পঞ্চাশ ছোঁয়া শচীনের জানা-অজানা সব তথ্য

খেলা

টিবিএস রিপোর্ট
24 April, 2023, 04:20 pm
Last modified: 24 April, 2023, 04:50 pm
ছোট বেলায় টেনিস একটু বেশিই প্রিয় ছিল শচীনের, যেন তাকে টেনিস খেলোয়াড়ই হতে হবে। টিভিতে বিয়ন বর্গের খেলা দেখলে ছোট্ট শচীনের নাওয়া-খাওয়া বাদ। যদিও টেনিস খেলোয়াড় হওয়া হয়নি ভারতের কিংবদন্তি এই ব্যাটসম্যানের । বড় ভাই তার হাতে তুলে দেন ব্যাট-প্যাড, শুরু হয় স্বপ্নের পথচলা।

বাবা রমেশ টেন্ডুলকার ছিলেন মারাঠি ভাষার জনপ্রিয় কবি ও লেখক। শখ করে ছোট ছেলের নাম ভারতের বিখ্যাত সঙ্গীত পরিচালক শচিন দেব বর্মনের সাথে মিলিয়ে রাখেন। হয়তো ভেবেছিলেন ছোট ছেলে তার পথেই হাঁটবেন। কিন্তু ছোট ছেলের মনোযোগের সবটা জুড়ে বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা।  

টেনিস ছিলো একটু বেশিই প্রিয়, যেন তাকে টেনিস খেলোয়াড়ই হতে হবে। টেনিসের কিংবদন্তি বিয়ন বর্গ ছিলেন তার আইডল। টিভিতে বর্গের খেলা দেখলে নাওয়া-খাওয়া বাদ। টিভিতে খেলা দেখিয়েই কেবল তাকে ঘরে আটকে রাখা যেত। বাকি সময়ে এ মাঠ থেকে ও মাঠে। হোক সেটা যে খেলাই। 

তবে টেনিস খেলোয়াড় হওয়া হয়নি তার। বড় ভাই অজিত টেন্ডুলকার তার হাতে তুলে দেন ব্যাট-প্যাড। বড় ভাইয়ের কাছেই মূলত ক্রিকেটে হাতেখড়ি তার। ক্রিকেটের সাথে বেড়েছে সখ্য। জীবনের প্রথম কোচ রমাকান্ত আচরেকারের হাত ঘুরে ক্রমেই বড় করে পা ফেলেছেন। এরপর ভারত জাতীয় ক্রিকেট দল, আর পরবর্তী সময়ে তার ব্যাটে রচিত হয়েছে অনেক ইতিহাস।

বর্ণনায় বোঝাই যাচ্ছে, গল্পটা ভারতের কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান শচীন টেন্ডুলকারের। অগণিত রেকর্ড পায়ে লুটিয়েছে লিটল মাস্টারের। আজ (২৪ এপ্রিল) ৫০ বছরে পা দিলেন ভারতীয় এই ব্যাটিং জিনিয়াস। ১৯৭৩ সালের এই দিনেই পৃথিবীর আলো দেখেছিলেন রেকর্ডের এই রাজা। মাস্টার ব্লাস্টার্সের জন্মদিনে তার জানা-অজানা চমকপ্রদ অনেক তথ্য নিয়ে টিবিএসের এই আয়োজন-      

এক নজরে শচীন টেন্ডুলকার

বায়ো

পুরো নাম: শচীন রমেশ টেন্ডুলকার

ডাকনাম: মাস্টার ব্লাস্টার, গড অব ক্রিকেট, লিটল মাস্টার

পেশা: সাবেক ভারতীয় ক্রিকেটার

শারিরিক তথ্য এবং অন্যান্য

উচ্চতা: ৫"৫ ইঞ্চি

ওজন: ৬২ কেজি

চোখের রং: গাঢ় ধূসর

চুলের রং: কালো

শচীনের চোখ জুড়িয়ে দেওয়া কভার ড্রাইভ। ছবি: সংগৃহীত

ক্রিকেট

আন্তর্জাতিক অভিষেক

টেস্ট: ১৫ নভেম্বর ১৯৮৯, বিপক্ষ- পাকিস্তান, ভেন্যু: করাচি

ওয়ানডে: ১৮ ডিসেম্বর ১৯৮৯, বিপক্ষ- পাকিস্তান, ভেন্যু: গুজরানওয়ালা

টি-টোয়েন্টি: ১ ডিসেম্বর ২০০৬, বিপক্ষ: দক্ষিণ আফ্রিকা, ভেন্যু: জোহানেসবার্গ

জার্সি নম্বর: ১০ (ভারত), ১০ (আইপিএল, মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স)।

ঘরোয়া দল: মুম্বাই, মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স, ইয়র্কশায়ার

প্রিয় প্রতিপক্ষ: পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়া

প্রিয় শট: স্ট্রেইট ড্রাইভ

শচীনের যত রেকর্ড

- ১৯৯৮ সালে ওয়ানডেতে ১৮৯৪ রান করেন শচিন। এক মৌসুমে যা বিশ্বের যে কোনো ব্যাটসম্যানের জন্য সর্বোচ্চ রান।

- সবচেয়ে বেশি টেস্ট রানের মালিক- ১৫ হাজার ৯২১

- সবচেয়ে বেশি ওয়ানডে রান- ১৮ হাজার ৪২৪

- সবচেয়ে বেশি টেস্ট খেলা ক্রিকেটার- ২০০

- সবচেয়ে বেশি ওয়ানডে খেলা ক্রিকেটার- ৪৬৩

- প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ওয়ানডেতে ডাবল সেঞ্চুরি করা- ২০০*

- একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে ১০০টি আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরির মালিক

- সবচেয়ে বেশি টেস্ট সেঞ্চুরির মালিক- ৫১টি

- সবচেয়ে বেশি ওয়ানডে সেঞ্চুরির মালিক- ৪৯টি

- সবচেয়ে বেশি টেস্ট হাফ সেঞ্চুরি- ৬৮টি

- সবচেয়ে বেশি ওয়ানডে হাফ সেঞ্চুরি- ৯৬টি

- বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি রান- ২২৭৮

- সবচেয়ে বেশি বিশ্বকাপ খেলা ক্রিকেটার- ৬টি বিশ্বকাপ

- বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরি- ৬টি

- টেস্টে সবচেয়ে দ্রুত ১০ হাজার রান করা ব্যাটসম্যান

- এক বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি রান- ৬৭৩, ২০০৩ বিশ্বকাপ

- এক মৌসুমে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরি- ৯টি, ১৯৯৮ সালে

পুরস্কার, সম্মাননা, অর্জন 

১৯৯৪: ভারত সরকার কর্তৃক অর্জুনা পুরস্কার

১৯৯৭-৯৮: রাজীব গান্ধী খেল রত্ন, ক্রীড়ায় অবদানের জন্য ভারতের সর্বোচ্চ সম্মাননা

১৯৯৯: পদ্মশ্রী, ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার

২০০১: মহারাষ্ট্র ভূষণ পুরস্কার, মহারাষ্ট্র রাজ্যের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার

২০০৮:  পদ্ম ভূষণ, ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার

অন্যান্য সম্মাননা

১৯৯৭: উইজডেনের বর্ষসেরা ক্রিকেটার

২০০৩: বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়

২০১০: ভারতীয় বিমান বাহিনী তাকে সম্মানসূচক গ্রুপ ক্যাপ্টেনের উপাধী দেয়।

২০১১: ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) বর্ষসেরা ক্রিকেটার

২০১২: সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডের আজীবন সম্মানসূচক সদস্য পদ লাভ

২০১৩: মাতার তেরেসার পর দ্বিতীয় ভারতী হিসেবে শচীন টেন্ডুলকারের নামে স্টাম্প প্রকাশ করে ভারতীয় পোস্টাল সার্ভিস।

২০১৯: দক্ষিণ আফ্রিকার কিংবদন্তি পেসার অ্যালান ডোনাল্ড ও অস্ট্রেলিয়ার নারী দলের দুইবারের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক ক্যাথরিন ফিজপ্যাট্রিকের সঙ্গে শচীনের নাম আইসিসি হল অব ফেমে যুক্ত করা হয়।

ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট

১৯৮৯ সালে পাকিস্তানের শক্তিশালী বোলিং লাইনআপের বিপক্ষে হাফ সেঞ্চুরি করেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নামা শচিন। যা তাকে ভারত দলে নিয়মিত হতে সহায়ক হিসেবে কাজ করে।

ব্যক্তিগত জীবন

জন্ম তারিখ: ২৪ এপ্রিল, ১৯৭৩

বয়স: ৪৯ বছর

জন্মস্থান: মুম্বাই, মহারাষ্ট্র, ভারত

রাশি: বৃষ

নিজ শহর: মুম্বাই, মহারাষ্ট্র, ভারত

স্কুল: সারদাশ্রম বিদ্যামন্দীর স্কুল, দাদার, মুম্বাই

কলেজ: খালসা কলেজ, মুম্বাই

শিক্ষা: শেষ করতে পারেননি

বাবা-মায়ের সঙ্গে শচীন টেন্ডুলকার। ছবি: সংগৃহীত

পরিবার

বাবা: রমেশ টেন্ডুলকার (কবি, লেখক)

মা: রজনী টেন্ডুলকার (ইন্সুরেন্স এজেন্ট)

ভাই: নিতীন টেন্ডুলকার (বড় ভাই, সৎ) এবং অজিত টেন্ডুলকার (বড় ভাই, সৎ)।

বোন: সবিতা টেন্ডুলকার (বড় বোন, সৎ)

ধর্ম: হিন্দু 

বাসার ঠিকানা: ১৯/এ, পেরি ক্রস রোড, বান্দ্রা (পশ্চিম), মুম্বাই

শখ: পারফিউম, ঘড়ি এবং সিডি সংগ্রহ করা। গান শোনা।

জীবনের প্রথম কোচ রমাকান্ত আচরেকারের সাথে শচীন। ছবি: সংগৃহীত

কোচ/মেন্টর

কোচ: রমাকান্ত আচরেকার

শচীনকে নিয়ে বিতর্ক

শচীনের ২৪ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে বিতর্ক নেই বললেই চলে। ২০০১ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পোর্ট এলিজাবেথ টেস্টে আম্পায়ারকে না জানিয়ে বলের সিম পরিস্কার করায় একটি টেস্ট ম্যাচে নিষিদ্ধ হন শচীন।

শচীনের সব প্রিয়

প্রিয় ব্যাটসম্যান: সুনীল গাভাস্কার, স্যার ভিভ রিচার্ডস

প্রিয় বোলার: ওয়াসিম আকরাম, অনীল কুম্বলে, শেন ওয়ার্ন, মুত্তিয়া মুরালিধরন, গ্লেন ম্যাকগ্রা ও কার্টলি অ্যামব্রোস।

প্রিয় মাঠ: সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ড

প্রিয় খাবার: মম্বে ডাক, চিংড়ি কারি, কিমা পরোটা, লাচ্চি, চিংড়ি, খাসির বিরিয়ানি, খাসির কারি, বেগুন ভর্তা ও সুশি।

প্রিয় অভিনেতা: অমিতাভ বচ্চন, আমির খান, নানা পাটেকার।

প্রিয় অভিনেত্রী: মাধুরী দিক্ষিত

প্রিয় সিনেমা: শোলে (বলিউড), কামিং টু আমেরিকা (হলিউড)।

প্রিয় সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব: কিশোর কুমার, শচিন দেব বর্মন ও ডায়ার স্ট্রেইটস।

প্রিয় রং: নীল

প্রিয় পারফিউম: কমে ডেস গারকন্স

প্রিয় রেস্টুরেন্ট: বুখারা, মাউরিয়া শেরাটন, দিল্লী।

প্রিয় হোটেল: পার্ক রয়্যাল ডার্লিং, সিডনি

প্রিয় গন্তব্য: নিউজিল্যান্ড, ভারতের মুসোরী

স্ত্রী-সন্তানের সঙ্গে শচীন টেন্ডুলকার। ছবি: সংগৃহীত

স্ত্রী, সন্তান 

বৈবাহিক অবস্থা: বিবাহিত

প্রেমিকা: অঞ্জলী টেন্ডুলকার (ডাক্তার)

স্ত্রী: অঞ্জলী টেন্ডুলকার (ডাক্তার)

সন্তান: মেয়ে- সারা, ছেলে: অর্জুন

শচীনের বিএমডব্লিউ গাড়ি আই৮। ছবি: সংগৃহীত

অন্যান্য

গাড়ির সংগ্রহ: নিশান জিটি-আর, বিএমডব্লিউ '৩০ জাহরে এম৫' সীমিত সংস্করণ, বিএমডব্লিউ এক্স৫ এম, বিএমডব্লিউ এক্স৫ এম৫০ডি, বিএমডব্লিউ ৭৬এলআই, বিএমডব্লিউ আই৮।

অর্থের পরিমাণ: ১৬৫ মিলিয়ন ডলার (১ হাজার ৩৫০ কোটি রুপি)।

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.