুরু।
গত জুনে জিম্বাবুয়ের মাটিতে বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৭৬ বলে ১১১ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে সবেইকে চমকে দেন তিনি। নিদামানুরুর ইনিংসের সুবাদে ওই ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের করা ৩৭৪ রান স্পর্শ করে ম্যাচটি টাই করে সুপার ওভারে জয় পায় নেদারল্যান্ডস। বাছাই পর্বে সেরা দুই দলের একটি হয়ে বিশ্বকাপে খেলার টিকেট পায় নেদারল্যান্ডস। ভারতের অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপেও নিদামানুরুর দিকে তাকিয়ে ডাচরা। স্বপ্ন পূরণের রোমাঞ্চ জানাতে গিয়ে নিদামানুরু বলেন, 'বিশ্বকাপ খেলার কথা বলাটা খুব সহজ নয়, পথটি কঠিন ছিল। কিন্তু এটি পাড়ি দেওয়াটা সার্থক বলে মনে হচ্ছে।'