আরব বসন্ত চলছেই, রোনালদোদের বিদায় করে মরক্কোর ইতিহাস
থামছেই না আরব বসন্ত। কাতার বিশ্বকাপে একের পর এক ইতিহাস গড়ে চলেছে মরক্কো। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ড্রয়ে শুরু করা আফ্রিকা-আরব অঞ্চলের দেশটি বেলজিয়াম ও কানাডাকে হারিয়ে গ্রুপ সেরা হয়ে শেষ ষোলোয় ওঠে। যেখানে তাদের শিকার সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন স্পেন। একটু একটু করে স্বপ্নের সীমানা বাড়িয়ে নিতে থাকা মরেক্কো এবার লিখলো রূপকথা, যেখানে দুঃখিনী দলটির নাম পর্তুগাল। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর দেশকে হারিয়ে আফ্রিকান দল হিসেবে বিশ্বকাপে ইতিহাস গড়লো মরক্কো।
শনিবার কাতারের আল থুমামা স্টেডিয়ামে কোয়ার্টার ফাইনালে পর্তুগালকে ১-০ গোলে হারিয়েছে মরক্কো। রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে পাওয়া মহামূল্যবান এই জয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে উঠলো তারা। কেবল নিজেদের ইতিহাসেই নয়, আফ্রিকা-আরব অঞ্চলের প্রথম দেশ হিসেবে বিশ্বকাপের শেষ চারে উঠলো অবিশ্বাস্য ফুটবল খেলে আসা মরক্কো। একটি দেশ, একটি মহাদেশ ও আরব অঞ্চলের মানুষদের হয়ে ইতিহাসে নাম তুললো তারা।
এবারই প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠে মরক্কো। আফ্রিকার অঞ্চলের চতুর্থ দল হিসেবে শেষ আটের টিকেট কাটে তারা। তাদের আগে আফ্রিকা থেকে বিশ্বকাপের শেষ আটে খেলেছে ক্যামেরুন (১৯৯০), সেনেগাল (২০০২) ও ঘানা (২০১০)। কেউ-ই পারেনি শেষ আটের বাধা টপকাতে। কিন্তু প্রথম অভিজ্ঞতাতেই বিজয় নিশান ওড়ালো মরক্কো। শক্তি, সামর্থ্য, অভিজ্ঞতা, সাফল্যে অনেক এগিয়ে থাকা দলকেই বিদায় করে স্বপ্নের সেমি-ফাইনালে উঠে গেলেন হাকিমি, বোনো, জাইয়েখরা।
যদিও যোগ করা সময়ের শেষ ছয় মিনিটে কঠিন পরীক্ষা দিতে হয় মরক্কোকে। এই ছয় মিনিট ১০ জন নিয়ে খেলতে হয় তাদের। আগেই হলুদ কার্ড দেখা ছিলেন ওয়ালিদ ছেদিরা। যোগ করা সময়ে দ্বিতীয় মিনিটে বাজেভাবে ফাউল করলে তাকে লাল কার্ড দেখান রেফারি। এরপরও সমানে সমান লড়াই করে জয় ছিনিয়ে নেয় বিশ্বকাপ ইতিহাসে জায়গা করে নেওয়া অ্যাটলাস লায়ন্সরা। আজ রাতে ইংল্যান্ড-ফ্রান্স ম্যাচের জয়ী দলের বিপক্ষে সেমি-ফাইনাল খেলতে মাঠে নামবে মরক্কো।
একে একে তারা খসে পড়ছে কাতার বিশ্বকাপ থেকে। গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নেয় উরুগুয়ে, শেষ বিশ্বকাপ খেলতে নামা লুইস সুয়ারেজ কান্নায় ভেঙে পড়েন। শেষ ষোলোতে যাত্রা থেমে যায় রবার্ট লেভানডোভস্কির পোল্যান্ডের। কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বাদ পড়েছে অন্যতম ফেবারিট হিসেবে কাতারে যাওয়া ব্রাজিল, মানে নেইমারের বিদায়। এবার বিশ্বকাপ মিশন থেকে গেলো রোনালদো। টিকে রইলেন কেবল লিওনেল মেসি ও কিলিয়ান এমবাপ্পে। এমবাপ্পের ভাগ্য আজ রাতেই নির্ধারণ হবে। সেমিতে ওঠার লড়াইয়ে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হচ্ছে ফ্রান্স।
মরক্কোর বিপক্ষে দাপট দেখিয়েই খেলেছে পর্তুগাল। বল দখল থেকে শুরু করে আক্রমণে অনেক এগিয়ে ছিল পর্তুগিজরা। ৭৪ শতাংশ সময় বল পায়ে রাখা ব্রুনো ফার্নান্দেস, রোনালদো গোলমুখে শট নেয় ১২টি, এর মধ্যে ৩টি ছিল লক্ষ্যে। মরক্কোও চোখে চোখ রেখে লড়েছে। তাদের নেওয়া ৯টি শটের ৩টি চিল লক্ষ্যে, এর মধ্যে একবার তারা জালের ঠিকানা খুঁজে পায়। ইতিহাস গড়া জয়ের পথে ম্যাচের ৪২তম মিনিটে মরক্কোর হয়ে গোল করেন ইউসেফ এন-নেসিরি।
স্বপ্নের পথচলা কেমন হয়? প্রশ্নটির উত্তর জানতে এবারের মরক্কোর বিশ্বকাপ মিশনে চোখ রাখলেই চলবে। শুরুর ম্যাচে কেবল জয় পাওয়া হয়নি, ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে গোলশূন্য ড্র করে তারা। পরের ম্যাচে আফ্রিকা অঞ্চলের দেশটি ২-০ গোলে হারিয়ে দেয় বেলজিয়ামকে। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে কানাডার বিপক্ষে ২-১ গোলে জেতে মরক্কো। এরপর শেষ ষোলোয় স্পেনকে রুখে দিয়ে ম্যাচ টাইব্রেকার পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া মরক্কো জেতে ইয়াসিন বোনোর বীরত্বে। স্পেনের নেওয়া তিনটি শটের দুটি ফিরিয়ে দেন এই গোলরক্ষক। অবিশ্বাস্য স্বপ্নযাত্রায় সেমিতে উঠতে এবার অত অপেক্ষা করতে হলো না, নির্ধারিত সময়েই তারা ছিনিয়ে নিলো কাঙ্খিত জয়।