মার্তিনেসের সঙ্গে কাটানো মুগ্ধতার ২০ মিনিটের গল্প শোনালেন মাশরাফি

খেলা

টিবিএস রিপোর্ট
03 July, 2023, 03:55 pm
Last modified: 03 July, 2023, 04:04 pm
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী গোলরক্ষক মার্তিনেসের সঙ্গে দেখা করার অনুভূতি, কী কথা হয়েছে তার সঙ্গে, কেমন ছিল এই অভিজ্ঞতা; সেটা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে শোনালেন মাশরাফি বিন মুর্তজা।

মূল সফর কলকাতায়, সেখানে আড়াই দিনে বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নেবেন আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী দলের গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্তিনেস। এর আগে ১১ ঘণ্টার সফরে ঢাকায় এসেছেন তারকা এই ফুটবলার। ঢাকায় তেমন কার্যক্রম না থাকলেও পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান নেক্সট ভেঞ্জার্স ছোট্ট আয়োজন রেখেছিল। সেখানে মার্তিনেসের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয় মাশরাফি বিন মুর্তজাকে। 

বাংলাদেশের তরুণ সমাজের আইকন হিসেবে জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ককে আমন্ত্রণ জানায় পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠানটি। দুই সন্তান হুমায়রা ও সাহেলকে সঙ্গে নিয়ে মার্তিনেসের সঙ্গে দেখা করেছেন আর্জেন্টিনার পাঁড় ভক্ত মাশরাফি, তাকে উপহার দিয়েছেন নিজের পরা জাতীয় দলের জার্সি। আর্জেন্টিনার বিশ্বজয়ে সামনের কাতারে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া মার্তিনেসের সঙ্গে ২০ মিনিটের মতো কাটান তিনি। দেখা করার অনুভূতি, কী কথা হয়েছে মার্তিনেসের সঙ্গে, কেমন ছিল এই অভিজ্ঞতা; সেটা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে শোনালেন মাশরাফি-

"এমি মার্তিনেস ঢাকায় আসছে এবং আমি তার সঙ্গে দেখা করতে যাবো; আমন্ত্রণ পাওয়ার পর থেকে ভালো লাগা কাজ করছিল। তবে আমার ভালো লাগা পরিমাণ আমার সন্তানদের কাছে কিছুই নয়। মার্তিনেসের সঙ্গে দেখা করার কথা শোনার পর থেকে হুমায়রা ও সাহেলের যে কী উত্তেজনা। কতো যে প্ল্যান সাজাচ্ছিল ওরা কীভাবে দেখা করবে, কী বলবে; এসব নিয়ে! উত্তেজনায় কাল রাতে ওরা ঘুমাতে পারছিল না, জেগে ছিল রাত ৩টা পর্যন্ত। ওরা বলছিল, 'বাবা, এতো এক্সাইটমেন্ট কাজ করছে যে, ঘুমাতে পারছি না।

আমি আর্জেন্টিনার সমর্থক, সেই ছোট বেলা থেকেই। ম্যারাডোনার খেলা দেখে ভক্ত হই, সেই থেকে আর্জেন্টিনার ভক্ত। আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের জন্য অন্যরকম টান অনুভব করি। কিছু ক্ষেত্রে তা পাগলামির মতো হয়ে গেছে, এখনও আছে কিছুটা। যদিও আর্জেন্টিনার ফুটবলারদের সঙ্গে দেখা করতে কখনও পাগল হইনি আমি। আর্জেন্টিনা যখন বাংলাদেশে আসে, সেবার মেসিও ছিল দলে; তবু ইচ্ছা করেনি কাছ থেকে দেখতে। কাছাকাছি যাওয়া বা সামনাসামনি দেখাটা আমাকে অতটা টানে না। এমি মার্তিনেসের বেলাতেও তেমনই হয়েছে। 

নেক্সট ভেঞ্চার্স আমন্ত্রণ জানানোয় যাওয়া হয়েছে। তবে সত্যি বলতে আমার সন্তানদের আগ্রহের কারণে আমি যেতে আগ্রহী হয়েছি। নেক্সট ভেঞ্চার্সের কার্যালয়ে সকাল ১০টায় এমির সঙ্গে আমাদের আয়োজনটা শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ওরা জানায়, আয়োজনের সময় এগিয়েছে, ৯টার দিকে থাকবেন এমি। এরপর তাড়াহুড়ো করে রেডি হয়ে আমরা বেরিয়ে যাই। এমির সঙ্গে আমার ও পলক ভাইয়ের (তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক) একটি সাক্ষাৎকার পর্ব ছিল। 

আমি বাড্ডার দিকে দ্রুতই চলে যাই, তবে নেক্সট ভেঞ্চার্সের কার্যালয় খুঁজে বের করতে পারছিলাম না বলে একটু দেরি হয়ে যায়। এর মধ্যেই সাক্ষাৎকার পর্ব শুরু হয়ে যায়। পলক ভাই চালিয়ে নিয়েছেন ওটা, আমার ওই পর্বটা মিস হয়ে গেছে। এরপরে এমির সঙ্গে পরিচিত হই। পলক ভাই আমাকে পরিচয় করিয়ে দেন ওর সঙ্গে। ও বলছিল, 'বাংলাদেশে তো ক্রিকেট খুবই জনপ্রিয়, না?' আমি বলেছি, 'হ্যাঁ, ফুটবলও খুব জনপ্রিয়, আর্জেন্টিনাও অনেক জনপ্রিয়।' অনেক ভিড় থাকায় খুব বেশি কথা হয়নি এমির সঙ্গে। যতটুকু সময় কথা হয়েছে, ওকে বলেছি যে এখানে আর্জেন্টিনা কতোটা জনপ্রিয়। বিশ্বকাপ জয়ের পর বাংলাদেশের নানা জায়গায় উদযাপনের ছবি ও ভিডিও ওকে দেখিয়েছি। 

হুমায়রা ও সাহেলের আগে থেকেই অটোগ্রাফ ও ছবি তোলার কথা আমাকে বলে রেখেছিল। ওখানে গিয়েও মনে করাচ্ছিল, বারবার বলছিল। কিন্তু ওখানে এমিকে এতো মানুষের আব্দার মেটাতে হচ্ছিল যে, বলতে বিব্রত লাগছিল কিছুটা। তবু ওদের চাওয়ার কারণে এমিকে পরে বলি। খুবই আন্তরিকভাবে সাড়া দিয়েছে সে। অন্য পাশ থেকে ঘুরে এসে নিজেই অটোগ্রাফ দিয়েছে সে, ছবি তুলেছে। সাহেল নিজের টি-শার্টে অটোগ্রাফ নিয়েছে। হুমায়ারা আর্জেন্টিনার জার্সি সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিল। 

অটোগ্রাফ পেয়ে ওরা খুশিতে আত্মহারা। অটোগ্রাফের জায়গাটায় বারবার চুমু দিচ্ছিল, ছবি দেখছিল একটু পরপরই। তবে আমি ছবি তুলিনি। এটা আমি তেমন উপভোগ করি না। ২০ মিনিটের মতো সময় ছিলাম, তাকে একদমই সাধারণ বা সাদাসিধে মনে হয়েছে। তার মধ্যে কোনো স্টারডম নেই। সে যে বিশ্বকাপজয়ী দলের গোলরক্ষক, সেরা গোলরক্ষক হয়ে গোল্ডেন গ্লাভস জিতেছে; তার  শরীরী ভাষায় তার বিন্দুমাত্র ছাপ নেই। খুবই সহজভাবে মিশেছে সবার সঙ্গে মিশেছে, ছবি তুলেছে, অটোগ্রাফ দিয়েছে। 

ইন্টারভিউ পর্বে থাকার ইচ্ছা ছিল। থাকলে দুটি প্রশ্ন করতাম। প্রথমটি করতাম 'কোলো মুয়ানির যে শটটি অবিশ্বাস্যভাবে আটকে দিয়েছিলেন, ওই শট ঠেকানোর মুহূর্তে এবং এরপর মাথায় কী কাজ করছিল।' দ্বিতীয় প্রশ্নটিও একই রকম। প্রশ্ন করতাম, 'ওই গোলটা বাঁচানোর পর টাইব্রেকারে যাওয়ার মনে হচ্ছিল কিনা যে আজ আমারই দিন, টাইব্রেকারেও আটকে দেব।' যদিও কোনোটাই করা হয়নি সময় মতো যেতে পারিনি বলে। তবে তাতে আফসোস নেই। দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে, খুবই ভালো লাগছে। তার মতো তারকাকে দেওয়ার মতো কিছু খুঁজে পাচ্ছিলাম না। পরে অনেক ভেবে আমার পরা জাতীয় দলের একটি জার্সি নিয়ে গিয়েছিলাম, সেটা দিয়েছি।"

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.