হোসে মরিনহো: এখনও জাদু দেখাচ্ছেন যিনি

খেলা

হাসান জামিলুর রহমান সৈকত
19 May, 2023, 11:10 am
Last modified: 19 May, 2023, 11:14 am
রোমাকে নিয়ে গিয়েছেন তাদের ইতিহাসের প্রথম ইউরোপা লিগ ফাইনালে। গত মৌসুমেই ক্লাবটিকে জিতিয়েছেন তাদের প্রথম ইউরোপিয়ান কোনো শিরোপা। এবার তা আরেক ধাপ এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ মরিনহোর সামনে। ইউরোপিয়ান ফাইনাল জেতার মাস্টার মরিনহোর ওপর ভরসা করতেই পারেন রোমা সমর্থকরা।

টটেনহাম হটস্পার্স থেকে যখন বরখাস্ত হলেন, সবাই তার শেষ দেখে ফেলেছিলেন। ধারণা করা হচ্ছিল, বেশ সফল এক ক্যারিয়ারের সমাপ্তিটা তিক্তই হলো। কিন্তু নামটা যখন হোসে মরিনহো, তখন আগে থেকে কিছু ভেবে নেওয়াটাই বোকামি। 

রোমাকে নিয়ে গিয়েছেন তাদের ইতিহাসের প্রথম ইউরোপা লিগ ফাইনালে। গত মৌসুমেই ক্লাবটিকে জিতিয়েছেন তাদের প্রথম ইউরোপিয়ান কোনো শিরোপা। এবার তা আরেক ধাপ এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ মরিনহোর সামনে। ফাইনাল জেতার মাস্টার মরিনহোর ওপর ভরসা করতেই পারেন রোমা সমর্থকরা।

গত ২০ বছরে ফুটবলকে তিনি যা দিয়েছেন তা ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরেই লেখা থাকবে। মাঠ এবং সংবাদ সম্মেলনে বিতর্কিত আর সাড়া জাগানো কাজ কিংবা মন্তব্য তো আর কম করেন নি। একটা বই লেখা হয়ে যাবে তার কান্ড-কারখানা নিয়ে। 

তবে ফুটবল সমর্থকরা মনে রাখবেন মাঠের হোসে মরিনহোকেই। কীভাবে সীমিত শক্তি-সামর্থ্য নিয়েও সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠা যায়, তা মরিনহোর চেয়ে ভালো আর কে জানেন! 

ক্যারিয়ারের সিভিতে জমা হয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মতো ঐতিহ্যবাহী আর আর্থিকভাবে শক্তিশালী ক্লাবকে কোচিং করানোর অভিজ্ঞতা। অথচ মরিনহোর সবচেয়ে বড় সাফল্যগুলো এসেছে ইন্টার মিলান আর পোর্তোর সাথে। যাদের ঐতিহ্য থাকলেও ছিলো অর্থের ঝনঝনানি। একমাত্র চেলসিই ব্যতিক্রম। সেটির সাফল্যের ভীতও দাঁড়িয়ে আছে মরিনহোর তৈরি করা স্তম্ভের ওপর। 

ইতালিয়ান ক্লাব এএস রোমাতে যখন কোচ হিসেবে এলেন, খুব একটা প্রত্যাশা কেউই করেন নি। আর হোসে মরিনহো তো এসব ক্ষেত্রেই ওস্তাদ! যেখানে নেই কোনো সফল হওয়ার চাপ, সেখানেই নিজের সবচেয়ে বড় সাফল্যগুলো ধরা দিয়েছে তার! 

পোর্তোকে নিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতবেন তা কে ভেবেছিল! ২০০৪ সালে লিখলেন সেই রূপকথা। এরপর চেলসিকে প্রিমিয়ার লিগ, এফএ কাপ জিতিয়ে এলেন ইন্টার মিলানে। পোর্তোকে নিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতা যদি সবাইকে অবাক করে থাকে, তাহলে ইন্টারকে নিয়ে ট্রেবল জেতা অবিশ্বাস্যই ঠেকবে। সেটিও করে দেখিয়েছেন মরিনহো।

এরপর রিয়াল মাদ্রিদকে লা লিগা, চেলসিকে আবারো প্রিমিয়ার লিগ, ইউনাইটেডকে ইউরোপা লিগ জিতিয়ে স্পার্সে গেলেন। সেখানেই একমাত্র কোনো শিরোপা জেতেননি মরিনহো। জিততে পারতেন, কিন্তু কাপ ফাইনালে স্পার্সের ম্যাচের আগের দিনই ক্লাব তাকে বরখাস্ত করে! কেন তা একমাত্র ক্লাব কর্তৃপক্ষই ভালো বলতে পারবেন। 

সবশেষে মরিনহো ফিরে গেলেন ইতালিতে। এবার রোম জয় করতে। রোমার না আছে কোনো শিরোপা জেতার প্রত্যাশা, না আছে নিয়মিত শিরোপা জেতার কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা। ফ্রান্সেস্কো টট্টির কারণেই ফুটবল মানচিত্রে ইতালির রাজধানীর এই ক্লাবটির কিছুটা পরিচিতি আছে বলা চলে। 

মরিনহো সিদ্ধান্ত নিলেন, এবার তার জন্যেও রোমাকে চিনবে মানুষ। উয়েফার নতুন ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতা, কনফারেন্স লিগ গত মৌসুমেই চালু হয়েছে প্রথমবারের মতো। আর সেখানেই চ্যাম্পিয়ন মরিনহোর রোমা! যার মাধ্যমে তিনি নিজেও হয়ে গেলেন প্রথম কোচ যিনি উয়েফার অধীনে হওয়া সব ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতাতেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। 

৩১ মে ইউরোপা লিগের ফাইনালে সেভিয়ার মুখোমুখি হবে রোমা। এই টুর্নামেন্টটি সর্বোচ্চ ছয়বার জেতা স্প্যানিশ ক্লাব সেভিয়াকে হারিয়ে জিততে বেশ কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখিই হতে হবে রোমাকে। কিন্তু রোমার সবচেয়ে বড় অস্ত্র তাদের মাঠের ১১ জন নন। 

সেটি তাদের ডাগআউটে দাঁড়িয়ে থাকা ৬০ বছরের পাকা চুলের এক জাদুকর। যিনি জানেন ফাইনাল কীভাবে জিততে হয়, আর তা যদি হয় ইউরোপিয়ান কোনো প্রতিযোগিতার ফাইনাল তাহলে তো কথাই নেই! 

হোসে মরিনহো ফুরিয়ে যান নি, তিনি আছেন, বেশ ভালোভাবেই আছেন।

 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.